ছায়াবাজি: পর্ব ৪০

assessment

প্রখর পরীক্ষা

একটা দম্পতি বাচ্চা চায়। বাচ্চার মা-বাপ হওয়ার যোগ্যতা তাদের আছে কি না, রাষ্ট্রের তরফে তা বিচার করতে আসে এক মহিলা (তার নাম ভার্জিনিয়া)। সাতদিন সে তাদের সঙ্গে থাকবে খাবে উঠবে বসবে, এবং তাদের ‘মূল্যায়ন‍’ করবে। তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এভাবেই শুরু হয় ‘দ্য অ্যাসেসমেন্ট’ (চিত্রনাট্য: ডেভ টমাস, নেল গারফাথ-কক্স, জন ডনেলি, পরিচালনা: ফ্লর ফরচুনে, ২০২৪), এবং আমরা বুঝি এ এক ভবিষ্যৎ-পৃথিবী, যেখানে মানুষজন একটা বলয়ের মধ্যে থাকে, সেখানে গোটা আবহাওয়া নিয়ন্ত্রিত। এক সময়ে পরিবেশের ভয়ানক বিকৃতির ফলে এই নতুন বিশ্ব গড়া হয়েছে, পুরনো পৃথিবীতে চলে যাওয়ার স্বাধীনতাও লোকের আছে, কিন্তু সেখানে দূষিত জল বিচ্ছিরি হাওয়া, তার চেয়ে বড় কথা, লোকের বয়স হয়, বুড়ো হয়ে মরে যায়। নতুন বিশ্বে, একটা নির্দিষ্ট ট্যাবলেট খেলে, বয়স কখনও বাড়ে না (সেই ট্যাবলেট অসুখও থামায়, জন্মনিরোধক হিসেবেও কাজ করে)। নিরাপদ নতুন পৃথিবীতে লোক বাড়লে সমস্যা, তাই দম্পতি শিশু চাইলে রাষ্ট্রের অনুমতি প্রয়োজন। রাষ্ট্র স্বাভাবিক ভাবে শিশু উৎপাদনের অনুমতি দেয় না, জননীর জরায়ুর বাইরে শিশুটি তৈরি হবে।

দম্পতি ধনী, সমাজের সুবিধাভোগী অংশের লোক, বুদ্ধিমান, রুচিমান— তাহলে তারা বাচ্চা পালনের অধিকার না পেলে, কে-ই বা পাবে— এ-ই মোটামুটি তাদের আত্মবিশ্বাসের ভিত্তি। স্বামী (নাম আরিয়ান) অত্যন্ত প্রতিভাবান বৈজ্ঞানিক, তার কাজ কৃত্রিম পোষ্য প্রাণী তৈরি করা, তারা একেবারে জীবন্ত প্রাণীর মতোই দেখতে শুনতে, কিন্তু তা থেকে কোনও স্বাস্থ্যক্ষতির সম্ভাবনা নেই। অসুখের ভয়ে সমস্ত জীবন্ত পোষ্যকে রাষ্ট্র হত্যা করেছে, সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিদ্রোহও হয়েছিল (গোটা নতুন বন্দোবস্তের বিরুদ্ধেই হয়েছিল), বিদ্রোহীদের শাস্তি দিতে পুরনো পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্ত্রী (নাম মিয়া) একটা গ্রিনহাউসে বহু গাছ ও শ্যাওলা ফলায়, সেই গবেষণা এই নতুন বিশ্বে খাবারের জোগানের ক্ষেত্রে কাজে লাগে। তবে ভার্জিনিয়ার মূল্যায়ন-প্রক্রিয়ার সামনে এই সপ্রতিভ ও সফল নারী-পুরুষ প্রভূত অস্বস্তিতে পড়ে যায়। সে প্রচুর ব্যক্তিগত প্রশ্ন তো ছুড়ে দেয়ই (কী করে প্রেম হল, ক’বার সঙ্গম হয়, তৃপ্তি হয় কি না, নিজের মা’র সঙ্গে সম্পর্ক কীরকম), বাড়ির সমস্ত জায়গায় অবাধ প্রবেশাধিকার তো আদায় করেই, তার কাছে রক্ত থুতু ও শরীরের অন্যান্য তরলের নমুনা তো জমা দিতে হয়ই, এমনকী রাতে যৌনতার সময়ও দম্পতি আঁতকে উঠে দ্যাখে, ভার্জিনিয়া খোলা দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে দেখছে। তাদের গোটা জীবনের তাবৎ খুঁটিনাটি এক আগন্তুকের আতশ কাচের অধীনে চলে গেছে বুঝে তাদের প্রকাণ্ড অস্বস্তি হলেও, সাতটা দিন তো, দেখতে-দেখতে কেটে যাবে, ভেবে তারা সবই সহ্য করে।

আরও পড়ুন: শিল্পীর ক্যমেরায় কি সবসময়ে ধরা পড়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি? লিখছেন চন্দ্রিল ভট্টাচার্য…

পরেরদিন থেকে মাঝে মাঝেই ভার্জিনিয়া যখন বাচ্চার মতো আচরণ শুরু করে, খাবার ছুড়ে দেয়, চামচে দিয়ে খাবার ‘মা’ ও ‘বাবা’র গায়ে ছিটকে ফেলতে থাকে, লুকোচুরি খেলতে গিয়ে সমুদ্রের ধারে হারিয়ে যায়, প্রকাণ্ড জোরে বাজনা চালিয়ে নাচে, অঝোর বৃষ্টির মধ্যে ‘বাবা’র পিঠে চড়ে বাড়ি ফিরতে চায়, ‘মা’-র দায়িত্ব পড়ে তাকে চান করিয়ে দেওয়ার, তখন এই দম্পতি দিশেহারা হয়ে যায়। সারাক্ষণ রাগ চেপে চেপে চলতে হয়, কারণ কোত্থেকে কী বলে ফেলবে বা মেজাজ দেখাবে, ব্যস, নম্বর কাটা যাবে, বাচ্চা তারা আর পাবে না। এদিকে ভার্জিনিয়া কখন যে ভার্জিনিয়া, মানে পূর্ণবয়স্কা নারী, কখন যে সেই ধেড়ে-মহিলা আসলে শিশু, কখন কিশোরী, তা বোঝাও শক্ত। কখনও ওরা অতিষ্ঠ হয়ে চেঁচিয়ে ওঠে, কখনও প্রশ্রয় দেয়। তাদের আরও ‘টাস্ক’ করতে হয়, যেমন বাচ্চার জন্য একটা অতি জটিল রঙিন তাঁবু অনেকগুলো অংশ জুড়ে-জুড়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বানিয়ে ফেলা। আবার, বাড়িতে অনেক লোককে নেমন্তন্ন করে খাওয়ানো।

এই নিমন্ত্রিতদের তালিকা তারা ঠিক করেনি, ভার্জিনিয়াই করেছে। দেখা যায়, তাদের মধ্যে আছে আরিয়ানের মা (যে প্রকাশ্যে উল্টোপাল্টা কথা বলার জন্য খ্যাত), আরিয়ানের প্রাক্তন প্রেমিকা, মিয়ার প্রাক্তন প্রেমিক। এমনিতেই এই মূল্যায়নের চক্করে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝঞ্ঝাট লেগেই ছিল, এবার মিয়ার প্রাক্তন প্রেমিক হাসির ছলে সেই ব্যর্থ প্রেমের হাহাকার করলে এবং তার পিঠময় এখনও মিয়ার নখরাঘাত-চিহ্ন রয়েছে সেই মর্মে এখনকার-সঙ্গিনী ব্যঙ্গ করলে, মিয়া ও আরিয়ানের একটু মন-কষাকষি হয়। এরপর আরিয়ানের মা বলে ফ্যালে, আরিয়ান ও তার প্রাক্তন সঙ্গিনী একটা বাচ্চার জন্য আবেদন করেছিল কিন্তু সঙ্গিনী শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে আসে, কারণ তার মনে হয়েছিল আরিয়ান একজন ভাল বাবা হতে পারবে না। এদিকে খাওয়ার টেবিলে ভার্জিনিয়া সারাক্ষণ বাচ্চা সেজে এটা নেয় সেটা খেয়ে ফ্যালে ওটা গড়িয়ে দেয় এবং এভাবে আরিয়ান ও মিয়াকে (এবং উপস্থিত সব্বাইকেই) ক্রমাগত উত্ত্যক্ত করে, শেষে এক অতিথির কোলে বসে হিসিও করে দেয়।

ছবির শেষে জানা যাবে, এই মূল্যায়নের আগে থেকেই রাষ্ট্র ঠিক করে দিয়েছে, কেউই পাশ করবে না (গত ছ’বছর ধরে কাউকে পাশ করানো হয়নি), কারণ নতুন মানুষ এলে তাকে লালন করার ক্ষমতা এই সমাজের এই মুহূর্তে নেই। শুধু নাগরিকেরা যাতে খুব হতাশ না হয়, তাই অভিনয় করতে হয়। প্রশ্ন জাগে, তাহলে এই পদ্ধতিটা এত কঠিন ও কর্কশ করার প্রয়োজনটা কী? ভার্জিনিয়া বলে, তার দায় ছিল প্রমাণ করার যে এই দম্পতি অযোগ্য। কিন্তু অযোগ্য কেন? আরিয়ান তার সঙ্গে সঙ্গম করেছে, অর্থাৎ নিজের সন্তানের সঙ্গে সঙ্গম করেছে, এইজন্য? না কি ভার্জিনিয়া যখন জ্বলন্ত গ্রিনহাউসে মরে যাচ্ছিল, তখন আগুনের ভয়ে আরিয়ান তাকে বাঁচাতে যায়নি, এইজন্য?

এই নেমন্তন্নর দৃশ্যে সমাজের বিভিন্ন চিন্তাস্রোতের সঙ্গেও আমরা পরিচিত হই। কেউ বলে, রসদ যেহেতু কম, তাই এই পৃথিবীতে বাচ্চার আকাঙ্ক্ষায় নতুন মানুষ আনা মূর্খতা ও স্বার্থপরতা। কেউ বলে, নাগরিকের অধিকার আছে শিশু চাওয়ার, রসদের এত দুশ্চিন্তা থাকলে ট্যাবলেট খাওয়া বন্ধ করলেই হয়, মানুষ আর অমর থাকবে না (নতুন মানুষ তার জায়গা নেবে)। কেউ জানায়, বর্ডারের তথ্য অনুযায়ী, পুরনো পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে মানুষ বেঁচে আছে ও প্রজননও করছে। কেউ বলে, বহুকাল আগে পৃথিবীতে যখন প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ ও ঝড় নেমে এসেছিল, শস্য শুকিয়ে গেছিল, মানুষ দুর্ভিক্ষে ও অসুখে মরছিল এবং খাবারের জন্য পরস্পরকে খুন করছিল, তখন এই ‘নতুন পৃথিবী’র ধারণা আসে, যেখানে সবাইকে থাকতে দেওয়া হবে না— তা খুব মিষ্টি বা দয়ালু সিদ্ধান্ত ছিল না বটে, কিন্তু খুব দরকারি ছিল। এদিন রাতে ভার্জিনিয়াকে শোয়াবার সময়ে ভার্জিনিয়া প্রথমে তার ‘মা’ মিয়াকে ধন্যবাদ দেয়, তারপর ওষ্ঠ-চুম্বন করে। মিয়া সরে যায়। ভার্জিনিয়া ভান করে, যেন রসিকতা করছিল। পরেরদিন মিয়া খবর পায় তার বোন হাসপাতালে মরো-মরো (পরে বোঝা যাবে, মিথ্যে খবর), আর আরিয়ানকে বাড়িতে একা পেয়ে ভার্জিনিয়া ধর্ষণ করে, প্রথমে শিশু সেজে এসে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে, আরিয়ান উত্তেজিত হয়ে গেলে নারী হিসেবে সঙ্গম করতে চায়, আরিয়ান বার বার ‘না’ বললে তাকে সপাটে চড় মারে এবং এমন কথা বলে যাতে মনে হয় যেন এটা মূল্যায়ন পদ্ধতিরই অংশ (আপত্তি করলে সে ফেল করবে)।

ছবির শেষে জানা যাবে, এই মূল্যায়নের আগে থেকেই রাষ্ট্র ঠিক করে দিয়েছে, কেউই পাশ করবে না (গত ছ’বছর ধরে কাউকে পাশ করানো হয়নি), কারণ নতুন মানুষ এলে তাকে লালন করার ক্ষমতা এই সমাজের এই মুহূর্তে নেই। শুধু নাগরিকেরা যাতে খুব হতাশ না হয়, তাই অভিনয় করতে হয়। প্রশ্ন জাগে, তাহলে এই পদ্ধতিটা এত কঠিন ও কর্কশ করার প্রয়োজনটা কী? ভার্জিনিয়া বলে, তার দায় ছিল প্রমাণ করার যে এই দম্পতি অযোগ্য। কিন্তু অযোগ্য কেন? আরিয়ান তার সঙ্গে সঙ্গম করেছে, অর্থাৎ নিজের সন্তানের সঙ্গে সঙ্গম করেছে, এইজন্য? না কি ভার্জিনিয়া যখন জ্বলন্ত গ্রিনহাউসে মরে যাচ্ছিল, তখন আগুনের ভয়ে আরিয়ান তাকে বাঁচাতে যায়নি, এইজন্য? অথচ ভার্জিনিয়া ওই সঙ্গমকালে ছোট মেয়ের মতো আচরণ করছিল না, বরং মূল্যায়নের পরীক্ষক ভার্জিনিয়ার মতোই হাবভাব করছিল, এবং এ-কথাও জানা, আরিয়ানের আগুনে ফোবিয়া আছে (অতীতে, কৃত্রিম পোষ্য বানানো হচ্ছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে জনতা আগুন লাগিয়ে দেয়, আরিয়ানকে জানলা দিয়ে ঝাঁপিয়ে প্রাণ বাঁচাতে হয় ও সে প্রচুর আঘাত পায়)। দেখেশুনে তো মনে হয়, ভার্জিনিয়া তাদের হাতে পেয়ে র‍্যাগিং করছিল, তাদের অপদস্থ ও অপমান করে আনন্দ পাচ্ছিল। সে কীসের মূল্যায়ন করছিল, তাদের পিতৃত্ব বা মাতৃত্বের, না কি তাদের দাম্পত্য প্রেমের? অতীতে তারা কে কার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছিল, সে-কথা এখন উন্মোচনের প্রয়োজন কী? ভার্জিনিয়া কেন মিয়াকে চুমু খাচ্ছিল, দেখতে চাইছিল সে অন্যের প্রতি আকৃষ্ট হয় কি না? সে কেন আরিয়ানের সঙ্গে যৌনতা করল, দেখাতে চাইল সে দাম্পত্যে অনুগত নয়? যদি একজন স্বামী বা স্ত্রী অন্য কারও সঙ্গে যৌনতা করে, সে কি সন্তানকে ভালবাসার বা পালন করার যোগ্য থাকে না? মিয়ার গোটা জীবনের সাধনা যেখানে রক্ষিত সঞ্চিত, যা সে তিল-তিল করে গড়ে তুলেছে এবং প্রতিদিন যেখানে সে কাজ করে চরিতার্থতার স্বাদ পায় (যার মধ্যে মিয়াকে তার মা’র দেওয়া অর্কিড-ও রাখা আছে একমাত্র স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে), ভার্জিনিয়া সেই গ্রিনহাউস পুরোপুরি ধ্বংস করে তারপর আগুন লাগিয়ে দেয় শুধু বিপন্ন শিশুর ভূমিকায় অভিনয় করার জন্য (এবং পরীক্ষা করার জন্য: ‘মা-বাবা’ তাকে উদ্ধার করতে কতটা মরিয়া)? সে কি এসেছিল এদের চলতি জীবনটাকে তছনছ করে দিতে? না এদের সম্পর্কে চিড় ধরাতে? রাষ্ট্র যখন পোষ্যদের মেরে ফেলার আদেশ দেয়, ভার্জিনিয়া নিজের হাতে নিজের পোষা কুকুরকে মেরে ফেলতে বাধ্য হয়েছিল, সেইজন্য কি সে আরিয়ানের প্রতি বিদ্বিষ্ট? সে নিজে দরিদ্র, তাই কি সে সমাজের উচ্চতম ০.১%-এর অংশ এই বড়লোক-বর্গটাকে ঘেন্না করে ও এদের দুমড়ে-মুচড়ে আনন্দ পায়? তার নিজের আট বছরের মেয়ে জলে ডুবে মারা গেছে এবং রাষ্ট্র তাকে বলেছে মূল্যায়নের কাজ ভাল করলে অদূর ভবিষ্যতে একটা বাচ্চা পালন করার অনুমতি দেবে, এদিকে মনে-মনে সে জানে সে-দিন কখনওই আসবে না, তাই সে এই বাচ্চা-আকাঙ্ক্ষী লোকগুলোকে অত্যাচার করে ও ব্যর্থতার মার্কশিট দিয়ে তুষ্টি বোধ করে? সে আরিয়ানের সঙ্গে সঙ্গমের সময়ে বার বার বলে কেন, তুমি জিনিয়াস, তুমি অতুলনীয়? মিয়া নিজে একজন অতি বুদ্ধিমতী ও সক্ষম নারী হিসেবে এরকম নিঃশর্ত ভজনা কখনও করবে না, সে-কথা আরিয়ানকে মনে করিয়ে দিতে (আরিয়ান তার প্রশ্নের উত্তরে আগে বলেছিল, মিয়া একটু বেশিই চোখা, এবং তা তার ভালই লাগে)? 

এই মূল্যায়ন চলাকালীন, সমুদ্রের ধারে বসে, এক সময়ে মিয়া আরিয়ানকে জিজ্ঞেস করেছিল, আমি কি একটা শিশুর দায়িত্ব নেওয়ার সত্যিই উপযুক্ত? আরিয়ান বলে, তুমি তো তোমার মা নও। মিয়া বলে, তা-ই যদি হই? আরিয়ান বলে, মা তোমায় ছেড়ে চলে গেছিল। তুমি নিশ্চয়ই তা কখনও করবে না। মিয়া-র মা’কে ছবি জুড়ে নতুন বিশ্বের বিশ্বাসহন্তা হিসেবেই বর্ণনা করা হয়। তিনি হয়তো এই কৃত্রিমতার বিরুদ্ধে সঙ্গত কারণে বিদ্রোহ করেছিলেন। তিনি সন্তানকে ছেড়ে গেছিলেন, কারণ তিনি এই বহু-মানুষকে-বাদ-দেওয়া বৈষম্যভিত্তিক রাষ্ট্রকে অস্বীকার করেন, কিন্তু সন্তানদের ওই তীব্র অস্বাচ্ছন্দ্যে নিয়ে যেতে চাননি? মিয়া সন্তানকে ছাড়ে না বটে, সে স্বামীকে ছেড়ে, এই নতুন বিশ্বকে ছেড়ে, শেষে সেই পুরনো বিশ্বেই চলে যায়, যেখানে অমরত্ব নেই, কিন্তু কৃত্রিম ও রাষ্ট্র-অনুমোদিত আনন্দ-আয়োজন যেখানে গলা টিপে দেয় না। আরিয়ান তার দুরন্ত বৈজ্ঞানিক প্রতিভায় বানিয়ে নেয় ভার্চুয়াল মিয়া এবং একটা শিশু। এ কি হওয়ারই ছিল? পরীক্ষক এসে তাদের সম্পর্কের ফাঁকগুলোকে স্পষ্ট করে দিল শুধু? আমরা এরকম বহু অমীমাংসিত প্রশ্নের দিকে তাকিয়ে ছবিটা শেষ করি বলেই ছবিটা চট করে শেষ হয় না।