প্রবন্ধ

ঢাকা ডায়েরি: পর্ব ১২

‘একজন অন্তর্মুখী মানুষ যে উপায় নিতে পারেন কাজী আনোয়ার হোসেন তাই করলেন। কুয়াশা নামে একটা রহস্যভেদী চরিত্র তৈরি করে দুই খণ্ড রহস্যকাহিনী লিখলেন। শুরু হলো প্রকাশকদের দুয়ারে দুয়ারে ঘোরা। এক প্রকাশক দুই বইয়ের বিনিময়ে দুইশ টাকা দিতে চাইলেন। কিন্তু দুইশ টাকায় তো রাইফেল কেনার পয়সা উঠবে না। অতএব তিনি পাণ্ডুলিপি ফেরত নিয়ে এলেন। লেখালেখিতে আপাতত কিছুটা বিরতি। শিকারী হওয়া আর হলো না। তবে, মাছ শিকারের নেশা ছাড়তে পারেননি সমস্ত জীবন। মাছ শিকার করতে তো আর বিলেতি রাইফেল লাগে না।’ কাজী আনোয়ার হোসেন এবং তাঁর রহস্যকাহিনি।

সুমনা রায় (Sumana Roy)

উত্তরবঙ্গ ডায়েরি: পর্ব ১২

‘শপথ-গ্রহণের দিন এসে গেল এবং তিনি যত্নসহকারে তাঁর পোষাক বেছে নিয়েছিলেন। কর্তব্যক্ষেত্রের পরিধানে যেন সাংস্কৃতিক গর্ব সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে, এই ছিল তাঁর ইচ্ছা— দাউরা-সুরুয়াল এবং বির্কে টোপি, কোমরবন্ধে খুখুরি। সঙ্গী জ্যোতি বসুর চেয়ে উচ্চতায় প্রায় এক ফুট দীর্ঘ রতনলাল, ধীরেসুস্থে বিধানসভা ভবনের দক্ষিণ প্রবেশদ্বারে এসে পৌঁছলেন।’

দেবদত্ত পট্টনায়েক (Devdutt Pattanaik)

সরস্বতীকে বোঝা শক্ত

পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করার ইচ্ছে, আর সম্পদ ও শক্তি দিয়ে নিজেদের পুষ্ট করার বাসনা উৎসারিত হয় ভয় থেকে। সরস্বতী সেই জ্ঞান, সেই দর্শন, যা আমাদের সেই ভয়কে জয় করার ক্ষমতা দেয়। বিশ্বের প্রকৃত রূপ, এবং নিজেদের আসল রূপ জানার মধ্য়ে দিয়ে এই ভয়কে জয় করা যায়। জ্ঞানং দেহি!

রজত চৌধুরী

ঘোলাজলে ভাইরাস

‘অন্তত ২২টি দেশ কোভিডের সময়ে নিজেদের পরিবেশ-সংক্রান্ত নিয়ম বদলেছে, বা নতুন নিয়মকানুন এনেছে, যার ফলে পরিবেশের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বিস্তর। ব্রাজিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ভারতে এই প্রবণতা সর্বাধিক।’ লকডাউনে আইন বদল।

দিল্লি ডায়েরি: পর্ব ৮

‘গত বছরের অন্তিম মাসে শুরুর দিকে সবার চোখে স্বপ্ন, প্রাণে আশা, রেস্তোরাঁ উপছে পড়ছে, যানজট, মেট্রোভর্তি যাত্রী, দোকানপাট খোলা, মলেও ভিড় (যদিও কেনাকাটা আগের তুলনায় কম, তার কারণ বলা বাহুল্য), রেলস্টেশনে-বিমানবন্দরে লোক উপচে পড়ছে। আর তার এক মাসের মধ্যেই নানা নিষেধাজ্ঞা, রোজ রাতে এবং শনি-রবি সারাদিন কারফিউ, আবার সবাই যে যার গর্তে সেঁধিয়ে গেছে।’

প্রত্যয় নাথ

যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা

‘আসল যুদ্ধের মতোই খেলাতেও গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেওয়া যায় শত্রুর দেহ, কম্পিউটারের পর্দায় দেখা মেলে তার রক্তমাখা দেহের, যদি না শত্রু আগেই নিশানা করে ঝাঁঝরা করে দেয় আমাকে। যুদ্ধ কতটা কঠিন হবে— সহজ, মাঝারি, শক্ত, না কি খুব শক্ত— তা আগে থেকে ঠিক করে নেওয়া যায় মাউসের ক্লিকে।’ যুদ্ধের খেলা এবং আমাদের হিংস্রতার সুপ্ত প্রবৃত্তি।

শাঁওলি কথা, অমৃতসমান

‘ব্যক্তির সামর্থ্যের সীমারেখা নিয়ে বারবার শাঁওলি মিত্র তাঁর জীবনে ভাবনাসঙ্কুল হয়ে থাকবেন। তাঁর অভিনীত প্রতিবাদী চরিত্ররা বারবার হেরে যাবে, আবার মাথা তুলে দাঁড়াবে, আবার হেরে যাবে, কখনও-কখনও তাঁদের হারিয়ে দেবেন অভিনেতা বা নির্দেশক শাঁওলি মিত্র নিজেই।’

পণ্ডিত অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়

বিরজু মহারাজ: বহমান ইতিহাস

বিরজু মহারাজের মধ্যে ছিল আদির বীজ, তার সঙ্গে বর্তমানের সৃষ্টি ও বিশ্লেষেণের মিশ্রণে তিনি পরিণত হয়েছিলেন এক মহীরুহে। যে মহীরুহের মধ্যে গ্রথিত ছিল বহমান সৃষ্টির ইতিহাস। এক সম্পূর্ণ নৃত্যশিল্পী যিনি রচনা করেছিলেন নৃত্যের এক মহাবিশ্ব।

তন্ময় বসু

মেজাজেও মহারাজ

বিরজু মহারাজ জীবনকে উপভোগ করতে পারতেন তার সব রকম উপাদানের মধ্যে দিয়ে। কোনও বাঁধাগতে না রেখে মনকে, শিল্পকে অনেক বড় বৃত্তে ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন। এবং সেই কারণেই তাঁর শিল্প ছিল এতটা প্রসারিত। এমন পূর্ণাঙ্গ মানুষ, এমন ব্যক্তিত্ব এখন বিরলও নয় বোধহয়, অমিল।

নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শান্তিনিকেতন ডায়েরি: পর্ব ১২

‘শান্তিনিকেতনের প্রকৃতি, ঋতুর আবর্তন, তার রূপ, রস, গন্ধ, বর্ণ, স্পর্শকে এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই আমার। সেই সবই যেন হঠাৎ এক একটা ধাক্কা দিয়ে চলে যায় আমাদের। সম্বিত ফিরে এলে মনে হয়, তবে কি খুঁজে পেলাম একটা কবিতাই? কতবার যে এরকম মনে হয়েছে, তার ঠিক নেই।’ রোজকার জীবন থেকে পাওয়া কবিতা।

নক্ষত্র-যাপনের প্রতিপ্রস্তাব ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়

‘অপুর সংসার’ থেকে ‘বরুণবাবুর বন্ধু’– প্রায় ছয় দশকের পথচলায় সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ভাবে তিনি জড়ো করে চলেন অসংখ্য নুড়িপাথর যা ক্রমশ গড়ে তোলে বাঙালির এক অত্যাশ্চর্য সমান্তরাল উপকথা। উত্তমকুমারের থেকে বাঙালির প্রাপ্তি অপরিসীম, তবু যেন রয়ে গেছিল এক অপূর্ণতা—সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সত্যজিৎ সহযোগে সেই না পাওয়ার আক্ষেপ পূরণ করে দিলেন– তাঁর অনায়াস উপস্থিতিতে।’ জন্মদিন ১৯শে জানুয়ারি; সাংস্কৃতিক কৌলীন্য ও আভিজাত্যে চিরকালীন সৌমিত্র।

জয়দীপ মিত্র

শূন্যের মাঝারে ঘর

নদীর সাথে নারীর এক চিরকালীন বন্ধুত্ব আছে বলেই কি না কে জানে, গঙ্গাসাগরে দেখেছি জলে নেমে দাঁড়ালেই যে কোনো বৃদ্ধার শরীর থেকে জীর্ণতার খোলস ধুয়ে যায়, আর ম্যাজিকের মতো বেঁচে ওঠে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে তাঁর আজন্ম আড়াল করা মুখ। গঙ্গাসাগরের পুণ্য।