প্রবন্ধ

খান রুহুল রুবেল

ঢাকা ডায়েরি: পর্ব ১৩

‘আমার দেখা মেলার ১৮ বছরও কম নয়। প্রথম যখন অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আসি, তখন মেলা হত শুধু বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। মাত্র একটা প্রবেশ পথ, বেরোবার একটা পথ। মেলায় ঢোকা— সেটা যদি শুক্র শনিবার বা অন্য ছুটির দিন হত— তাহলে সে এক মহাপ্রস্থানের পথ। প্রায় দেড়’দুই কিমি লাইন, সেই শাহবাগ মোড় থেকে শামুকের মতো ঠেলে-ঠেলে মেলায় ঢোকার অভিজ্ঞতা, তখনকার লোকেরা জানেন। ‘

যুদ্ধ কীসে হয়

‘দুষ্ট রাশিয়াই ছলে-বলে-কৌশলে নানা অসহায় দেশ দখল করে বসে আছে, আর সেই সব বেচারা দেশ অসহায় প্রজার মতো নেটোর দরবারে ধর্না দিলেও নেটো কিছু করেনি। অতএব এই যুদ্ধ আসলে একটি ‘সবল বনাম দুর্বল’ বাইনারি। এঁরা ইঙ্গিত দিচ্ছেন, পূর্ব ইউক্রেনের খারকিভ, লুহানস্ক, দনেতস্ক অঞ্চলে রুশ-সমর্থক গোষ্ঠীরা যেন আচমকাই সক্রিয় হয়ে উঠল, যেন রুশদেশের সাম্রাজ্যবিস্তার ছাড়া তাদের ক্রোধের কোনও ইতিহাস নেই।’ এই যুদ্ধের ছোট্ট ইতিহাস।

গৌতম ভট্টাচার্য

মহাতারাদের মাস্টারমশাই

‘হপম্যানের রাজ করা দীর্ঘ সময়ে অস্ট্রেলিয়ান চ্যাম্পিয়নদের সমাবেশ দেখলে চোখ ধাঁধিয়ে যাবে৷ ইন্টারন্যাশনাল টেনিস ফেডারেশন এই যে ঘটা করে ‘হল অফ ফেম’ দেয়, এঁরা তো সমবেতভাবে ‘হল অফ ফেম ভবন’! লিউ হোড৷ রয় এমার্সন৷ রড লেভার৷ ফ্রেড স্টোলে৷ ম্যাল আন্ডারসন৷ টনি রোচ৷ জন নিউকোম্ব৷ নিল ফ্রেজার৷ কেন রোজওয়াল৷ মুম্বই ক্রিকেট টিমের রঞ্জি আধিপত্যের মতো একচেটিয়া ছিল সার্কিটে অস্ট্রেলিয়ার প্রাধান্য৷’

উত্তরবঙ্গ ডায়েরি: পর্ব ১৩

‘আমরা বাতাবাড়ি কেন এসেছি, তা আমি ভাবতে শুরু করি। মাসখানেক আগে, যখন বেড়াতে যাওয়ার আগ্রহটা আমাদের কথোপকথনে উঁকি-ঝুঁকি মারা শুরু করে আর আমরা কাছাকাছির মধ্যে বেড়িয়ে আসার জায়গা খুঁজতে শুরু করি – অবশ্যই শহুরে জীবনের ভিড় ছেড়ে পালিয়ে আসার প্রবল ইচ্ছেটার প্রভাবে – বাতাবাড়ির নাম কিন্তু খুব একটা উঠে আসেনি।’ ডুয়ার্সকে শোনা।

মণীশ তিওয়ারি

নতুন লৌহযবনিকা

এক নতুন লৌহযবনিকা জন্ম নিচ্ছে এই পৃথিবীর বুকে। সেই যবনিকার আড়ালে থাকবে মস্কো, বেইজিং এবং তেহরানের মত প্রাচীন রাজধানীগুলো, এবং পাকিস্তানের মতো কিছু স্যাটেলাইট রাষ্ট্র। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ জন্ম দেবে এক আতঙ্কিত পৃথিবীর।

ভয়ঙ্কর সুন্দর

পাহাড় নিশির মতো ডেকে নিয়ে যায় আর ম্যাজিকের মতো হাপিশ করে ফেলে। এক মুহূর্তের ভুল। আর পুরো জীবনটাই ‘মিসটেক!’ ‘মিসটেক!’। আর তাই পাহাড়ে ভরসা শেরপা-বাণী, যা যে কোনও সাবধানবাণীর চেয়ে অনেক মূল্যবান। ভয়ঙ্কর আর সুন্দরের মাঝে শেরপা-ব্রিজ।

সঞ্চারী মুখোপাধ্যায়

বাপ্পিদা, ডিস্কো আর ‘সেই’ সময়

তবু বাপ্পি লাহিড়ী জিতে গেলেন। কেন? কারণ তিনি পরোয়া করলেন না। না পরোয়া করলেন তাঁর প্রতি বিদ্রূপের, না পরোয়া করলেন তাঁর গলা নিয়ে নিন্দুকের মন্তব্যের আর না পরোয়া করলেন তাঁর জীবনযাপনের দিকে ধেয়ে আসা বাক্যবাণের। তিনি নিজের স্বগর্ব উপস্থিতি ঘোষণা করলেন নিজের যাপনের মধ্যে দিয়ে। বাপ্পীদা, থোরা অলগ সবসে!

মালবিকা ব্যানার্জি (Malavika Banerjee)

জুম-এ জন্মদিন

‘ভারতে এই জুম-পার্টির একেবারে বাঁকবদলের ঘটনা হল, ২০২০ সালে কোনও এক ঋদ্ধিমা সাহনির ৪০-তম জন্মদিনে, তাঁর স্বামী ঠিক করলেন, আত্মীয়রা ‘আপ য্যায়সা কোই’ গানটার সঙ্গে নাচবেন, যেটা ১৯৮০-র একটা সুপারহিট গান। এই জুম-পার্টির ভিডিওটা ভাইরাল হল, আর অনেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে এটার নকল করতে লাগলেন। একটাই মুশকিল, ঋদ্ধিমার সব আত্মীয়ই দিব্যি সুন্দর দেখতে আর তাঁদের চালচলনও বেশ ধোপদুরস্ত। ঋদ্ধিমার ভাই হচ্ছেন রণবীর কাপুর, তাঁর মা নীতু কাপুর (যাঁর বয়স বাড়ে না), আর তাঁর তুতো-বোনেরা হলেন করিনা কাপুর ও করিশ্মা কাপুর।’

অমলকে লেখা চিঠি

‘‘ডাকঘর’-এর অনেকগুলি প্রযোজনার মধ্যে সবথেকে মন ছুঁয়ে গিয়েছিল বিখ্যাত মণিপুরি নাট্যপরিচালক কানহাইয়ালাল-এর প্রযোজনাটি। সেখানে আমার দেখা পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী (পরিচালকের স্ত্রী) সাবিত্রী হাইসাম অভিনয় করেছিলেন অমলের চরিত্রে, তাঁর বয়স তখন ৬০-এর ঘরে। অবাক হয়ে দেখেছিলাম, ছোট্ট অমলকে তিনি কীভাবে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন নিজের ভেতরে! এই লকডাউনের সময়টা আমাদের দেখাল এক নতুন সমাজের চেহারা। রবীন্দ্রনাথের নাটকে ‘রাজা’র অর্থ ভীষণ আলাদা, ডাকঘর বা বিসর্জনের রাজা আমরা কখনও পাব কি না জানি না, তবে এই সময় অমলকে নিজেদের ভেতর বাঁচিয়ে রাখাটা বড্ড জরুরি।’

মৈত্রীশ ঘটক

সাহিত্য, বাজার, অস্বস্তি

‘ বিমূর্ত শিল্পও তো বিক্রি হয়। তার শৈল্পিক মূল্য একটা ব্যাপার, আর মানুষের হাতে বিনিময় হবার সময় একটা আর্থিক অঙ্ক যুক্ত হয়ে যায়— সেটা আরেকটা ব্যাপার। আসলে মূল্য (value) আর দাম (price)— বা মার্ক্সের ভাষায় ব্যবহার-মূল্য আর বিনিময়-মূল্য— অনেক সময়ে একই অর্থে ব্যবহৃত হলেও, ব্যাপার দুটো সম্পূর্ণ আলাদা। মূল্য মানুষের মনে, যে মনের গহন রহস্য অনেক সময় বোঝা মুশকিল। আর দাম হল চাহিদা আর জোগানের ঠোকাঠুকিতে ঠিক হওয়া একটা অঙ্কমাত্র, যাতে কোনো জিনিসের বিনিময় হয়।’

জয়া মিত্র

ভিন্নরঙের মহাকাব্য

‘ঋত্বিকের ‘সুবর্ণরেখা’য় পরিত্যক্ত এয়ারপোর্টে সীতার মুখে সেই আলগা ভাসিয়ে দেওয়া মন্তব্যটি মনে পড়ে, ‘কবে একটা যুদ্ধ হয়েছিল, এখনো দেখ তার দাগ পড়ে আছে।’ কোন সেই আদিম যুদ্ধের বীজ— ভূমি আর নারীর দখল নিয়ে, ক্ষমতাশালী পিতৃতন্ত্র যা থেকে তৈরি করে কখনো ইলিয়াড, কখনো মহাভারত, বা রামায়ণ। অন্য কোনো দেশে ক্ষমতাদখলের আরো কোনো গাথা। কিন্তু দেখি, আমাদের নিত্যজানিত এই সীমানার বাইরেও কত অভিনব রূপে বেঁচে ছিল সেই গাথাগুলি— যাদের নাম ‘জয়কাব্য’ নয়।

তরুণ মজুমদার

সৌমিত্র, আপনাকে

‘সেই সৌমিত্র, আপনি, এভাবে কোনও নোটিস না দিয়ে চলে গেলেন? অভিনেতা তো বটেই, আপনার মতো এমন একজন ‘টিম ম্যান’কে হারাবার ক্ষতি আমরা কী ভাবে পূরণ করব? মনে পড়ে কি ‘গণদেবতা’র লোকেশন শুটিংয়ের সেই দিনগুলির কথা? বীরভূমের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে আমরা শুটিং করে বেড়াচ্ছি, ভোর চারটেয় উঠে তৈরি হওয়া, দিনভর দাপাদাপি, তারপর সন্ধে হলে প্যাক‌-আপ।’