ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • এলেভূত


    তৃণাঙ্কুর বন্দ্যোপাধ্যায় (February 12, 2022)
     

    মাতাল হলে অঙ্কুর নাটুকে হয়ে যায়। ট্যাক্সি-ড্রাইভারকে বলল, ‘ভাই, একে আমি হারিয়ে যাওয়া বলব কী করে? একে তো আমি খুঁজে পাওয়া বলব। আজ তুমি এভাবে রাস্তা হারিয়ে না ফেললে, তোমাকে তো আমি খুঁজে পেতাম না, পেতাম?’

    অঙ্কুরের গলার আবেগে ট্যাক্সিওয়ালাও ইমোশনাল হয়ে পেছনে তাকিয়ে বলল, ‘এটা যে বলে দিলেন দাদা, এটা যে কী বড় একটা কথা বলে দিলেন, খুবই বড় একটা কথা বলে দিলেন কিন্তু। আপনাকে পেয়ে আমার জীবনটা বনে গেল। আর কেউ হলে রাস্তা হারিয়ে ফেললে এই হ্যাপি নিউ ইয়ারের রাতে রামখিস্তি খেতাম। আপনি সেখানে আমাকে…। ম্যাপ আমি বানিয়েছি? না কোম্পানি আমার চাচার ফুফার? কিন্তু আপনি খিস্তি তো আমাকেই দেবেন, বলুন কিনা?’

    অঙ্কুর বলল, ‘সেটা ঠিক, কিন্তু ব্যাপারটা কী জানো, আজ হারিয়ে গিয়েও খারাপ লাগছে না। প্রথমে একটু লেগেছিল। কিন্তু বাড়িতে তো একাই থাকি। ফিরে গেলেও তো একাই বসতাম। আজ তোমার সঙ্গে অনেক ভাল সময় কাটছে।’ তারপর, ট্যাক্সির অ্যাপে আড়চোখে ড্রাইভারের নামটা দেখে নিয়ে বলল, ‘তুমি বেশ গুছিয়ে কথা বলো কিন্তু, উধম সিং!’

    আগেও দু’একবার ম্যাপ দেখে ভুলভাল জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে অঙ্কুর, এটা একেবারে নতুন নয়। তবে ট্যাক্সিতে হয়নি বোধহয়। ঠিক মনেও পড়ছে না এখন। কিছুই ভালো করে মনে পড়ছে না ভেবে, নিজের মনেই একটু হাসল সে। এই যে কিছু মনে না-পড়ার অনুভুতিটা, এটা এত সুন্দর, এত নির্ভেজাল! ভাবনাচিন্তার মধ্যে থাকতে কি আর ভাল লাগে! সন্ধ্যায় আজ প্রথমে বসল কুণ্ডুর সঙ্গে, ডিলটা নিয়ে নাকি আলোচনা আছে। কিন্তু সব বাহানা। কুণ্ডু বউয়ের থেকে পালায়, একবার বলবে বিজনেস মিটিং আছে নৈহাটিতে, আরেকবার বলবে ক্লায়েন্ট ডেকেছে ঠাকুরপুকুরে। দুরে-দূরে মিটিং ফেলে, যাতে তাড়াতাড়ি ফিরতে না হয়। কোথাও যায় না, অঙ্কুরকে নিয়ে বসে মাল খায়। বউ কি আর জানে না, নৈহাটি থেকে রাম চড়িয়ে ফিরছে না। রামের গন্ধও তো সেরকম! কতবার সে বলেছে হুইস্কি খেতে। কুণ্ডুর থেকে ছাড়া পেয়ে কয়েকটা বিয়ার কিনল অঙ্কুর। রাতে একা বসে খাবে বলে। নিউ ইয়ার, নিউ প্রমিস, সেলিব্রেট তো করতে হবে, না কি? কিন্তু পৌঁছানো নিয়েও তো কেস। ম্যাপ যে কী দেখাচ্ছে! অঙ্কুরের নিজের ফোনেও দেখেছে, পুরো ভুলভাল। কানেক্টিভিটি তো পুরো, সব ক’টা বার আছে, কিন্তু কোথায় যাচ্ছে, কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। অ্যাপের ওপর ভরসা আছে? খেয়াল না করলেই আরেক জায়গায় এনে ফেলবে। এ তো হল এলেভূত, ভেবে আবার হেসে ফেলল সে। ট্যাক্সিওয়ালাকে বলল, ‘এলেভূত পতা হ্যায় সিং সাব? অ্যাপ-ম্যাপ সব এলেভূত হ্যায়।’

    এলেভূতে ধরলে দিক হারিয়ে যায়। গোল-গোল করে একই জায়গায় ফিরিয়ে নাকাল করে ছাড়ে এলেভূতে, ছোটবেলায় ঠাকুমা বলত, এখন হঠাৎ মনে পড়েছে। আরেকটা ছিল নিশির ডাক, উত্তর দিলেই নাকি ডাবের মধ্যে আত্মাটা পুরে নিয়ে যেত।

    ট্যাক্সিওয়ালা বলল, ‘দাদা, এল্লেভূট? কেমন যেন শোনা-শোনা লাগছে, ঠিক ধরতে পারছি না। আপনি যা খাইয়েছেন আসলে, আজ যে কী ফিল আসছে দাদা! হেব্বি ফিল আসছে, উফ! ঠান্ডাটাও কমে গেল।… আচ্ছা, আপনাকে একটা কথা বলি, যেটা কাউকেই কোনওদিন বলিনি?’

    অঙ্কুর বলল, ‘অবশ্যই বলো। আজ না বললে কবে বলবে?’

    ট্যাক্সিওয়ালা বলল, ‘যদি না হাসেন, তা হলে বলি…’ বলে, অঙ্কুর হাসে কি না সেটুকু দেখার অপেক্ষা না-করেই বলল, ‘ছোটবেলাতে বেশি কথা বলতাম। আমাকে তাই সবাই তোতেলাল বলে ডাকত। আমার গুঁসসা হত, কিন্তু আমি বেশি কথা বলতাম বলেই তো বলত, যেমন এখন বলছি। ওরা ঠিকই বলত। কিন্তু আমার যে খরাব লাগত, সেটা আজ আপনাকে বললাম।’

    ট্যাক্সিওয়ালা বোধহয় সত্যিই বেশি কথা বলে, ভাবতে-ভাবতে অঙ্কুর দেখল, যদি-বা বলেও, তাও এই বলার মধ্যে কী আশ্চর্য একটা আন্তরিকতা আছে। নিছক হালকা নয়। বহুদিন ধরে চেপে রাখা কথা নিশ্চয়ই, তাকেই তো বলল ভার লাঘব করতে? ক্ষণিকের আত্মীয়তার কী আশ্চর্য মাহাত্ম্য, ভেবে গায়ে কাঁটা দিল তার। শুধু অচেনা লোককেই কিছু-কিছু কথা বলা যায়। অঙ্কুর বলল, ‘এরকম সবারই কিছু-না-কিছু থাকেই তোতেলালজি। আমারও অনেক কিছুই বলার ছিল, যা বললে মন হালকা হত, কিন্তু আজ পারব না। আরেকদিন দেখা হলে নাহয় বলব। আজ আমি কিছুতেই পারব না— কী সব যেন বলতে ইচ্ছেও করছে, কিন্তু এই যে ঘন মৌজ, এর মধ্যে কি মনে থাকে সব?’

    ট্যাক্সির অ্যাপে চোখ রেখে নামটা আবার দেখে নিয়ে অঙ্কুর বলল, ‘সরি, উধম সিংজি।’ তোতেলালকে তোতেলাল বলে ফেলেছে, যদি রেগে যায়? রাস্তার থেকে চোখ সরিয়ে পেছনের সিটে বসে থাকা অঙ্কুরের দিকে তাকিয়ে উধম সিং বলল, ‘আপনি আমাকে তোতেলালই বুলাবেন। মুঝে খরাব নহি লগা, বল্কি, বহত হি অচ্ছা লগা। আমি তো আর বাচ্চা না যে খরাব লাগবে? যো সচ হ্যায় ওহ তো সচ হি হ্যায়? খামোখা আমি ভেগে বেড়াই। আপ বড়ে ভাই হ্যায় মেরা আজ সে।’

    অঙ্কুর বলল, ‘তুমি যাতে খুশি, আমিও তাতেই খুশি। কতদিন নিজেদের জন্য বাঁচব বলো তো তোতেলাল… মনে রেখো, বিজ্ঞান আমাদের দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ। আজ এলেভূতে না ধরলে আবেগ আসত?’

    ম্যাপ যে কী দেখাচ্ছে! অঙ্কুরের নিজের ফোনেও দেখেছে, পুরো ভুলভাল। কানেক্টিভিটি তো পুরো, সব ক’টা বার আছে, কিন্তু কোথায় যাচ্ছে, কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। অ্যাপের ওপর ভরসা আছে? খেয়াল না করলেই আরেক জায়গায় এনে ফেলবে। এ তো হল এলেভূত, ভেবে আবার হেসে ফেলল সে। ট্যাক্সিওয়ালাকে বলল, ‘এলেভূত পতা হ্যায় সিং সাব? অ্যাপ-ম্যাপ সব এলেভূত হ্যায়।’

    তোতেলাল বলল, ‘এল্লেভূট, হা-হা-হা, এল্লেভূট…’

    ব্যাগের মধ্যে থেকে আরেকটা বোতল বার করে তোতেলালের হাতে ধরিয়ে দিয়ে অঙ্কুর বলল, ‘আরেকটা নাও ভাই, তোমার আজ গলা শুকোতে দেব না। মালের দায়িত্ব আরোহীর, জানো তো?’

    বোতলটা হাতে নিতে-নিতে তোতেলাল বলল, ‘লেকিন জাদা হয়ে যাচ্ছে না তো দাদা, আপনি তো পুরো দুকান খরিদ নিয়েছেন!’

    কতগুলো বিয়ার কিনেছিল, সেটা এখন মনে পড়ছে না। কিন্তু খুব বেশি তো কেনার কথা না, ফুরোচ্ছে না কেন সেটাও আশ্চর্য। ভেবে, নিজেও ওদিকে না তাকিয়েই ব্যাগের মধ্যে হাত বাড়াল অঙ্কুর। দেখলেই ফুরিয়ে যাবে, আলবাত। হাতে অনেকগুলোই যেন ঠেকল, তার থেকে বেছে বেশি চিল্ড যেটা, সেটা তুলে নিয়ে মুখে লাগিয়ে অঙ্কুর দেখে তোতেলাল রাস্তা দেখবে কী, তার দিকে হাসি-হাসি মুখে তাকিয়ে আছে। সেও হেসে ফেলল। ফুর্তি জিনিসটাই এরকম, এত ছোঁয়াচে!

    টাইয়ের ফাঁসটা আরেকটু আলগা করে দিয়ে তোতেলালকে বলল, ‘জরুর মুঝে খুশি হোগি আপকো তোতেলাল বুলানে মে ভাইয়া।’ তারপর, সে এখনও পেছনেই তাকিয়ে আছে দেখে হালকা আশঙ্কিত হয়ে বলল, ‘লেকিন আপ কভি-কভি রস্তা ভি দেখ লিজিয়ে।’

    ব্যাপারটা ভালই চলছিল। আগে থেকেই দুজনে বিয়ার টানছে। রাস্তা হারিয়ে গেল যখন, তখন থেকেই। বোর হয়ে অঙ্কুর খেতে শুরু করেছিল আড়াল করে, তোতে দেখে ফেলল। আপত্তিও করতে যাচ্ছিল কীসব ট্যাক্সিতে মাল খাওয়া নিয়ে, কিন্তু হাতে ধরিয়ে দেওয়াতে স্যাট করে খেয়ে নিয়ে বলল, ‘ঠান্ডার রাত তো দাদা, একটু নিলে ভালই লাগে।’ তারপর কতগুলো যে খেয়েছে, সেটা মনে পড়ছে না। তবে ভালই টানছে। ফুরোচ্ছেও না!

    এইসব ভাবতে-ভাবতে হঠাৎ তোতেলাল বলে, ‘হা রাম!’ মিইয়ে গেছে পুরো হঠাৎ যেন। তাকে দেখে অঙ্কুরের গ্লুকোজ বিস্কুট চায়ে ডোবানোর কথা মনে পড়ল। ঠিক টাইমে না তুলে নিলেই কেস, ভেঙে চায়ের মধ্যে পড়বে, আর তোলাই যাবে না। অঙ্কুর বলল, ‘কী হল তোতে? সব চাঙ্গা?’

    তোতে ধরা গলায় বলল, ‘সামনে তো দেখুন, রাস্তায় মামা।’ সত্যিই সামনে এক পুলিশ তাদেরকে হাত দেখাচ্ছে। অঙ্কুরও একটু ঘাবড়ে গেল। থামতে তো হবেই? কিন্তু গাড়িতে তো নিশ্চয়ই বিশাল মালের গন্ধ!

    তোতেও বলল, ‘মাল খেয়ে চালাচ্ছি বুঝলে বিশাল কেস দেবে। আপনার কিছু না। আমার যে মা, বউ-বাচ্চা আছে। আর ছন্নি, তারও তো কেউ নেই…’

    অঙ্কুর বলল, ‘সেটা আগে বোঝা উচিত ছিল, আমি তো আর জোর করে তোমাকে খাওয়াইনি।’ বলে মনে হল, অকারণে বেশি কড়া কথা হয়ে গিয়েছে, তোতা তো আর তাকে মাল খাওয়ানোর জন্য অ্যাকিউজ করেনি।

    ‘তুমি দাঁড়াও, আমি বুঝে নেব। কিন্তু ছন্নি কে?’

    তোতেলালের মুখ এদিকে কাঁচুমাচু, বেশ মুষড়ে পড়েছে বেচারা। বলল, ‘আপনি আর কী করবেন, আমারই ভাগ্য খারাপ। আজ লাইফে প্রথম মাল খেলাম। মানে, গাড়িতে। আপনি বোধহয় ভাবলেন আগে খাইনি কোনওদিন? সেটা কিন্তু বলিনি। খাই, গাড়িতে না। একেবারে যে না তা নয়, কভি-কভি, কিন্তু ড্রাইভ করার সময় তো কভি নহি, বাস এক ইয়া দো বার, জাদা হলে চার কি পাঁচবার…’

    ইতিমধ্যে গাড়ি এসে পুলিশের কাছে দাঁড়াতে ল্যাম্পপোস্টের আলোয় অঙ্কুর দেখল, দশাশই চেহারার পুলিশ, নির্বোধের মতো চোখমুখের কাটিং, মোটা পাকানো গোঁফ, আর বুকে লেখা আছে, কৃষ্ণপদ বিশ্বাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইন্সপেক্টর। ইঙ্গিতে কাচ নামাতে বলল। তোতেলাল আড়ষ্ট হয়ে আছে, নিজেকে কোনও ক্রমে ধরে রেখেছে, বেশ বোঝা যাচ্ছে। অঙ্কুরর মনে হল টেনশনে বেফাঁস কিছু না করে বসে, ফিসফিস করে বলল, ‘আমি খাচ্ছি বলো।’ আধখোলা কাচের মধ্যে দিয়ে নীচু হয়ে কৃষ্ণপদ বিশ্বাস মাথা ঢোকাতেই অঙ্কুর বলল, ‘কী হয়েছে ইনস্পেক্টর? কী ব্যাপার! এনিথিং আউট অফ প্লেস?’

    অবশ্য দেখা গেল আশঙ্কা করার মতো তক্ষুনি কিছু নেই। অঙ্কুরর প্রশ্নকে পাত্তা না দিয়ে সোজা তোতেলালকে জিজ্ঞাসা করল কৃষ্ণপদ বিশ্বাস, ‘ওদিকে যাচ্ছ? আমাকে একটু সামনে ছেড়ে দেবে?’ বলেই ভেতরে হাত ঢুকিয়ে লক খুলে বসে পড়ল।

    অঙ্কুরের হ্যাঁ বা না বলার কোনও জায়গাই নেই। আর প্রশ্ন তো করেনি এমনিতেই। এখন বিশেষ তর্কাতর্কিতে গেলে মদের গন্ধ পেতে পারে। এমনিতে কেন পাচ্ছে না, সেটাও একটা বিষয়, অঙ্কুর ভাবল। কৃষ্ণপদ বিশ্বাস পেছনে ফিরে তাকে বলল, ‘আই অ্যাম বিশ্বাস। একটু স্মোক করলে অসুবিধে নেই তো?’ বলার কায়দায় মনে হল আপত্তি করার কোনও জায়গা নেই। তাছাড়া, ধোঁয়ার গন্ধে মদের গন্ধ খানিকটা হয়তো চেপে যাবে। বিশ্বাস নিবিষ্ট মনে কী একটা পাকাচ্ছে। অঙ্কুর দেখল আড়চোখে তোতেলালও দেখছে। নিশ্চয়ই সিগারেট রোল করে খায়।

    আগুন ধরাতে অবশ্য কেস বোঝা গেল। ট্যাক্সি পাতার গন্ধে ভরে গেল। অঙ্কুর বুঝল, লাইনের লোক। আর পুলিশও তো মানুষ, তার কি শখ হয় না! আহা রে, ও নিশ্চয়ই খুবই একা, আমাদের মতোই। কিছু বলতে ইচ্ছা করছে। কী বলবে বুঝে না পেয়ে বলল, ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার মিস্টার বিশ্বাস!’

    পুলিশ তাতে হুম্ফ গোছের কিছু একটা উত্তর দিল, কিছু বোঝা গেল না ঠিক করে।

    এদিকে গন্ধটাও বেশ আনমনা করে তোলে। বিয়ার টেনে-টেনে বোর হয়ে গেছে। একটু চাইলে কি আর কিছু মনে করবে! কিন্তু বললেই কি আর দেবে! পুলিশকে পুরোপুরি বিশ্বাস করা যায় না। যেভাবে ঘুষখোরদের ধরে, নিশ্চয়ই নেশাড়ুদের ধরার কায়দাটাও এরকমই। ট্র্যাপ। কিন্তু ইচ্ছে যখন করছে, একটু ট্রাই মারায় ক্ষতি কী! ডিরেক্টলি না বললেই হল। যে বোঝার সে বুঝে নেবে। অঙ্কুর কায়দা করে বিশ্বাসকে বলল, ‘তামাকের গন্ধটা বেশ ভাল মিস্টার বিশ্বাস। সেই কলেজের কথা মনে পড়ে যায়!’

    বিশ্বাসের কোনও হেলদোল নেই। এভাবে হবে না, ডিরেক্ট অ্যাপ্রোচ দরকার। ওদিকে আড়চোখে তোতে দেখছে। ওর পছন্দ হচ্ছে না পুলিশের সঙ্গে এত কথা।

    অঙ্কুর এবার আরেকটু ডিরেক্ট গেল, বলল, ‘আর আছে নাকি মিস্টার বিশ্বাস?’ বিশ্বাস ঘুরে তাকে একবার মেপে নিয়ে বলল, ‘কী? কী আছে!’

    ট্র্যাপ হতেই পারে। অঙ্কুর বুঝল, ঠিক করে না খেললে হবে না। বলল, ‘ওই তো যেটা খাচ্ছেন! তামাক?’

    ‘কী খাচ্ছি জানেনই না, তা হলে খাবেন কী করে?’

    মহা ঝামেলা। পুলিশটা তাকে খেলাচ্ছে। অঙ্কুর বলল, ‘জানি বলেই তো বলছি আছে কি না।’

    বিশ্বাস বলল, ‘নাম বলতে লজ্জা এদিকে খাওয়ায় লজ্জা নেই? আগে নামটা তো ঠিক করে বলুন! নাম বললে তবেই তো দেওয়ার কথা ভাবা যেতে পারে।’

    কমিট করিয়ে নিচ্ছে। অঙ্কুর ওই ফাঁদে পা দেওয়ার লোক নয়। অন্য অ্যাপ্রোচ নিয়ে বলল, ‘বিয়ার চলে?’ বলে, উত্তরের অপেক্ষা না করেই একটা বোতল ব্যাগ থেকে বার করে এগিয়ে দিল। পেছনে হাত বাড়িয়ে বিয়ারটা নিয়ে ইম্পোর্টেড দেখে বিশ্বাস একটু নরম হল বলে মনে হল।

    অঙ্কুর এবার ট্রাই মেরে বলল, ‘নাম বলছি, গ’এ আকার দিয়ে শুরু, চন্দ্রবিন্দু, জ’এ আকার দিয়ে শেষ। এবার পাওযা যাবে?’

    বিশ্বাস বলল, ‘মিলল না, চ দিয়ে শুরু, স দিয়ে শেষ, মাঝে ব’এ শূন্য র। অভ্যাস নেই, সারা রাত জলতেষ্টা পাবে।’ অঙ্কুর বলল, ‘ওই হল, একই গাছ তো, গন্ধও একই রকম। দিলে দিন, না দিলেই বা কী!’

    নিজের জয়েন্টটা ঠোঁটের কোণে ঝুলিয়ে আরেকটা রোল করতে শুরু করল বিশ্বাস। অঙ্কুর বলল, ‘আহা, কাউন্টারও তো খেতে পারতাম।’ বিশ্বাস রোল করা থামিয়ে পেছনে তাকিয়ে বলল, ‘দাদা, শুনছেন বাজারে চারদিকে কত রোগ, এই বাজারে অন্যের মুখেরটা খায়? আকাটের মতো কথা। মাস্ক কই আপনার?’ অঙ্কুর আমতা-আমতা করে বলল, ‘এই তো পকেটে।’ বের করেও দেখাল। মাস্ক দেখে বিশ্বাস কিছুটা শান্ত হয়ে বলল, ‘ঠিক আছে। না নিয়ে বেরোবেন না।’

    তোতেলাল এদিকে অনেকক্ষণ ধরে কী একটা বলার চেষ্টা করে চলেছে। কেউ শুনছেই না দেখে তোতেলাল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ‘ওসব তো পরে হতে পারে দাদা। এদিকে হল কী, গাড়ি আমি কিন্তু চালাচ্ছি না, নিজের মতোই চলছে। অনেকক্ষণ চালাচ্ছি না। এই দেখুন না, ব্রেক করছি…’ বলে ব্রেক প্যাডেল দাবাল… ‘দেখলেন, গাড়ি কিন্তু রুখল না, এই দেখুন ডাইনে করছি, হিলছে গাড়ি, হিলছে না? দেখুন না, নতুন সওয়ারিও নিয়ে নিয়েছে।’

    অঙ্কুর বলল, ‘সওয়ারি নিয়েছে মানে? আমি তো একাই বুক করলাম, এখন আরেকজন প্যাসেঞ্জার তুলবে বললেই হল? গাড়ি ঘুরিয়ে নাও এখনই।’

    তোতে বলল, ‘বড়ে ভাই, আমি তো কন্ট্রোলই করছি না, এই দেখুন সব ছেড়ে দিলাম।’ বলে সিটের ওপর পা গুটিয়ে হাত ছেড়ে বসে পড়ল। দেখা গেল গাড়ি তাও দিব্যি চলছে। বাঁ-দিকে টার্নও নিল। অঙ্কুর বলল, ‘দিস ইজ রিডিকিউলাস, তোতেলাল। আমি কমপ্লেন করব।’

    তোতের এখনও নেশা কাটেনি, বলল, ‘এল্লেভূট। নিশ্চয়ই করুন।’

    বিশ্বাস জানালের বাইরে ঠোঁট সরু করে ধোঁয়া ছেড়ে তোতেকে জিজ্ঞেস করল, ‘এল্লেভূট কী? আর এটা তুই কী করছিস? বাটাম খাওয়ার শখ হয়েছে তোর?’

    তোতে ঘাবড়ে গেছে, বলল, ‘বড়ে ভাই জানতা হ্যায় এল্লেভূট। লেকিন সচ মে, আমি চালাচ্ছি না, হামি গরিব, মা-বউ-বাচ্চা আছে, মাফ করে দিন হুজুর।’

    তোতেকে এরকম অকারণে ভেঙে পড়তে দেখে বিরক্ত হয়ে অঙ্কুর বলল, ‘আর ছন্নি? ওকে কে দেখবে?’ তারপর মোবাইলে চোখ রেখে বলল, ‘কমপ্লেন কোথা থেকে করব বুঝতে পারছি না। ম্যাপ ভুল, গাড়ি আপনাআপনি চলছে, গাড়িতে এক্সট্রা লোকজন তুলছে। কিন্তু লেখার জায়গা নেই, রিডিকিউলাস!’

    তোতে বলল, ‘কমপ্লেনটা হারামিরা লুকিয়ে রাখে সাব, আমি দেখিয়ে দিচ্ছি।’ বলে হাঁচড়-পাঁচড় করে পেছনে চলে এল হ্যান্ডব্রেকের ওপরের ফাঁকটা দিয়ে। বিশ্বাস ব্যাপারটা লক্ষ রাখছিল রোল করতে-করতে, এবার হাঁ-হাঁ করে উঠে বলল, ‘আরে তুমি পেছনে গেলে ড্রাইভারের সিটে কে বসবে? এটা আবার কী হচ্ছে?’

    তোতেলাল এদিকে অনেকক্ষণ ধরে কী একটা বলার চেষ্টা করে চলেছে। কেউ শুনছেই না দেখে তোতেলাল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ‘ওসব তো পরে হতে পারে দাদা। এদিকে হল কী, গাড়ি আমি কিন্তু চালাচ্ছি না, নিজের মতোই চলছে। অনেকক্ষণ চালাচ্ছি না। এই দেখুন না, ব্রেক করছি…’ বলে ব্রেক প্যাডেল দাবাল… ‘দেখলেন, গাড়ি কিন্তু রুখল না, এই দেখুন ডাইনে করছি, হিলছে গাড়ি, হিলছে না? দেখুন না, নতুন সওয়ারিও নিয়ে নিয়েছে।’

    বিশ্বাস দুঁদে এসআই, কিন্তু এরকম কিছু দেখেনি বলে একটু বিচলিত মনে হচ্ছে। তোতে একটু ভেবে বলল, ‘আমি তো এমনিতেই চালাচ্ছি না, পরের সওয়ারিকে বসিয়ে লিবেন।’

    গাড়ি সত্যিই পরের সওয়ারিকে তুলতে এগিয়ে যাচ্ছে নিজে-নিজেই। ড্যাশবোর্ডে লাগানো মোবাইলের ম্যাপে লাল বিন্দুটা এগিয়ে আসছে। বিশ্বাসের রোল করা হয়ে গেছে, জয়েন্টটা পেছনে ঘুরে অঙ্কুরকে দিতে-দিতে বলল, ‘এভাবে গেলে আর বাড়ি পৌঁছানো হয়েছে। গাড়ি থামলে আমি নেমে যাচ্ছি। কাল সকালেও ডিউটি দিয়েছে—’ বলে তোতের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তুই কাল সকালে থানায় রিপোর্ট করবি, তোর গাড়ির নম্বর নিয়ে নিয়েছি। না দেখলে বাটাম চার্জ করব তোর বাড়ি গিয়ে। তোর বাবা-ঠাকুর্দাকেও বাটাম দেব।’

    অঙ্কুর লাল বিন্দুটা দেখছিল। বলল, ‘রিডিকিউলাস, নেক্সট প্যাসেঞ্জারকে আমি তুলতেই দেব না। মাই মানি, আমার ওয়ালেট থেকে কাটছে, একেই আগে থেকে ঘুরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মিস্টার বিশ্বাস, এই রাতের বেলা ফিরেই আবার সকালে ডিউটি? টাফ লাইফ!’

    কাচের ফাঁক দিয়ে ছাই ঝেড়ে বিশ্বাস বলল, ‘স্টাফ কম, রাস্তায় বেলেল্লা বেশি, নিউ ইয়ারে আমাদের চাপ থাকে। নেমে একটা অন্য কিছু ধরে নেব।’

    আরেকটা মোড় ঘুরতেই গাড়ি অবশ্য দেখা গেল হাতে মোবাইল-ধরা এক স্মার্ট মহিলার দিকে এগোচ্ছে। স্মোক করছিল, গাড়ি দেখে সিগারেট ফেলে এগিয়ে আসছে। অঙ্কুর বলল, ‘ইনি নাকি? জায়গাটা নির্জন। না তোলা কি ঠিক হবে? নিশ্চয়ই অসুবিধায় পড়েই ট্যাক্সি বুক করেছেন।’

    তোতেলালের ব্যাপারটায় সেরকম সায় নেই। বলল, ‘আমরা নিজেই তো জানি না কোথায় যাচ্ছি, ওনাকে পৌঁছে দেব কী করে। তাছাড়া, গাড়ি তো নিজের মতোই চলছে, ব্রেক কষবে কে?’ কৃষ্ণপদ বলল ‘আমি, আমি কষব ব্রেক। যদি নিজেই না থেমে যায়।’ কথাটা যুক্তিযুক্ত, কারণ কৃষ্ণপদই একমাত্র সামনের সিটে বসে আছে। ওর পা যাবে। তোতেলাল আর অঙ্কুর তো পেছনের সিটে!

    অঙ্কুর আবারও বলল, ‘আমাদের তুলে নেওয়াই উচিত, এত রাতে খালি রাস্তায় সব মদ-গাঁজা খেয়ে লোকে ঘুরছে, মাতালদের ভিড়, কেউই নিজেদের সেন্সে নেই। কখনওই একা এক মহিলাকে ছেড়ে যাওয়ার মানে হয় না।’ কৃষ্ণপদ সিটবেল্ট খুলে একটা পা বাড়িয়েই রেখেছিল ব্রেক চাপার জন্য, কিন্তু গাড়ি এসে আপনিই থেমে গেল হালকা করে। অঙ্কুর ফিসফিস করে তোতেকে বলল, ‘দেখেছ কীরকম ব্রেক করল? কিছুদিন পর দেখবে কোনও গাড়িতেই ড্রাইভার থাকবে না, এই জন্যই।’

    মহিলা নীচু হয়ে ইতিমধ্যে ভেতরের চেহারাটা দেখে খানিক অবাক হয়ে বললেন, ‘ড্রাইভার কোথায়? হোয়্যার ইজ হি? হাউ ইনক্রেডিবল!’

    কৃষ্ণপদ যেন উত্তর নিয়ে তৈরিই ছিল, বলল, ‘ম্যাডাম, নিউ টেকনোলজি, নো ড্রাইভার, সিট প্লিজ।’

    অঙ্কুর বলতে শুরু করেছিল, ‘এই যে আপনি এখানে নামবেন বলছিলেন? আপনার তো কাল ডিউটি আছে তাড়াতাড়ি।’ কিন্তু কৃষ্ণপদর লাল-লাল চোখ দেখে আর বেশি কিছু বলল না।

    এদিকে কৃষ্ণপদকে ব্যাগটা ধরিয়ে দিয়ে মহিলা ড্রাইভারের সিটে উঠে দরজা বন্ধ করতেই মসৃণ গতিতে গাড়ি আবার চলতে শুরু করল। কৃষ্ণপদ বলল, ‘স্পেশাল চেয়ার ফর চেয়ারম্যান, ম্যাডাম। মাইসেল্ফ কেপি।’

    মহিলা বললেন, ‘আমি মিসেস সালোনি, ভেতরে খুব স্টাফি না? আপনারা স্মোক করছিলেন নাকি? বন্ধ গাড়িতে স্মোকিং আমার ডিজগাস্টিং লাগে।’ শুনে কৃষ্ণ তড়িঘড়ি কাচ নামিয়ে দিল। আদেখলামো দেখে রাগ হল অঙ্কুরের, কৃষ্ণপদকে দেখিয়ে বলল, ‘এই যে উনি, কীসব পাতা রোল করে খাচ্ছিলেন, আই উইল বেট ইটস নট টোব্যাকো!’

    মিসেস সালোনি বাতাস শুঁকে বললেন, ‘হ্যাশ মনে হচ্ছে? কাউন্টার হবে? নর্ম্যালি আমি একটু কনজার্ভেটিভ, কিন্তু আজ পার্টির মুডে আছি।’ বলেই হা-হা করে হাসলেন।

    ওর জয়েন্টটা গাড়ি থামতেই ফেলে দিয়েছিল হাতের বিয়ারের বোতলের মধ্যে, এখন আফশোষ হল। কৃষ্ণপদ ড্যাশবোর্ডে ঘষে শুধু আগুনটা নিভিয়েছিল, ফশ করে লাইটার দিয়ে জ্বালিয়ে একটা টান দিয়ে মিসেস সালোনির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘ইওর্স ওনলি।’ অঙ্কুর আবার বলতে গেছিল, ‘এই যে মুখেরটা দিলেন, এবারে কি রোগ ভ্যানিশ, নাকি?’ কৃষ্ণপদ পেছনদিকে চোখ পাকিয়ে তাকাতে শেষের কথাগুলো ফিসফিসেয়ে বলল।

    অন্য অ্যাপ্রোচ নিতে হবে দেখে অঙ্কুর ব্যাগের থেকে একটা বিয়ার বার করে মিসেস সালোনির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘কেয়ার ফর আ বিয়ার? দিস ইজ অঙ্কুর বাই দ্য ওয়ে।’ মিসেস সালোনি অঙ্কুরকে আগে বোধহয় খেয়ালই করেননি। এখন ধোঁয়া ছেড়ে হাত থেকে বিয়ার নিতে-নিতে বললেন, ‘এটা তো পুরো চিল্ড! পাচ্ছেন কোথায়! মুচাস গ্রাসিয়াস। আর গাড়িটাই বা চলছে কী করে?’

    সত্যিই, বিয়ার যেন আগের থেকেও ঠান্ডা, ফ্রিজের মতো!

    তোতেলাল অনেকক্ষণ কিছুই বলতে পারেনি, এখন আধো গলায় বলল, ‘এল্লেভূট!’

    মিসেস সালোনির পেছনেই তোতে বসায়, এতক্ষণ সে চোখে পড়েনি। এবার কাত হয়ে পেছনে আড়চোখে দেখে বললেন, ‘আর আপনি কে? এল্লে… হোয়াটেভার কী জিনিস?’

    তোতেলাল বলল, ‘হামি তো ড্রাইভার আছি।’

    ‘ড্রাইভার তো পেছনে কেন?’ মিস সালোনির প্রশ্নে কৃষ্ণপদ কিছু একটা যা-তা উত্তর দেওয়ার আগেই অঙ্কুর তাড়াতাড়ি বলে দিল, ‘আই থিঙ্ক দিস ইজ সাম টেক ইনোভেশন, ইউ নো? তোতে তো অনেকক্ষণ থেকেই পেছনে। সেল্ফ-ড্রাইভিং প্রোটোটাইপ হতে পারে। প্রগ্রেস, ওহ মাই ডিয়ার গড! আমি নাম দিলাম এলেভূত। মানে, আমার ছোটবেলায় ঠাকুমা বলত এলেভূতে ধরলে আর বাড়ি পৌঁছানো যায় না, এক জায়গাতেই ঘুরতে থাকে। আমরাও অনেকক্ষণ ঘুরছি তো… প্রথমে ভাবলাম ম্যাপটা খারাপ, তারপর বুঝলাম গাড়িটাই নিজে চলে!’

    কৃষ্ণপদ এতক্ষণে বুঝে বলল, ‘ওহ!’

    ওদিকে মিসেস সালোনি বললেন, ‘ঠিক ধরতে পারলাম না। এনিওয়ে, কল মি সাল্লো। আমার বন্ধুরা তাই বলে। কিন্তু বাড়ি ফিরব না আমরা? সবাই তো ওয়েট করছে!’ তারপর চোখ টিপে বললেন, ‘হোয়াট ইফ দে আর! এই পার্টিটাও তো ভাল!’

    এর মধ্যে কখন তোতে ব্যাগে হাত ঢুকিয়ে দিয়েছে। বলল, ‘ভেতরে কত বড় আছে রে বাবা ব্যাগটা, বাহর থেকে তো লাগেই না! ভেতরে কম সে কম আরও দশ বোত্তল বিয়ার আছে।’ তারপর আরেকটু হাত নাড়িয়ে বলল, ‘জাদা হোবে, চালিস।’ অঙ্কুরও হাত দিয়ে দেখে ঠিকই, তা হবে, অথচ সাইড ব্যাগই তো। সে বলল, ‘আজ রাতের এনাফ স্টক আছে দেখছি!’

    সাল্লোও এবার বেশ খুশি। বললেন, ‘গাইজ, গাইজ, আমার কিন্তু প্রথমে মনে হচ্ছিল উঠব না তিনটে লোক দেখে, এত রাতে। কিন্তু না উঠলে তো হতই না এরকম দেখা। আই লাইক ইউ অল। আ ভেরি হ্যাপি নিউ ইয়ার টু ইউ গাইজ!’

    গাড়ির সবাই বোতল তুলে চেঁচিয়ে ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ বলল সাল্লোর দেখাদেখি। আজ কী তুখোড় কাটছে সত্যি। পৌঁছলে তো আবার সেই একই সব কিছু। পৌঁছাচ্ছেই বা কে? সিগনাল দিয়ে ডানদিক কাটিয়ে এলেভূতে পাওয়া গাড়ি তার সওয়ারিদের নিয়ে রাতের অন্ধকারে যে কোনদিকে মিলিয়ে গেল এরপর, ঠিক বোঝা গেল না।

    ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook