প্রিয় সুবিমল: পর্ব ২

ভালমানুষি, দয়া, ঘৃণা

কলকাতা যখন হাংরি আন্দোলন নিয়ে তোলপাড়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তখন আইওয়ায়। সেখান থেকে মলয় রায়চৌধুরীকে যে-চিঠি লিখেছিলেন (১০.৬.৬৪), তার বয়ান ওয়াকিবহালমাত্রেই জানেন। সুনীল লিখেছিলেন— ‘চালিয়ে যাও ওসব আন্দোলন কিংবা জেনারেশনের ভণ্ডামি। আমার ওসব পড়তে বা দেখতে মজাই লাগে। দূর থেকে। সাহিত্যের ওপর মৌরসি পাট্টা বসাতে এক-এক দলের অত লোভ কী করে আসে, কী জানি।

তবে তারও বছরখানেক আগে সমীর রায়চৌধুরীকে লেখা সুনীলের একটি অপ্রকাশিত চিঠি পড়ে বোঝা যায়, হাংরিদের নিয়ে তখনও তিনি কিঞ্চিৎ অভিমানী। ১৯৬৩ সালের মে মাসে, অদ্যাবধি অপ্রকাশিত সেই চিঠিতে সমীরকে তিনি লিখছেন— ‘হাংরি জেনারেশন ব্যাপারতাও আমার কাছে শিরঃপীড়া হয়ে উঠেছে— ওতে আমি যোগ দিইনি বলে মলয়ের কাছ থেকে গঞ্জনা পাচ্ছি— কাপুরুষ বলে। কিন্তু কি করে যোগ দিই— সে কথা মলয়কে লেখা যায় না।’ খানিক এগিয়ে অভিমান— ‘শক্তির নামে বেরুচ্ছে, শক্তি না বললে না চাইলে কি করে লিখবো।’ সুনীল অভিমানভরে এ-ও জানাচ্ছেন যে, তিনি নিজেই ‘ওদের’ (হাংরিদের) ডেকে অক্ষমতার জন্য ক্ষমা চাইবেন। ‘যদি আমাকে দলে নেয়।’ শক্তি চট্টোপাধ্যায় অনুরোধ করলে, সুনীলও কি যোগ দিতেন হাংরি জেনারেশনে? চিঠিটির ইঙ্গিত সেদিকেই। সুনীল যে শেষাবধি হাংরিদের দলে নাম লেখাননি, তা আমরা জানি। পরবর্তীতে তীব্র অপছন্দই ব্যক্ত করেছেন এই আন্দোলন সম্পর্কে। যদিও মলয় রায়চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা চলাকালীন, মলয়ের পক্ষেই সাক্ষ্য দিয়েছিলেন তিনি।

আরও পড়ুন: ‘মলয় রায়চৌধুরী একটা সিংহের বাচ্চা, বাকি সবকটা নেংটি ইঁদুর’, কোন প্রসঙ্গে সুবিমল বসাককে চিঠিতে লিখেছিলেন মলয়? লিখছেন তন্ময় ভট্টাচার্য…

ধারাবাহিকের প্রসঙ্গে ফেরা যাক। সুবিমল বসাক যখন হাংরি আন্দোলনে যোগ দেন (১৯৬৩), সুনীল তখন বিদেশে। ফলে, তাঁর সঙ্গে সেভাবে মোলাকাত হয়নি সুবিমলের। উভয়ের আলাপ হয় সুনীল ফিরে আসার পর। সুবিমলের ডাইরিতে, ১৩.১২.৬৫-র নোটে পাওয়া যাচ্ছে, বন্ধুদের জমায়েত থেকে ফেরার সময়ে, সুবিমল ও সুনীল একসঙ্গে। উদ্ধৃত করা হল—

আসার সময় সুনীল আমি একা। সুনীল জানালো USIS লাইব্রেরী থেকে হবার কথা। বুদ্ধদেব বসু, প্রেমেন্দ্র মিত্র, জ্যোতি দত্ত অনেকে গেছিলো, নানাবিধ কথা হলো। রেণু (ফণীশ্বরনাথ রেণু) কেমন লেখে, তার অনুবাদ ঘরোয়ায়— আমি approach করতে পারি না। শেষে আমার বই। প্রেমেন্দ্র মিত্র বলেছেন, জানো হাংরিদের বই বেরিয়েছে। আমি লিখতে বললাম— বাংগাল ভাষা জানেন বলে। বললেন— লিখবো! আমি আবার আমার আস্তানায় আসতে বললাম। রাত হয়ে গেছে বলে হোলো না। একদিন যেতে বললো সকালের দিকে।

দিন সাতেক বাদে, ২০ তারিখ গিয়েছিলেন সুবিমল। ডাইরিতে লেখা— ‘সকালে সুনীলের কাছে। লেডী চ্যাটার্লির বই জন্য এবং Depak Majumdarএর ঠিকানা। অনেকক্ষণ, প্রায় ২ ঘণ্টা আলোচনা হলো। ঢাকার কথা জিজ্ঞেস করলো, তারপর আমি লেখা, বাবার মৃত্যুর কথা, ঢাকায় মুসলমানের প্রভাব, বসাকদের কথা, সিনেমার কথা, ব্রথেল সম্পর্কে, পিকাসো— অটোমেটিক লেখা সম্পর্কে— অনেকক্ষণ।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও সুবিমল বসাক, সাহিত্য অকাদেমির পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে

নাইট্রিক অ্যাসিড খেয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন সুবিমলের বাবা। এছাড়াও সুবিমলের ডাইরিতে বহুবার সুনীল-প্রসঙ্গ এসেছে। সুবিমল ছিলেন সুনীলের থেকে পাঁচ বছরের ছোটো— ফলে অগ্রজ হিসেবে সম্মান ছিল, কিন্তু পরবর্তীতে বড়ো হয়ে উঠেছিল প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার দ্বন্দ্ব। সুবিমলের সংগ্রহে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা দুটি চিঠি খুঁজে পেয়েছি। দুটিই পোস্টকার্ড। প্রথমটি ১৯৬৬ সালের, পরেরটি ১৯৬৭-র। দেখে নেওয়া যাক—

১৩/২/৬৬

প্রিয় সুবিমল,

            অনেক রাত্রে বাড়ি ফিরে বেলা করে ঘুমোচ্ছিলুম, আপনি এসে ফিরে গেছেন। কিন্তু, আপনার উচিত ছিল সোজা ঘরের মধ্যে ঢুকে আসা, তা হলে এক সঙ্গে চা খেওয়া যেতো। তা ছাড়া, ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার কাছে সিগারেট নেই, আপনার কাছে নিশ্চয়ই দু’একটা ছিল?
   ‘ছাতামাথা’ বইটা আবার পড়ে দেখলুম। পৃথিবীর সাহিত্যে এরকম উদাহরণ আর ক’টা আছে, তা নিয়ে আমার মাথা ব্যথা নেই, কিন্তু আগাগোড়া একটা কৌতুক মাখা মুখে বইটি পড়তে ইচ্ছে করে। বইটি সম্পর্কে আমার যেটুকু ভালোলাগা— তার অনেকটা স্মৃতি-উদ্ধার বশতঃ। এরকম বই পড়ে খুব বেশী উল্লসিত হবার বদলে জানতে ইচ্ছে করে, এই লেখক এর পর কী লিখছে। তাই এতদিন চুপ করে বসেছিলুম। কী লিখছেন এখন।
   আশা করি ভালো আছেন। মলয়ের কী খবর?

ভালোবাসা নেবেন
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

চিঠির বয়ান থেকে বোঝা যাচ্ছে, সুবিমল সুনীলের বাড়ি গিয়ে ফিরে আসার পর লেখা। সুবিমল বসাকের প্রথম উপন্যাস ‘ছাতামাথা’ (১৯৬৫) পড়ে সুনীলের প্রতিক্রিয়াও ধরা পড়েছে এতে। ‘স্মৃতি-উদ্ধার বশতঃ’— এই কথাটি জরুরি। সুবিমল উপন্যাসটি লিখেছিলেন ঢাকার কথ্যভাষায়; সুনীলও মূলগতভাবে পূর্ববঙ্গের মানুষ, তাই কি স্মৃতি ফিরে পাওয়ার ভাললাগা? ইঙ্গিত সেদিকেই।

দ্বিতীয় চিঠিটি খানিক আগুন-ঠাসা। সুবিমল-সুনীল সম্পর্ক ততদিনে শীতল হয়ে এসেছিল কি না জানি না, তবে হাংরিদের প্রতি সুনীলের ক্রোধ স্পষ্ট চিঠিটিতে। সুনীল লিখছেন—

১২/৮/৬৭

স্নেহের সুবিমল,   তোমার চিঠি পেয়েছি। তোমাদের হাংরিদের কোনো কাগজে আমি লেখা দেব না— কারণ, তোমরা মিথ্যেবাদী। আমি চ্যাংড়া কিংবা বদমাইসদেরও ভালোবাসি, কিন্তু মিথ্যুকদের সইতে পারি না। আমার ধারনা, একমাত্র বাচ্চা ছেলেরাই মিথ্যে কথা বলে।
   পোস্টকার্ডে নিজের ছবি ছাপানোও ছেলেমানুষী, দেখলেই হাসি পায়। ওসব ছেলেমানুষী যখন এখনও রয়েছে, তখন আমার কাছে লেখা চাইছো কেন, তোমারই মতন আরও কিছু ছেলেমানুষের লেখা ছাপাও তোমার কাগজে, আমি পড়ে মজা পাবো। শিশু সাহিত্য পড়তে আমার বেশ ভালো লাগে।
   এমনিতে ভালো আছো নিশ্চয়ই? আমার শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানাই—

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

সম্ভবত নিজের সম্পাদিত ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ পত্রিকার জন্য সুনীলের কাছে লেখা চেয়েছিলেন সুবিমল। তারই প্রত্যুত্তর এই চিঠি। আর হাংরিদের কয়েকজনের পোস্টকার্ডে ও লেটারপ্যাডে নিজেদের ছবি ছাপা দেখা যেত— এ-ও সত্য। তার প্রেক্ষিতেই কথাগুলি লিখেছেন সুনীল।

সুনীলের লেখা পোস্টকার্ডের উল্টোপিঠে জবাব হিসেবে একটি চিঠির খসড়া লিখে রেখেছিলেন সুবিমল। সম্ভবত প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে এখানে লিখে, পরে ভিন্ন পোস্টকার্ডে সেটি পাঠানো হয় সুনীলের কাছে। সেই খসড়ায় সুবিমল লিখছেন—

২৯.৮.৬৭

প্রিয় সুনীল বাবু,

                আপনার পোষ্টকার্ড পেয়েছি। আজ সকালে রুটীর জন্য দেড় ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে (২) আপনার পোষ্টকার্ডের কথা মনে পড়েছিল। আমার পত্রিকায় লেখা দেয়া না-দেয়া ব্যক্তিগত ইচ্ছের উপর খাড়া থাকে, তার পেছনে একটা যুক্তি থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু আপনার যুক্তিটা আমার কাছে অদ্ভুত ও হাস্যকর ঠেকলো। কারো-কারো চিঠি পড়ে আমার হাসি পেয়ে থাকে। রাজসাক্ষী/সরকারী সাক্ষী সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় বা শক্তি চট্টোপাধ্যায় যেমন বলে— ‘আমার দ্বারা আর কিছু লেখা সম্ভব হচ্ছে না—’ এ ধরনের কথা সহজেই বিশ্বাস করা চলে। মিথ্যেবাদীর যুক্তিতে আমার মনে হয়, আপনার নিজের পত্রিকা কৃত্তিবাসও সাদা কাগজে বেরোবে। মানুষ হলে অনেক কিছু ব্যাপার থাকতে বাধ্য। ছেলেমানুষীর ধারনা সকলের কাছে সমান নয়, যেমন, আমার কাছে অনেক আধবুড়োদের ছোঁক-ছোঁক করে কমবয়সী মেয়েদের পেছনে লেগে থাকাকেও ছেলেমানুষী বলে মনে হয়। সিডিয়ুস করার ব্যাপারটা ভিন্ন।
    আপনি যে ভালো আছেন, সন্দেহাতীতভাবে বিশ্বাস করি। আমার প্রেম ও আন্তরিক শুভেচ্ছা নেবেন। আপনার মা-কে আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাবেন।

সুবিমল বসাক

এই পত্রবিনিময়ের পর কি সুনীলের সঙ্গে সুবিমলের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল? তেমনটি মনে হয় না। কেননা সাতের দশকে একাধিকবার সুনীল-সম্পাদিত ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকায় লিখেছেন সুবিমল। কখনও ‘প্রিয় সম্পাদক’ বিভাগে, কখনও আবার ‘এই পৃথিবী এই দেশ’ বিভাগে। এমনকী, ‘কৃত্তিবাস’-এর ‘ফণীশ্বরনাথ রেণু সংখ্যা’-য় রেণুর কয়েকটি গল্প অনুবাদও করেছিলেন সুবিমল।

ষাটে যে-হাংরি ‘কৃত্তিবাস’-গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন, তিনিই সত্তরে গিয়ে ‘কৃত্তিবাস’-এ লেখেন— এ কি নিজের অবস্থানের সঙ্গে আপোস? সুবিমল বিশ্বাস করতেন, হাংরি আন্দোলন ফুরিয়ে গিয়েছিল ষাটের দশকেই। কিন্তু নিজের হাংরি পরিচয় লালন করেছেন আজীবন। সেই অবস্থান থেকে তাঁর কিছু পদক্ষেপে বিতর্কও জন্মেছে। ২০০৭ সালে, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় যখন সাহিত্য অকাদেমির সভাপতি, অনুবাদের জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পান সুবিমল বসাক, গ্রহণ করেন সুনীলের হাত থেকেই। অথচ তার বছর কয়েক আগেই একই পুরস্কারের জন্য মলয় রায়চৌধুরী মনোনীত হয়েও তা প্রত্যাখ্যান করেন। সুবিমলের এই প্রাতিষ্ঠানিক পুরস্কার গ্রহণ প্রশ্ন তুলে দেয়। সুবিমলের জবাব ছিল, দীর্ঘ চল্লিশ বছরের অধিক সময় ধরে অনুবাদ করে চলেছেন তিনি, তারই স্বীকৃতি এই পুরস্কার— ফলে তা গ্রহণ করতে আপত্তি বা অস্বস্তি ছিল না তাঁর।

এবার চলে আসা যাক পরবর্তী ব্যক্তির চিঠিতে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বন্ধু, মলয় রায়চৌধুরীর দাদা সমীর রায়চৌধুরী, যিনি ছিলেন হাংরি আন্দোলনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য, তাঁর লেখা অনেকগুলি চিঠি রয়েছে সুবিমল বসাকের সংগ্রহে। সেখান থেকেই প্রাসঙ্গিক দুটি চিঠি তুলে ধরা হল।

সমীর রায়চৌধুরী, যৌবনে

প্রিয় সুবিমল, তোমার চিঠি পেলাম। আমাদের বিরুদ্ধতাই আমাদের প্রাপ্য। লোকে যদি মেনেই নেবে তাহলে এত কথা বলার প্রয়োজন ছিলনা। মানবেনা, মানাতে হবে কিম্বা আমরা বলে যাবো এই পর্যন্ত। যা কিছু করছি বাংলাদেশের জন্য নিজের কাছে অপরাধী নই— এই যথেষ্ট। আমাদের বইগুলো চতুর্দিকে Distribute করে দাও। কাছে জমিয়ে রেখে লাভ নেই। তোমার একটা গ্রন্থ খুব তাড়াতাড়ি বের করা দরকার। ফর্মা দুয়েকের হলেও চলবে। রোগাতে কিছুই যায় আসেনা। ক্রমে তোমার লেখা একটা নিজস্ব প্রচন্ডতা ধারণ করছে। আমার খুবই ভালো লেগেছে তোমার মলয়ের কাছে পাঠানো Recent রচনাটি। আমরা ইতিহাসকে আক্রমণ করেছি। ইতিহাস আমরা পাল্টে দেবোই। আরো লেখো। প্রচন্ড লেখা লিখতে হবে। কেবল আত্মকথা। Truth। একটা মারাত্মক লেখা লিখে পাঠাও। 15th Sept. এর মধ্যে। আমার পরিচিত পূজাসংখ্যার জন্য চাই। মাঝে মাঝে কলকাতা তোমাকে যেতেই হবে। H.G.র প্রবাহ বজায় রাখার জন্য। বিব্রত বোধ করলে চলবে না। আমি 1st September অব্দি চাইবাসায় আছি। তারপর যাবো দুমকা। গেলে জানাবো। ‘জানোয়ার’ ইচ্ছে মতন Book-post করতে পারো নানান জায়গায়। আমি প্রয়োজনীয় অর্থ পাঠাবো— জানালে।
     কলকাতায় তোমার পৌছানোর দিন থেকে ছাড়ার দিন অব্দিকে বিবৃত করে একটা বিস্তৃত রচনা লেখো না। খুব ভালো হবে। প্রকাশক আমি জোগাড় দেবো যদি প্রচন্ড সত্য আত্মকথা লিখতে পারো। তোমার দ্বিধা ভয় বাসনা স্পৃহা ঈর্ষা স্বাধীকার ভালোমানুষী দয়া ঘৃণা যা কিছু অকপটে বলতে হবে। ঠিক যেভাবে তুমি কাটিয়েছো। খুব sensational গ্রন্থ হবে তাহলে।
    সময় পেলে আগামী শনিবার চাইবাসা আমার কাছে চলে এসোনা। বেশ কাটানো যাবে। আলাপ আলোচনায়। সোমবার সকালে ফিরতে পারবে। কোনো অসুবিধা নেই। যোগাযোগের ব্যবস্থা আছে। কি? আসবে?
   কেমন আছো! কি লিখছো! আমি পূর্ববৎ।
                                প্রীতি জেনো।

সমীরদা
১৮/৮/৬৪

সমীর যখন এই চিঠি লিখছেন, সুবিমল কর্মসূত্রে মেদিনীপুরে। তাই ‘মাঝে মাঝে কলকাতা তোমাকে যেতেই হবে। H.G.র প্রবাহ বজায় রাখার জন্য’— এই জাতীয় কথা উঠে আসছে। ‘জানোয়ার’ সমীর রায়চৌধুরীর কাব্যগ্রন্থ। সমীর সুবিমলকে বইপ্রকাশের জন্য উৎসাহিত করছেন, কেননা তখনও সুবিমলের প্রথম বই বেরোয়নি। বেরোবে পরবর্তী বছর, অর্থাৎ ১৯৬৫ সালে।

সুবিমল,  ১৩ই পৌঁছবো কলকাতা। সকালে তুফানে রওনা হয়ে বিকালে পৌঁছবো।
   সুনীল ৮ই সকালে পাটনা পৌছচ্ছে। ওখান থেকে দিল্লী এক্সপ্রেসে রওনা হবে। তুমি ও মলয় 7th ভোরে ওর বাড়ীতে গিয়ে ওকে পাটনায় আমাদের বাড়ীতে ওঠার নিমন্ত্রণ জানিয়ে এসো।
   ১৪ই জিতে গেলে, Judgement এর Certified copy নিয়ে যেতে হবে। এবং জিনিষপত্র ফেরৎ দেওয়ার জন্য immediately Court-কে আবেদন জানাতে হবে।
   হেরে গেলে, তৎক্ষণাৎ Stay order এর জন্য ব্যাঙ্কশালে আবেদন জানাতে হবে কোর্টেই। এবং ১৫ দিনের মধ্যে High Court এ appeal করতে হবে।
   নেপালে H.G. অত্যন্ত তৎপর হয়ে উঠেছে। প্রায় জন দশেক শক্তিশালী কবি লেখক এই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। ওখানকার ভারতীয় দূতের আয়োজিত একটি সাহিত্যসভা এই H.G. (পড়া যাচ্ছে না) প্রচন্ড আঘাতে চৈতন্যময় করে তুলেছিল। দিনমানের Sub-editor Sarbeswar Datal Saxena এ খবর দিয়েছে। ও ছিল আমন্ত্রিত কবি। ঐ নেপালী কবিদের ঠিকানা জোগাড় করে পরে পাঠাচ্ছি। মরিশাসেও দুজন তরুণ কবি H.G. আন্দোলন চালাচ্ছেন। মরিশাসের বিশ্ব হিন্দু সম্মেলনের প্রতিনিধির কাছ থেকে এ খবর জানা গেছে।
   পরবর্তী জেব্রার জন্য এ সম্পর্কে একটা প্রবন্ধ Sarbeswar লিখতে রাজী। An encounter with Nepali H.G. poets.
   আমি সর্বেশ্বরকে আমাদের বইপত্র পাঠিয়েছি। জেব্রা ২ কতদূর কি হোলো? লেখা যোগাড় করে নাও। খুঁজে খুঁজে দুএকজন একেবারে তরুণের লেখা রেখো।

প্রীতি
সমীরদা

চিঠিতে নির্দিষ্ট তারিখ লেখা না-থাকলেও বোঝা যায়, ১৯৬৫-র ডিসেম্বরের গোড়ায় লেখা হয়েছিল এটি। সমীর কলকাতায় আসবেন ১৩ তারিখ, ১৪ তারিখ সম্ভবত ব্যাঙ্কশাল কোর্টে মলয়ের বিরুদ্ধে চলা মামলার রায় বেরোনোর কথা ছিল। সেই রায় অবশেষে বেরোয় ২৮ ডিসেম্বর, মলয় অশ্লীলতার দায়ে দোষী সাবস্ত হন। শাস্তি ২০০ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে একমাস কারাদণ্ড। জরিমানা দিয়ে মলয় তখনের মতো রেহাই পান ও রিভিউ পিটিশন দাখিল করা হয় হাইকোর্টে। ১৯৬৭ সালে সেখানে মলয় নির্দোষ প্রমাণিত হন ও মামলা বাতিল হয়ে যায়।

(ডাইরি ও চিঠিগুলির বানান অপরিবর্তিত)
ছবি সৌজন্যে: তন্ময় ভট্টাচার্য