যৌন আকাঙ্ক্ষা বা ফ্যান্টাসি মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। সেই প্রবৃত্তি প্রাচীন। তার ইতিহাসও দীর্ঘ। তবুও বিভিন্ন যুগে, বিভিন্ন মাহেন্দ্রক্ষণে সেই প্রবৃত্তির ওপর বাহ্যিক প্রভাব পড়েছে। সামাজিক, অর্থনৈতিক প্রভাবের ফলে সেই প্রবৃত্তি ভাঙতে ভাঙতে আজ এমন একটা বৃত্তে এসে দাঁড়িয়েছে যে, সেখানে যৌনতা আর কেবলই ভালবাসা বা ঘনিষ্ঠতার প্রকাশ নয়, তার অন্দরে চোরাস্রোতের মতো বেড়েছে হিংস্র মনন। যৌন আকাঙ্ক্ষা চিরকালই ছিল একমুখী। পুরুষশাসিত সমাজে পুরুষরা যেভাবে চেয়েছে, সেইভাবেই যৌনতা এগিয়েছে। পুরুষের আকাঙ্ক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েই গড়ে উঠেছে যৌন ফ্যান্টাসির একাল-সেকাল। সেই ফ্যান্টাসি যুগের পর যুগে বদলেছে, বদলেছে মানুষের মনের ভেতরের হিংস্র চেতনা। এককালে যা ছিল নারী-পুরুষের আদুরে উত্তেজনার উদযাপন, এখন সেটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে দৈনিক রাগের বহিঃপ্রকাশ।
যৌন ফ্যান্টাসি হল এমন মানসিক কল্পনা বা চিন্তা, যা যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি করে, কিন্তু সবসময় বাস্তবে ঘটে না বা ঘটানো হয় না। এটি একটি স্বাভাবিক মনস্তাত্ত্বিক প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে মানুষ নিজের কামনা, কৌতূহল ও অবদমিত ইচ্ছাকে কল্পনার জগতে প্রকাশ করে। রোমান্টিক ফ্যান্টাসি, সবচেয়ে প্রচলিত ও সাংস্কৃতিকভাবে গ্রহণযোগ্য একপ্রকার যৌন ফ্যান্টাসি। এটি সাধারণত মানসিক সংযোগ চাওয়া, স্নেহের তৃষ্ণা ও নিরাপত্তার অভাব থেকে জন্ম নেয়। নারীদের মধ্যে এটি তুলনামূলক বেশি দেখা যায়।
আরও পড়ুন : যুদ্ধ হয়ে উঠছে একটি ভূখণ্ডের ট্রমার কারণ!
লিখছেন রোদ্দুর মিত্র…
বিডিএসএম হল সবচেয়ে বেশি প্রচলিত যৌন ফ্যান্টাসি। এই ফ্যান্টাসিতে এক পক্ষ কর্তৃত্ব করে অন্য পক্ষ আত্মসমর্পণ করে। অনেকেই এই ফ্যান্টাসি পূরণের জন্য বিভিন্ন টুলস বা জিনিস (হ্যান্ডকাফ, বেল্ট ইত্যাদি) ব্যবহার করেন। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, যাঁরা বাস্তব জীবনে নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকেন, তাঁরা অনেক সময় এই ফ্যান্টাসির মাধ্যমে ক্ষমতা ফেরত পেতে চান। এটি নতুন নয়— ভারতের প্রাচীন কামশাস্ত্র ও জাপানি শিবারি সংস্কৃতিতেও বিডিএসএমের উপাদান ছিল। বর্তমানে এটি ‘ফিফটি শেডস অফ গ্রে’-র মতো বই ও সিনেমায় জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ভয়েরিজম (Voyeurism)ও এক্সিবিশনজিম (Exhibitionism) চোখে দেখা বা নিজেকে দেখানো এই ফ্যান্টাসিতে কেউ চায় কাউকে গোপনে যৌনতায় দেখতে, আবার কেউ চায় নিজেকে দেখাতে। এটি অনেক সময় সামাজিক নিষিদ্ধতার বিরুদ্ধে গোপন প্রতিবাদ— নিজের শরীর নিয়ে নিয়ন্ত্রণ ও অভিমান উভয়ের প্রকাশ। এক্সিবিশনজিম (Exhibitionism)-এর মধ্য দিয়ে অনেকে নিজের সৌন্দর্য ও কামনার স্বীকৃতি চান। আবার থ্রিসাম বা গ্রুপ সেক্স ফ্যান্টাসি একাধিক সঙ্গীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়ানোর কল্পনা বহু পুরনো। রোল-প্লে ফ্যান্টাসি (Roleplay fantasy) হল মানুষ নির্দিষ্ট চরিত্রে অভিনয় করে— যেমন শিক্ষক-ছাত্রী, ডাক্তার-রোগী, পুলিশ-চোর ইত্যাদি। এতে একদিকে থাকে পরিচিতির আরাম, অন্যদিকে অচেনা পরিস্থিতির উত্তেজনা। এটি যৌন সম্পর্কের একঘেয়েমি কাটাতে কার্যকর বলে মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন। ট্যাবু বা নিষিদ্ধ ফ্যান্টাসি এখানে মানুষ এমন সম্পর্ক বা পরিস্থিতি কল্পনা করে যা সমাজ বা ধর্ম মেনে নেয় না—যেমন পরকীয়া, গুরু-শিষ্যা, বয়সে অনেক বড় বা ছোট পার্টনার। অপরিচিত বা Anonymous sex ফ্যান্টাসি পরিচয়হীন কারও সঙ্গে হঠাৎ ঘনিষ্ঠতার কল্পনা চলে— যেখানে কোনও সামাজিক বাধা নেই। এই ফ্যান্টাসির পেছনে থাকে ‘জাজমেন্ট’-এর ভয় থেকে মুক্তি, যেখানে আমি কে বা আমার অতীত কী— তা মুখ্য নয়। বর্তমানে টিন্ডার ও ভার্চুয়াল ডেটিং এই ফ্যান্টাসিকে বাস্তব সম্ভাবনায় রূপ দিচ্ছে। ইন্দ্রিয়ভিত্তিক ফ্যান্টাসি শুধু দৃশ্য নয়— স্পর্শ, গন্ধ, কাপড়ের রঙ, গলার স্বর— সবই অনেকের কামনার কারণ হয়ে উঠতে পারে। কেউ হয়তো সিল্ক শাড়ি, কেউ স্নানের গন্ধ বা হালকা পারফিউমকে কামনার ট্রিগার হিসেবে কল্পনা করেন। এটি শরীর ও মস্তিষ্কের এক গভীর যোগাযোগের ফ্যান্টাসি।

যৌন ফ্যান্টাসি কখনওই নিছক ব্যক্তিগত কল্পনা ছিল না। বরং যুগে যুগে সমাজ, সংস্কৃতি, ধর্ম এবং ক্ষমতার কাঠামোর সঙ্গে গড়ে উঠেছে ও পাল্টেছে। প্রাচীন ভারতে কামসূত্র বা বৌদ্ধ তন্ত্রে যৌনতা ছিল এক ধরনের আত্ম-উপলব্ধি ও আধ্যাত্মিক শক্তির অঙ্গ। সেই সময়ের ফ্যান্টাসি ছিল শরীরের রসায়ন, সংবেদনশীলতা এবং মৈথুনকে কেন্দ্র করে—যেখানে শরীরকে পবিত্র ভাবা হত। মধ্যযুগে ধর্মীয় দমন-পীড়নের ফলে যৌনতা ও তার কল্পনা লজ্জা ও অপরাধবোধে ঢাকা পড়ে যায়। ইউরোপে চার্চ ও ভারতে রক্ষণশীল সামাজিক কাঠামো যৌন কল্পনাকে ‘পাপ’ আখ্যা দেয়। এর ফলে যৌন ফ্যান্টাসি হয়ে পড়ে গোপন, অবদমিত, এবং মনস্তাত্ত্বিক চাপে তৈরি।
আজকের যুগে, সোশ্যাল মিডিয়া, পর্নোগ্রাফি, ভার্চুয়াল ডেটিং অ্যাপ ও অনলি ফ্যানসের মতো প্ল্যাটফর্ম যৌন ফ্যান্টাসিকে একধরনের ‘অন-ডিমান্ড প্রোডাক্ট’-এ পরিণত করেছে। প্রযুক্তি ও একাকিত্ব মিলে এই কল্পনা হয়ে উঠেছে আগ্রাসী, ব্যক্তিকেন্দ্রিক ও প্রায়শই প্রেমহীন। প্রেমের জায়গায় এসেছে ক্ষমতা, আত্ম-প্রতিষ্ঠা, রাগ বা সামাজিক অবদমনের বিকল্প ভাষা। ফলে একদিকে যেমন আধুনিক যৌন ফ্যান্টাসি স্বাধীনতা ও নিজের ইচ্ছাকে অনুসরণ করার ক্ষেত্র তৈরি করেছে, অন্যদিকে তা হয়ে উঠেছে একধরনের নিঃসঙ্গ মানসিক ক্লান্তির প্রতিচ্ছবি— যেখানে সম্পর্কের গভীরতা প্রায় অনুপস্থিত।
মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েড তাঁর ‘Three Essays on the Theory of Sexuality’ গ্রন্থে বলেন, যৌন ফ্যান্টাসি হল ‘repressed desire’ বা দমন করা কামনার প্রতিচ্ছবি, যা ব্যক্তি সচেতনভাবে গ্রহণ করতে পারে না, তাই তা কল্পনার আড়ালে বাস্তবায়িত হয়। ফ্রয়েড বলেন, এই ফ্যান্টাসি আসলে অবচেতনের এমন এক মুখ, যেখানে ব্যক্তি নিজের ইড(Id)-এর ইচ্ছা মেটায়— নিরাপদে, সমাজবিরোধী আচরণ না করেও। আধুনিক গবেষক জাস্টিন লেমিলার (Kinsey Institute) ২০১৮ সালে ৪০০০ মানুষের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে দেখান, প্রায় ৯৭% মানুষ জীবনে অন্তত একবার যৌন ফ্যান্টাসিতে মগ্ন হয়েছেন, যার মধ্যে পুরুষের হার ৯৫% ও নারীর ৯১%। এই ফ্যান্টাসির ধরন বহুবিধ— কেউ কল্পনা করেন রোমান্টিক প্রেম ও আবেগভিত্তিক সম্পর্ক, কেউ চান দমন-আত্মসমর্পণের খেলা (BDSM) কেউ voyeurism বা exhibitionism-এর মাধ্যমে দেখার বা নিজেকে দেখানোর কল্পনায় তৃপ্ত হন, কেউবা রোলপ্লে কিংবা থ্রিসাম-এর মতো ট্যাবু ফ্যান্টাসিতে মেতে ওঠেন। এমনকী, সেন্সরি ফ্যান্টাসি, যেখানে কোনও গন্ধ, পোশাক, ছোঁয়া বা শব্দই যৌন উত্তেজনার উৎস হয়ে ওঠে।
যৌন ফ্যান্টাসি আসলে একধরনের মানসিক অনুশীলন, যা আমাদের অচেতনে দমন করা কামনা, ভয়, বা কৌতূহলের প্রতিফলন। নিউরো-সায়েন্টিস্টরা দেখিয়েছেন, যখন কেউ ফ্যান্টাসির জগতে প্রবেশ করে, তখন মস্তিষ্কের লিম্বিক সিস্টেম বিশেষত অ্যামিগডালা ও নিউক্লিয়াস অ্যাকিউমবেনস, সক্রিয় হয়ে ডোপামিন নিঃসরণ ঘটায়— যা আনন্দ ও উত্তেজনার অনুভূতি তৈরি করে। ফলে, ফ্যান্টাসি ব্যক্তি মনে একধরনের পুরস্কার বা স্বীকৃতির অনুভূতি আনে। মনোবিদরা বলেন, ফ্যান্টাসি এমন এক মানসিক ক্ষেত্র যেখানে বাস্তব জীবনের বাধা— যেমন সামাজিক নিষেধ, লজ্জা বা ব্যর্থতার ভয়— থাকে না। এখানেই রয়েছে যৌন ফ্যান্টাসির প্রকৃত মোহ। কার্ল জুং (Carl Jung) যৌন ফ্যান্টাসিকে ‘psyche-র ছায়াময় অংশ’ হিসেবে দেখেন, তিনি বলেন, কামনা শুধু শরীর নয়, আত্মার অভ্যন্তরের প্রতিফলন, যেখানে প্রতীক ও অজানা ভয় একসঙ্গে কাজ করে। তাঁর মতে যৌন ফ্যান্টাসি অনেক সময় মানুষের অবদমিত আত্মপরিচয় বা অব্যক্ত ভালবাসার রূপ। ১৯৪৮ সালে অ্যালফ্রেড কিনসে (Alfred Kinsey) তাঁর গবেষণায় (The Kinsey Reports) প্রথম দেখান, যৌন ফ্যান্টাসি প্রায় সর্বজনীন নারী ও পুরুষ নির্বিশেষে প্রায় সবাই কোনও না কোনও সময়ে কল্পনার মাধ্যমে কামনাকে অভিজ্ঞতা করেন। তিনি বলেন, ফ্যান্টাসি মানুষের যৌন অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে যেমন ধারণা গড়ে তোলে, তেমনই আত্মবিশ্বাস ও আবেগঘন সংযোগে সাহায্য করে।
সাম্প্রতিক সমীক্ষাগুলি জানায়, দেশের প্রায় ৭০-৭৫% প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ কোনও না কোনও ধরনের যৌন কল্পনায় মগ্ন হন। Gleeden-এর এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে ১৯% পুরুষ ও ১৮% মহিলা একাধিক সঙ্গীর কথা কল্পনা করেন, আর ২৩% পুরুষ ও ২০% মহিলা ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড ফ্যান্টাসি উপভোগ করেন। ভার্চুয়াল ফ্লার্টিং নিয়েও কল্পনা করেন ৩১% পুরুষ ও ২৪% মহিলা। ডুরেক্স-এর গ্লোবাল রিপোর্ট অনুযায়ী, ৫৮% ভারতীয়ই যৌন ফ্যান্টাসিকে রোমাঞ্চের উৎস বলে মনে করেন। শুধু তাই নয়, দক্ষিণ ভারতে voyeurism (গোপনে দেখা), fetishism (নির্দিষ্ট বস্তু বা অঙ্গের প্রতি আকর্ষণ), এমনকী, submission-dominance রকমারির কল্পনা খুব সাধারণ। এদিকে কলকাতা শহরের চিত্রও একই রকম আকর্ষণীয়। এখানে একাধিক সঙ্গীর ফ্যান্টাসি ২১% মানুষের, ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড নিয়ে কল্পনা করেন প্রায় ৩১%। ভার্চুয়াল রোমান্স ও ফ্লার্টিং ফ্যান্টাসি উপভোগ করেন ২৪-৩১% নাগরিক।
যৌন ফ্যান্টাসি আসলে একধরনের মানসিক অনুশীলন, যা আমাদের অচেতনে দমন করা কামনা, ভয়, বা কৌতূহলের প্রতিফলন। নিউরো-সায়েন্টিস্টরা দেখিয়েছেন, যখন কেউ ফ্যান্টাসির জগতে প্রবেশ করে, তখন মস্তিষ্কের লিম্বিক সিস্টেম বিশেষত অ্যামিগডালা ও নিউক্লিয়াস অ্যাকিউমবেনস, সক্রিয় হয়ে ডোপামিন নিঃসরণ ঘটায়— যা আনন্দ ও উত্তেজনার অনুভূতি তৈরি করে।
আজকের যৌন ফ্যান্টাসি আর প্রেম বা আবেগের পরিপূরক নয়, বরং একরকম মনস্তাত্ত্বিক প্রতিক্রিয়া, যা জন্ম নিচ্ছে অবদমন, হতাশা ও অন্তর্লীন রাগ থেকে। আগে যৌন কল্পনা অনেকাংশে প্রেম বা আকর্ষণের ব্যাখ্যা ছিল, কিন্তু আজ তা হয়ে উঠছে এক ‘mental escape route’—যেখানে কেউ নিজের অক্ষমতা, নিয়ন্ত্রণহীনতা কিংবা ক্লান্ত মানসিক অবস্থা থেকে নিষ্কৃতি খোঁজেন। নিউরোসায়েন্স অনুযায়ী, যৌন ফ্যান্টাসি যখন মস্তিষ্কে উদ্দীপনা তৈরি করে, তখন তা ডোপামিন রিওয়ার্ড সিস্টেমকে সক্রিয় করে, একধরনের কৃত্রিম সুখ দেয়, যেটা প্রেমের গভীরতার চেয়ে অনেক বেশি তাৎক্ষণিক এবং অলীক। তাই প্রেম যেখানে ধৈর্য, সমঝোতা, ও আবেগের ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে থাকে, সেখানে আজকের যৌন কল্পনা হয়ে উঠছে নিছক ব্যক্তিকেন্দ্রিক আত্মতৃপ্তির যন্ত্র। ফ্রয়েডীয় মনস্তত্ত্ব অনুসারে, এই কল্পনার পেছনে কাজ করে অবচেতন ‘Id’— যা রাগ, লালসা ও বাসনার পরিপূর্ণ রূপ। আধুনিক সময়ের অনেক যৌন ফ্যান্টাসি— যেমন voyeurism, domination-submission, humiliation বা revenge sex— আসলে জীবনের অপূর্ণতা, সামাজিক দমন বা সম্পর্কের ব্যর্থতা থেকে সৃষ্ট একধরনের আগ্রাসনের প্রতিচ্ছবি।
উদাহরণস্বরূপ, বহু মানুষ আজকাল তাদের পার্টনারকে ‘ইগনোর’ বা ‘ঘোস্ট’ করার পর অচেনা কারও সঙ্গে সাইবারসেক্সে মেতে ওঠে, কেউ কেউ সাবেক প্রেমিক বা প্রেমিকাকে কল্পনায় ‘ডমিনেট’ করে প্রতিশোধ নেয়, কিংবা OnlyFans-এর মতো প্ল্যাটফর্মে অর্থ ব্যয়ে রাগ বা দুঃখ ঢাকেন। সোশ্যাল মিডিয়া এবং পর্নোগ্রাফি যেখানে প্রতিনিয়ত নিখুঁত শরীরের প্রদর্শনী ঘটায়, সেখানে সম্পর্কের জটিলতা বা আবেগ বোঝার কোনও জায়গা থাকে না। এর ফলে যৌন ফ্যান্টাসি হয়ে উঠছে একধরনের আবেগহীন চাহিদার বিস্ফোরণ—যেখানে প্রেম নেই, আছে শুধুই শরীর, কল্পনা ও মানসিক ক্লান্তির একক নিরাময়। এই প্রবণতা শহুরে মধ্যবিত্ত ও তরুণ প্রজন্মের মধ্যে আরও প্রকট, যারা রিলেশনশিপের জটিলতা এড়িয়ে ‘নিজের মতো করে সুখ খোঁজার’ চেষ্টা করছেন। প্রেম তাদের কাছে একটা ঝুঁকি, অথচ ফ্যান্টাসি একধরনের নিরাপদ নিয়ন্ত্রণ— যেখানে কেউ কিছু বলতে পারে না, প্রত্যাখ্যান করে না। ফলে যৌন কল্পনা হয়ে উঠছে এক অন্তর্জাগতিক গোপন বিদ্রোহ, এক নীরব চিৎকার— যা আজকের সম্পর্কহীন সমাজে যত না প্রেমের প্রতিফলন, তার চেয়ে বেশি ক্ষমতার, রাগের ও একাকিত্বের মনস্তাত্ত্বিক অভিব্যক্তি।