এ বছর ২৬ মার্চ তারিখটা আমাদের বাংলাদেশের মানুষের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমাদের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ হল। সারা পৃথিবীই জানে, পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ হওয়ার ইতিহাস। কতশত মুক্তিযোদ্ধা এই লড়াইয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। কত মানুষ ঘরছাড়া হয়েছিলেন, কতজন অন্যায়ের শিকার হয়েছিলেন। প্রাণ হারিয়েছিলেন। ভারত তো সে-সময় বন্ধু হয়ে পাশে দাঁড়িয়েই ছিল। সেই টলোমলো সময়ের কথা আমাদের কাছে খুব উজ্জ্বল।
বাংলাদেশের বয়স মাত্র ৫০ বছর। একটা দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সত্যিই নবীন হয়তো। কিন্তু আমরা এর মধ্যেই শূন্য থেকে শুরু করে অনেকটা পথ হেঁটে এসেছি। আমার কাছে সত্যিকারের গর্বের বিষয় হল, আমরা অনুন্নত দেশের তকমা পেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় নিজেদের স্থান করতে পেরেছি। আমাদের অর্থনৈতিক উন্নতি, আমাদের শিক্ষা এবং সামাজিক সূচকের ক্ষেত্রে উন্নতি আমাদের উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় এনেছে। কেবল তাই নয়, বাংলাদেশের মেয়েদের ক্ষমতায়ন এবং সামাজিক সূচকের নিরিখে অন্যান্য দেশের তুলনায় এগিয়ে থাকা, আমার কাছে, গোটা বাংলাদেশের কাছে একটা গৌরবের বিষয়।
এ বছর এই বিশেষ দিনটিকে স্মরণীয় করার জন্য এক সপ্তাহব্যাপী উদযাপনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান এবং অন্যান্য দক্ষিণ এশীয় দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বা রাষ্ট্রদূতেরা এসেছিলেন এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এসেছিলেন ২৬ তারিখেই। তাঁর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ ও সৌজন্য বিনিময় হয়। পড়শি দেশ বলেই হয়তো ভারতের কাছে প্রত্যাশাও অনেক। কিন্তু অনেক সময় যখন নানা বিষয়ে দু’দেশের মতান্তর হয়, তখন রাগও একটু হয়।
অথচ দেখুন, ভারত, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ, আমার ‘সেকেন্ড হোম’। এত বছর আইপিএল-এ খেলেছি। যখন কলকাতা নাইট রাইডার্সে ছিলাম, তখন তো মনেই হত না অন্য কোথাও আছি। ড্রেসিং রুমেও অনেক সময় বাংলায় কথা হত। আর আমার তো মনে হয় না, কলকাতায় এমন কোনও পরিবার আছে, যাদের বাংলাদেশে আত্মীয় নেই, আবার বাংলাদেশের এমন কোনও পরিবার আছে, যাদের কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গে কোনও আত্মীয় নেই। আর কলকাতায় খেলা হলে তো বাংলাদেশ থেকে অনেকে চলে আসেন। আর তাই ইডেনে খেলতে নামলে মনে হয় ঘরেই খেলছি।
এ বছর আইপিএল-এ আবার ফিরে এসেছি কলকাতা নাইট রাইডার্স টিমে। কিন্তু এবার খেলা হবে শুধু মুম্বই, পুণে আর চেন্নাইয়ে। ঘরের মাঠের সার্পোটটা পাব না, আমাদের জন্য দর্শকদের ওই গগনভেদী সমর্থন পাব না। অতএব যাকে বলে, ঘরের মাঠের ‘এক্স-ফ্যাক্টর’ বাদ দিয়েই খেলতে হবে। ঘরের মাঠের ওই উষ্ণতাটা থাকে বলেই, যে কোনও টিম ভাবে, ওই সাতটা-আটটা ম্যাচ যদি জিতে রাখা যায়, তাহলে বাকি টুর্নামেন্ট একটু সুবিধেজনক অবস্থায় থাকা যায়।
কিন্তু এটাও একটা অন্য রকম অভিজ্ঞতা। কোভিডকে সঙ্গে নিয়ে, কীভাবে আইপিএল খেলা যায়, কীভাবে খেলাটা উপভোগ করা যায়, কীভাবে দর্শকদের মন ভরানো যায়, সেটাও দেখার। আমরা কোভিড পেরিয়ে আবার একটা স্বাভাবিক সময়ে জীবনযাপন করব, সেই আশা রাখি, কিন্তু এই সময়টা সবার জীবনে একটা যতিচিহ্ন হিসেবে গেঁথে থাকবে। কারও কাছে ভয়ের, কারও শোকের, কারও আতঙ্কের, কারও কাছে চ্যালেঞ্জের। গোষ্ঠী হিসেবে আমরা আবার কবে নির্ভাবনায় একে অপরের সঙ্গে মিশতে পারব, এক উঠোনে জমায়েত হতে পারব, সেটারই অপেক্ষা!