গত সপ্তাহে ম্যাঞ্চেস্টার সিটি বনাম ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড ম্যাচে আমি হাজির ছিলাম। আসল ব্যাপারটা হল, ইউনাইটেড ভাল খেলল আর যোগ্য দল হিসেবে জিতল। পুরো টুর্নামেন্টেই ওদের দেখে ভাল লাগছে।
আবার ম্যাচটা ম্যাঞ্চেস্টার সিটির দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বোঝা গেল, ওরা অপরাজেয় নয়। তার পরেই ওরা ঘুরে দাঁড়াল অবশ্য, সাউদাম্পটনকে ৫-২ গোলে, আর ফুলহ্যামকে ৩-০ গোলে হারিয়ে। এর সঙ্গে যদি ওদের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের জয় যোগ করেন তাহলে একটা দুরন্ত ম্যাঞ্চেস্টার সিটিকে আবার দেখতে পাবেন। আমার এরও একটা ব্যাপার দারুণ লেগেছে, পেপ গুয়ার্দিওলা ‘চতুর্মুকুট’ নিয়ে কথা বললেন, এবং ইঙ্গিত দিলেন যে এর কোনওটাই এই ম্যান সিটি জেতেনি। অতএব ওদের সেই অধিকার পেতে হবে। চতুর্মুকুট পাওয়ার পথে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ পেতেই ওদের অনেক ম্যাচ জিততে হবে এখন। গুয়ার্দিওলার নজর সবসময় থাকে পরের ম্যাচটার দিকে। সেটা এই দলটার পারফর্ম্যান্স দেখলেই বোঝা যায়। আর দেখার মতো, পেপ কীভাবে প্লেয়ারদের ব্যবহার করছেন। ফুলহ্যাম ম্যাচে আগুয়েরোকে দিয়ে শুরু করেছিলেন গুয়ার্দিওলা। আগুয়েরো গোটা ম্যাচে আহামরি খেলেননি, তবে গোল করেছিলেন। যদিও পরের বরুসিয়া মনশেনগ্লাডব্লাখ-এর সঙ্গে ম্যাচে আগুয়েরো ছিলেন না। পেপ ওঁর ফুটবলারদের এমনভাবে খেলিয়ে তৈরি রাখছেন, যাতে চতুর্মুকুট পাওয়ার দিকে দলটা এগিয়ে যায়। যদিও কথা তিনি বলেন শুধু পরের ম্যাচটা নিয়ে। এই মুহূর্তে ওঁর টিমকে সত্যিকারের দক্ষ দেখাচ্ছে।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দিকে তাকালে দুটো দলকে এই মুহূর্তে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর লাগছে— ডর্টমুন্ড আর চেলসি। ওদের খেলা যখনই দেখছি, বাকিদের দশা কী হতে পারে ভেবে ভয় লাগছে আমার। ওরা অবশ্যই এই মরশুমে লিগ জিতবে না, কিন্তু যদি ওদের পারফর্ম্যান্সের দিকে তাকানো যায়, যদি দেখা হয় ওরা কীভাবে খুব কম সুযোগই হাতছাড়া করেছে, কেমন করে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে সবাইকে খেলিয়েছে— তখন ওদের অনেকটাই গুয়ার্দিওলার ম্যাঞ্চেস্টার সিটির মতোই দেখাবে।
ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড এই মুহূর্তে ভাল খেলছে। আর ম্যাঞ্চেস্টার সিটি বাকিদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে। এই অবস্থায় প্রথম চার দলে থাকার দৌড়ে বাকি দুটো জায়গার জন্য লড়াই লেস্টার, চেলসি, ওয়েস্ট হ্যাম আর লিভারপুলের মধ্যে। তবে টটেনহ্যামও এদের থেকে খুব একটা পিছিয়ে নেই।
ওয়েস্ট হ্যামের বিরুদ্ধে ভাল একটা ম্যাচ জিতেছে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড— যে ম্যাচে ওয়েস্ট হ্যামের অতি রক্ষণাত্মক খেলার স্ট্র্যাটেজির বিশাল সমালোচনা হচ্ছে। কিন্তু আমি খুব একটা অবাক হইনি। কোনও দলই সহজে হারতে চায় না। ওয়েস্ট হ্যামও সেই মনোভাব দেখিয়েছে। ফলে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লিগে যোগ্যতা অর্জনের দৌড়ে ওরা এখনও প্রথম চার-পাঁচের মধ্যে থাকছে। আর, বড় ব্যবধানে হেরে গেলে আত্মবিশ্বাস কমে যেত, সেই ব্যাপারটাকেও এড়িয়েছে চমৎকার।
লিভারপুলের জন্য এই সপ্তাহে সুখবর হল ওরা দুটো ম্যাচ জিতেছে— একটা প্রিমিয়ার লিগে, একটা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে। হয়তো এখান থেকেই ওদের ভাগ্যের মোড় ঘুরবে, ওরা পুরনো ফর্ম ফিরে পাবে। য়ুরগেন ক্লপ এই জয়গুলোয় খুশি হয়েছেন, কিন্তু লিভারপুলকে প্রথম চারে তুলতে তাঁর আরও অনেক কিছু করার আছে। তবে জোটা চোট সারিয়ে ফিরে আসায় একটা বড় সুবিধে হয়েছে, গোল করার বিরাট দায়িত্ব আর শুধু সালাহর ঘাড়ে নেই। আশা করা যায় এতে লিভারপুল আরও বেশি করে জয়ের রাস্তায় ফিরবে।
উলভ্স-লিভারপুল ম্যাচে উলভ্স গোলকিপার রুই প্যাট্রিসিও খুব অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে। যদিও ওই ঘটনায় লাইন্সম্যানের অফসাইডের পতাকা তুলতে দেরি করা নিয়ে প্রচুর প্রশ্ন উঠেছে। রুইয়ের চোটের পিছনে ওই ঘটনার হাত ছিল কি না, সে প্রশ্নও উঠছে। সালাহ সটান বিপক্ষ গোলকিপার আর ডিফেন্ডারের মধ্যে ঢুকে পড়েছিলেন এবং কনোর কোয়াডির সঙ্গে রুই প্যাট্রিসিওর বিচ্ছিরি একটা ধাক্কা লাগে, ১৫ মিনিট খেলা বন্ধ রাখতে হয়। লাইন্সম্যান সঙ্গে সঙ্গে অফসাইডের পতাকা তুললে, হয়তো ওই সংঘর্ষটা ঘটত না। তবে আমার মনে হয়, ফুটবল যে সময়ে-সময়ে কী ভয়ঙ্কর খেলা— এই ঘটনাটা তা-ও বোঝায়। ওটা সত্যিই অদ্ভুত দুর্ঘটনা। এরকম ‘নির্দোষ’ পরিস্থিতিতে আমার নিজেরও অনেকবার ডিফেন্ডার, অ্যাটাকারের সঙ্গে ভয়ঙ্কর সংঘর্ষ হয়েছে। আসলে ওই মুহূর্তে গোলকিপার বলের দিকে এত বেশি মনোযোগী থাকেন যে, তখন রেফারি বা লাইন্সম্যান কী সিগন্যাল দিচ্ছেন, তার ওপর কিছুই নির্ভর করে না। এরকম দুর্ঘটনা যে কোনও ফুটবল ম্যাচে ঘটতে পারে। যদিও সৌভাগ্যক্রমে সেটা খুব কমই ঘটে।
লিগ টেবিলের নীচের দিকে পরিস্থিতি ক্রমেই আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। মরশুমের শেষের দিকে সেটাই সাধারণত হয়ে থাকে। ফুলহ্যাম যেন সব ভবিষ্যদ্বাণীকে কলা দেখিয়ে নিজেদের সুযোগ তৈরি করার চেষ্টা করচে। ফুলহ্যাম, ওয়েস্ট ব্রম আর শেফিল্ডকে আমার মাসদুয়েক আগের লেখায় খারিজ করে দিয়েছিলাম। তবে এরপরেও একটা দল আছে— সাউদাম্পটন। যারা এই মুহূর্তে খুব খুব খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। প্রিমিয়ার লিগে টিকে থাকতে চাওয়া একটা দল, যারা কিনা পরের পর ম্যাচে হারছে। সাউদাম্পটনের যেরকম ফর্ম যাচ্ছে, তাতে একমাত্র ওরাই ফুলহ্যামকে একটা অপ্রত্যাশিত বাঁচার রাস্তা দেখাতে পারে।