ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • মেগা ম্যাগাজিন : পর্ব ১০


    সুস্নাত চৌধুরী (September 27, 2024)
     

    ম্যাড

    ধরা যাক, পত্রিকার প্রথম সংখ্যার প্রচ্ছদপটেই বড়-বড় হরফে লেখা হল— নতুন এই পত্রিকাটি আপনার পড়ার জন্য খুবই জরুরি এবং ভিতরে সম্পাদকদের তরফ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বার্তা অপেক্ষা করে রয়েছে! এ-জিনিস চাক্ষুষ করলে পাঠকমনে কৌতূহল জাগা স্বাভাবিক। অতঃপর বাক্যান্ত্যে-ছাপা ‘ম্যানিকুলা’ নির্দেশিত পথে সম্ভাব্য ক্রেতা/পাঠক/ভোক্তা মলাট ওলটালেন। দেখলেন, প্রথম পাতার উপরিভাগেও অবিকল একটি অঙ্গুলিনির্দেশ— তারপর বেশ খানিক খুদে হরফে কাতর অনুনয়ের সুরে সেই ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বার্তা’— অনুগ্রহ করে পত্রিকাটি কিনুন!

    ঠিক প্রথম সংখ্যায় নয়, তবে কতকটা এ-রকমই ঘটেছিল এই পত্রিকার চব্বিশতম সংখ্যায়। বস্তুত এমন সব বিচিত্র ভোজবাজির খেলা ছড়িয়ে থাকত পত্রিকাটির প্রতি সংখ্যাতেই। ‘ম্যাড’। আমেরিকার হাস্যরসধর্মী পত্রিকা। ১৯৫২ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় ‘ম্যাড’। অক্টোবর-নভেম্বর সংখ্যা। তবে, শুরুতে এটি ছিল রঙিন কমিকবইয়ের সিরিজ। সম্পাদক ছিলেন মার্কিন কার্টুনিস্ট হার্ভে কার্টসম্যান। প্রকাশ করত ইসি কমিকস। গপ্পের মজা যে পাঠককে ‘পাগল’ করে তুলবে, এ-কথা সোজাসুজি বোঝাতে প্রচ্ছদের অলক্যাপ ‘MAD’ কথাটির আগে অনুভূমিকভাবে বসত একটি বাক্যাংশ— ‘Tales Calculated to Drive You’। আর প্রায় অলুক্ষুণে ক্ষুরধার ব্যঙ্গের আভাস দিতে প্রচ্ছদের বাম পাশে উল্লম্বভাবে লেখা হত সাবটাইটেল— ‘Humor in a Jugular Vein’। এ সবই চলেছিল তেইশতম সংখ্যা পর্যন্ত।

    কমিকবইয়ের সিরিজ হিসেবে প্রথম বর্ষ প্রথম সংখ্যা, অক্টোবর-নভেম্বর ১৯৫২
    পত্রিকা হিসেবে প্রথম প্রকাশ, জুলাই ১৯৫৫

    ১৯৫৫ সালের জুলাই থেকে বদলে গেল ‘ম্যাড’। সেই চব্বিশতম সংখ্যার প্রচ্ছদে মাস্টহেডের নীচে ছাপা হল স্রেফ ওই একটি বাক্য— ‘This new magazine is vital for you to read and inside you will find an extremely important message from the editors’। আর, ভিতরে লেখা হল— ‘please buy this magazine’। সম্পূর্ণরূপে পত্রিকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করল নতুন ‘ম্যাড’। হয়ে উঠল আরও ব্যাপ্ত, আরও সুচারু। মজার ছলে সমসময়কে তুলে ধরতে ছবি আর লেখার অনবদ্য মিশেল।

    এই পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ ছিল না। প্রথম বছর তিনেকেই কমিকবই হিসেবে ‘ম্যাড’ যথেষ্ট লাভজনক হয়ে উঠেছিল। তা সত্ত্বেও ইসি কমিকসের কর্ণধার ও ‘ম্যাড’-এর প্রকাশক উইলিয়াম ম্যাক্সওয়েল গেইনস এই ঝুঁকি নেন। পরিবর্তন আসে আরও কয়েকটি ক্ষেত্রে। আর শুধু কিশোর-তরুণদের জন্য কাজ করা নয়, প্রাপ্তবয়স্ক পাঠকদের লক্ষ করেও বিষয়ের পরিকল্পনা করা হতে থাকে। কমিক মানেই যেমন ভাল কাগজে চার-রঙা ছাপা, সেই বাধ্যবাধকতা থেকে সরে এসে সাদা-কালো সাধারণ মানের মুদ্রণে প্রকাশ পেতে থাকে নতুন ‘ম্যাড’। চব্বিশতম সংখ্যা থেকেই হাতে-লেখা কমিকের বদলে টাইপসেট করা লেখার পরিমাণ বাড়তে থাকে। সবচেয়ে বড় কথা, কমিকবইয়ের ক্ষেত্রে যে-ধরনের সেন্সরশিপ তৎকালীন মার্কিন মুলুকে চালু হয়েছিল, তা থেকে অব্যাহতি মেলে। সম্পাদক কার্টসম্যান-এর দক্ষ হাত ও অভিজ্ঞতাপ্রসূত ভাবনাচিন্তার কারণে পত্রিকা হিসেবে সাফল্য আসতেও দেরি হয় না।

    ‘ম্যাড’ পত্রিকার সাদা-কালো ছাপায় টাইপসেট করা কমিক, ডিসেম্বর ১৯৫৬
    নিয়মিত বিভাগ ‘Spy vs Spy’, মার্জিনে ছোট্ট অলংকরণের ব্যবহার লক্ষণীয়

    তবে, ১৯৫৬ সালে বিদায় নেন কার্টসম্যান। সম্পাদনার দায়িত্বে আসেন আলবার্ট বার্নার্ড ফিল্ডস্টেইন। দীর্ঘ প্রায় তিরিশ বছর তিনি এই দায়িত্ব সামলান। এই সময়েই উৎকর্ষের শীর্ষে ওঠে ‘ম্যাড’। শুরু থেকেই এই পত্রিকায় খামখেয়ালিপনার অন্ত্য ছিল না। এমনকী পত্রিকা প্রকাশের ছিল না কোনও নির্দিষ্ট সময়ও! প্রকাশক গেইনস মনে করতেন, গুণমান বজায় রেখে ম্যাগাজিন বের করতে হলে তার ধরাবাঁধা সময় থাকলে চলে না। কখনও দ্বিমাসিক, কখনও বছরে আট বার— নানা সময়ে নানা বিরতিতে প্রকাশিত হয়েছে এই পত্রিকা। আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় খ্যাতনামা পত্রপত্রিকার ইতিহাসের নিরিখে দেখলে, এই ঘটনাকে খানিক ব্যতিক্রম বলেই মনে হয়।

    নিরন্তর খ্যাপামির পিছনে ধাওয়া করলেও, কাঙ্ক্ষিত মান বজায় রাখা এবং পত্রিকার স্বাতন্ত্র্য রক্ষার ক্ষেত্রে অবিচল ছিল ‘ম্যাড’। সচেতনভাবে সাদামাটা প্রোডাকশনের রাস্তা বেছে নিলেও নজর থাকত ছোটোখাটো খুঁটিনাটি বিষয়ে। নমুনা হিসেবে বলা যায়, পত্রিকার বাছাই কিছু পাতার মার্জিনে নিপুণ হাতে করা অতিসংক্ষিপ্ত অলংকরণ বা কার্টুনগুলির কথা। আবার, সাদা ও কালো দুই গুপ্তচরের লড়াই ‘Spy vs Spy’; সৃজনশীলতা, চিকিৎসা, বিবাহ, বন্ধুত্ব ইত্যাদি নানা ধরনের সাধারণ সামাজিক বিষয়কে ব্যঙ্গ করে নির্মিত কমিক স্ট্রিপ ‘The Lighter Side of…’; কিংবা কার্টুনিস্ট ডন মার্টিনের করা কাজগুলির মতো বিভিন্ন নিয়মিত বিভাগও ‘ম্যাড’-এর প্রতি পাঠকের টান ধরে রাখতে সহায়ক হয়েছিল।

    এমনই আরেকটি আকর্ষক বিষয় ছিল ‘ম্যাড’-এর ফোল্ড-ইন। সাধারণত প্রতি সংখ্যার পৃষ্ঠপ্রচ্ছদের ভিতর দিকে এটি দেওয়া হত। এই অংশের উপর দিকে ছাপা থাকত একটি প্রশ্ন। খোলা অবস্থায় যা দৃশ্যমান হত, ভাঁজ করে ফেললে গোটা কিস্‌সাই যেত ঘুরে! খোলসা হত পরিপ্রেক্ষিত, ঝলসে উঠত ব্যঙ্গের ছুরি, বেরিয়ে আসত প্রশ্নের জবাব! একটিই ছবিকে দু-টি ভাঁজে আগাগোড়া বদলে দেওয়ার এই অভিনব কাণ্ডটি আমৃত্যু ঘটিয়ে এসেছেন মার্কিন কার্টুনিস্ট অ্যালান জ্যাফি।

    ফোল্ড-ইন: অঙ্গের ভাঁজে ব্যঙ্গের ঝাঁঝ
    ‘ম্যাড’-এর ম্যাসকট আলফ্রেড ই. নিউম্যান, মার্চ ১৯৬৭
    ই.টি.-র জাদুতে নিউম্যান-এর দন্তপ্রাপ্তি, জানুয়ারি ১৯৮৩

    তবে ‘ম্যাড’-এর সঙ্গে সবচেয়ে বেশি জড়িয়ে ছিল অন্য একটি নাম— আলফ্রেড ই. নিউম্যান। রক্তমাংসের মানুষ নয়, এটি এক কাল্পনিক চরিত্র। বহুলখ্যাত এই ম্যাসকট আজও ‘ম্যাড’-এর সমার্থক। সদাহাস্য মুখ, ত্বকে ছিটে-ছিটে দাগ, লম্বা কান, একটি দাঁত পড়ে গিয়েছে— অধিকাংশ সংখ্যার প্রচ্ছদে ফিরে-ফিরে এসেছে এই নিষ্পাপ নিশ্চিন্তমনা বালক চরিত্রটি। ১৯৫৪ সালে থেকে পত্রিকার ভিতরেও প্রয়োজনমতো ব্যবহার করা হয়েছে তাকে। বাস্তব মানুষের মতো করা হয়েছে নামকরণও।

    আমাদের পাগলা দাশুর বেস্টফ্রেন্ড এই ‘ম্যাড’ নিউম্যান-এর অবয়বটি ঠিক কীভাবে প্রথম রচিত হয়েছিল, তা খুব নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে উনিশ শতকের একটি বিজ্ঞাপনে কাছাকাছি দেখতে এক বালকের ছবি উদ্ধার করেছেন গবেষকরা। তার পরেও মার্কিন মুলুকের একাধিক উপাদানে এমন মুখাবয়বের দেখা মিলেছে। সম্ভবত এগুলি থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েই নিউম্যান-এর জন্ম। বিভিন্ন সংখ্যার মূল থিম অনুযায়ী ‘ম্যাড’-এর প্রচ্ছদে নানা বিশিষ্ট ব্যক্তির আদলে উঠে এসেছে নিউম্যান। বিবিধ বিষয়কেও তুলে ধরা গিয়েছে তার ভঙ্গি বা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। আবার কখনও তার অবয়বেও পরিবর্তন আনা হয়েছে বিষয়ের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে। যেমন, ১৯৮২ সালে মুক্তি পায় স্টিফেন স্পিলবার্গ-এর ছবি ‘ই.টি.’, আর ১৯৮৩ সালের জানুয়ারি সংখ্যার প্রচ্ছদে নিউম্যান-কে দেখা যায় ই.টি.-র সঙ্গে। এও দেখা যায়, ই.টি.-র মহাজাগতিক জাদুতে নিউম্যান-এর দাঁতের মাঝে শূন্যস্থানটি বেমালুম ভরে গিয়েছে!

    নির্ভেজাল মজা, সহজ-সরল হাস্যরস যেমন ছিল, তেমনই শাণিত ব্যঙ্গের প্রয়োগেও পিছপা হয়নি ‘ম্যাড’। শুরু থেকেই বিভিন্ন সিনেমা, টেলিভিশন অনুষ্ঠানের প্যারোডি ও স্পুফ হয়ে ওঠে এই পত্রিকার প্রধানতম আকর্ষণ। যেমন, ‘কিং কং’ ছবিটির আদলে ‘পিং পং!’, ‘দ্য গডফাদার’-এর ঢঙে ‘দ্য অডফাদার’ কিংবা ‘দ্য সায়লেন্স অফ দ্য ল্যাম্ব’-এর অনুসরণে ‘দ্য ভায়োলেন্স অফ দ্য হ্যামস’— তালিকা দীর্ঘ, বিচিত্র তো বটেই! মার্কিন মুলুকের বিখ্যাত ব্যক্তিরাও ‘ম্যাড’-এর নিশানায় থেকেছেন। রাজনীতি হোক বা বিনোদন জগৎ— রেহাই পাননি কেউ। হাস্যাস্পদ হয়েছেন রিপাবলিকান থেকে ডেমোক্র্যাট, এলভিস প্রেসলি থেকে বিটলস কিংবা মাইকেল জ্যাকসন।

    ‘ম্যাড’-এর নজরে বিটলস ও মাইকেল জ্যাকসন, যথাক্রমে সেপ্টেম্বর ১৯৬৮ ও মার্চ ১৯৮৮
    পৃষ্ঠপ্রচ্ছদে ‘এপ্রিল ফুল’-এর মজা, এপ্রিল ১৯৫৯
    ঢাকা থেকে প্রকাশিত ‘উন্মাদ’ পত্রিকা, জুলাই ২০১৯

    শুধু অন্যকে নিয়ে মজা করাই নয়, সময়ে-সময়ে নিজেদের নিয়েও হাসি-মশকরা হয়েছে। কখনও প্রচ্ছদে নিউম্যানের কাট-আউটের আদলে শূন্যস্থান রেখে তার উপরে সেঁটে দেওয়া হয়েছে চিরকুট, যাতে লেখা পাঠকের উদ্দেশে সম্পাদকের বার্তা— ‘Due to the slumping economy, we cannot afford the services of mascot Alfred E. Neuman on this cover./Please help us bring him back by purchasing several copies of this issue.’ আবার কখনও, প্রচ্ছদে বড়-বড় অক্ষরে লেখা হয়েছে— ‘This is the End of MAD’। নীচে ক্ষুদ্রকায় হরফে ছাপা নির্দেশ থেকে মুহ্যমান পাঠক অচিরেই বুঝেছে, বস্তুত এটি প্রচ্ছদের আদলে নির্মিত পৃষ্ঠপ্রচ্ছদ— ‘ম্যাড’ মোটেই বন্ধ হচ্ছে না— এ নেহাতই ‘এপ্রিল ফুল’-এর মরসুমি প্র্যাঙ্ক! তরুণ প্রজন্মের কাছে ‘ম্যাড’-এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল যে, সে আশপাশের সব কিছুকে অবিশ্বাস করতে শিখিয়েছিল। সরকার থেকে মিডিয়া— সবাই যে জনগণকে প্রতিনিয়ত ধোঁকা দিচ্ছে, হালকা কথার ছলে এই ভারী বিষয়টি বারে বারে বুঝিয়েছে ‘ম্যাড’। এমনকী, মিডিয়া হিসেবে নিজেকেও সে ওই তালিকা থেকে বাদ দেয়নি! ‘ম্যাড’-এর দর্শনও যে তা-ই, সে-বিষয়ে খোলসা করতে দ্বিধা করেননি উইলিয়াম গেইনস। তাঁর সাফ কথা ছিল— ‘We must never stop reminding the reader what little value they get for their money!’ এই বয়ান নানাভাবে পত্রিকার পাতায় উঠেও এসেছে।

    যে-কোনও বিষয়েই মজা করার সুযোগ এলে ছাড়ত না ‘ম্যাড’-এর পরিচালকমণ্ডলী। ছয়ের দশকে নিউ ইয়র্কের ‘485 Madison Avenue’-এর ঠিকানায় উঠে আসে পত্রিকার দপ্তর। রাস্তার নামটিও নিজেদের সঙ্গে মানানসই করে নেন তাঁরা— ছাপা হতে থাকে ‘MADison Avenue’! এই মুচকি থেকে অট্টহাসির মাঝেও গুরুত্বপূর্ণ কিছু নিদর্শন রেখে গিয়েছে ‘ম্যাড’। শুরুর কয়েকটি সংখ্যার পর থেকে দীর্ঘদিন আগাগোড়া বিজ্ঞাপন ছাড়া প্রকাশিত হয়েছে এই পত্রিকা। প্রকাশকের বক্তব্য ছিল, পত্রিকার পাতায় যাঁদের নিয়ে বিদ্রূপ করা হচ্ছে, তাঁদের কাছেই কীভাবে হাত পাতা সম্ভব! কিন্তু বিজ্ঞাপন ছাড়া পত্রিকা প্রকাশ করেও যে লাভ করা যায়, তা হাতে-কলমে প্রমাণ করেছিল ‘ম্যাড’। আবার অন্যত্র নিজেদের বিজ্ঞাপন দিতেও বিশেষ আগ্রহী ছিল না ‘ম্যাড’ কর্তৃপক্ষ, অথচ তা সত্ত্বেও মানুষের কাছে পৌঁছে যেতে সমস্যা হয়নি। পেনসিলভেনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ভিনসেন্ট পি. নরিস গবেষণা করেছেন ‘ম্যাড’-এর বাণিজ্যিক মডেল নিয়ে। ‘Mad Economics: An Analysis of an Adless Magazine’ প্রবন্ধে তিনি সবিস্তার দেখিয়েছেন উৎপাদনের খরচ কমিয়ে আর মুদ্রণসংখ্যা বাড়িয়ে কীভাবে এই অসাধ্য সাধন করা যেতে পারে। অবশ্য শুধু বিজ্ঞাপন বাদ দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি ‘ম্যাড’, উলটে বিবিধ বিজ্ঞাপনের প্যারোডি দিনের পর দিন সেখানে ছাপা হতে থাকে!

    নানা কিসিমের উদ্ভট নিরীক্ষা, কিন্তু সেসবের সুচিন্তিত প্রয়োগের মধ্য দিয়ে বিরাট অংশের মানুষকে প্রভাবিত করেছিল ‘ম্যাড’। গত শতকের সাতের দশকে তার বিক্রি শীর্ষে পৌঁছোয়। কাজ করতে হয়েছিল গণরুচির নিরিখে, হয়তো সে-কারণেই মোটা দাগের ব্যাপারস্যাপার অনেক সময়ে সরিয়ে রাখা যায়নি। কিন্তু দশকের পর দশক কার্যত মজার আড়ালে সত্যের উপস্থাপন করে গিয়েছে ‘ম্যাড’। সমাজ হোক বা রাজনীতি, যুদ্ধ কিংবা মিডিয়া— মার্কিন মুলুকে বহু তরুণ-তরুণীর চোখ খুলেছে এই পত্রিকা পাঠের অভিজ্ঞতা থেকেই। আমেরিকার বাইরেও বহু দেশে বেরিয়েছে ‘ম্যাড’-এর পৃথক সংস্করণ। ভারতও ছিল এর অন্যতম। আবার, শুরুয়াতি পর্ব থেকে নানাভাবে নকল হয়েছে ‘ম্যাড’। একদা এতটাই ব্যাপক ছিল এই পত্রিকার প্রভাব, তার দৃষ্টান্ত সামনে রেখে আজও বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে বের হয় একই ধাঁচের হাস্যরসধর্মী পত্রপত্রিকা। নিদর্শন হিসেবে বাংলাদেশের ‘উন্মাদ’ পত্রিকাটির কথা বলা যেতে পারে। ১৯৭৮ সাল থেকে এটি প্রকাশিত হয়ে আসছে। এখনও কোনও সংখ্যায় এমন বিদঘুটে ঘোষণা চোখে পড়ে— ‘দেশের একমাত্র বানান ভুল সর্বস্ব পত্রিকা (তবে নির্ভূল করার চেষ্টা অব্যাহত…এবং ব্যার্থ!)’ বাংলা ভাষার এই ‘স্যাটায়ার ম্যাগাজিন’ হাতে নিলে হাবে-ভাবে ‘ম্যাড’-এর কথা মনে পড়তে বাধ্য। ‘ম্যাড’-এর দীর্ঘ যাত্রাপথে একাধিক বার মালিকানার হাতবদল হয়েছে। ডিসি কমিকস থেকে এখনও প্রকাশিত হয় ‘ম্যাড’। বছরে ছ-বার। সেসব অনেকাংশেই পুরনো লেখাপত্রের পুনর্মুদ্রণ। নবরূপে পত্রিকাটি আরও বর্ণময় হয়েছে ঠিকই, কিন্তু আবিশ্ব তার সেই দাপট আর অক্ষত আছে বলে মনে হয় না। দৃশ্যত যত ঝকঝকে হয়েছে, কার্যত ততই হয়েছে ম্রিয়মাণ। আলফ্রেড ই. নিউম্যান-এর সেই হাসিটিও কি আর তেমনই অমলিন রয়ে গিয়েছে?

    ছবি সৌজন্যে : লেখক

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook