১.
যে-অনন্ত ভালবাসার মধ্যে তুমি গিয়ে দাঁড়িয়েছ,
সে তোমাকে পাত্তা দেয় না।
তার অনেক কাজ। বেলা পড়ে এলে ঘোড়া চরাতে যাওয়া থেকে
রাতের দিকে জুয়াড়িদের ভাগ্যগণনা।
সে একইসঙ্গে নাম করেছে দালাল ও মাহামহোপাধ্যায় হিসেবে
একই সঙ্গে বুনে চলেছে সোয়েটার ও কাঁটাতার।
তার পশমচুরির ইতিহাস, তার মেঘে মেঘে শরিকি বিবাদ
এখানে সবাই ভুলে গেছে।
তুমি এসেছ তারই টানে, ট্রেনের পর ট্রেন আর
সেতুর পর সেতু পেরিয়ে, এই শুকনো মরসুমে।
এখন তোমাকে নিয়ে গুজব আর হাসিঠাট্টা
বাজি ধরা আর হাতাহাতি চলবে এই উপত্যকায়।
সহ্য করো। খোরাক হও। ভালবাসার মধ্যে গিয়ে দাঁড়াও একবার।
২.
পশ্চিমে খোলে না, এমন জানলা কিনেছি।
কোনও সূর্যাস্ত আমায় বিনামূল্যে গছাতে পারেনি কেউ
কোনও সুলভ কিস্তিতে নিভে আসা সন্ধের আলো
আমি পছন্দ করিনি, হে দোস্ত।
আমার সারাদিনের টলটলে কারচুপির পর্দা সেখানে টাঙিয়ে
বসিয়েছি প্লাস্টিকের ফুলগাছ, আহা!
সুচিত্রা মিত্রের কণ্ঠে গান চালাব চালাব ভাবছি,
কিন্তু উপচে উঠছে সসপ্যান, আতিথেয়তায়, অপরাধে।
বাচ্চারা দূর দেশে পিকনিকে যাচ্ছে
কমলালেবুর খোসায় ভরে উঠছে আমাদের আগামী পৃথিবী
আমি এরই মধ্যে হালকা আশাবাদ নিয়ে বেরিয়েছি
বেরিয়েছি ছোট বিলিতি টুপি ও পাহাড়ি ছাতা নিয়ে।
পশ্চিমে খোলে না, এমন জানলা আমার কপাল জুড়ে ভাঁজ করা
হে দোস্ত, আমাকে চিনতে পারলে ওদের পাল্লা খুলে দিও।
৩.
ট্রা লা লা লা একটি সুদৃশ্য ডবল ডেকারের দোতলামাত্র
শহরের রোদ যার গায়ে হাসতে হাসতে বমি করছে
আর হুল্লোড়ে মেয়েদের জামা চলকে উঠছে তরল উত্তাপে,
অবাধ্য ট্রাম্পেটের ওই চিকচিকে জয়ধ্বনি
ছড়িয়ে পড়ছে সেনানায়কদের ঘরে ঘরে, ভিখিরির আস্তানায়
তোমার কিছু যায় আসে না ব’লে তুমি ধরিয়েছ ভেজা সিগারেট
আর দেখছ থিয়েটারের বাসি বিজ্ঞাপন
এরই মধ্যে ট্রা লা লা লা একটি জোকারের মৃত্যু বিষয়ক ঠাট্টা হয়ে উঠছে
হয়ে উঠছে রাম পাম পাম-এর যথাযথ প্রতিদ্বন্দ্বী
সংগীতের কিস্যু না-বোঝা একটা পাখি উড়ে এসে বসছে মিনারে
তার চোখ দিয়ে এই শহরটাকে দ্যাখো
তারপর
তারই মতো, উড়ে যাও শেষবার।
৪.
জাকির হুসেনের সঙ্গে তর্ক করছি তবলা নিয়ে।
শেন ওয়ার্নকে জিগ্যেস করছি, ‘অফ স্পিন পারেন?’
কখনও হেমিংওয়েকে ঘাড় ধরে শেখাচ্ছি বাক্যগঠন
‘হুঁ হুঁ বাওয়া’ উপাধিপ্রাপ্ত এই আমাকে সমঝে তুমি চলবে, বলে দিলাম।
কত বড় তালেবর হয়েছে এই লায়েক পৃথিবী, আমি দেখে নেব
দেখে নেব মরা নদীর শেষ প্রান্ত থেকে জল তোলার কারসাজি
এবং সার্কাসের ম্যানেজারের গোপন পকেট।
মাছের সঙ্গে সাঁতার নিয়ে, আইনস্টাইনের সঙ্গে অ্যাটম নিয়ে
আমার বচসা চলবে।
লেগে যাবে হাতাহাতি যদি কেউ বলে আমি কিছুই জানি না
রাস্তা থেকে পালক কুড়িয়ে কুড়িয়ে
মুকুটে গাঁথতে গাঁথতে, ‘হুঁ হুঁ বাওয়া’ উপাধিপ্রাপ্ত, বুঝে নাও
বোকা এই গ্রহটার শেষ কথা আমি বলে যাব।
৫.
শরীর ঝাঁপ দিল সতেরো তলা থেকে।
স্বাভাবিক, তার কলকব্জা সাড়া দেবে মাধ্যাকর্ষণে
খুলে খুলে পড়বে একে একে।
কবিতার বইগুলো আগে যাবে, ওই অত ধুলোর জীবন তাদের
ভাল লাগে না আর। তারপর যাবে ট্রেনের ঘুমে দেখা যত স্বপ্ন, দুলুনিসহ।
রোজকার পাঁউরুটি, দুটো ডিম সেদ্ধ আর এক কাপ চা
হঠাৎ উড়াল দেবে কোনদিকে
রবীন্দ্রনাথের সাতখানা গান আর এরিক সাতি’র দুটো সিম্ফনি
ছুটি নিয়ে যাবে যার যার দেশের বাড়ি।
হেঁটে হেঁটে পার হওয়া রাস্তা দিয়ে বোনা সোয়েটার
তার সুতো খুলে ছড়িয়ে পড়বে ডাইনির চুল হয়ে
অথচ তুমি, খবর পেয়ে মরদেহ দেখতে ছুটে আসা তুমি
ওই খালি শরীরটাকেও ঠিক চিনতে পারবে। আমি ব’লে।
৬.
বিসমিল্লাহ খানের সঙ্গে কুয়াশা জুড়ে দাও
দেখবে, সানাই কত দূর যায়।
সেখানে বিয়েবাড়ির মরসুম শেষ করে বাতাস ফিরছে ঘর
সেখানে পরদেশীদের ছায়া দেখলে উঠোন সাজাচ্ছে ননদিনী
একটার পর একটা চিঠি আসা-যাওয়া করছে প্রেমিকের নামে
মনখারাপের মধ্যে কোনও চালাকি নেই
ভেজাল নেই কোনও, আদরের আগের মুহূর্তে।
ছোট গ্রাম কেবল তৈরি হচ্ছে অজানা দিয়ে, অনির্দেশ দিয়ে
আর সুর এসে এক এক করে জ্বালাচ্ছে লন্ঠন, গল্পগাছা, সোহাগ
রাতজাগা মেয়েটি কেবল বলেই চলেছে স্বপ্নে দেখা ভেজা রূপকথার গল্প
আর তাকে বিশ্বাস করছে সবাই।
বিসমিল্লাহ খানের সঙ্গে কুয়াশা জুড়ে দাও
দেখবে, সানাই কত দূর যায়।