বাড়ির গলিতে ঢুকে আমি তো অবাক, প্যাকেট হাতে বোকার মতো খুঁজে চলেছি নিজের বাড়িটা, পায়ের স্মৃতি ধরে এগিয়ে চললাম, থেমে গেল পা-চেনা প্রবেশপথের কাছে এসে, আর অবাক দু-চোখে দেখলাম — বাড়িটা নেই, রয়েছে শুধু বাড়ির বিজ্ঞাপন। হতবাক হয়ে দেখলাম, একটা তিন তলা সাইজের ফ্ল্যাটের হোর্ডিং পোঁতা আমার বাড়ির জমিতে, তাতে রয়েছে আমার বাড়ির ছবিটা। হোর্ডিংটার ঠিক মাথায় বসে রয়েছে একটা ধবধবে সাদা পেঁচা। এই কিম্ভূত স্বপ্নের মতো পরিস্থিতি থেকে ক্ষণিকের জন্য মন সরে এল, মুগ্ধ হয়ে দেখছি, বহুদিন পর পাড়ায় লক্ষ্মীপেঁচার সন্ধান পেলাম। ওমা, হঠাৎ দেখি পেঁচাটা ১৮০ ডিগ্রি মাথাটা ঘুরিয়ে সোজা আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘এই শোনো, একদম আদিখ্যেতা কোরো না। অনেকদিন পর পেঁচার সন্ধান পেলাম না মুণ্ডু! এমন ভাব করছ, যেন সারাদিন দূরবিন হাতে পাখি দেখতে বেরোও; এখুনি কোনও সুন্দরী মেয়ে সামনে দিয়ে হেঁটে গেলে তো চোখগুলো দূরবিনের মতো হয়ে যাবে। সুতরাং আমার দিকে তাকিয়ে না থেকে এখান থেকে কেটে পড়ো ঝটপট।’
আমার চক্ষু এখন দূরবিন থেকে একেবারে চড়কগাছ হয়ে গেছে। ছোটবেলায় সুকুমার রায়ের লেখা ‘পেঁচা আর পেঁচানি খাসা তোর চেঁচানি’-যে এখন চেঁচানো থেকে খাসা শব্দে পরিণত হবে, তা কোনও দিন স্বপ্নেও ভাবিনি। কী বলব বুঝতে পারছি না। পেঁচাকে আপনি বলব না তুমি, এই নিয়ে শুরু হল দোলাচল। এই দ্বন্দ্ব হ্যামলেটের ‘টু বি অর নট টু বি’-কেও হার মানিয়ে দেবে মনে হল।
আমি : নমস্কার, তুমি মানে ইয়ে, আপনি…খানিকক্ষণ থতমত খেয়ে ভাবলাম, ইংরেজি বলা-টাই বেস্ট। ওখানে আপনি, তুমি, তুই-এর কোনও ব্যাপার নেই, পুরো কেসটা সালটে যাবে একটা ইউ দিয়ে। অনেকটা লালমোহনবাবুর স্টাইলে বললাম, ‘এক্সকিউজ মি, আই এম ফিলিং থ্রিলড টু মিট ইউ, আই ক্যান্ট বিলিভ দ্যাট ইউ আর রিয়েলি আ টকিং পেঁচা থুড়ি আউল।’
এ কথা শুনে পেঁচাবাহাদুর রেগে আগুন, ডানা ঝাপটে দিল এক প্রচণ্ড চিৎকার। এবার পুরো শরীর নিয়ে আমার দিকে ঘুরে বলল, ‘বাঙালির ছেলে হয়ে বাংলায় কথা বলতে লজ্জা করে?’
আমি ঘাবড়ে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে বললাম, ‘ভেরি সরি, আপনি তার মানে বাঙালি?’
পেঁচা আরও রেগে দাঁত কিড়মিড় করে, না মানে ঠোঁট কিড়মিড় করে উত্তর দিল, ‘ভাষাটা জানি বলেই আমি বাঙালি নই; পেঁচা আবার বাঙালি, মরাঠি, গুজরাটি হয় না কি! উফফ, তোরা পারলে হার্ট, কিডনি, লিভারকেও বাঙালি বানিয়ে ছাড়বি।’
আমি আমতা আমতা করে বললাম, ‘নাহ্ মানে, ঠিকই বলেছেন। বাকি জিনিসের কথা বলতে পারব না, তবে একমাত্র পেটরোগা বাঙালি-ই বোধহয় বিশ্বজুড়ে হজমের ওষুধের ব্যবসাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। যাকগে বাদ দিন। আচ্ছা আপনি এই ভাষা শিখলেন কী ভাবে?’
পেঁচা বলল, ‘বহু বছর আগে, তোদের সব বাড়ির পাশের গাছগুলোয় বসে শুনতাম, তোদের মতো মানুষের ঝগড়া, হাসি, আহ্লাদ, কান্না, গান, বাচ্চাদের আবৃত্তি, বোকাবাক্সের বকবকানি আরও কত কী! আর প্যান্ডেলে থাকাকালীন তো বহু বছর শুধু হাজার হাজার মানুষের কথাই শুনেছি সারাদিন ধরে, মুগ্ধ হয়ে দেখতাম তোদের আনন্দ, মজা, অবাক হওয়া…’
আমি তাকে মাঝখানে থামিয়ে দিয়ে বললাম, ‘এক মিনিট, প্যান্ডেলে ছিলেন মানে?’
বলার ঠিক পরেই বুঝলাম ভুল করেছি, আমার স্মৃতির অবস্থা দেশের জিডিপি-র থেকেও কম। আরে, আগের মাসেই তো সব সংবাদমাধ্যমে বেরিয়েছিল, এই বছর পুজোতে বয়কট জানিয়েছে সব বাহনেরা। পেঁচা মুখ খুলে চেঁচানোর আগেই আমি আবার ক্ষমা চাইলাম, ‘সরি সরি, একদম মাথা থেকে বেরিয়ে গেছিল, মানে…’
এইবার পেঁচা আমায় মাঝখানে থামিয়ে কর্কশ গলায় বলল, ‘ঠিক এই কারণেই বয়কট, বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে না তো?’
আমি বললাম, ‘হ্যাঁ, মানে ঠিক… তবে কাগজে লিখেছিল যে, আপনাদের ক্ষুব্ধ হওয়ার কারণ ছিল ঠোঁটকাটা বাংলা চ্যানেলের ‘হাউ ইজ দ্য জোশ’ অনুষ্ঠানে দুর্গাপুজোর বাহন নিয়ে রাজনীতিবিদ-দের পক্ষ-বিপক্ষ?’
পেঁচা বলল, ‘ওটা ছিল কবরে শেষ পেরেক। আর নেওয়া যাচ্ছে না, বুঝলে ভাই? গাছে বসে ঘাপটি মেরে শুনছিলাম, একটা বাড়িতে গাঁকগাঁক করে চলছিল এই অনুষ্ঠান; পরমানন্দবাবু চেঁচাচ্ছেন— ওর দাবি মা দুর্গার সিংহ নাকি যথেষ্ট হিংস্র না, ওই সিংহ নাকি পাড়ার মেনি বেড়ালের সমান! মা দুর্গার সিংহকে দেখতে হওয়া উচিত দেশে নতুন তৈরি হওয়া অশোকের হিংস্র সিংহের মতো। তার মাঝে নিরানন্দবাবু ওকে থামিয়ে বললেন, উনি সব রকম হিংসার বিপক্ষে। ওর মনে হয় এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে আরাধ্য পশু হল গিয়ে গরু, তাই এমন এক শুভ পশুর পিঠে চড়ে মা দুর্গার এবার নবরূপে আসা উচিত— এ হচ্ছে নতুন ভারতবর্ষের নতুন আগমনি। এইসব শুনে আমি রেগে গিয়ে চলে গেলাম আমার বাকি বন্ধুদের কাছে, বসালাম একটা বৈঠক। এর একটা হেস্তনেস্ত দরকার। আমি, সিংহ, ইঁদুর, ময়ূর আর রাজহাঁস সবাই মিলে ঠিক করলাম যে, এই পুজো থেকে আমরা মণ্ডপে আর নেই। তবে ব্যাপারটা শুধু এই পুজোয় না থাকা নিয়ে নয়, বুঝলে?’
আমি বললাম, ‘তাহলে?’
পেঁচা বলল, ‘এটা আমাদের সকল জীবজগতের পক্ষ থেকে একটা প্রতিবাদ— আমাদের ভাষা নেই, তাই আমাদের মত নেওয়ার প্রয়োজনও কারোর নেই। যে যা খুশি বলছে আমাদের নিয়ে, কেউ জাতীয়তাবাদের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর বানিয়ে দিচ্ছে, তো কেউ বিরিয়ানির ঠ্যাং। বছরে পাঁচদিন এই ভক্তিভাব দেখিয়ে লাভ কী? এই পাড়ায় আগে ক’টা গাছ ছিল জান? এখন শুধুই বাড়ি। গত মাসে আমার শেষ বাড়িটাও গেল, এখন সারা বছর যখন থাকারই জায়গা নেই তখন আর প্যান্ডেলে পাঁচ দিন ঠাঁই খুঁজে লাভ কী? তাই ভাবলাম তোমরা যখন কথায়-কথায় বয়কটের হাঁক পাড়তে পারো, রাস্তা অবরোধ করতে পারো, টিভিতে চিৎকার করতে পারো, তাহলে আমরাই বা বাদ যাই কেন? প্যান্ডেলে গেলে গণেশের ইঁদুর লাড্ডুর মতো কিউট, এ দিকে নিজেদের রাস্তায় খাবারের প্যাকেট ফেলার অভ্যেসের জন্য ইঁদুর চলে এলে ‘ওহ্, সো ডিসগাস্টিং’ বলে ঝাঁটার বাড়ি, দুটো-ই হয় না ভাই, কিঁউ কি হিপোক্রিসি কি ভি এক সীমা হোতি হ্যায় মিত্রো।’
আমি অবাক হয়ে বললাম, ‘আপনি এই ডায়লগটাও জানেন?’
পেঁচা বলল, ‘ভালই বুলি শিখেছি বলো? সামনের বছর ভাবছি ভোটে দাঁড়াব।’
আমি বললাম, ‘আপনাদের রাগ সঙ্গত, তবে আমার মনে হয় আপনার একটু গুলিয়ে যাচ্ছে। সবাই কিন্তু এমনটা নয়, দুর্গাপুজোর মণ্ডপে আপনাদের না দেখতে পেয়ে অনেকেই কিন্তু এবার ফেসবুকে প্রতিবাদ করেছে।’
পেঁচা অদ্ভুত এক তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল, ‘এই থাম তো, প্রতিবাদ না কচু! ক’টা লোক আদৌ মনে রেখেছে আমাদের এ বারের না থাকা? তুমি নিজেই তো দিব্যি ভুলে গেছিলে। তোমাদের চোখে সেই আনন্দ, মজা, অবাক হওয়া আর দেখতে পাই না, কারণ চোখগুলোই নেই। চোখের বদলে থাকে মোবাইল, সেখানে নিজেদের ছবি আর প্রতিমার ছবি তোলার মাঝখানে আমরা বেশ কয়েক বছর হল বাদ পড়েছি। আর এখন আমাদের দুর্গা ঠাকুরই সাইডলাইন হয়ে যায় মাঝে-মাঝে। এখন তো মহিষাসুরমর্দিনী অনুষ্ঠান থেকে কাগজের ফোটোশ্যুট— পুজোর মাসে সব নায়িকারা আমার মতো চোখ গোল করে দাঁড়িয়ে আছে দুগ্গা সেজে। ভক্তিভাব আনার জন্য চোখ এতো বড়ো আর গোল করলে আমি পেঁচা হয়েও কমপ্লেক্স খেয়ে যাই বুঝলে? তার মধ্যে দেখলাম এই বছর কোন এক প্যান্ডেলে ঢোকার মুখে, ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি মাখা খালি গায়ে, সাদা চাদর দিয়ে সানগ্লাস পরে দাঁড়িয়ে আছেন আমাদের ‘ওহ্ লাভলি’। স্ট্যাচুটার সাইজ মা দুর্গার সমান না হলেও অসুরের সমান তো হবেই। আগেরবার আবার এক মণ্ডপে অসুরের বদলে ছিলেন গান্ধীজি! তোমরা এটাও ভুলে গেছ, আর আমরা তো কোন ছাড়। আসলে মা লক্ষ্মী ছাপাখানা থেকে যতক্ষণ গান্ধীজির মুখ কাগজের ওপর শিরোনাম হয়ে স্রেফ কিছু মানুষের ঝুলিতে পৌঁছে যাচ্ছে, ততদিন এই ভুলিয়ে রাখার খেলা চলতে থাকবে।
খানিকক্ষণ চুপ করে থাকার পর জিজ্ঞেস করলাম, ‘আচ্ছা এই বয়কট কত দিন চলবে?’
পেঁচা হেসে বলল, ‘সে দিন অবধি যে দিন জল থাকবে বৃষ্টিতে। সিংহটা এবার যায়নি জানিস; ও থেকে গেছে প্যান্ডেলে আসা সেই বাচ্চাগুলোর জন্য, যারা সারা বছরে একবারই নতুন জামা পায়। ওরা এখনও সিংহ দেখলে অবাক হয়, মজা পায়, সাহস করে একটু কাছে গিয়েই আবার দৌড়ে পালিয়ে যায় ভয়ে। মুখে থাকে এক ভারি মজার হাসি, ভয়টাকে বড়দের সামনে ঢাকার জন্য। আর থেকে গেছে শিল্পীদের জন্য যারা কেউ রাজি হয়নি ওর মুখ হিংস্র-রূপে আঁকতে, যাদের জন্য দুর্গাপুজো এখনও মানুষের কাছাকাছি পৌঁছে যেতে পারে।’
আমি আবার বললাম, ‘ফিরে আসুন না প্লিজ! বিশ্বাস করুন, অনেকেই কিন্তু আপনাদের মিস করেছে।’
পেঁচা বলল—
‘আজকে দাদা যাবার আগে
বলব্ যা মোর চিত্তে লাগে
নাই-বা তাহার অর্থ হোক্
নাই-বা বুঝুক বেবাক্ লোক।
…
আদিম কালের চাঁদিম হিম,
তোড়ায় বাঁধা ঘোড়ার ডিম ।
ঘনিয়ে এল ঘুমের ঘোর,
গানের পালা সাঙ্গ মোর।
না ভাই, এবার থেকে শুধু আমাদের মূর্তিটাই থাক, আমরা আর ফিরব না।’
উড়ে চলে গেল পেঁচা, সন্ধ্যা নেমেছে, বিসর্জনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে, বেড়ে চলছে ভিড়। সারি সারি মানুষের পা, বয়ে চলেছে, শুরুতে বললাম না, ঠিক যেন একটা বিরাট নৌকো। মাঝে মাঝে ভাবি, মানুষ এত কষ্ট করে, ভিড়ে দাঁড়িয়ে, ঘর্মাক্ত হয়ে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন দিয়ে যায় কী করে— বছরের পর বছর। কী জানি, চার ঘণ্টা লাইনে দাঁড়ানো হয়তো সারা বছরের সাংঘাতিক একঘেয়েমি আর আগুনমুখো বাজারে টিকে থাকার লড়াইয়ের থেকে ঢের সোজা। তাই এই পাঁচটা দিন রাস্তায় চলাচল করে এক প্রকাণ্ড মানুষের নৌকো, তারা নিজেরাই তাদের বিভিন্ন সমস্যাকে দাঁড় দিয়ে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে এগিয়ে চলেছে, কীসের উদ্দেশে? বিসর্জন হয়তো, তার আগে শুধুমাত্র এই এগিয়ে চলা।
বদলাতে থাকা পুজোর মুখ কেন জানি না, মনে করিয়ে দিল প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক প্লুটার্খের বলা এক প্রচলিত প্যারাডক্সের কথা। পৌরাণিক কাহিনিতে এথেন্সের আবিষ্কর্তা রাজা থিসিউস যে জাহাজে করে রাজা মাইনোসের কবল থেকে মুক্ত হয়ে শত্রুদের হারিয়ে ফিরেছিলেন, সেই জাহাজকে সযত্নে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন এথেন্সের নাগরিকগণ, সেই ঘটনাকে প্রতিবছর মনে করে উদ্যাপন করার জন্যে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জাহাজটা ক্ষয়ে যেতে শুরু করে, তাই জাহাজটাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে তার এক একটা অংশ আস্তে আস্তে বদলে দেওয়া হয়, নতুন কাঠ বদলে দেয় পুরোনোকে। এই প্রক্রিয়ায় জাহাজটার একটাও আসল অংশ আর অবশিষ্ট থাকে না, পুরোটাই প্রতিস্থাপিত নতুন সামগ্রী দিয়ে। প্রশ্ন হল, তাহলে জাহাজটাকে কি সেই একই জাহাজ হিসেবে গণ্য করা হবে? এই জন-নৌকো দেখে কোথাও এই এক-ই কথা মনে হল। সময় বদলেছে, দূর থেকে মানুষের সমাগম দেখতে একই রকম লাগে, তবে ভেতরে ভেতরে প্রতিস্থাপিত হচ্ছে নতুন মানসিকতা, বদলে যাচ্ছে উদ্যাপনের অর্থ, সেটা ঠিক না ভুল জানি না, অনেকটা ‘শিপ অফ থিসিউস’-এর প্যারাডক্সের মতো। ঠিক-ভুলের থেকেও দ্বন্দ্বটা বদলানো সময়ের সঙ্গে বদলাতে থাকা পরিচিতির, এর একটা কোনও নির্দিষ্ট উত্তর নেই, হয় না, এই বদলকে আপাতত চিহ্নিত করাই হয়তো একটা উত্তর।
পেঁচা বাহাদুর নতুন করে জাগিয়ে দিল এই প্রশ্ন, আর মনে করিয়ে দিয়ে গেল যে, এই বছর পৃথিবীর এক প্রান্তে বহু মানুষের নতুন কোনও জামা হয়নি, হয়েছে শুধু নতুন রেফিউজি ক্যাম্প। ভাসানের ভিড় বেড়ে চলেছে, কান ঝালাপালা করা ঢাকের আওয়াজের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে মন খারাপ, কী অদ্ভুত, এত মানুষের ভিড়ে আর ফাঁকা প্যান্ডেলের মাঝে বিরাট বিরাট বিজ্ঞাপনগুলোকে বড্ড একা লাগছে, আসলে পুজোর শেষের মনকেমন করা অনুভূতিটাকে স্পনসর করা যায় না এখনও। ওপরে তাকিয়ে দেখি, পেঁচা উড়ে চলেছে ভিড়ের ওপর দিয়ে; ঢাকের আওয়াজ ছাপিয়ে শোনা যাচ্ছে তার কর্কশ কণ্ঠস্বর, এর আগে কখনও পেঁচার বিচ্ছিরি চিৎকার ভাল লাগেনি, তবে আজকে এই চিৎকার কেন জানি না মনে করিয়ে দিল একটা প্রিয় গানের কথা। মনে হল পেঁচা যেন ডাক ছেড়ে গোটা শহরটাকে বলছে, ‘সুখে আছ, যারা সুখে থাকো এ সুখ সইবে না, দুখে আছ যারা বেঁচে থাকো, এ দুখ রইবে না, বন্ধু এ দুখ রইবে না’।