ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • সাক্ষাৎকার : দুর্গাশিল্পী পার্থ দাশগুপ্ত


    শুভময় মিত্র (October 26, 2023)
     

    ওঁর এ-বছরের ঠাকুরের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। নরম আলোর আবহ। দুর্গা ঠিক ত্রিমাত্রিক নয়। অন্যরা দ্বিমাত্রিক। পটচিত্রের প্যানেল। শিব শুধু মাথার উপরে নয়, সর্বত্র। বোলপুরের কাছে হাট সেরান্ডি গ্রামের শৈলীর প্রতি ট্রিবিউট। আছে আরও অনেক কিছু,  নির্দিষ্ট কক্ষে। ঠিক চোখে পড়বে। একের পর এক ফোন আসছে ওঁর। শান্তভাবে কথা বলছেন। যেটা ওভারহিয়ার করলাম…          

    যে সে জায়গা নয়। আর্ট কলেজের মতো প্রতিষ্ঠান থেকে ছাত্রদের পুজো মেকিং-এর অঙ্গনে পৌঁছনোটা খুব জরুরি। মূল শিল্পীদের সহকারী, সহশিল্পীর প্রয়োজন থাকেই। একটা অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশনের ছেলেমেয়েরা এর জন্য আদর্শ। ২০১৮ সালে, তখন ঠাকুরপুকুরের পুজো করছি, উদ্যোক্তাদের বললাম, আর্ট কলেজ থেকে চারজনকে ইন্টার্ন হিসেবে নাও। কলেজের প্রিন্সিপাল নিজে বেছে দেবেন। এরা এসে পুজোর কাজে সরাসরি যুক্ত হোক। জলপানি পাক। এই প্রজেক্টে কাজ করার স্বীকৃতি হিসেবে শংসাপত্র দেওয়া হোক। হল সেটা। সহায়তা করলেন প্রিন্সিপাল ছত্রপতি দত্ত। ফলে এই অভিজ্ঞতার একটা অফিশিয়াল মান্যতা পাওয়া গেল। খাতায়-কলমে। স্রেফ এল, খাটাখাটি করল, এতে হবে না। স্ট্যাম্পটাও জরুরি। ওদের মধ্যে একজন পরবর্তীকালে সেই সার্টিফিকেট তার বায়োডেটার অংশ হিসেবে পেশ করে হায়দ্রাবাদে রেসিডেন্সি প্রোগ্রামে ডাক পেয়েছিল। এমন ঘটনা পরেও হয়েছে। সুতরাং দুর্গাপুজো একজন শিক্ষানবিশ শিল্পীকে অনেকটাই এগিয়ে দিতে পারে। হাতে কলমে শেখা, বোঝার এত বড় পরিসর আর হয় না কি? দুর্গাপুজো নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাডেমিক কাজ হয়েছে, হচ্ছে। এই যে ইউনেস্কো (UNESCO) সম্মান, যেখানে শ্রীমতী তপতি গুহঠাকুরতার বড় অবদান রয়েছে, সেটার মূলে রয়েছে দীর্ঘ রিসার্চ। রাষ্ট্রীয় ললিতকলা বড় কাজ করেছে এই দুর্গাপুজো নিয়ে। দেবদত্ত গুপ্ত, মৃন্ময়ী দেব, ঈশিতা চক্রবর্তী, ঋদ্ধিক দত্ত, আমিও যুক্ত ছিলাম এতে। ‘ডিজিটাইজিং দুর্গাপুজো অ্যাজ ইন্ট্যাঞ্জিবল হেরিটেজ’। বাইশ মাসের প্রজেক্ট। মিনিস্ট্রি অফ কালচারের ওয়েবসাইটে প্রায় দু’ঘণ্টার প্রেজেন্‌টেশন রয়েছে। সারা দুনিয়া দেখতে পাচ্ছে। জাতীয় সংগ্রহে একমাত্র আর্কাইভাল ডকুমেন্ট। স্বীকৃত পড়াশোনা, পড়াশোনার স্বীকৃতি, দুটোই দরকার।

    সাক্ষাৎকারের প্রশ্নগুলোর প্রয়োজন হবে না বলে মনে হচ্ছে। সাক্ষাৎ হয়েছে, এই অনেক। পাশে বসে মাথা ঘুরিয়ে দেখে যাচ্ছি, যা যা দেখিয়েছেন। দুর্গা যেভাবে প্যানেল পরিবৃত অবস্থায় ভেসে আছেন তা দেখে তিব্বতি থানকার কথা মনে পড়ল। ওখানে বলা থাকে বুদ্ধের কথা। এখানে শিল্পী ধরিয়ে দিচ্ছেন একজন বাঙালি মা, তাঁর পরিবার, তাঁর জীবনের স্যাটেলাইট গল্পগুচ্ছ। আগেও দেখেছি। সব কিছুতে স্ট্যাম্প মেরে সিল করেন না। অনেকটাই ছেড়ে দেন দর্শকের উপরে। যাতে মনের উপর চাপ সৃষ্টি না হয়। আরাম করে দেখেশুনে খুশি হলেই চলবে। এক ধরনের অনুগ্র আনন্দ বিরাজ করে অতি যত্নে নির্মিত ইনস্টলেশনগুলোর প্রতিটি ডিটেলে। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। নভচারী পৌরাণিক ফিগাররা রয়েছে, আছে দুই পরি, সরু বাঁশের খাঁচা করে তৈরি। এদের ত্বক নেই। ভিতরে ঢুকে পড়া যাচ্ছে নিশ্চিন্তে। এইসব চরিত্রগুলোর মধ্যে শুধু নয়, দর্শকের মাথায় হাওয়া-বাতাস খেলার একটা ব্যবস্থা করে রাখেন, বরাবরই। সবার জন্য, সর্বজনের দুর্গাপুজো। থিমের মারপ্যাঁচ নেই।

    আপনি তো সেই অর্থে পুজোর লোক নন। সেরামিক্স, পেন্টিংয়ের কারবার আপনার। আপনি আর্টের ঠিক কোন ব্যাপারটাকে দুর্গা-বন্দনায় কাজে লাগালেন,সেটা বলুন শুনি।   

    চিরকাল যা হয়েছে, ঠাকুরকে টোপ দিয়ে মানুষ আর্ট দেখিয়েছে। এবং ভাইসি-ভারসা। সারা পৃথিবীতে এটাই হয়ে আসছে। মন্দির দ্যাখো, দেবতাটি হয়তো নিষ্প্রভ। এর বাইরে যা আছে, স্থাপত্য, তা অনন্য। মানুষ আর্টকে দেখবে কেন? ওই, ওঁর জন্য। ওঁকে কেন? শিল্পের আকর্ষণে। দর্শকের যাপনের মধ্যে ঢুকে পড়তে পারলেই কেল্লা ফতে। দর্শক হরেক মননের। তাঁর মনকে চালিত করতে পারা শিল্পীর প্রধান কাজ। যাতে সে মিলে যায়, মিশে যায় এর মধ্যে। তাঁর চলনটাও যেন বদলে যায় এমন আবহে। এখানে দেখবে, আর যা যা আছে, তাদের মধ্যে এমনভাবে স্পেস তৈরি করা হয়েছে যে প্রত্যেকটিকে স্বতন্ত্র উৎসাহে দেখতে ইচ্ছে হবে। কখনও মুখোমুখি। কখনও ঢালুতে নেমে এসে, আরাম করে, দেবীর পায়ের কাছে শান্তভাবে দাঁড়িয়ে। চোখ আপনা-আপনি উঠবে, ঘুরবে ফিরবে। মনের ক্যামেরা প্যান করবে, আরামসে।

    ওই যে পিলারগুলো, হেলানো আছে কিন্তু। খাড়া থাকলে মনে হত হুমড়ি খেয়ে পড়বে। এইগুলোই হচ্ছে একজন ডিজাইনারের মারপ্যাঁচ। আমরা এসেছি শিক্ষাপ্রাপ্ত, প্রাতিষ্ঠানিক জায়গা থেকে। এসব জেনে-বুঝেই প্রয়োগ করছি। এর অন্যতম জায়গা হল, টোপ, সেই টোপ দেওয়া। ‘সিস্টিন চ্যাপেল’ ভাবো। ক্রুশবিদ্ধ একটা মানুষকে দেখতে, মানুষ কেন আসবে? এসে কী দেখবে? দেখবে মাইকেলেঞ্জেলোর সেই ব্যাপক, এপিক ছবিগুলো। দুটোই পরস্পরের জন্য জরুরি।   

    তাহলে, ধর্মের জন্য আর্ট না আর্টের জন্য ধর্ম?

    একটা সেতু তৈরি করতে হয়। একটা চেনা ‘কোড’ দিতে হয়। যাতে ওই সূত্রটা ধরে মানুষ এগিয়ে যেতে পারে। এই ধরো, একটা ঘর, কাঁচি, সাবান, আয়না আছে অর্থাৎ সেলুন।কোড। লেখার দরকার নেই। ঠিক বুঝে যাবে। 

    দুর্গামণ্ডপের প্রধান সূত্র তাহলে কী?  

    দুর্গা নিজেই। এত বড় কালচারাল ব্র্যান্ড আর নেই। এরপর সাপোর্টিং এলিমেন্টস। তা হল দুর্গার স্ট্রাকচার। এই চেহারা তো মানুষই বানিয়েছে। এটা একটা সমাজ। যেখানে কেউ অবহেলিত নয়। এক ধরনের সামগ্রিকতা। দশ হাতের ক্ষমতা রাখা দেবী, বাহন সিংহ, সমস্ত অশুভ শক্তির বিনাশ হবে, সবটাই তো রূপক। দুর্গা নিজেই একটি সোসাইটি। যেখানে সবার স্থান আছে। সবাই নিশ্চিন্তে জীবন কাটাতে পারবে।    

    আপনার এবারের দুর্গা-সমাজে দ্বিমাত্রিকতার প্রভাব, কী ব্যাপার?

    এক সময়ে হিন্দুমূর্তি, যা থ্রি-ডাইমেনশনাল, ছিল না কিন্তু। বৈদিক উপকরণ ছিল। হোম। যজ্ঞ। প্রতীক। মূর্তির গল্পটা এসেছে বৌদ্ধিক সংস্কৃতি থেকে। পাল-সেন যুগের কথা বলছি। পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আছে, পাঠিয়ে দেব। পড়ে নিও। যাই হোক, বৌদ্ধদের ওই ব্যাপারটা ছিল। প্রতিমূর্তি তৈরি করা। আমাদের প্রাচীন মন্দিরে এখনও পাবে, যজ্ঞবেদি। পুজো হত। ঠাকুর, মূর্তি নয়। মূর্তি পরে এসেছে। ওই দেখো, ধর্মচক্র প্রবর্তনের মতো করে, ইলোরার পদ্ম মনে করো, নীচে অগ্নি, ওপরে জলোচ্ছাস, মাঝখানে শান্তি। দুর্গা। নিজের পরিমণ্ডল-সহ, সম্পূর্ণ প্যাকেজ। অতএব বুদ্ধিস্ট কানেকশনটা রেখেছি বইকি। তাছাড়া ‘হাট সেরান্ডির পট’-এর কনসেপ্টও আমার কাছে বরাবরই চিত্তাকর্ষক। ওখানে অসুর, সিংহকে ফিট করানোর জন্য একটু চওড়া জায়গা দিতে হয়। এখানে আমার মুশকিল, তাই একটু ফোল্ড করে দিয়েছি। আর একটা ডাইমেনশন তৈরি হয়েছে।

    এত শিব কেন?

    শিব দারুণ লোক। সর্বজনের অন্দরমহলে শিবের অবাধ যাতায়াত। সহজ লোক যে! ঝামেলা নেই। কিছুই নেই। একটা পাথর হলেই চলে। দুর্গার চেয়েও বেশি সাকসেসফুল পাবলিক ফিগার। দুর্গার অনেক ঝামেলা। পাঁচজনকে পুজো করতে হবে। পাঁচদিন ধরে। খরচ অনেক। শিবের ইকোনমি অবিশ্বাস্য। আর এই যে প্যানেলগুলো, নাইন্টিন্থ সেঞ্চুরি বেঙ্গলি উডকাটের কম্পোজিশন, অথচ পটের স্টাইলে প্রেজেন্টেশন। ওই যে ভগীরথের গঙ্গা, শিবের বিয়ে, পপুলাররা ঘিরে আছে দুর্গাকে। ব্যাপারটা হল, তোমার আলো ধার করে তোমার চেয়েও চকচকে হব আমি। শিব যে মাথার ওপর বসে থাকে, সে তখন আগমনী গান, বিরহী গান, বিদায়ি গান গাইছে। ওইজন্য হাতে তানপুরা। শিব পূজিত হচ্ছে, নিজেই দেখাচ্ছে। চাঁদ স্থাপন করছে নিজের ললাটে। এখানে এক্কেরে শিবময় সব কিছু।

    তার মানে, এই পলিটিক্সটা প্ল্যান করেই?

    হ্যাঁ। শিব দুর্গার চেয়ে অনেক বেশি লোকায়ত। শিব অনেক কাছের লোক। মজাটজা  করা যায়। দুর্গার সঙ্গে ওসব চলে না। ‘ঠাকুর তোমায় কে চিনত, না চেনালে অচিন্ত্য।’— রামকৃষ্ণদেবের মতো আধপাগল লোককে নিয়ে অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত ‘পরমপুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণ’ লেখার পর দীপ্তেন্দ্রকুমার সান্যালের এই উক্তি। এখানেও তাই। ঠাকুর চিনতে গেলে শিবের দ্বারাই চিনতে হবে।

    দুর্গাভাব তৈরি হয় তার সঙ্গে সম্পৃক্ত গল্পগুলো দিয়ে। এর ইলাস্ট্রেশনগুলো যে-রূপে পরিবেশিত হয় তা আমরা দেখি। আপনার কাজে বছরের পর বছর এগুলো বদলে গেছে। একটা পরম্পরা তৈরি হয়েছে। এই জার্নিটা একটু শুনতে চাই…

    এই বদলে যাওয়াটাকে উপভোগ করার জন্যই কাজ করি। আমি ট্র্যাডিশনাল আর্টিস্ট হলে রিপিটেশন থাকত। ফোক আর্টিস্টরা এটা করে। একটা নয়, হাজারটা মূর্তি বানায়। অনেক বেশি ছড়িয়ে পড়ে, মানুষের ঘরে-ঘরে। আমরা এটা করতে পারি না। চাই না। কারণ, দুর্গাপুজো এমন একটা আঙিনা, যেখানে মানুষকে ধরেবেঁধে ডেকে আনতে হয় না। অর্থাৎ আমার অডিয়েন্স রেডি আছে। আমি চাই প্রত্যেকবার তাদের নতুন ভাবনার খোরাক জোগাতে। আমরা বিড়লাতে বা অ্যাকাডেমিতে আর্টের প্রদর্শনী করি। গলায় গামছা দিয়ে দর্শক ডাকতে হয়। আর এখানে তার উল্টো। এমন ভাবার কোনও কারণ নেই যে, তাঁরা আর্ট বোঝেন না। বা সুন্দরের প্রতি, নিজেদের বোধের জায়গায় হালকা। হয়তো গুছিয়ে এক্সপ্রেস করতে পারেন না। অনুভবের জায়গাটা আছেই। 

    সরু বাঁশের ছিলা দিয়ে এই অদ্ভুত ফিগারগুলোর ভেতরটাও দেখা যাচ্ছে। হলোগ্রাফিক ইমেজের মতো। ব্যাপারটা কী?     

    ডোমপাড়া, রামবাগান অঞ্চলের কারিগর, যারা এইসব কাজ করে তাদের অঞ্চলটার একটা সিগ্নিফিকেন্স আছে। কাঠখোদাই, ছাপাই ছবি, ঘরে-ঘরে পৌঁছে যাওয়া, ঠাকুরদের ব্র্যান্ডিং তৈরি হওয়া, সব কিন্তু এখানেই হত। এরা এসেছে মূলত দক্ষিণবঙ্গ থেকে। আর কুমোরটুলি। যাবতীয় চালচিত্র, সব কিছুর খাঁচাটা এরাই বানায়। বটতলাও রয়েছে। কোম্পানি স্কুল অফ পেইন্টিং, উৎস ওখানেই। খেয়াল করবে, এরা এখনও রবীন্দ্র কাননকে কোম্পানি বাগান বলে। এক সময়ে বিদেশি পেইন্টাররা, বিশেষ করে ডাচরা, এদের শিখিয়েছে, প্রভাবিত করেছে। বাবুদের জন্য ফরমায়েশি কাজ করত অনেকে। তৈলচিত্র। কিন্তু সে আর ক’জন কিনবে? কাঠখোদাই সুবিধের, সস্তার। তার থিম কিন্তু ওই অয়েল পেন্টিংয়ের ঠাকুর-দেবতা। পপুলারাইজ হয়ে গেল ঘরে-ঘরে। এই বাঁশের কাজের লোকগুলোর ওপরেও এর প্রভাব পড়ল। কাঠ খোদাইয়ের ব্যাপারটা, দেখবে, বাটালিটা সোজা রাস্তায় চলে। এটাও তাই। একে ফ্লেক্সিবল করার অনেক হ্যাপা। করলে, রেখাতে কমনীয়তা আসে। স্ট্রাকচারটা ঢেকে না দিলেই বায়বীয় হয়ে যায়। অন্তর-আত্মাটা ঠিক টের পাওয়া যায়। এটাই বিউটি। এদের কোনও বিশেষ ক্র্যাফট অবজেক্ট নেই। যেমন আছে পাঁচমুড়ার ঘোড়ার। এদের আছে ক্র্যাফট ইঞ্জিনিয়ারিং। অত্যন্ত ফাইন কারিগরি। আজকের সব সফটওয়্যার, রাইনো, মেইজ, থ্রি-ডি বস্তুকে কম্পিউটারে বানিয়ে ফেলা যাচ্ছে, সূত্রটা কিন্তু এটাই। এরা একটা টু-ডি ড্রইং দেখে হাওয়াতে কাজ করে দিচ্ছে, অক্লেশে। হিউম্যান কন্ডিশন থেকে উঠে আসা জিনিস। অঙ্ক করলে খুঁত পাবে। সেটাই হয়ে উঠছে সুপ্রিম সৌন্দর্য। এই ভ্রান্তিগুলোকে প্রশ্রয় দেওয়া জরুরি। তবেই হিউম্যান প্রেজেন্স, আর্টের প্রাণটা টের পাওয়া যায়। কী দরকার অঙ্কের বিচারে রিয়ালিটিকে টেনে আনার? মানুষের বোধ, শরীর থেকে বেরিয়ে আসা যা কিছু অনেক দামি। এটা সার্‌রিয়াল। আর সেই জন্যই আনন্দের।

    আপনার মতে আজকের দিনে দুর্গাপুজোর আসল কারণ কী? বা বলা ভাল, ইমপ্যাক্টটা ঠিক কোথায়?  

    ভুলিয়ে রাখা। দেখো চারপাশে। সবাই আনন্দিত। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন। বিষাদের জায়গা নেই। শ্রেণি-বিভাজন নেই। নেই বলেই অনেক কিছু ভুলে থাকা যায়। এমন উৎসব খারাপকে ইগনোর করতে সাহস জোগায়। সেটা সবসময়ে পারি না বলেই দুঃখের যাপন করতে বাধ্য হই। আমরা দুঃখ বিলাসীও বটে। রোজ-রোজ তো হয় না। পাঁচদিন ভুলে থাকুক না। সে ফাঁদে পা দিয়ে বা না দিয়ে। আমার কাছে এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ফাঁদ পেতে, ফাঁদে ফেলে মানুষকে আনন্দ দেওয়া। আবার কার কীসে আনন্দ তা বোঝা মুশকিল। সেদিন মাঝরাতে এক বৃদ্ধা, পিঠে পোঁটলা, কোথা থেকে এলেন কে জানে! দেখেটেখে চলে গেলেন। কোথায়, কেউ জানে না। আর একজন। পক্ষাঘাতে কাহিল। হুইলচেয়ারে বসতে বললাম, রাজি হলেন না। এত কষ্ট করে, তাহলে কী দেখছেন? আমি দুর্গা দেখছি। এটাই শেষ কথা।  

    কথা বলেছেন শুভময় মিত্র
    ছবি সৌজন্যে : শিল্পী

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook