৩৭।
সমুদ্রের দিক থেকে যারা দৌড়ে আসছিল ড: ব্রহ্ম ঠাকুরের দিকে, ব্রহ্ম জলের মধ্যে মুখ থুবড়ে পড়বার পর তারা দেখতে পেল, তাঁর পিঠে আর কাঁধে দু’টি তির বিঁধে আছে। এর ফলে তাদের কোলাহল আরও বাড়ল। তারা অজানা ভাষায় চেঁচাতে শুরু করল। জঙ্গলের ফাঁকফোকরে লুকিয়ে থাকা তিরন্দাজ সেন্টিনেলিজ়রাও অদ্ভুত আওয়াজ করে জবাব দিল। ব্রহ্ম ঠাকুর কী হচ্ছে না হচ্ছে এসব নিয়ে ভাবা বন্ধ করলেন। তাঁর ক্লান্ত মাথা আর এত ভজঘট সইতে পারছে না। চোখ বন্ধ করে পড়ে থাকলেন তিনি, নিস্পন্দ। তাঁর মনে হল, অনন্তকাল তিনি এভাবেই পড়ে আছেন।
আসলে কিন্তু জলের মধ্যে তাঁর তির বিঁধে উপুড় হয়ে পড়বার পর দু’মিনিটও কাটেনি। ব্রহ্ম ঠাকুর অনুভব করলেন তাঁকে জল থেকে চ্যাংদোলা করে তুলে বয়ে নিয়ে চলেছে তিন-চারজন জংলী মানুষ। জলে ভিজে ঢিলে হয়ে যাওয়া চোখের বন্ধনীর ফাঁক থেকে তিনি দেখতে পেলেন তাদের বলশালী নেগ্রেটো শরীর, সারা শরীরে সাদা রং করা। প্রথমে তিনি ভাবলেন এটাই তাঁর শেষ। আর বেশিক্ষণ আয়ু নেই। তারপর অবাক হয়ে গেলেন দেখে যে তাঁকে ডাঙার দিকে নয়, আরও জলের দিকেই নিয়ে চলেছে জংলীরা। আসন্ন মৃত্যুর আগে ব্রহ্মের একটু দৈহিক আরাম পাওয়ার সাধ হল। খানিকক্ষণ যদি এই জলে ভেজা ভাব থেকে মুক্তি পাওয়া যেত!
তিনজন বামন সাইজের জংলী মানুষ এসে প্রথমেই দুটো বিষতির টেনে তুলে ফেলেছে ব্রহ্মের পিঠ আর কাঁধ থেকে। তারপর ক্ষতস্থানে কী যেন ঘষে দিয়েছে জোরে ঠুসে। ব্রহ্মকে বহন করে সেন্টিনেলিজ়দের দ্বীপের অদূরে সমুদ্রে ভাসমান একটি ভেলাতে তুলল ওরা। ভেলাটিতে অপেক্ষা করছিল আরেকজন তাদেরই সমগোত্রীয়। এই ভেলাটি বাঁশের, বনজ লতা দিয়ে বাঁশগুলোকে টানটান করে বেঁধে এটা তৈরি হয়েছে। টানাহ্যাঁচড়ায় আরও অনেকটা খুলে যাওয়া চোখ বাঁধা কাপড়ের ফাঁক দিয়ে ভেলাটা দেখে ব্রহ্ম ঠাকুরের ভীষণ চেনা লাগল। এই ভেলাটা তিনি আগে কোথাও দেখেছেন…
আর একটু ভাবতেই তিনি বুঝতে পারলেন— ব্যাপারটা আসলে কী হচ্ছে। এই প্রথম তাঁর মনে হল, এ যাত্রা তিনি বেঁচে গেলেন। তাঁকে বাঁচানোর এই তুলনাহীন পরিকল্পনা কে করেছে এ সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হয়ে তিনি অস্ফুটে উচ্চারণ করলেন— জয় ওঙ্গে চৌধুরি! ওঙ্গে চৌধুরির জয়! — সত্যিই তো! আদিমদের খপ্পর থেকে বাঁচাতে আদিমদেরই পাঠানোর পরিকল্পনা ওঙ্গে চৌধুরি ছাড়া আর কেই বা করবে?
তাঁর মুখে ‘ওঙ্গে’ কথাটা শুনে ভেলার এই চারটি লোকও যেন খানিকটা উল্লসিত হল। উঁচুগলায় তারাও বলে উঠল ‘চাকুলা ওঙ্গে! চাকিতো ওঙ্গে!’ ঠিক সেই মুহূর্তে খানিকটা পেছনে ফেলে আসা সেন্টিনেলিজ়দের দ্বীপ থেকে ভেসে এল আদিম উলুধ্বনির মতো আওয়াজ। ব্রহ্ম ঠাকুর মাথাটা হেলিয়ে সেদিকে তাকালেন। চোখের কাপড় পুরোটাই খুলে গেছিল। এবার দেখলেন অন্তত সাতআটজন সেন্টিনেলিজ় হাতে তিরধনুক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুখের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে উলুর শব্দ তৈরি করছে, কিন্তু যুদ্ধে উদ্যত নয় তারা। ব্রহ্ম ঠাকুরের আরাম হল। পরম নিশ্চিন্তিতে তিনি চোখ বুজলেন।
ভেলাটা তাঁকে নিয়ে চলল এই জঙ্গুলে দ্বীপটার বিপরীত দিকে। সেখানে অপেক্ষা করছিল একটা লঞ্চ। লঞ্চের উপর তাঁকে তুলে প্রথমেই একটা ছুরি দিয়ে তাঁর হাতের বাঁধন খুলে দেওয়া হল। গায়ে একটা কম্বল জড়িয়ে শুইয়ে দেওয়া হল। আধশোয়া হয়ে এক বোতল জলে মুখ ধুয়ে আর এক বোতল জল পান করে ব্রহ্ম দেখলেন এরিক দত্ত দাঁড়িয়ে আছেন একটা ইনজেকশনের সিরিঞ্জ হাতে। ঝাপসা চোখে তাঁর মনে হল, বুড়ো এরিকের চোখে যেন তিনি জল দেখতে পেলেন। তাঁর বৃদ্ধ বন্ধু কাঁদছেন।
তিনি খপাত করে এরিকের হাতটা ধরে ফেললেন। বললেন— আমি বেঁচে আছি। খবরদার, এক্ষুনি চোখের জল মুছে নাও। আর ইনজেকশনটা ফেলে দাও। লাগবে না ও সব।
— লাগবে না মানে? তোমায় সেন্টিনেলিজ়রা বিষতির মেরেছে ডাক্তার। ওই তিরের ফলায় স্ট্রিকনিন জাতীয় বিষ থাকে—
— এবং ওই বিষ লাগামাত্রই কাজ করে। তাহলে আমার বেলা করল না কেন? আমি গতকাল সন্ধেয় নৃতত্ত্ব যাদুঘর থেকে আমাদের আস্তানায় ফিরেই ড. কিশিমোতোর তাঁবুতে ঢুকে পড়ি। তোমার ওই সিরিঞ্জে যে ওষুধ ভরেছ, ওই ওষুধটারই একটা ফুল ডোজ় নিজেকে ইনজেক্ট করে নিই। তারপর কিশিমোতোর সঙ্গে মোকাবিলা করি। এখনও সন্ধে হয়নি। অতএব আমার কোনও ভয় নেই। ড. কিশিমোতোর তৈরি করা এই ড্রাগের মেয়াদ কম করে হলেও ২৪ ঘন্টা।
এরিক বললেন— শোনো ডাক্তার। এর মধ্যে অনেক কিছু ঘটে গেছে। আমি বাধ্য হয়েছি বিলি গিলচারকে সেলুলার জেলের একটা গোপন অংশে বন্দি করে রাখতে—
— বন্দি করেছ? বাঃ! থাক, ও ওখানেই থাক আপাতত। অন্তত কিছুদিন থাক। তারপর আমি নিজে ওর বিচার করব। আমার ভাইয়ের মৃত্যুর বিচার। যদিও বিলি জানত না যে আমার নাম প্রকাশ্যে আনলে আমার ভাই খুন হবে। তবুও ওর একটা দায় তো থেকেই যায়।
আশ্চর্য পেছনেই ছিল। সে এবার এগিয়ে এসে ড: ব্রহ্ম ঠাকুরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। ব্রহ্ম বললেন— আরেহ কী অবাক কাণ্ড! তুমিও এখানে? বাব্বা আমি তো দেখছি সেলিব্রিটি হয়ে পড়েছি! আমার বাড়ির মেশিনপত্র চলছে তো ঠিকঠাক? …কিন্তু আসল লোকটাকে তো কই দেখছি না। ওঙ্গেদের দিয়ে আমাকে উদ্ধার করানোর অনবদ্য পরিকল্পনা করল যে, সেই আমার অতিবুদ্ধিমান প্রাচীন বন্ধুটি কোথায়?
ওঙ্গে চৌধুরি লঞ্চের অন্যপাশ থেকে এগিয়ে এলেন। ব্রহ্মের হাত ধরে বললেন— এছাড়া উপায় ছিল না ঠাকুর। সভ্য লোকেদের সেন্টিনেলিজ়রা সহ্য করত না। সভ্যরা এগোলে ওরা প্রথমেই তোমায় মারত। তাও তো বিষতির মেরেছিল আমার লোকেদের। তোমার গায়েও যা লেগেছিল। কিন্তু আদিমরা মরে না, ওদের কাছে দাওয়াই থাকে, এক ধরনের জংলী বুনো ঘাস। আমার যোগাড় করা এই চারজন ওঙ্গে বন্ধু কিন্তু আসলে আর আদিম না। এখন এরা পোর্ট ব্লেয়ারে থাকে। সরকার ওদের চাকরি দিয়েছে। ওরা আমাদের মতোই পোশাক পরে, সাবান মেখে চান করে। সুতরাং ওরা আদিমদের সমাজে ব্রাত্য। আমি আজ ওদের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রথমেই বললাম, তোমাদের ফের একবার আদিমদের মতোই লেংটি পরতে হবে। সারা দেহে কাদা মেখে শুকোতে হবে। এই শুকনো কাদাই হল ওদের গায়ের সাদা রং। এবং গা থেকে তুলে ফেলতে হবে সভ্যতার সব চিহ্নই। মুছে ফেলতে হবে সাবানের গন্ধ। আমার এক বন্ধুকে বাঁচাবার জন্য এই সাহায্য চাইছি। ওরা রাজি হল। এইসব ব্যবস্থা করতে ঘণ্টা দুয়েক লাগল। আজ রোদ উঠেছিল বলে রক্ষে। নইলে কাদার সাদা আবরণ ওদের গায়ে বসতো না। জংলীদের ওটা একটা ট্রেডমার্ক ব্যাপার। যাতে গায়ে পোকা না কামড়ায়, তার জন্যই ওটা ওরা করে থাকে।
— আর ভেলাটা? ওই ভেলাটাই নৃতত্ত্ব যাদুঘরে রাখা ছিল না?
এরিক দত্ত বললেন— আরিব্বাস ডাক্তার! ঠিক চিনে ফেলেছ দেখছি! মি. ওঙ্গে চৌধুরি এরকম একটা ভেলার প্রয়োজনীয়তার কথা বলতেই আমি মাদাম লতিকা মুরুগান সুব্রহ্মণ্যমকে ফোন করি। তিনি সরকারি রেকর্ডে ভেলা মেরামতির অজুহাত দেখিয়ে ওটা আমাদের হাতে তুলে দেন। তবে ডাক্তার, আর কথা নয়। তোমার গায়ে বেশ জ্বর। প্রচণ্ড স্ট্রেইন হয়েছে। এই নাও, এই ওষুধগুলো খাও। পোর্ট ব্লেয়ারে পৌঁছেই তোমায় হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
ব্রহ্ম ঠাকুর ওষুধ খেলেন। এরিকের হাত ধরে শুয়ে থাকলেন মিনিট পাঁচেক। তারপর বললেন— জ্বর এসেছে। সেরেও যাবে। কিন্তু আমায় কিছু কথা অন্তত বলতে দাও। তোমায় না বললে শান্তি হচ্ছে না। কথাগুলো বলে তারপর আমি ঘুমাব।
— বল ডাক্তার। তোমার মাথায় এসেছে যখন না বললে এমনিতেও তুমি ঘুমোতে পারবে না।
— শোনো, পরমাণু উইজ়ার্ড স্যর কেভিন ‘ক্যাভি’ আইজ়্যাক, যিনি তিনবছর আগে নিরুদ্দেশ হয়েছিলেন, বিলি গিলচারের নেতৃত্বে একটা দারুণ প্রোজেক্ট চালাচ্ছেন রস আইল্যান্ডের পরিত্যক্ত গির্জায়। ক্যাভি নিজেই কাল রাতে আমায় প্রকল্পটার দীর্ঘ বর্ণনা দেন। তাঁর কথা শুনে প্রথমে আমার মনে হয়েছিল, তাঁর এই প্রোজেক্টটাকে হাইজ্যাক করে নিচ্ছিল বিলি, নিয়ে সে সেটা বিক্রি করে দিচ্ছিল জাপানি ধনকুবের আকুসিকে। পরে আমি দেখলাম গির্জাঘরটায় কুরিয়ামের কন্টেনার রাখা আছে, নেপচুনিয়াম কোথাও নেই। অথচ ক্যাভি নিজে নেপচুনিয়াম ব্যবহার করবার কথা বলেছিলেন। তার মানে ক্যাভি মিথ্যে বলছিলেন। তিনিও ততটাই দোষী, বিলি যতটা। তুমি বুঝছ তো, কুরিয়াম কেন রাখা? ওরা দুজন জেনেশুনেই পরমাণু এনার্জি বম্ব বানানোর কাজে নেমেছিল। দুজনেই পুতুল হয়ে গেছিল আকুসির টাকার কাছে। মানতেই হবে ক্যাভি লোকটা ভালই অভিনয় জানে, আমাকে অব্দি ধোঁকা খাইয়ে দিয়েছিল! —যাই হোক এরিক, শুনলে তো সবটা। এবার তাহলে আমাদেরই উলটে বিলির এই প্রোজেক্টটাকে হাইজ্যাক করতে হবে। তার গতিমুখ বদলে দিতে হবে। পরমাণু বোমা নয়, আমরা বিপুল শক্তি তৈরি করব আইনস্টাইন রোজ়েন সেতু ওরফে ওয়র্মহোলের সম্ভাবনাকে বাস্তব করে তুলতে। কথা দিচ্ছি, আমি লগ্নি আনতে জান লড়িয়ে দেব। এরিক, তোমাকেই এই গবেষণার নেতৃত্ব দিতে হবে। তুমিই যোগ্যতম। কিন্তু আরেকজনকে আমাদের এই ব্যাপারটাতে না জড়ালেই নয়। যাঁর কথা বলছি, তাঁর আগ্রহও আছে এ বিষয়ে, আর বিশ্বজনীন পরিচিতির ব্যাপ্তিও আছে। তিনি চাইলে বিষয়ের গোপনীয়তা অক্ষুন্ন রেখেও ফান্ড জোগাড় করতে পারবেন। কার কথা বলছি বলো তো? একটা সূত্র দিচ্ছি! তাঁর পদবির মাঝখানে আমার নিজের নামটিই যেন লুকিয়ে আছে।
এরিক অবাক হয়ে তাকালেন ব্রহ্মের দিকে। ক্ষণিকের মধ্যেই তাঁর মুখে ফুটে উঠল দুষ্টুমির হাসি। বললেন— কেলো করেছে! সাংঘাতিক কেলো। মৃতপ্রায় নায়ককে উদ্ধার করবার জন্য ভেলা ভাসিয়েছেন বেহুলা! শেষ বয়সে এসে ব্রহ্মদত্যিদের ডাক্তার, মাদাম লতিকা সু‘ব্রহ্ম’ণ্যমের প্রেমে পড়লেন তাহলে? তবে বলে রাখি— মহিলার কিন্তু তোমায় এমনিতে একদম পছন্দ না। তোমায় নিয়ে কটাক্ষ করে কী সব যাতা কথা বলছিলেন গতকালই…
ব্রহ্ম কটমট করে তাকালেন এরিকের দিকে। বললেন—
ফাজলামি ছাড়ো। লতিকাদেবী একজন মহিয়সী নারী। ওঁকে আমার প্রকল্পে চাই! ব্যস! তোমার মতো অসভ্য একটি ঢ্যাঁড়শকে আমার আর কিছু বলবার নেই। কী জানো এরিক, তোমার সঙ্গে কথা বলতে মাঝে মাঝে আমার রুচিতে বাধে। ঘুমোতে দাও তো, আর জ্বালিও না!
এটা বলেই বিরক্ত ব্রহ্ম ঠাকুর মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকালেন। সেদিকটায় দেখতে পেলেন একজন ন্যাড়া মাথা লোককে। বয়স্ক মানুষটি কাঁপাকাঁপা হাতে ধরে রেখেছেন তাঁর বড় আদরের ক্ল্যাসিক ব্যারেটা স্ট্যামপীড রিভলভারটাকে, যেটা এবারের অভিযানে কোনও কাজেই লাগেনি। তাঁর মাথার বুটিদার ফেট্টিটি আপাতত নেই। জলের ঝাপটায় ভিজে গেছে বলে শুকোতে দিয়েছেন ওটি। তাঁকে দেখতে পেয়ে ব্রহ্ম ঠাকুর খানিকটা উঠে বসলেন জোর করেই। বললেন— আরেহ! আপনি মি. মুকুন্দ অবস্থী না? কী সৌভাগ্য আমার। আপনাকে এখানে দেখব ভাবিনি। ভারতীয় সাংবাদিকতায় একমাত্র আপনাকেই আমার আন্তর্জাতিক মানের পেশাদার বলে মনে হয়। আপনার একটা অটোগ্রাফ পেতে পারি? প্লিজ়?
‘ন্যাড়া জেঠু’ মুকুন্দ অবস্থী খুব খুশি হলেন কথাটা শুনে। সেই খুশিভাব গোপন করতে পারলেন না। আড়চোখে আশ্চর্যের দিকে তাকিয়ে তিনি হাতে ধরা রিভলভারের নলে একবার ফুঁ দিলেন।
ব্রহ্ম ঠাকুর বললেন— অবস্থী সাহেব, আপনার এই ন্যাড়া মাথার ফ্যাশান দেখে বহুবার মনে হয়েছে আমিও গোটা মাথার চুল কামিয়ে এরকমই ন্যাড়া মুণ্ডু হয়ে যাই। ইন ফ্যাক্ট কিছুদিনের জন্যও হয়েওছিলাম পূর্ণ ন্যাড়া। তবে সেটা মেইনটেন করতে পারলাম না, ভীষণ কুটকুট করত নতুন চুল গজালে। হয়তো রিভলভার তাগ করতে হয়েছে কারুর দিকে, এদিকে কুট কুট করে মাথা চুলকোচ্ছে! সে তো ভীষণ বিপদের ব্যাপার! —তবে যতবার আপনার ছবি দেখেছি বা ‘স্পষ্ট কথা’ অনুষ্ঠানে আপনার সঞ্চালনা দেখেছি, আপনার চকচকে টাক দেখে আমার যৌবনের হিরো এক দুর্ধর্ষ ভিলেইনের কথা বারবার মনে পড়েছে—
অবস্থীর চোখ জ্বলজ্বল করে উঠল। ছেলেমানুষী উৎসাহে তিনি বলে উঠলেন— জানি জানি! ওয়ান অ্যান্ড ওনলি শেঠঠি সাহেবের কথা বলছেন নিশ্চয়ই! আমার কলেজ লাইফে একমাত্র তাঁর ছবিই টাঙিয়ে রেখেছিলাম গোটা বেডরুম জুড়ে।
ব্রহ্ম ঠাকুর গম্ভীর হয়ে গেলেন। বললেন— না অবস্থীসাহেব। আমি বলছি আরেকটু সিরিয়াস ধরনের ক্রিমিনাল মাস্টার মাইন্ডের কথা। যেরকম ক্রাইমকে চট করে ক্রাইম বলে চেনবার উপায় থাকে না, তেমন সব সাংঘাতিক আন্তর্জাতিক প্রকল্পের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন ইনি। তাঁকে চোখে দেখিনি কখনও, শুনেছি তাঁর মাথাতে নাকি একগাছি চুলও নেই। লোকটার নাম শুনে রাখুন— নামটা হল ব্যারন হিমলার ডি লজেন্স। আরে না না ধুত্তেরি— ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসছে, কী বলতে কী বলছি! লজেন্স না, লরেন্স লরেন্স। হিমলার ডি লরেন্স! একদিন আপনাকে তাঁর গল্প শোনাব। ইন্টারেস্টিং গল্প! তবে আজ থাক। আজ ঘুম পাচ্ছে খুব…
(সমাপ্ত)
ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র