ডাকবাংলা.কম দু’বছর পূর্ণ করল ১৬ ফেব্রুয়ারি। বর্ষপূর্তি মানে এক রকম ভরসাপূর্তিও বটে। এত পাঠক, এত শ্রোতাদের, এত লেখকদের সঙ্গে পাওয়া খুব বড় ভরসা জোগায়। তবে এই দু’বছরের পথ খুব মসৃণ ছিল না। কারণ একটা নেটফ্লিক্স, একটা প্রাইমভিডিয়ো কিংবা আরও হাজারও ওটিটি চ্যানেলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে একটা সাহিত্য-পত্রিকা (তা সে ডিজিটাল হোক না কেন!) চালানো বড় সহজ কথা নয়। সাহিত্য ভালবাসে এমন পাঠকের কাছে পৌঁছে গিয়েছে ডাকবাংলা। কেবল সাহিত্য কেন, নাটক, গান, শিল্প-সংস্কৃতির বিশাল পরিসরকে ডাকবাংলা যে ভাবে পাঠকের কাছে পৌঁছে দিতে চেয়েছে, পাঠকও ঠিক সেই উৎসাহেই ডাকবাংলাকে গ্রহণ করেছে।
সেই উৎসাহে যাতে কোনও রকম ঘাটতি না হয়, তাই দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে ডাকবাংলা একগুচ্ছ এমন লেখা প্রকাশ করেছে, যে-লেখাগুলি পাঠককে বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে ভাবাবে। কোভিড-পূর্ববর্তী আর কোভিড-পরবর্তীতে আমাদের জীবনের অর্থ, যাপন অনেকটাই বদলে গিয়েছে। সেই বদল আমাদের জীবনের প্রতি মনোযোগী হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে। যেহেতু আমাদের জীবনের পরিসর কেবল পরিবারের মধ্যেই আবদ্ধ নয়, একটা বৃহত্তর সমাজের অংশও বটে, তাই বর্তমানের জীবনযাপনের ক্ষেত্রে কেবলমাত্র নিজের বা পরিবারের স্বাস্থ্য, পরিবেশ বা জীবনধারণ নিয়ে ভাবলে হবে না। বরং একটা বৃহত্তর সমাজের, পরিবেশের, স্বাস্থ্য পরিষেবার অঙ্গ হিসেবে না ভাবলে এবং সেই সব ক্ষেত্রে পরিবর্তিত ব্যবস্থার মতো করে মানিয়ে না নিলে নিজস্ব যাপনও ব্যাহত হবে। কারণ, এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে বোঝা যাচ্ছে, কেবল নিজের সুবিধেটুকু বুঝলে পরবর্তী প্রজন্ম এমনকী এই মুহূর্তে নিজের জীবনযাপনও যথেষ্ট মোলায়েম না-ই হতে পারে। তাই সামগ্রিক ভাবে জীবনযাপনের পদ্ধতি কোন দিকে যাচ্ছে, সেটা বুঝে নেওয়া দরকার। পৃথিবীর বহু বহু মানুষ কিন্তু সেই ধরনের জীবনযাপনের দিকে পা বাড়িয়েছেন।
এই সংখ্যায় যেমন লেখা হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কী ভাবে এগিয়ে চলেছে, পরবর্তী কালে মানুষ কতটা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর নির্ভরশীল হতে চলেছে এবং সতর্ক না হলে কতটা বিপদের মুখোমুখি হতে পারে, তেমনই লেখা আছে এই ছুটন্ত পৃথিবীর সঙ্গে তাল না মিলিয়ে বহু মানুষ কেমন নিজেদের যাপন বদলে নিয়েছেন। প্রয়োজন অতিরিক্ত কোনও কিছুতেই আমল দিচ্ছেন না, বিলাসব্যসনে তো একেবারেই নয়। সব কিছুর পেছনে ছোটা, অতিরিক্ত তাড়াকে জীবন থেকে ছেঁটে একটা মিনিমালিস্ট জীবনযাপনের পথ বেছে নিয়েছেন। এতে তাঁদের মানসিক শান্তি আর ভবিষ্যৎ পৃথিবীরও শান্তি।
কোভিড রবীন্দ্রনাথের লাইনগুলোকে সার্থক করে তুলেছে, ‘ঘর হতে শুধু দুই-পা ফেলিয়া’– কথাটাই সত্যি হয়ে উঠেছে এখন বেশির ভাগ মানুষের জীবনে। দূরে বা বিদেশে বেড়াতে যাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠায় মানুষ মন ঘুরিয়েছে নিজের দেশের, নিজের লোকালয়ের দিকে। এবং দেশের মধ্যে, রাজ্যের মধ্যে দুর্দান্ত সব জায়গার খোঁজ পেয়েও যাওয়া যাচ্ছে। ফলে পকেট এবং সময় বাঁচছে তো বটেই, তার সঙ্গে ভাইরাসের আতঙ্কও কম থাকছে। ফলে ডোমেস্টিক ট্রাভেল, এখন যাকে বলে ইন-ফ্যাশন।
তবে স্লো-লিভিং কিংবা ডোমেস্টিক ট্রাভেল অথবা নিজের প্রয়োজনে বাঁচার ব্যবস্থা করলেই যে ব্যবসা-বাণিজ্য বা অর্থনীতি বেঁচে যাবে, তেমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। অধিকাংশ মানুষের চাহিদা কমবে না। কমলে, বাজার-অর্থনীতির সর্বনাশ। সুতরাং সেই সর্বনাশ কাটাতে দরকার নিত্যনতুন চাহিদা অনুযায়ী উদ্ভাবন। সেই উদ্ভাবন যুগান্তকারী না-ও হতে পারে, তার প্রয়োজন মিটতে পারে বছর পাঁচেকের মধ্যেই। কিন্তু সময়ের দাবি মেনে সেই উদ্ভাবনের প্রয়োজন। সেটা পুরনো হলে আরও একটা নতুন উদ্ভাবন। এই আবর্তেই চলবে জীবন। ব্যবসা-বাণিজ্যকে বুঝে নিতে হবে এর শর্ত। উদ্ভাবনের সেই সব খুঁটিনাটি নিয়ে লেখাও থাকছে এই সংখ্যায়।
এমনতরো জীবন নিয়ে কেমন তাকধাঁধা লেগে গেছে, তাই না? এই তাকধাঁধার মধ্যে দিয়ে চলাই বোধহয় এগিয়ে যাওয়া। উঠতে-পড়তে, শিখতে-বুঝতেই এগিয়ে যেতে হবে। ডাকবাংলা-ও সেই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়েই এগিয়ে চলেছে, সময়ের চাহিদা মেনে, জীবনের ট্রেন্ড মেনে।