ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • শিল্পী কোথায় যাবে?

    রোদ্দুর মিত্র (May 23, 2025)
     

    ধ্বংসের কোনও পথে, একা হাঁটছিলেন পিয়ানোবাদক। বাঁ-পাশে থরে-বিথরে মৃতদেহ। ডানপাশে রক্তমাখা বাক্সপ্যাঁটরা। পিছনে স্মৃতির আলো আর বিস্মরণের অন্ধকার— শহরের রাস্তায়, দেওয়ালে, মানবশূন্য বাড়ির জানলায় এসে পড়ছে। পিয়ানোবাদকের দু’চোখ আপ্লুত কান্নায় ভেসে গিয়েছি অনেকদিন। আমাদের গায়ে ঝাপট মারছিল শ্মশানের হাওয়া। মুঠো মুঠো ছাই উড়ছিল নাৎসি-অকুপায়েড পোল্যান্ডের কোনও শহরে, আর একটা মৃত্যুমুখী ট্রেনের ধোঁয়ার গভীর থেকে শুনতে পেয়েছিলাম ইহুদি-আর্তনাদ। যে আর্তনাদে মিশে যাচ্ছিল পিয়ানোবাদকের মা। বাবা। আস্ত পরিবার। অমন ধ্বংসের শরীরের ওপর একা, নিরম্বু একা হেঁটে যাওয়া ছাড়াএকজন শিল্পী আর কী করতে পারেন!

    ২০০২ সালে এ-চলচ্চিত্র তৈরি করেছিলেন রোমান পোলানস্কি। ‘দ্য পিয়ানিস্ট’। দু-এক মিনিটের একটা সিকোয়েন্সে,পোলিশ-ইহুদি স্পিলম্যানের সেই হেঁটে আসা, সিনেমার স্ক্রিনে সেই নীরব চিৎকার অথবা আজীবনের তীব্র দগদগে ক্ষতের মুখে একজন শিল্পীর নিরপরাধ কান্না— শুধুমাত্র চলচ্চিত্রে নয়, পৃথিবীর যাবতীয় যুদ্ধের ইতিহাস-পাঠে, তা হয়ে ওঠে অমোঘ।

    আপাতত বিরতি, তবু ভারত-পাকিস্তান দুই দেশই, সাম্প্রতিক সময়ে, সংঘর্ষে গিয়েছে। দুই দেশই যুদ্ধ-সংক্রান্ত অপতথ্যে থইথই। ন্যাশনাল মিডিয়ার সঙ্গে বলিউড মিলেমিশে একাকার হয়ে, ‘যুদ্ধ চাই, যুদ্ধ চাই’ বলে বিস্তর বালখিল্যতা করেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় কী অ্যাড্রিনালিন রাশ! যেন এক-একটা উত্তর-আধুনিক বট, ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে ‘মেরে দেব, উড়িয়ে দেব’ করছে আর হেদিয়ে মরছে রাতদিন। অথচ ভারতের প্রাক্তন আর্মি-চিফ, মনোজ নারাভানে বললেন, ‘ওয়্যার ইজ নট রোম্যান্টিক, নট ইওর বলিউড মুভি’! এমন উক্তি অত্যন্ত কাম্য। কারণ আমরা জানি, ভিয়েতনাম থেকে ঘরে ফেরার পরে, অগুনতি আমেরিকান সৈন্য সাময়িকভাবে মানসিক বিকার হারিয়ে ফেলেন, এক-অর্থে উন্মাদ! কিন্তু যুদ্ধরত এই দুই পড়শি দেশের মধ্যে একজন শিল্পীর নিয়তি হয় কী?

    ‘দ্য পিয়ানিস্ট’-এর দৃশ্য

    আরও পড়ুন : হানি ট্র্যাপ শুনতে যত মধুর, বাস্তবে কি আদৌ তাই?
    লিখছেন আদিত্য ঘোষ…

    শিল্পীর অন্তর্গত দ্বন্দ্বের কোনও খোঁজ আমরা পেয়েছি? ইতিহাস বলছে, পৃথিবীর যে-কোনও প্রান্তে, যে-মুহূর্তে দুটো দেশ সরাসরি যুদ্ধে গিয়েছে কিংবা রাষ্ট্র তৈরি করে দিয়েছে এক যুদ্ধ-পরিস্থিতি— সর্বপ্রথম আঘাত এসেছে সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানে, যে বিনিময় ছিল সাবলীল, অনায়াস ও স্বাধীন!

    ১৯৪১ সালের ৭ ডিসেম্বর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পৃথিবীতে, জাপান যখন পার্ল হার্বার আক্রমণ করেছিল, তৎক্ষণাৎ সমগ্র আমেরিকায় নিষিদ্ধ হয় জাপানি গান ও সিনেমা। ফাওয়াদ খানের মতো পাকিস্তানি অভিনেতার ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট সম্পূর্ণ ব্লকড ভারতে। এ-দেশে আতিফ আসলামের লাইভ শো হবে না কখনও। ‘কাভিশ’—যে পাকিস্তানি ব্যান্ডের গান শুনে গলার কাছে আটকে থাকা ছোট্ট তিতিরপাখি যেন হঠাৎ ডানা পায়, উড়ে যায়, উড়েই যায়, রক্তের অন্তর্গত বিষাদে হারিয়ে যায় তারপর— সেই কাভিশ, ভারত তাকে এড়িয়ে চলবে বোধহয়। তবে কি প্রতিশোধস্পৃহা চরমে পৌঁছে, একজন শিল্পী একে-৪৭ হাতে যুদ্ধে যাবে?

    আতিফ আসলাম

    একুশ শতকের মানুষ বলবে, অবশ্যই, যুদ্ধে যাবে। যেহেতু গ্লোবাল পলিটিক্স, কমিউনিজম, ইন্সটাগ্রাম, চ্যাটজিপিটি, স্টক-মার্কেট, জাফার পানাহির সিনেমা, ঐতিহাসিক বস্তুবাদ— এ-সবই আপনাদের কাছে অতি-সরলীকৃত। হয় সাদা। নয় কালো। মধ্যিখানে কোনও দ্বন্দ্ব নেই। তর্ক নেই। বিরুদ্ধ মত নেই। এমন যদি হয়ে থাকে আবিশ্ব, তবে শিল্পী ঠাঁই পায় কোথায়? দুই দেশের হ্যাঁচকা টানাপোড়েনে, তার শরীর-মন ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় না?

    ১৯৬৫ সালের কথা। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময়, একটি অভূতপূর্ব সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। রাষ্ট্রের সহায়তায়, যুদ্ধবিদীর্ণ অঞ্চলগুলিতে উপস্থিত হয়েছিলেন চার ভারতীয় শিল্পী। মকবুল ফিদা হোসেন, রাম কুমার, কৃষেন খান্না এবং তায়েব মেহতা— বম্বে প্রগ্রেসিভ আর্ট মুভমেন্টের সদস্য। মকবুল ফিদা হোসেন, ভারতীয় আর্মির বিভিন্ন অফিসারের যে ছবিগুলি এঁকেছিলেন, সেই সমস্ত ছবির চোখে-মুখে আশ্চর্যরকম স্পষ্ট হয়ে আছে যুদ্ধ-পরবর্তী মানসিক ট্রমা। যেন ধ্বংসের সর্বনাশ, পুনর্নির্মাণ করছিলেন ফিদা হোসেন। এক-একটা আঁচড়ে। এক-একটা দাগে। একধরনের ডকুমেন্টেশন। সভ্যতার ডকুমেন্টেশন। আলবেয়ার কাম্যু, ‘দ্য প্লেগ’ উপন্যাসে, ডাক্তার বার্নাড রিউ-কে যে প্লেগ-মহামারীর ভিতরে দাঁড় করিয়ে দিলেন, লড়াইয়ে ঠেলে দিলেন— উপন্যাসের সমান্তরাল ভাষ্যে আসলে ডকুমেন্টেশন করলেন মড়কের চরিত্র। বীভৎসতা।

    যেন ভুলে না যাই! একজন শিল্পীর এটুকুই ক্ষমতা। অথবা, এইটাই শিল্পের ক্ষমতা। ‘ক্ষমতা’ বলতে একুশ শতক কেবল রাষ্ট্র বোঝে। নির্বোধের মতো সে বোঝে শুধু বাইনারি। তাই সেখানে কবিতা লেখা অহেতুক। অগত্যা, দুই দেশের যুদ্ধে, একজন শিল্পী দাঁড়িয়ে থাকেন অনন্ত নোম্যানস ল্যান্ডে। সম্পূর্ণ একা। শরীরে আর মনে যে রক্তপাত হয়, যে বিপন্ন বিস্ময় ঘুম কেড়ে নেয় বহুরাত, তা-ই হয়ে যায় সিনেমা। কখনও পেইন্টিংস। কখনও পিয়ানো। আপনারা শুনতে পেয়েছেন সেই করুণ বিষাদ-সুর?

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook