ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • বিজ্ঞাপনী চা

    অরিন্দম নন্দী (May 21, 2025)
     

    বেঁচে থাকতে অক্সিজেন আর জলের পরেই যে জিনিসটা বিশ্বজুড়ে পাকাপাকিভাবে জায়গা করে নিয়েছে, সেটা বোধহয় চা। আর বাঙালি! হাওয়া-জল-চা— সবই খায়। স্বাধীনতার আগে অবশ্য ব্যাপারটা ঠিক এ-রকম ছিল না। ভারতের মাটিতে চা তৈরি হত স্বাভাবিকভাবেই। কিন্তু, চা পানের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছিল নানা সামাজিক লেনদেন আর বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে, তার মধ্যভাগে ছিল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আবহ। স্বদেশপন্থীরা ছিলেন চা-পানের বিরুদ্ধে কারণ তাঁরা মনে করতেন চা ‘স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর’ সর্বোপরি ‘বিদেশি’ পানীয়। মহাত্মা গান্ধির মতে, চা পাতায় বিষাক্ত ‘ট্যানিন’ থাকার কারণে চা-পান স্বাস্থ্যের পক্ষে হানিকারক। তাঁর অন্ধ অনুসরণে বৈজ্ঞানিক আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় পর্যন্ত কোনও পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই মানতে এবং প্রচার করতে শুরু করেন, চা একধরনের ‘বিষাক্ত’ পানীয়।
     
    সুতরাং, এর পরবর্তী সময়ে দেশে চা যে খুব একটা আকর্ষণীয় পানীয় ছিল, তা কিন্তু নয়। তাই, ‘ইন্ডিয়ান টি মার্কেট এক্সপ্যানশন বোর্ড’-ই হোক বা ‘সেন্ট্রাল টি বোর্ড’, সকলকেই বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে, নানা অছিলায় নিয়মিত চা-পানের গুণগান গাইতে হয়েছিল বছরের পর বছর।

    বিশ-শতকে বিদেশে তৈরি জিনিসের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে স্বদেশি জিনিস ব্যবহারের আন্দোলন। দেশের মাটিতে, দেশীয় চা বাগানে, দেশীয় শ্রমিকের উৎপাদিত চা এগিয়ে থাকে অন্য অনেক কিছুর থেকে। উনিশশো সাতচল্লিশে ‘বাণিজ্যিক-চিত্র শিল্পী’ অন্নদা মুন্সী কালীঘাটের পট-চিত্রশৈলী আর যামিনী রায়ের ছবির অনুপ্রেরণায় ‘ইন্ডিয়ান টি মার্কেট এক্সপ্যানশন বোর্ড’-এর জন্য ইংরাজিতে লেখা একটি পোস্টার তৈরি করেন। ছবিতে দেখি, গান্ধী চরকার পিছনে বসে নীল আর লাল পাড়ের সাদা শাড়ি পরে চা খাচ্ছেন যেন ‘ভারতমাতা’ স্বয়ং। আবহে ছোট-ছোট চায়ের পেয়ালা-প্লেট আর চরকা। নিচে লেখা: ‘চা ১০০% স্বদেশী’। চরকায় বোনা দেশি কাপড়ের মতো চা-ও স্বদেশি। সুতরাং, খেতে কোনও বাধা নেই। বিজ্ঞাপনী পোস্টারটি পূর্ব-প্রকাশিত ব্রিটিশ চায়ের বিজ্ঞাপনের পোস্টারের তুলনায় একেবারেই আলাদা। সাদা চামড়ার উপস্থিতি নেই এখানে। ইউরোপীয় ছবির ব্যবহারও অনুপস্থিত। একেবারে খাঁটি দেশীয় উপস্থাপনা।

    আরও পড়ুন : বাঙালি মহিলার চা খাওয়ার ইতিহাস এগিয়েছে কীভাবে? লিখছেন সম্প্রীতি চক্রবর্তী…

    একই ধরনের আর-একটি বিজ্ঞাপন দেখা যায় বাংলা সংবাদপত্রে। ‘গুপ্ত’র চা’-এর বিজ্ঞাপনের ছবিতে বিবিধ ধর্ম আর সম্প্রদায়ের মানুষ মিলে একটা বিশাল ভারতের মানচিত্র তুলে ধরে রাখার চেষ্টা করছে। লাইনে লেখা: ‘নিজের দেশকে তুলে ধরুন। গুপ্ত-র চা ভারতীয় শ্রম আর পুঁজির সাহায্যে ভারতীয় চা গাছ থেকে উৎপাদিত চা।’ এক সময়ে, নানা স্বদেশি বিজ্ঞাপনের জন্য কলম ধরেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও। চীন থেকে শান্তিনিকেতনে ফেরার সময়ে, তাঁকে নানা ধরণের চা আর চা তৈরির সামগ্রী উপহার দেওয়া হয়। এ-সব নিয়েই শান্তিনিকেতনে ‘চা-চক্র’ শুরু করেন তিনি। তরুণ চৈনিক কবি জু জিমো-র নামে নাম দেন সেই চা চক্রের। চক্রের জন্য মজার গানও লেখেন একটা, ‘চা স্পৃহ চঞ্চল চাতক দল চল চল হে…’। গানের এই লাইনটি কলকাতার খুচরো চা ব্যবসায়ী ‘এ টস অ্যান্ড কোম্পানি’ তাদের বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করে পরবর্তীকালে। উনিশশো আটচল্লিশে আর একটি পোস্টার আঁকেন অন্নদা মুন্সী। কারখানা বা কোনও দপ্তরে কর্মরত এক আধুনিকা, হাতে চায়ের কাপ। নিচে লেখা: ‘টি ফাইটস ফ্যাটিগ’। ক্লান্তি দূর করে চা।

    শরৎকাল বাঙালির শারদোৎসবের সময়। এই সময়ে বাংলা পত্রপত্রিকায় ‘সেন্ট্রাল টি বোর্ড’-এর একাধিক বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে। একটিতে রবীন্দ্রনাথের হাতের লেখায় শরৎকাল নিয়ে কবিতার কয়েকটি লাইন। সঙ্গে প্রকৃতি, গাছপালা আর পদ্মফুলের ছবি। নিচে লেখা: ‘ঋতুচক্রের বিচিত্র উৎসব-মুহূর্তগুলিকে রঙে রসে মধুর করে তোলে চা’। মাখন দত্তগুপ্তর আঁকা, উপর থেকে দেখা শরৎকালীন গ্রামবাংলার রেখাচিত্র দেখা যায় আর একটি চায়ের বিজ্ঞাপনে। সঙ্গে শরৎকাল আর উৎসব সম্বন্ধিত কয়েক লাইন লেখা: ‘বাদলধারা শেষ হয়ে গেল। স্বচ্ছ নীল আকাশে ভেসে চলেছে রাশি রাশি সাদা মেঘ, নিচে বয়ে চলেছে শান্ত নদীর নির্মল জলরেখা। আলো-ঝলমল পথে শরৎ নেমে এলো, বেজে উঠল আগমনীর বাঁশিটি…’। শেষ হচ্ছে, ‘উষ্ণ চায়ের মিষ্টি গন্ধে উৎসবের মুহূর্তগুলি ভরে উঠুক কানায় কানায়’ লাইনটি দিয়ে। বিজ্ঞাপনের একদম শেষে, নিচে, ডানদিকের কোনায় লেখা, ‘চা। সবসময়েই চলে।’ এই ঋতুকেন্দ্রিক চায়ের বিজ্ঞাপন দেখা যায় সব ঋতু নিয়েই। এছাড়া, অন্নদা মুন্সীর তৈরি একগুচ্ছ বিজ্ঞাপনমালায় বাংলার লোকসংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, ছেলেভুলানো ছড়া ব্যবহার করে সেগুলোর শেষ কয়েকটি শব্দ বদলে দিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে ‘চা’ শব্দটি। বলা হয়েছে কীভাবে উৎসবের অথবা আদর-আপ্যায়নের অপরিহার্য অঙ্গ হিসেবে আছে ‘চা’ পান। পত্রিকার সাদা-কালো বিজ্ঞাপনে ব্যবহৃত রেখাচিত্র সেই কালীঘাট পটচিত্র আর যামিনী রায়ের আদলেই। ‘সেন্ট্রাল টি বোর্ড’-এর এই বিজ্ঞাপনগুলি কিন্তু কোনও বিশেষ ব্র্যান্ডের চায়ের কথা বলছে না। বলছে চা-পানের কোনও নির্দিষ্ট সময়কাল নেই, সকলে মিলে যে কোনও সময়েই, যে কোনও ছুতোতেই খাওয়া যেতে পারে চা। ‘ইন্ডিয়ান টি মার্কেট এক্সপ্যানশন বোর্ড’-এর আরও কয়েকটি বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয় সেই সময়ে। দেখানো হয় সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, সুরশিল্পী তিমিরবরণ, পদার্থবিজ্ঞানী ডক্টর মেঘনাদ সাহা ইত্যাদির ‘প্রেরণার উৎস’ চা। ‘সেন্ট্রাল টি বোর্ড’-এর আরও কয়েকটি বিজ্ঞাপনে ভারতীয় রাগ-রাগিণী ব্যবহার করে বলা হয়েছে সংগীতের মতই চায়ের রসধারায় অনেকেই পেয়েছে প্রেরণার উৎস। চায়ের আসর বা চা পানের সংস্কৃতিকেই এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে প্রত্যেকটি বিজ্ঞাপন। মজার ব্যাপার, পরবর্তী সময়ে চায়ের সঙ্গে-সঙ্গে বিস্কিটের বিজ্ঞাপনেও দেখি চায়ের আয়োজন। মানে, চায়ের সঙ্গে ‘টা’। আজও দেখি অনেকেরই সকালে খালি পেটে চা খেতে আপত্তি। তাই, চায়ের দোসর বিস্কিট।

    আঠারো থেকে বিশ শতকে দুপুরের শেষে বা বিকেলের শুরুতে উত্তর ইংল্যান্ডে, উত্তর ও দক্ষিণ ওয়েলস, স্কটল্যান্ড আর উত্তর আয়ারল্যান্ডে শ্রম আর কৃষিজীবী মানুষ বিকেল পাঁচটা থেকে সাতটার মধ্যে খেতেন ‘হাই-টি’। এই সব জায়গায় দুপুরের খাওয়াকে বলা হত ‘ডিনার’ আর সন্ধ্যের খাওয়াকে, ‘টি’। এই ‘হাই-টি’-তে থাকত গরম বা ঠাণ্ডা মাংস বা হ্যাম সালাদ, ভাজা মাছ, কেক, পাউরুটি-মাখন-জ্যাম আর সঙ্গে অবশ্যই চা। এভাবেই আজও এদেশেও, ‘চা-টা’, মানে, ‘চায়ের সঙ্গে টা’-এর অভ্যাস অপরিবর্তিত।

    চায়ের বিজ্ঞাপনের শেষ নেই। কড়া চা-ই হোক বা-কালো হাল্কা ফ্লেভারের দার্জিলিং, আসাম বা ‘সিটিসি’, গুঁড়ো হোক বা পাতা-চা, ছাঁকা হোক বা দুধ-চিনি দিয়ে ফুটানো, ‘টি-ব্যাগ’-এর চা বা বাংলাদেশের ‘রঙ-চা’, দেশি-বিদেশি মিলিয়ে লিপটন, ব্রুক বন্ড, টোয়াইনিংস, টাটা টি—  চায়ের বিজ্ঞাপনের ভিড় এড়িয়ে যাওয়ার পথ নেই। এর মধ্যে নজর কাড়ে দু’হাজার সাত থেকে প্রচারিত ‘টাটা টি’-এর ‘জাগো রে’ বিজ্ঞাপনমালা। এই বিজ্ঞাপনমালার উদ্দেশ্য সহজ: ভোটাধিকারপ্রাপ্ত দেশের সাধারণ মানুষকে সরকারের নানা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাগিয়ে তোলা। চায়ের সঙ্গে যে সকালের ঘুম ভাঙানো বা জাগানোর রীতি চলে আসছে এতদিন ধরে, তারই ধারায় ক্লান্ত-অবসাদগ্রস্ত মানুষকে জাগিয়ে তোলার পন্থা বেছে নেয় ‘টাটা টি’। বলে, আমাদের চা যেমন ‘ঘুম’ ভাঙায়, ঠিক সেভাবেই ‘ঘুম’ ভাঙুক সারা দেশের মানুষের। তাঁরা জেগে উঠুক। প্রতিবাদ করুক। প্রশ্ন করুক তাঁদের দেওয়া ভোটে জিতে আসা সরকারকে। অসাধারণ কিছু বিজ্ঞাপনের ছবি তৈরি করে মুখোশ খুলে দেয় তাঁদেরই দেওয়া ভোটে জিতে আসা জনপ্রতিনিধিদের। ভোট দিতে উৎসাহ দেয় তরুণ প্রজন্মকে। দু’হাজার দশ থেকে এগারো, ‘খিলানা বন্ধ, পিলানা শুরু’ বিজ্ঞাপনমালায় একটি ঘুষ আর দুর্নীতিবিরোধী ওয়েবসাইট তৈরি করে ‘টাটা টি’। কেউ ঘুষ দিয়ে থাকলে তা সম্বন্ধে সেখানে খোলাখুলিভাবে লিখতে অনুরোধ করে তারা।

    ‘জাগো রে ২.০’ বিজ্ঞাপনমালার শীর্ষক ‘অ্যালার্ম বজনে সে পেহলে জাগো রে’। এই বিজ্ঞাপনে সমাজে বা দেশে কোনও দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর তা নিয়ে মন্তব্য করার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়। আহ্বান করে, ঘটনা ঘটার পরে নয়, ঘটার আগেই এমন পদক্ষেপ নিন যাতে তা না ঘটতে পারে। একটি ছবির প্রধান চরিত্র, এক মহিলা বলেন, কোনও ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর প্রতিবাদ মিছিল-আন্দোলন অথবা সমাজমাধমে তা নিয়ে লেখার সময় থাকবেই। কিন্তু ঘটনাটি ঘটতে দিলেন কেন? সে বিষয়ে ভেবে দেখেছেন কি একবারও? তাই, ‘অ্যালার্ম’ বাজার আগেই জেগে ওঠো। প্রতিরোধ কর, শুধু প্রতিবাদ নয়।

    কী করে কাজ করে এই ধরনের বিজ্ঞাপন? ধরুন, আমি একটা কিছু ভাবছি… ধরা যাক আমি চা খাব ভাবছি, বা চা কিনব ভাবছি, তখন আমার হঠাৎ মনে পড়ে গেল এই টাটা টি-র ‘জাগো রে’ ক্যাম্পেনের কথা। পছন্দের বিজ্ঞাপন। ‘পছন্দের’… ব্যাস! এখানেই বিজ্ঞাপনটি সফল। পছন্দ হলেই সেটা মনে থেকে যাবার সুযোগটা বেশি। টাটা টি-র ‘জাগো রে’ ক্যাম্পেনে কিন্তু সরাসরি চা বিক্রি বা তাদের কোম্পানির চায়ের গুনমান সম্বন্ধে কিছুই বলা হয়নি, কিন্তু এমন ভাবে চায়ের সঙ্গে একটা জাগরণের কথা বলা, যেটা ভোক্তার কাছে গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়েছিল। সরাসরি কিছু বিক্রি করা হচ্ছে না, কিন্তু এই ব্র্যান্ড-এর নামটা যাতে মাথায় ঢুকে যায়, তার এমন একটা প্রচেষ্টা, যেটা সফল হয়েছিল দেশজুড়ে।

    দু’হাজার চব্বিশে ‘টাটা টি গোল্ড’-এর জন্য একটি বিজ্ঞাপনের ছবি তৈরি করেন পরিচালক সুজিত সরকার। ‘মালেন লিন্টাস’ বিজ্ঞাপন সংস্থার আইডিয়ায় ভিত্তিতে তৈরি এই ছবিতে সবকিছুতেই বাঙালির ‘খুঁতখুঁতেপনা’ অথবা খাঁটি চা-জলখাবারের প্রতি আনুগত্য ধরা পড়ে। ছবির শুরুতে ট্রেনের কামরায় এক তরুণ তার সহযাত্রীকে কচুরি আর ছোলার ডাল এগিয়ে ধরলে, ডালে কুচোনো নারকেল নেই বলে সেটা প্রত্যাখ্যান করেন তিনি। বাজারে গন্ধরাজ লেবুতে গন্ধ নেই, ফিশ-ফ্রাইয়ের সঙ্গে কাসুন্দি নেই, লুচির সঙ্গে সাদা আলুর তরকারি নেই… এ কি সহ্য করতে পারে বাঙালি? কখনোই না। সেই বাঙালির কাছে সবচেয়ে খাঁটি ফ্লেভারের চা, ‘টাটা টি গোল্ড’ ছাড়া আর কী-ই বা হতে পারে? সকলেই সেই চা খেয়ে তৃপ্তি পান ছবির শেষে।

    চায়ের বিজ্ঞাপনের শেষ নেই। কড়া চা-ই হোক বা-কালো হাল্কা ফ্লেভারের দার্জিলিং, আসাম বা ‘সিটিসি’, গুঁড়ো হোক বা পাতা-চা, ছাঁকা হোক বা দুধ-চিনি দিয়ে ফুটানো, ‘টি-ব্যাগ’-এর চা বা বাংলাদেশের ‘রঙ-চা’, দেশি-বিদেশি মিলিয়ে লিপটন, ব্রুক বন্ড, টোয়াইনিংস, টাটা টি—  চায়ের বিজ্ঞাপনের ভিড় এড়িয়ে যাওয়ার পথ নেই।

    একই-বছরে, জুন মাসে ‘বিশ্ব সামাজিক মাধ্যম দিবস’ উপলক্ষে ‘ওগিলভি অ্যান্ড মেথার’ বিজ্ঞাপন সংস্থার আইডিয়ায় কলকাতায় তোলা ‘লিটল ল্যাম্ব ফিল্মস-এর তৈরি ‘লিপটন রেড লেবল’-এর বিজ্ঞাপনের ছবিতে দেখি তাদের চা কীকরে ভারতের সবচেয়ে প্রিয় ‘সামাজিক মাধ্য’ হয়ে দাঁড়ায় ইন্টারনেট ছাড়াই। প্রতিবেশীকে চা খাইয়ে ‘ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট’ পাঠান এক মহিলা। এক চা বিক্রেতা হাজার-দু’হাজার ‘লাইক’ পান রোজ। বৃষ্টির দিনে হস্টেলে ‘ট্রেন্ড’ করে এক পড়ুয়ার তৈরি চা। ‘শেয়ারিং’ হোক, ‘রিপোস্ট’ বা ‘স্টোরি’, চায়ের মতো আর কিছুই নেই। আবহে বিশিষ্ট বিজ্ঞাপনস্রষ্টা পীযুষ পান্ডের গলায় বিবরণ অন্য এক মাত্রা যোগ করে ছবিটিতে।

    একটা জিনিস লক্ষণীয়… সেই প্রথম দিকের চায়ের বিজ্ঞাপন আর আজকের ‘টাটা টি’ বা ‘লিপটন রেড লেবল’-এর বিজ্ঞাপন, সব যদি একত্র করে এক ঝলক দেখা যায়, একটা সাযুজ্য হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে কোথাও। মানুষের সঙ্গে কথা বলতে গেলে শুনতে হবে তাঁদের মনের কথা। কী ভাবছে মানুষ? স্বদেশি জিনিস ব্যবহার করে কতটা তৃপ্তি পাবেন তিনি? বর্ষায়-শীতে-শরতে চা খেয়ে? ছড়া আর ঘুমপাড়ানি গান শুনেই যাঁদের বেড়ে ওঠা, কতটা আনন্দ পান তাঁরা আরও একবার সেগুলো বিজ্ঞাপনে দেখতে? আর দুর্নীতি? তার সঙ্গে আপোষ করবেন কি সারা দেশের চা-প্রিয় জনগণ? না। খুঁতখুঁতে বাঙালি পাতে যা দেওয়া হবে, তা-ই মেনে নেবেন না অবলীলায়। তাঁদেরও স্বর আছে। তাই  গরম চায়ের সঙ্গে আজও স্বর-গরম করবে পাড়ার মোড়ের চায়ের দোকানের নিয়মিত খদ্দেররা। মারি হোক বা মন্বন্তর, চা আমাদের চা-ই চাই।

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook