ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • মনডে ব্লুজ : পর্ব ৯

    শোলাঙ্কি রায় (March 10, 2025)
     

    চিত্রনাট্য বদলে যায়

    ‘মনডে ব্লুজ’ বিষয়টা আক্ষরিক অর্থে কোনওদিনই অনুভব করিনি। কারণ, সোমবার দিন কাজে যেতে খারাপ লাগে না কোনওদিনই, অসুবিধেটা হয়, যখন রবিবার শুটিং থাকে। তখন সত্যিই মনকেমন করে, বলা যেতে পারে, সেটাই আমার ‘মনডে ব্লুজ’। সপ্তাহান্ত বলে তো কিছু নেই আমাদের অভিনয়ের পেশায়। অভিনয় ভালবাসি, তাই কাজে যেতে ভালই লাগে। তাই সোমবার আমার কাছে আনন্দের দিন। কিন্তু ভাললাগার কাজ হলেও, ছুটির দিন তো ছুটির দিনই। সেদিনও কাজে যেতে হলে একটা বিষাদ খেলা করে কোথাও না কোথাও। হয়তো কোনও সরস্বতী পুজোতে শুটিংয়ে খুবই ব্যস্ত থাকতে হল, তখন কি আর ভাল লাগে?

    যখন টেলিভিশনে টানা কাজ করেছি, প্রায় ১০-১১ বছর, তখন ছুটিও বিশেষ পাইনি। তখন কাজে যাওয়ার সময় একটা আলস্য, একটা একঘেয়েমি ছিল। দীর্ঘদিন ধরে একটা কাজে যেতে যেতে যেমনটা হয়। মাঝে মাঝেই মনে হত, ‘বাবা রে, আবার শুটিংয়ে যেতে হবে!’ তবে কাজে যাওয়ার উদ্দীপনা আর আনন্দতে কোনওদিন ঘাটতি হয়নি। বেড়াতে যেতে আমি খুব ভালবাসি। বেড়িয়ে ফিরে আসি যখন, তখনও কাজে ফিরতে ভালই লাগে। বিরতি থেকে ফেরা বলে, আলাদা করে কোনওদিন ভারাক্রান্ত লাগেনি। কারণ, অভিনয় মানেই নতুন নতুন চরিত্র, নতুন ফিল্ম সেট, নতুন মানুষ, নতুন কলাকুশলী। সেই আবহে সব ব্লুজ কোথায় যেন উধাও হয়ে যায়।

    টেলিভিশনে কাজ করার একটা বিষয় আছে ঠিকই, যে, সেখানে দীর্ঘদিন একটিই চরিত্র, একটিই গল্পের মধ্যে বাস করতে হয়। কম বয়সে সত্যিই মনে হত, মনোটনিটা ঘিরে ধরছে, একটেরে হয়ে উঠছে জীবন। একটা চরিত্রকে লালন করার একটা আনন্দ যেমন আছে, তেমনই সেই চরিত্রের সঙ্গে বসবাসের একটা ক্লান্তিও তো আছে। ছুটির দিনে সেই চরিত্রটা আমার সঙ্গে নেই, আবার যখন কাজে ফিরছি, সেদিন তার সঙ্গে আবার দেখা হচ্ছে। এর একটা ক্লেদ, একটা গ্লানি, একটা বিষণ্ণতা আর পাঁচটা কাজের মতোই হয়তো, থেকেই যায়

    শ্রোতাদের ছুটি আছে, গায়কের নেই! মধুবন্তী বাগচীর কলমে পড়ুন
    ‘মনডে ব্লুজ’ পর্ব ৮…

    এখন বুঝি, টেলিভিশনের কাজটাই এমন, সেখানে এই দীর্ঘসূত্রিতা থাকবেই। তাই সেই প্রস্তুতিটা সবসময়ই থেকে যায় ভেতরে ভেতরে। একদিকে একঘেয়েমি যদি থাকে, অন্যদিকে আছে কাজের তৃপ্তি, উত্তেজনা, ব্যাঙ্কব্যালেন্স— এই সবকিছুই তো! তাই একটা ভারসাম্য চলেই আসে।

    তবে যারা চাকরিজীবনে সোম থেকে শুক্র, সোম থেকে শনি কাজ করে যায়, সাপ্তাহিক আবর্তে বারবার ফিরে যায়, তাদের জীবনটা আমি বাঁচিইনি কোনওদিন। তাই তাদের মনডে ব্লুজ আদতে কেমন, আমি জানিই না। সেসব নিয়ে কিছু বলতে গেলে হয়তো আনাড়ির মতোই শোনাবে খানিক। কাজ ভাল লাগলে ব্লুজ থাকে না, একথা যেমন ঠিক, তেমনই একথাও ঠিক, কোনও কাজই, সারাজীবন মানুষের ভাল লাগে না আসলে।

    কর্পোরেট জীবনের অনুভূতিগুলো বোঝার ক্ষমতা আমার সত্যিই নেই। যখন টেলিভিশনে কাজ করেছি, তখন বুঝেছি কিছুটা। সকাল আটটায় বেরিয়ে রাত ন’টায় ফেরা— এই রুটিনটা তো অনেকটা চাকরিরই মতো। আমার তো তাও রোজ চিত্রনাট্যটা বদলে বদলে যায়, কর্পোরেট জীবনে তাও বিশেষ বদলায় না। অন্তত আমার তেমনটাই মনে হয়।

    প্যাশন থাকলে কাজ করতে ভাল লাগে। তাই আমার অভিনয় করতে ভাল লাগে। যে সাংবাদিক, যে লেখক, তার লিখতে ভাল লাগে। কিন্তু ফরমায়েশি লেখা লিখতে, ফরমায়েশি অভিনয় করতে কি রোজ ভাল লাগবে? যে-কোনও সৃষ্টিশীল কাজ, যে কোনও পছন্দের কাজ একটা সময়ের পর যখন নিয়মিত হয়ে যায়, যখন অনীহা সত্ত্বেও কাজ করে যেতে হয়, তখন তো খারাপ লাগেই। কিন্তু বড় হয়ে উঠতে উঠতে অনেককিছুই মেনে নিতে হয়। বিল মেটাতে হবে, কাজ করতে হবে, স্বাবলম্বী হতে হবে— এই বোধগুলো জন্মায়।

    কিন্তু কর্পোরেট জীবনের অনুভূতিগুলো বোঝার ক্ষমতা আমার সত্যিই নেই। যখন টেলিভিশনে কাজ করেছি, তখন বুঝেছি কিছুটা। সকাল আটটায় বেরিয়ে রাত ন’টায় ফেরা— এই রুটিনটা তো অনেকটা চাকরিরই মতো। আমার তো তাও রোজ চিত্রনাট্যটা বদলে বদলে যায়, কর্পোরেট জীবনে তাও বিশেষ বদলায় না। অন্তত আমার তেমনটাই মনে হয়।

    চাকরি করিতে হইলে মদনপুর তো যাইতেই হবে। তাই ব্লুজ কাটিয়ে ওঠার, বিষাদ কাটিয়ে ওঠার কোনও রাস্তা হয়তো নেই। তার মধ্যেও যেটুকু লড়ে চলা, বেঁচে নেওয়া, সেটুকুই সঞ্চয়। সেটুকুই হয়তো পড়ে থাকবে জমাখরচের খেরোর খাতার শেষে।

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook