ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • ‘ডেড ম্যান’

    সৌমিত দেব (March 24, 2025)
     

    সে একেবারে থরোথরো নাইন্টিজপক্ষ চলছে! দিকে-দিকে লোকজন অ্যান্টেনা ঘুরিয়ে সুচারু ভঙ্গিতে ও-দেশের চিত্রহার পেড়ে আনছে আকাশ থেকে। শুধুমাত্র পেটের দায়ে একটা লোক পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে ছ’দিন সাইকেলের ওপর থেকে সাত নম্বর দিন স্বেচ্ছাকবরে ঢুকছে। বিনোদ কাম্বলি, বাবা সাইগেল, লালকৃষ্ণ আদবানি, লোডশেডিং ভীষণ প্রাসঙ্গিক। গোটা পরগণায় একজন কেবলওয়ালা। তার রেলা দেখলে সিভিক ভলেন্টিয়ার বলে ভুল হয়। আমাদের তখন বছর সাত-আট বয়স। নিবিড় ও নিঁখুতভাবে, নিষ্ঠা ও নিয়মমতে বলদামো প্র্যাকটিস করছি। আসলে ঘুমিয়ে আছে একটা ভোটার সব শিশুরই অন্তরে… ডেমোক্রেসির বীজ ঠিক এভাবেই সেই কোনকালে লিংক হয়ে গেছে মস্তিষ্কে… জয় প্রক্ষালক… যে যা বলে, বিশ্বাস করে ফেলি। আমার মেজমামা বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের ডেলি প্যাসেঞ্জার, নচিকেতাকে আমেরিকা ফাংশন করতে ডেকেছিল কিন্তু সুভাষদা আগে ডেকেছে বলে যায়নি, মাইকেল জ্যাকসন আর প্রভুদেবার নাচের কম্পিটিশনে গোবিন্দা জিতে গেছে ইত্যাদি। আর এহেন ডিম্পোচের ন্যায় টলটলে সময়েই আন্ডারটেকার নেমে আসে আমার জীবনে। আমাদের জীবনে। এখনও সেই প্রভাব সমানে চলিতেছে।   

    বর্তমানে আমার দিদানের বয়স ৮৩ বছর। ‘পপ কালচার’ শব্দবন্ধটি শুনে ফেললে তিনি ভাববেন, ‘লারেলাপ্পা অসভ্য’ গানের কথা হচ্ছে। আধুনিক পৃথিবীর সঙ্গে দিদানের সম্পর্ক আমার সঙ্গে আমার বড়জামাইবাবুর সম্পর্কের মতোই, নেই। মজাটা হল, সেই দিদান পর্যন্ত আন্ডারটেকারকে চেনে। ‘চোকস্লাম’ জানে। কেন জানে? কারণ, আমি দিনের পর দিন বন্ধুবান্ধব, মাসতুতো ভাইবোন, পাশবালিশ, মানে যাকে যখন নিরীহ, বাধাহীন হাতের কাছে পেয়েছি— তাকে ধরেই চোকস্লাম দিয়েছি। ট্রাম্প কার্ড কেনার জন্য বায়না করেছি। জুলাইয়ের গরমে কালো শাল গায়ে জড়িয়ে আন্ডারটেকার সেজেছি। WWF দেখবার জন্য বকুনি খেয়েছি। শুধু আমি না, আমাদের গোটা প্রজন্মটা ওসব করেছে। এই আমরা যার আর চার-পাঁচ বছরেই চালসের আওতায় পড়ব, তাদের মতো চর্তুদিকব্যাপী গোল্লাপাক পরিবর্তন বোধহয় আর কেউ দেখেনি। সুপারহিট মুকাবিলায়া একটা গান শোনার জন্য অপেক্ষা করা প্রজন্ম আইপড নামক বিস্ময়টিকে ডাইনোদের মতো বিল্পুত হয়ে দেখেছে। ভিসিআর থেকে সিডি-ডিভিডি হয়ে নেটফ্লিক্স। এসটিডি বুথ থেকে মোবাইল হয়ে মেটাভার্স। হ্যাঁ, আমরা একা দেখিনি, বাবা-কাকারাও দেখেছে। কিন্তু ওদের সঙ্গে আমাদের ফারাকটা হল যে বয়সে, যে জিনিসটা, যে বদলটা, যে অবস্থাটা দেখলে ব্যোমকে যাওয়ার কথা— আমাদের প্রজন্মের কাছে সেই বদলগুলোও ঠিক সেই সময়তেই এসেছিল। একে খাপে খাপ। আন্ডারটেকারের মতোই। 

    আরও পড়ুন : অভিনেতা, খেলোয়াড়রা যা পারছেন বিক্রি করছেন, মানুষ কিনছে, তা কি নিছক আনন্দের জন্য? লিখছেন দেবদীপ মুখোপাধ্যায়…

    বিকেলে খেলতে বেরিয়ে প্রথমে শুনলাম, অক্ষয়কুমার আন্ডারটেকার চাপা পড়ে মরে গেছে। শুনে এত কষ্ট হল যে, দৌড়তে গিয়ে ড্রেনে পড়ে গেলাম। তারপর জানা গেল, না না মরেনি মরেনি, কাঁধের হাড় ভেঙে গেছে আন্ডারটেকারকে তুলতে গিয়ে। সাড়ে পাঁচশো কিলো ওজন! আন্ডারটেকার যে প্লেনে ওঠে, সেটাতে শুধু ও-ই উঠতে পারে, তাই প্লেন বেচারাকে চালানোটাও শিখতে হয়ছে। সেইদিন আর লুকোচুরি হল না। অক্ষয়কুমারের শারীরিক অবস্থা আর আন্ডারটেকার নিয়ে আজেবাজে আলোচনাতেই সন্ধে হয়ে গেল। এইবার বাড়ি ফিরে না পড়তে বসলে রাতে ‘আলিফ লায়লা’ দেখতে দেবে না।

    ফিরতে হল, কিন্তু আন্ডারটেকার নামক বিস্ময়টা আর মন থেকে সরতেই চায় না। শুরু হল খোঁজ। কিন্তু খুঁজব কীসে? ইন্টারনেট নেই তো! ডার্ক এজ। কিন্তু কোনও জিনিসকে অন্তর থেকে চাইলে সে ব্যাটা আপনার কাছে আসবেই, কারণ পুরো কায়ানত আপনাকে বিভিন্ন অফারে লোনের সুযোগ করে দেবে। নিবি না মানে! ‘খিলাড়িয়ো কা খিলাড়ি’ নামে যে হিন্দি বইটি (তখন জানতাম ‘সিনেমা’ লোফাররা বলে) আন্ডারটেকার বয়ে আনল, সেটি দিয়েছে একদিন কেবল টিভিতে। 

    ‘খিলাড়িয়োঁ কা খিলাড়ি’-র সেই দৃশ্য…

    কিন্তু ওই যে বাড়ির লোক! চির দুশমন! দুপুরবেলা সিনেমাটা দেখতে ই-ব্লক যাওয়ার তাল করতেই, সে তালের একেবারে বড় ভেজে দিলে গা। ও নাকি বড়দের সিনেমা। তাছাড়া জেনে বিস্মিত হলাম, ‘আন্ডারটেকার’ শব্দটার মানে খ্রিস্টান ডোম! তাই আরও যাওয়ার দরকার নেই। ব্যস, সেই থেকে ইংরেজি ভাষাটাকে সমীহ করে এড়িয়ে চলি। ও-জিনিস আমার মতো অ্যালেবেলের জন্য নয়। তাছাড়া খ্রিস্টানদের প্রতি আমার এক বরাবরের কৌতূহল, ভাললাগা কাজ করত। সেটার কারণ আমার দাদাইয়ার এক পাতানো বোনের মেয়ে, আমার মেমমানি। আমি বেট ফেলে বলতে পারি, সে-কালে প্রিন্সেস ডায়না মেমমানিকে সামনাসামনি দেখলে আয়না বলে ভুল করত। তখন তো আর প্রেমটেম বুঝতুম না, খালি বুঝতাম মেমমানি বাড়িতে এলেই যেন মনের ভেতরটা চান করিয়ে দেয় কেউ, চারপাশ ঝলমল করে ওঠে।

    জোরজার, কান্নাকাটি, কাকুতিমিনতি জুড়লাম। আন্ডারটেকার আমায় দেখতেই হবে! শেষে শুধু আন্ডারটেকারের সিনটা দেখার অনুমতি পাওয়া গেল। অক্ষয়কুমার আন্ডারটেকারকে কাঁধে তুলে লাস্ট সিনে স্লো-মোশনে ডিশুম দিলেন।

    এবার তো WWF দেখতেই হবে! কারণ তদ্দিনে আন্ডারটেকার WWF খেলে। মারপিটের খেলা। আর শুধু আন্ডারটেকার না, আন্ডারটেকারের মতোই এমন আরও অনেকে আছে খতরার খিলাড়ি!

    কিন্তু বাড়ির ত্যাঁদোড় লোকগুলো স্ট্রাইকস এগেইন! ওটাও নাকি বড়দের জিনিস। খারাপ জিনিস৷ দেখা যাবে না। আসলে WWF-এ, এই কয়েক বছর আগে পর্যন্তও মহিলাদের ঠিক সেভাবেই প্রোজেক্ট করা হত, যেভাবে একজন পিতৃতান্ত্রিক, গড়, বিসমকামী পুরুষ মহিলাদের দেখতে চান। স্বল্প বসনে ও নিচু মর্যাদায়। না-হলে একটা মারপিটের জায়গায় বিকিনি কম্পিটিশন হবেই বা কেন? মহিলা কুস্তিগিরদের ‘রেসলার’ পর্যন্ত বলা হত না, বলা হত— ডিভা। কারও বাড়ির লোক বিশ্বাস করবে যে আমি সেসব ছেড়ে আন্ডারটেকার দেখে চক্ষু সার্থক করতে চাইছি। আমি হলেও কর‍তাম না! 

    খানিক বড় হওয়ার পর অবিশ্যি জানতে পেরেছি, অক্ষয়কুমার যাকে চাগিয়ে তোলে, ওটা নাকি নকল আন্ডারটেকার। আসলটা নন। সেই নকল আন্ডারটেকারের সঙ্গে আসল আন্ডারটেকারের শত্রুতা নিয়ে WWF-এ গল্পও দেখিয়েছে। আরও বড় হওয়ার পর জেনেছি, আসল আন্ডারটেকারও আসল আন্ডারটেকার নন। মার্ক উইলিয়াম ক্যালওয়ে নামক এক ব্যক্তি আন্ডারটেকার সেজে ঝাড়পিট করে। তারপর সকলের মতোই আমিও আর বড় হতে চাইনি। উপায় ছিল না বলে হতে হয়েছে। যেটির বাই প্রোডাক্টে জালিম দুনিয়া একের পর এক সত্যি কথা অন্তর লক্ষ্য করে হারপুনের মতো ছুড়ে মেরেছে। যেমন আন্ডারটেকার মোটেও ১৭ বার মরে গিয়ে বেঁচে ওঠেনি। পুরোটাই গল্প, ঝাড়পিটগুলোও আসলে হচ্ছে না, সবটা অভিনয়। আন্ডারটেকার আর কেন (Kane) আসল ভাই না! আমার মতো বেশিরভাগ লোক অকারণে বেঁচে আছে, ‘আন্ডারটেকার WWF-এর বিশ্বকাপ রেসেলম্যানিয়ায় কখনও হারেনি’— এই বাক্য গঠনটা ঠিক না। বলতে হবে হারতে দেওয়া হয়নি। একটা সময় পর্যন্ত। 

    আন্ডারটেকার ও কেন

    আসলে WWF, যা বর্তমানে WWE, বিষয়টিকে বলা হয় স্পোর্টস এন্টারটেনমেন্ট। বিষয়টা সিরিয়ালের মতো। যারা রিংয়ে এসে মারপিট করছ, তারা সকলে চরিত্র। মারামারিটাও নকল। মানে ধরা যাক, ফুটবল খেলাটা আসলে গোটাটাই অভিনয়৷ কোনও একটি নির্দিষ্ট কোম্পানি এটি নিয়ন্ত্রণ করে। তাঁর এক মালিক আছে। তিনি সুন্দর করে দু’টি দল খাড়া করেছেন। এক দলের চরিত্রদের এমনভাবে নির্মাণ করেছেন, যাদের মানুষ ঘেন্না করতে বাধ্য। আর-এক দলের চরিত্রদের আবার এমন একটা ইমেজ দেওয়া হয়েছে, যেন অঞ্জন চৌধুরীর ছবিতে রঞ্জিত মল্লিক। না ভালবেসে দেখান দেখি! এইবার মহাপর্ব, মানে বিশ্বকাপ হবে। মাইনে করা দামি লেখকরা ক্রিয়েটিভ টিমের সঙ্গে বসে, মালিকের অনুমতি নিয়ে খেলাটা লিখেছেন। ধরা যাক, মানুষ এই পুরোটাই জানে। তবু তারা প্রত্যেকবার টিকিট কেটে গ্যালারি ভরায়। 

    স্পোর্টস এন্টারটেনমেন্টে এইসব ধরাধরির কোনও জায়গা নেই, কারণ সেখানে এইটিই হয়। ঠিক এইটিই। লাখ লাখ লোক টিকিট কেটে সেসব দেখতে যায়, কোটি কোটি লোক রাত জেগে সেসব দেখে। দুটো কারণে। এক, যে কারণে মানুষ সিনেমা দেখে। জানে সবটাই নকল, তাও ‘চক দে ইন্ডিয়া’-য় ভায়তীয় মহিলা হকি দল মেডেল পেলে উদ্বাহু আনন্দে মেতে ওঠেন। দুই, যে-কারণে মানুষ সিনেমা দেখে। পছন্দের অভিনেতার অভিনয়, নাচ, কেত— এসব দেখবে বলে। আসলে অমুক চরিত্র তমুক সময় পাস বাড়াবে আর ও বল ধরে গোল দেবে, এটা নয় লিখে নয় দেওয়া হল। কিন্তু পাসটা বাড়ানো আর ধরার জন্যে তো খেলোয়াড় হতে হবে। রীতিমতো ভাল, উঁচু দরের খেলোয়াড় হতে হবে। কারণ খেলাটা তো আর মিছিমিছি হচ্ছে না। কাট করে করেও হচ্ছে না। লাইভ হচ্ছে! দর্শক দেখছে! ভুল হলে আওয়াজও দিচ্ছে। তেমনই WWE-তে যখন একজন আরেকজনকে বাইশ ফুট ওপর থেকে আছাড় মেরে ফেলছে, তখন যিনি আছাড়টা মারছেন, তিনি তার সহকর্মীকে মারছেন। একটু এদিক-ওদিক হলে ওর ওই সহকর্মীটি, বা হয়তো বন্ধুটি মরেও যেতে পারে। এতটা চাপ! আর যিনি আছাড়টা খাচ্ছেন, যার শরীরটা লুটিয়ে পড়ছে, তার কথা না হয় ছেড়েই দিলাম। 

    আন্ডারটেকার সারাজীবন এই জিনিসই করেছেন। আছাড় খেয়েওছেন। মেরেওছেন। সারা জীবন। ভাঙা হাঁটু, ভাঙা হাত, ভাঙা পাঁজর নিয়ে লড়তে নেমেছেন প্রতি সপ্তাহে। টানা অনেকগুলো বছর ধরে। তার ওপর আবার সিনেমা বা সিরিয়ালের সঙ্গে WWE-জাতীয় জিনিসের ফারাকটা হল, এখানকার চরিত্রদের দৈনিক এবং প্রাত্যহিক জীবনেও সেই চরিত্র ধরে রাখতে হয়। চরিত্র সেজেই থাকতে হয়। যাতে লোকজনের গুলিয়ে যায়, আন্ডারটেকার সত্যিই মরে বেঁচে ওঠেনি তো? 

    আন্ডারটেকার বাকিদের মতো বাজে বকে না। আন্ডারটেকার লম্ফঝম্প করে না জাস্ট চোখ উলটে সাদা করে ফেলে। আন্ডারটেকার কফিন থেকে বেরয়। মার্ক ক্যালওয়ে দরকার ছাড়া বাইরে বেরতেন না। বেরলে কালো পোষাক পরতেন। কারও সঙ্গে কথা বলতেন না। পানশালা, স্ট্রিপ ক্লাব, কোথাও যেতেন না। আন্ডারটেকার চরিত্রটার জন্য যে রহস্যটার প্রয়োজন, নিজে সেটা বহন করে গেছেন। দিনের পর দিন। দিনের পর দিন।

    হ্যাঁ বর্তমান দুনিয়ায় আপনি চাইলে অক্টোপাসও ক্যানবন্দি হয়ে আপনার দোড়গোড়ায় খলবলাবে, কিন্তু আবারও সেই, ‘সময়’। যে সময়ের কথা বলছিলাম, সেই সময়ে দাঁড়িয়ে সত্যি-মিথ্যের এই ব্যবধানটা গুলিয়ে দেওয়াটা সহজতর ছিল। হ্যাঁ আন্ডারটেকারের সমসাময়িক আরও অনেক নামজাদা কুস্তিগির ছিলেন, কিন্তু আন্ডারটেকারের আকর্ষণটা ছিল অনন্য। একটা লোক মরে বেঁচে ওঠে, তার আত্মাটা একটা গোলপানা মুখবন্ধ কলসিতে ভরা আছে, সেই দিয়ে তাকে ভয় দেখানো যায়, থিম মিউজিক বেজে উঠলে সমস্ত বাজবাহাদুরের পিলে চমকে ওঠে।

    আন্ডারটেকার বাকিদের মতো বাজে বকে না। আন্ডারটেকার লম্ফঝম্প করে না জাস্ট চোখ উলটে সাদা করে ফেলে। আন্ডারটেকার কফিন থেকে বেরয়। মার্ক ক্যালওয়ে দরকার ছাড়া বাইরে বেরতেন না। বেরলে কালো পোষাক পরতেন। কারও সঙ্গে কথা বলতেন না। পানশালা, স্ট্রিপ ক্লাব, কোথাও যেতেন না। আন্ডারটেকার চরিত্রটার জন্য যে রহস্যটার প্রয়োজন, নিজে সেটা বহন করে গেছেন। দিনের পর দিন। দিনের পর দিন। তারপর সময় বদলেছে। ইন্টারনেট এসেছে। ঠিক যে-মুহূর্তে আন্ডারটেকার চরিত্রটির সঙ্গে জড়িত অপ্রাকৃত ‘গিমিক’-টি কৌতূহলের বদলে, রহস্যের বদলে পরিহাসের জিনিস হয়ে উঠতে পারত, ঠিক সেই মুহূর্তে আন্ডারটেকার বদলে ফেললেন তার চরিত্রের ইমেজ। ২০০২ সাল থেকে একটা টানা সময় জুড়ে আন্ডারটেকার, ‘আমেরিকান ব্যাড অ্যাস’ অবতারে আসতে শুরু করলেন কাস্টম মেড চপারে চেপে। উন্মাদনা কমার বদলে বেড়ে হল দ্বিগুণ। নিজের ডেডম্যান চরিত্রে ফিরলেন তখনই, যখন মানুষ সব জেনেশুনেও আবারও তাঁকে ওই অবতারে দেখতে চাইল। ঠিক সময়ে না থামলে যা পরিহাস হতে পারত, ঠিক সময় থামার দরুন, সেটি হয়ে উঠল কাল্ট ক্লাসিক। 

    বোধহয় তাই বারংবার গোটা স্টেডিয়াম জুড়ে ‘থ্যাংক ইউ টেকার’ বলে ওঠেন হাজার হাজার দর্শক। এই পৃথিবীর পপ কালচারের ইতিহাসে ‘ডেড ম্যান’ থাকেন প্রথম সারিতে। আর এই এত বছর পরেও তৃতীয় বিশ্বের একটি বছর ছত্রিশের লোক ওঁকে নিয়ে লিখতে বসে আবেগতাড়িত হয়ে ওঠে। 

    যে-সময়ে অ্যানুয়াল পরীক্ষার পরের হাওয়াটা আলাদা করে চিনতে পারতাম, সে-সময়ে একটা ধক ছিল। বিশ্বাস করার ধক। সে ধক এসেছিল ওই একই, সময়টার প্রভাবেই। অমুকে পাঁচটার সময় ওখানে অপেক্ষা করবে বলেছে মানে, অমুকে পাঁচটার সময় ওখানে অপেক্ষা করবে। চোদ্দোবার করে লোকেশন পাঠাতে বলে সত্যতা যাচাই করতে হবে না। সেই বিশ্বাসের ধকেই আন্ডারটেকার ঢুকে পড়েছিলেন আমাদের দৈনন্দিনে, শহর, শহরতলি, গাঁ, গঞ্জ মফস্বঃলের বাধা পেরিয়ে। কলকাতার আমিও টুম্বস্টোন পাইল ড্রাইভার জানি, হাসনাবাদের বাবাইদাদাও জানে আর এই জন্যই আন্ডারটেকার আমার এত আপন। একযুগ পর বাবাইদাদার কথা মনে পড়লো। একটা সময় আমায় সাইকেলের পেছনে বসিয়ে হাসনাবাদ, টাকি, ঘুরিয়ে দেখিয়েছে। দাদাইয়ার কথা মনে পড়ল। মনে পড়ল, দিদানকে দেখতে যাওয়া হয়নি প্রায় ছ’-সাত মাস। কোয়ার্টারের দিনগুলো মনে পড়ল, যেখানে আমি বড় হয়েছি। সেই বিকেলগুলো মনে পড়ল। মনে পড়ল, এককালে, পৃথিবীটাকে সোজা চোখেই দেখতাম। 

    নিজের সঙ্গে দেখা হল। 

    থ্যাংক ইউ টেকার। 

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook