ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • ডেটলাইন : পর্ব ১৯

    তপশ্রী গুপ্ত (March 30, 2025)
     

    ক্যারিবিয়ান মফসসল

    মনটা খারাপ হয়ে গেল। এটা কি আদৌ ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোনও শহর? একে কি ক্যারিবিয়ান তকমা দেওয়া সাজে? এতদিন ধরে ঘুরছি ‘ক্যারিবিয়ান ডায়েরি’-র শুটিং টিমে, জ্যামাইকা থেকে সেন্ট লুসিয়া, অ্যান্টিগা থেকে সেন্ট কিটস— কী সাহেবি মেজাজ, দুরন্ত সব বিচ, স্বল্পবসনা শ্বেতাঙ্গিনীরা সান বাথ নিচ্ছে। রজনীশের সেই ওশো-বাণী, ‘জীবন এক উৎসব’, যেন এদের কথা ভেবেই বলা। আর এই জর্জটাউন, গায়নার রাজধানী, নামটাই যা গালভারী, চারপাশ দেখেশুনে মনে হচ্ছে যেন ডাহা মফসসল শহরে এসেছি।

    এয়ারপোর্ট থেকে হোটেলে যাওয়ার পথে ক্যাবে এসব বলতে বলতেই যাচ্ছিলাম। রাস্তার দু-ধারে অ্যাসবেস্টসের চাল আর দেওয়াল দেওয়া একতলা বাড়ি, যেমনটা দেখা যায় উত্তরবঙ্গের সমতল এলাকায় বা বাংলাদেশের শহরতলিতে। চলতি কথায় আমরা বলি টিনের বাড়ি, বাংলাদেশে আবার অ্যাসবেস্টসকে বলে ঢেউটিন। প্রচুর কলাগাছ, মাঝে মাঝে ছোট ছোট মন্দির, দোকানে বাংলা সাইনবোর্ডটাই যা নেই। এ-ব্যাপারে এরা পাক্কা ইংরেজ, কারণ গায়নার সরকারি ভাষা ইংরেজি। শতকরা একশো ভাগ লোক ইংরেজিতে কথা বলে। অনেকেই গায়নাকে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের সদস্য না-বলে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ বলতে পছন্দ করেন।

    পেশাদার ক্যামেরাম্যানের সারাক্ষণের একটাই চিন্তা, মনমতো সাবজেক্ট পাওয়া। আপাতত জানালার বাইরে চোখ মেলে বোধহয় সেটাই দেখার চেষ্টা করছে। সঙ্গী নামী স্পোর্টস জার্নালিস্টও কি আমার মতো একটু দমে গেছেন জর্জটাউনে পা দিয়ে? ঝিমোতে ঝিমোতে হঠাৎ উল্লসিত হয়ে চেঁচিয়ে উঠলেন, ‘স্টপ, স্টপ।’ মানে, গাড়ি থামাতে বললেন।

    পড়ুন ‘ডেটলাইন’-এর পূর্ববর্তী পর্ব…

    দেখা গেছে নির্মীয়মাণ স্টেডিয়াম। বিশাল কর্মযজ্ঞে প্রথমেই আমার নজর কাড়ল বোর্ড, সাপুরজি-পালনজি। আহা, বিদেশ-বিভুঁইয়ে এই তো দেশের ছোঁয়া। আমার দেশের নির্মাণ সংস্থা বানাচ্ছে ২০০৭ বিশ্বকাপের,ভ্যেনু। তড়িঘড়ি নেমে আমরা ঢুকে পড়লাম সেই বালি, স্টোন চিপস্, লোহার রড কণ্টকিত সাইটে। আর নেমেই কী যে অভ্যর্থনা পেলাম, কী বলব! নেহাত ওঁদের হাতের কাছে ফুল-মালা ছিল না, নয়তো নির্ঘাত আমাদের বরণ করে নিতেন সবাই মিলে। এই কর্মকাণ্ডের ম্যানেজার থেকে শ্রমিক পর্যন্ত প্রায় সবাই ভারতীয়। শুধু তাই নয়, বাঙালিদের একটা আলাদা ক্যাম্প আছে, যেখানে সৌরভ গাঙ্গুলীর পোস্টার টাঙানো। আমাদের পেয়ে ওঁদের ভাবখানা এমন হল, যেন বহুদিন পর বাপের বাড়ি থেকে লোক এসেছে শ্বশুরঘরে মনমরা মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে।

    মনমরাই বটে, বছর ঘুরতে চলল, এরা দেশের মুখ দেখেননি। দিনভর খাটুনি আর সন্ধে নামলে একটু গল্পগুজব করে শুয়ে পড়া। মা-বাবা-বউ-ছেলেমেয়ে ছেড়ে এই দূর দেশে পড়ে থাকা যে কী কষ্টের!

    এই রাজসূয় যজ্ঞের লিডার কিন্তু একটি স্মার্ট তামিল যুবক। চল্লিশের এপারে বয়স হবে মনে হল। পদমর্যাদার কারণে স্বাভাবিকভাবেই একটু গম্ভীর। প্রথমে কিছুটা আড়ষ্টভাবে আমাদের বোঝাচ্ছিল, কীভাবে কাজ এগোচ্ছে, কতদিন লাগবে। জানলাম, নতুন এই প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে ১৫,০০০ দর্শকের বসার ব্যবস্থা থাকছে। স্টেডিয়ামের লাগোয়া শপিং মল আর আবাসনও তৈরি হবে।

    প্রভিডেন্স স্টেডিয়াম

    বলতে বলতে চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠছিল ওর। বুঝলাম, নিজের কাজ সম্পর্কে প্যাশনেট বলেই কম বয়সে এত বড় দায়িত্ব দিয়েছে কোম্পানি। কিছুক্ষণ পর দেখলাম, আপনা থেকেই সহজ হয়ে গেল। চেন্নাইয়ের বাড়ির কথা বলল, বিয়ে-থা করেনি, মায়ের জন্য মনকেমনের কথাও বলে ফেলল।

    আমরা এয়ারপোর্ট থেকে সোজা এসেছি, এখনও হোটেলে চেক ইন করিনি শুনে খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন সবাই। বাঙালি শিবিরে দেখলাম আমাদের পেয়ে কাজকর্ম মাথায় উঠেছে। কেউ চায়ের জল বসিয়েছে, কেউ আবার মুড়ি-বাদাম মাখতে ব্যস্ত। শুনলাম, এই মুড়ি দেশ থেকে আনা, খুব যত্ন করে রাখা আছে টিনে। বিশেষ উপলক্ষ হলে তবেই বের করা হয়। আজ অতিথিদের সম্মানে মুড়ি-ভোজ। আমরা প্রথমে বাধা দিয়েছিলাম, আমরা তো এসব ইচ্ছে করলেই খেতে পারি, এগুলো বরং তোলা থাক আপনাদের সন্ধেগুলোর জন্য। আমরা চা-বিস্কিট পেলেই সন্তুষ্ট। কিন্তু ওরা এত আন্তরিকতার সঙ্গে অনুরোধ করলেন যে, না খেয়ে উপায় রইল না। বিশেষ করে নামী ক্রীড়া সাংবাদিকের এত ফ্যান ওখানে যে, তাঁকে হাতের সামনে পেয়ে রীতিমত ক্রিকেট-আড্ডা বসে গেল। আসন্ন বিশ্বকাপ নিয়ে স্পেক্যুলেশন তো বটেই, বেহালার দাদার অন্দরমহলের এক্সক্লুসিভ খবরাখবর পর্যন্ত, বিষয়বস্তুর কি অভাব হয় বাঙালির?

    আর আমাদের আসা ঘিরে চমৎকার একটা ঘটনা ঘটল সেই বিকেলে। তাঁবুর ডরমিটরিতে যখন জমে উঠেছে আড্ডা, হঠাৎ দরজায় বসের আগমন। শশব্যস্ত কর্মীরা হতভম্ব, কী করবেন, ভেবে পাচ্ছেন না। ‘আসুন’ বলতেও সাহস হচ্ছে না। একটু আগে আলাপ হওয়া ম্যানেজার যুবকটি নিজেই ভেতরে ঢুকে এলেন, হাসিমুখে বসলেন চেয়ারে। এবার সাহস করে একজন এগিয়ে দিলেন মুড়ির গামলা। দেখলাম, বিস্ফারিত চোখ গড়িয়া, বারাসাত, ক্যানিং-এর ছেলেগুলোর। গুরুগম্ভীর বস কিনা একমুঠো মুড়ি তুলে মুখে পুরে চিবোচ্ছেন!

    হোটেলে পৌঁছতে সন্ধে হয়ে গেল। কী কাণ্ড, জল নেই। কারণ পাম্প খারাপ। গরমে হাঁসফাঁস, কিন্তু স্নান করার উপায় নেই। এবং সে-বিষয়ে হোটেল ম্যানেজারের কোনও হেলদোলও দেখলাম না। মাসলম্যান টাইপ চেহারার ছেলেটি পরামর্শ দিল, বালতি দিচ্ছি, নিচের কল থেকে জল নিয়ে যাও দোতলার রুমে। খাড়া সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে আমাদের আত্মারাম খাঁচাছাড়া। যাই হোক, ঝগড়াঝাঁটিতে বিশেষ ফল হবে না বুঝে একদম বাংলা স্টাইলে কলতলা কালচারে ঢুকে গেলাম আমরা, মানে একতলায় কলের ধারে ঝপাজপ জল ঢালা। ভাগ্যিস, এই হোটেলে তেমন লোকজন নেই আর প্রায় অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে।

    ডেমেরারা ব্রিজ

    এবার খাবার পালা। লাঞ্চ তো হয়েছে দু’মুঠো মুড়ি-বাদাম দিয়ে, ডিনারটা ‘সলিড না হলে মারা পড়ব গুরু’, আগেই বলে দিয়েছে ক্যামেরাম্যান। রেস্তরাঁর খোঁজে বেরনো হল পথে। সত্যিই অন্য ক্যারিবিয়ান শহরগুলোর তুলনায় জর্জটাউনে যেন মফসসলি ভাব। একটা ঘরোয়া খাবার জায়গা পাওয়া গেল। মাছ-ভাত আছে জেনে আমাদের মনে পুলক জাগল। কী মাছ, জিজ্ঞেস করতে বলল, ‘আরাপাইমা’। সেটা কী জাতীয় মাছ, প্রশ্ন করে একটাই তথ্য পাওয়া গেল, সামুদ্রিক না, মিষ্টি জলের মাছ। অতএব খুব খারাপ হবে না স্বাদ, এই সিদ্ধান্তে পৌঁছে আমরা অর্ডার করলাম। রুই-কাতলার মতোই অনেকটা, ঝোলটা যদিও বেশ মশলাদার। যাই হোক, পেটের ভেতর আগুন জ্বললে আর এত ভাবার সময় থাকে না।

    খেতে খেতে শুনলাম রেস্তরাঁ মালিকের মুখে, আরাপাইমা নাকি বিশাল সাইজের মাছ, তিন মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। গায়নায় অনেক কিছুই এরকম রাক্ষুসে সাইজ— জায়েন্ট লিলি ফুল বলুন কি গ্রিন অ্যানাকোন্ডা সাপ।

    নদীর নামটি ডেমেরারা। নদীও বিশাল এদেশে। গায়নার ৮০% এলাকা জুড়ে যে রেনফরেস্ট, সেখান থেকে উৎপত্তি। প্রায় সাড়ে তিনশো কিলোমিটার পথ পেরিয়ে এসে মিশেছে আটলান্টিক মহাসাগরে। সেই মোহনার ধারে বন্দর শহর জর্জটাউন। ডেমেরারার ওপরের সেতুটি চমৎকার। শুধু দেখতে নয়, কাজেও। অনেক পরে বাংলাদেশে পদ্মা সেতু দেখে আমার ডেমেরারার কথা মনে পড়েছিল, ঠিক একইভাবে বাণিজ্যের লাইফলাইন হিসেবে কাজ করছে দুই সেতু। শহরের সঙ্গে জুড়েছে গ্রামকে। আর দুটো সেতুর বয়সের ফারাক চার দশকের বেশি হলেও দুটোই প্রযুক্তির বিস্ময়।

    গায়নার জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক ভারতীয়। তাদের বলে, ইন্দো-গায়ানিজ। শ’দুয়েক বছর আগে থেকে ভারতীয়দের গায়না যাত্রা শুরু। ইতিহাস বলে, দুর্ভিক্ষ আর দারিদ্রে জেরবার হয়ে দলে দলে লোক জাহাজ ভর্তি করে পাড়ি দিয়েছিল সুদূর জল-জঙ্গলের দেশে, আখের ক্ষেতে দাসশ্রমিক হতে। প্রথমে ওলন্দাজ, তারপর ফরাসি আর শেষে ব্রিটিশরা উপনিবেশ গড়েছিল গায়নায়। ভারতীয়দের গায়না আগমন অবশ্য ব্রিটিশ প্রভুদের হাত ধরে।

    ডেমেরারায় অসামান্য সূর্যাস্তের ছবি তুলতে তুলতেই আলাপ হল আরও অনেক ভারতীয়র সঙ্গে। সম্ভবত শনি বা রবিবার ছিল, তাই অনেকেই দল বেঁধে বেড়াতে এসেছে। পার্ক করে রাখা গাড়িগুলো দেখলেই বোঝা যায়, এই শহরকে দেখে যতই নাক সিঁটকোই না কেন, এর অর্থনীতি বন্দরের নোঙরের মতোই শক্তপোক্ত। পরবর্তীকালে খবরে দেখেছি, খনিজ তেলের বিশাল ভাণ্ডার আবিষ্কৃত হওয়ায়, গায়নার অর্থনীতি লম্বা দৌড় শুরু করেছে। আর মজার কথা হল, যেহেতু সরকারিভাবে দেশটা হল ‘কো-অপারেটিভ রিপাবলিক অফ গায়না’, তাই নাকি সমাজতন্ত্রের নীতি মেনে সরকার তেল বেচার লাভ নাগরিকদের সঙ্গে ভাগ করে নেয়। আর সেজন্যই অন্তত খাতায়-কলমে জিডিপি বেশ উঁচুতে।

    গায়নার জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক ভারতীয়। তাদের বলে, ইন্দো-গায়ানিজ। শ’দুয়েক বছর আগে থেকে ভারতীয়দের গায়না যাত্রা শুরু। ইতিহাস বলে, দুর্ভিক্ষ আর দারিদ্রে জেরবার হয়ে দলে দলে লোক জাহাজ ভর্তি করে পাড়ি দিয়েছিল সুদূর জল-জঙ্গলের দেশে, আখের ক্ষেতে দাসশ্রমিক হতে। প্রথমে ওলন্দাজ, তারপর ফরাসি আর শেষে ব্রিটিশরা উপনিবেশ গড়েছিল গায়নায়। ভারতীয়দের গায়না আগমন অবশ্য ব্রিটিশ প্রভুদের হাত ধরে। সেই থেকে বংশপরম্পরায় তারা এদেশের বাসিন্দা। দেশের শিকড় ছিঁড়ে গেছে সেই কবেই। কারও কারও পদবিটুকুতে শুধু রয়ে গেছে ভারতের ছোঁয়া, অনেকের সেটা বিকৃত হয়ে একেবারেই নতুন কিছু হয়েছে। নদীর ধারে বেড়াতে আসা প্যাটেল পরিবারের কর্তা যেমন দেখলাম, বেশ গর্বিত তাঁদের পদবি নিয়ে। যদিও উনিশ শতকের গোড়ায় তাঁর পূর্বপুরুষদের ফেলে আসা দেশের কারওকেই চেনার সুযোগ হয়নি কখনও, কোনওদিন পা রাখেননি ভারতে, তবু বোঝা গেল, ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম’-এর কাল্পনিক ছবি তাঁর স্বপ্নে আসে মাঝে-মধ্যে। গায়নার প্রবাসী ভারতীয়রা নিয়ম মেনে হিন্দু দেবদেবীর পুজোআচ্চা করেন, বিয়ের সময় চেষ্টা করেন যথাসম্ভব আচার মানার। বিরাট রাধাকৃষ্ণ মন্দির আছে জর্জটাউনে, আছে ছোট-বড় অসংখ্য শিব, দুর্গা, গণেশ মন্দির।

    জর্জটাউনের বিখ্যাত রাধাকৃষ্ণ মন্দির

    ক্যারিবিয়ান্সের অন্য সব দেশের মতো, এখানেও দেখে মন ভরে গেল, ‘আমার পূর্বসূরি দাস ছিলেন’ বলতে গর্বে বুক ফুলে ওঠে ভারতীয় বা আফ্রিকান বংশোদ্ভূতদের নব প্রজন্মের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অনেক শহরের মাঝখানে সযত্নে তৈরি করা হয়েছে দাস-শহিদদের স্মারক মিনার। জর্জটাউনেও আছে তেমন জায়গা, ইন্ডিপেন্ডেন্স পার্ক, ব্রিটিশ আমলে যার নাম ছিল প্যারেড গ্রাউন্ড। কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড যে কারণে তৈরি করেছিল ব্রিটিশরা, সেই একই কারণে জর্জটাউনেও দরকার পড়েছিল এরকম ময়দানের। সেনা কুচকাওয়াজের জন্য খোলা জমি চেয়ে রীতিমতো আদালতে গেছিলেন শ্বেতাঙ্গ সেনাধ্যক্ষ। কিন্তু জর্জটাউনের প্যারেড গ্রাউন্ডের মহিমা একটু আলাদা। ১৮২৩ সালে ডেমেরারা দাস অভ্যুত্থানের পর অন্তত ৩৩ জন বিদ্রোহীকে এখানেই ফাঁসি দিয়েছিল ব্রিটিশরা। ফলক দেখলাম, তার আগেও ১৭৬৩ সালে বিরাট বিপ্লব করেছিলেন ক্রীতদাসরা। ১৯৬৬ সালে গায়না স্বাধীনতা পাওয়ার পর এই জায়গাটার নাম হয় ইন্ডিপেন্ডেন্স পার্ক। পাশেই আছে প্রোমেনেড গার্ডেনস, সাজানো-গোছানো উদ্যান, কলকাতার ইডেন গার্ডেনসের মতো যার ভেতর রয়েছে ব্যান্ড স্ট্যান্ড।

    এই লেখার শুরুতে গায়না নিয়ে যে দু-চারটে নাক উঁচু মন্তব্য করেছিলাম, তাকে ব্যাটের কানায় উড়িয়ে দেওয়ার জন্য কিংবদন্তি স্যর ক্লাইভ লয়েড পর্যন্ত যাওয়ার দরকার নেই, ক্রিকেট আকাশের আরও অন্তত একডজন নক্ষত্র গায়নার ভূমিপুত্র। ৬ ফুট ৫ ইঞ্চির বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানের ছেলেবেলা কেটেছে এই জর্জটাউনেই। বাবার মৃত্যুর পর কিশোর ক্লাইভের লড়াইয়ের সাক্ষীও এই শহর। তিনি এই মুহূর্তে জর্জটাউনে নেই জেনে সঙ্গী সাংবাদিক তাঁকে ফোনে ধরলেন। ওপার থেকে ভেসে এল বিগ সি-র গমগমে গলা, ‘ওয়েলকাম টু মাই টাউন। এনজয়। আমার দুর্ভাগ্য, তোমাদের অতিথি হিসেবে পেলাম না।’

    সামনে পেলে একটাই প্রশ্ন করতাম, নেহাতই অ-ক্রিকেটীয়! সেই কোন ছেলেবেলায় স্কুলে বন্ধুদের ঝামেলা থামাতে গিয়ে রুলার ঢুকে গেছিল চোখে, তারপরও কীভাবে ছোট্ট ছেলেটা স্বপ্ন দেখল, হাই পাওয়ারের চশমা এঁটে পৃথিবী দাপাবে?

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook