ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • নীলগ্রহের যাত্রী

    সোহম দাস (March 9, 2025)
     

    চারের দশকের আর্ত সময়েই সুকান্ত ভট্টাচার্য লিখতে বাধ্য হয়েছিলেন— ‘প্রয়োজন নেই কবিতার স্নিগ্ধতা।’ তবে, নিতান্ত পাঠক হিসেবে একথা বলা চলে, কবিতা শেষমেশ এক আশ্রয়।
    জনপ্রিয় সংবাদপত্রের তুখড় পেশাদাররাও সেকথা বিলক্ষণ জানেন, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সেই শিক্ষা চাউরও হয়েছে দিব্যি। নয়তো, সীমান্ত পেরিয়ে চিনা ফৌজ আকছার ঢুকে পড়ছে, সকাল-বিকেল প্রবীণ কংগ্রেসি দেশনায়কদের বিবৃতি দিতে হচ্ছে, বিদ্যুৎ ঘাটতির আশু সমাধান নেই দেখে কপালে ভাঁজ পড়ছে পশ্চিমবাংলার চিকিৎসক মুখ্যমন্ত্রীর, তার মধ্যেও বহুল প্রচারিত কাগজের প্রথম পাতার মূল শিরোনামের তলায় কিনা জায়গা পাচ্ছেন শতবর্ষ পূর্ণ করতে চলা রবিঠাকুর— ‘খোলো খোলো, হে আকাশ, স্তব্ধ তব নীল যবনিকা–’ (‘ক্ষণিকা’)

    আরও আশ্চর্যের, এমন গদগদ কবিতা-বন্দনা কোনও ভারতসন্তানকে নিয়ে নয়, মানে, যাঁকে দেখে-টেখে এই পোড়া দেশের তরতাজা ছেলেপুলে অমন পরিস্থিতির মধ্যেও আঁকড়ে ধরার মতো কিছু পাবে। উপলক্ষ, বরং বছর সাতাশের এক যুবক, নাম ইউরি অ্যালেক্সিয়েভিচ গ্যাগারিন, নিবাস ঘাৎস্ক, সোভিয়েত। বিলিতি সংবাদমাধ্যম থেকে জানা গিয়েছে, তিনি ৫ টন ভরের শূন্যযানে চেপে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করবেন। বাংলা নববর্ষের প্রাক্কালে বিস্ময়াবিষ্ট বাঙালি সেই খবর শুনে তাই যথোচিতভাবে আঁকড়ে ধরেছে কবিতাকে। এমনকী, মহাকাশ-জয়ের মাসআষ্টেক বাদে সেই ‘সোভিয়েত-বীর’ যখন কলকাতায় আসবেন, তখনও সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁর বেঁটেখাটো চেহারা, সাধারণ সাদা রঙের পোশাক-আশাক দেখে ‘যুগান্তর’-এর ‘আশাহত’ সাংবাদিক স্মরণ করবেন বিহারীলাল চক্রবর্তীকে– ‘পদে পৃথ্বী, শিরে ব্যোম,/তুচ্ছ তারা সূর্য্য সোম/নক্ষত্র নখাগ্রে যেন গণিবারে পারে।’ (যদিও, বোধহয় পাঠকের সুবিধার জন্যই ‘পৃথ্বী’-কে সহজ করে ‘পৃথিবী’ ছাপা হয়েছিল)

    আরও পড়ুন : সোভিয়েত ভরসা রেখেছিল রক্তমাংসের গুপ্তচরে! লিখছেন ঋত্বিক মল্লিক…

    অত দুর্ভাবনার মধ্যেও সোভিয়েত যুবককে নিয়ে অমন রোম্যান্টিক মাতামাতি এ-যুগের পক্ষে বিসদৃশ মনে হতে পারে, উত্তর-ঔপনিবেশিক বিশ্ববীক্ষণের কালে তার সম্যক কারণ ছিল বটে। হাজার হোক, বন্ধুর সাফল্য বলে কথা। দেড় দশক আগে শেষ হয়েছে বিশ্বযুদ্ধ। আড়াআড়ি ভাগে বিশ্বজয় সেরে দুই প্রতিপক্ষের এবার নজরে পড়েছে মহাকাশ। ১৯৫৭-র অক্টোবরে প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ স্পুটনিক-১ লঞ্চ করে সাড়া ফেলে দিয়েছে লেনিনের দেশ। একমাসের মধ্যেই, রুশ বিপ্লবের চল্লিশ বছর পূর্তি স্মরণীয় করে রাখতে, বড়কর্তা নিকিতা ক্রুশ্চেভের ইচ্ছেয় স্পুটনিক-২-ও পাঠানো হয়ে গেল— ক্ষমতা-ক্ষমতা খেলায় প্রাণ হারাল বেচারি অবলা লাইকা। ১৯৫৮-র মার্চে যতদিনে ভ্যানগার্ড-১ পাঠানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ অর্জন জমা পড়ল আমেরিকার ঝুলিতে, পুব গোলার্ধের লাল শত্রু ততদিনে হইহই করে এগিয়ে গিয়েছে। 

    পরের দশকের শুরুতেও দিব্যি বজায় থাকল ধারাবাহিকতা। ১৯৬০-এর আগস্ট মাসে আবারও শূন্যযানের (স্পুটনিক-৫) সওয়ারি হল অবলা প্রাণিকুল– লাইকার উত্তরসূরি হিসেবে বেলকা ও স্ত্রেলকা, গোটাচল্লিশেক ইঁদুর, একখানা খরগোশ, আর বেশ কিছু খুদে গাছড়া আর ছত্রাক। জুলাই মাসে বার্স আর লিশিচকা নামের দু’খানা কুকুরকে দিয়েও চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু সেবারেও বেচারিদের জীবন্ত ফেরানো গেল না। বেলকা-স্ত্রেলকা বা তাদের খুদে সফরসঙ্গীদের ভাগ্য অবশ্য ভাল, সাতাশ ঘণ্টা ঘুরে-টুরে সকলেই নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরল, একবছর বাদে স্ত্রেলকার ছানা পুশিঙ্কাকে জ্যাকলিন কেনেডির কাছে উপহার হিসেবেও পাঠালেন ক্রুশ্চেভ। 

    ‘স্বাধীনতা’-র প্রথম পাতা। ১৩ এপ্রিল ১৯৬১

    কিন্তু সেই কূটনৈতিক উপহারের আগেই মহাকাশ-যুদ্ধে সোভিয়েত একাধিপত্য মোটামুটি কায়েম হয়ে গিয়েছে ওই ১৯৬১-র ১২ এপ্রিল। কলকাতার রাজভবনে ‘জগদীশচন্দ্র বসু বিজ্ঞান প্রতিভা সন্ধান প্রতিযোগিতা’-র পুরস্কার অনুষ্ঠানে এসে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন— ‘এই ঘটনার ফলে হয়ত নিকট ভবিষ্যতে কোন বিপুল সাফল্য অর্জন সম্ভব নাও হইতে পারে। কিন্তু ইহা এমন একটি বিরাট ঘটনা যাহা ভবিষ্যতে মানবজীবনকে বিপুল ভাবে প্রভাবিত করিবে’ (অবশ্যই সাধু বাংলায় তিনি এই আশাবাণী দেননি)।

    পরদিন সকালে সে ‘বিরাট ঘটনা’ শেষ পর্যন্ত ঘটল। সোভিয়েত এয়ারফোর্সের প্রাক্তন সিনিয়র লেফটেন্যান্ট, কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ইউরি গ্যাগারিন ১০৮ মিনিট ধরে নীলগ্রহের চারপাশ ঘুরে এসে সগর্বে ঘোষণা করলেন— ‘আমি ভাল আছি।’

    এইটুকু আশ্বাসের কেবল অপেক্ষায় ছিল সোভিয়েত সরকার। ক্রুশ্চেভ ঘোষণা করে দিলেন— ‘সোভিয়েতের জয় সারা পৃথিবীর মানুষের জয়।’ ১৬ বছর আগে মহাযুদ্ধ-শেষে যে বিজয় শোভাযাত্রা গিয়েছিল, মস্কোর রাস্তায় হুড-খোলা গাড়িতে ক্রুশ্চেভের পাশে সস্ত্রীক গ্যাগারিনকে বসিয়ে ১৪ এপ্রিলের শোভাযাত্রা তার চেয়ে কিছু কম জমকের ছিল না। অন্তিম যুদ্ধজয় না হোক, তামাম দুনিয়াকে তাক লাগিয়ে দেওয়া গিয়েছে, সবচেয়ে বড় কথা, মাস আড়াই আগে সাব-অরবিটাল ফ্লাইট মার্কারি-রেডস্টোন-২-এ শিম্পাঞ্জি হ্যামকে পাঠিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সেখানে অরবিটাল ফ্লাইটে সরাসরি মানুষ পাঠিয়ে তাদের উল্লম্ফনও কিছুদিনের জন্য থামানো গিয়েছে।

    ১২ এপ্রিল ১৯৬১-র ‘যুগান্তর’। মহাশূন্য-অভিযানের খবরের সঙ্গে
    রবি ঠাকুরের ‘ক্ষণিকা’…

    বাঙালি মধ্যবিত্তও তখন ব্রহ্মাণ্ড-চর্চা নিয়ে বেশ খবরাখবর রাখে। হাতি-গণ্ডার মারা রকের আড্ডাতেও দিব্যি জায়গা পায় সোভিয়েত-আমেরিকার ডুয়েল, সেগুলোই ক্ষুরধার লেখক-শিল্পীদের হাতে পড়ে নির্ভার কৃষ্টি হয়ে ওঠে। পাঁচের দশকে যখন আমেরিকায় ফ্লাইং সসার নিয়ে হইচই হচ্ছিল, ৭২ নম্বর বনমালী নস্কর লেনের মেসের সান্ধ্য আড্ডায় প্রেমেন্দ্র মিত্র ফেঁদে বসলেন ‘লাট্টু’। মালবাহী ডাকোটা প্লেনে চেপে ডুয়ার্স যাওয়ার পথে টেনিদাকে শান্ত করতে স্পুটনিকের সঙ্গে ওই লজঝড়ে প্লেনের ফিচেল তুলনা টানল পটলডাঙার ঢাকাই বাঙাল হাবুল, সেই পাড়ারই ‘উনপাঁজুরে’ বিচ্ছু ছেলে কম্বলের কাকা বদ্রীবাবু কয়েক বছর পরে চারমূর্তির মুখের উপর সটান বলে দিলেন, রাশিয়ান-আমেরিকানরা না পারলেও তাঁর অখাদ্য ভাইপো ঠিকই চাঁদে চলে যেতে পারে। মননে এমন আন্তর্জাতিক, প্রগতিশীল বাঙালি মহলে তাই গ্যাগারিনের অভিযান নিয়ে কাব্যি আসা অস্বাভাবিক ছিল না। 

    গ্যাগারিন যেদিন পৃথিবী প্রদক্ষিণ করলেন, তার আগের দিনই ইজরায়েলের উচ্চ আদালতে শুরু হয়েছে আর্জেন্টিনায় আত্মগোপন করে থাকা, হলোকাস্টের নেপথ্য-নায়ক অ্যাডলফ আইখম্যানের ঐতিহাসিক বিচার। এদিকে, ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির ষষ্ঠ অধিবেশনও বসেছে অন্ধ্রপ্রদেশের বিজয়ওয়াড়ায়, সেই বছরের শুরুতেই ফায়ারিং স্কোয়াডের গুলিতে নিহত কঙ্গোর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি, মুক্তিসংগ্রামের নেতা প্যাট্রিস লুমুম্বার নামে অধিবেশন-শিবিরের নাম রাখা হয়েছে লুমুম্বানগর। গ্যাগারিনের সফল অবতরণের খবর সেখানে উপস্থাপন করলেন সিনিয়র সেক্রেটারি অফ আইডিয়োলজি অফ দ্য কমিউনিস্ট পার্টি অফ সোভিয়েত ইউনিয়ন, মিখাইল সুসলভ। সে-খবরে লুমুম্বানগরে রীতিমতো উৎসবের মেজাজ। ওদিকে প্রধানমন্ত্রীও ‘শান্তির জয়’ বলে তাঁর মত দিয়ে দিয়েছেন। 

    রাজভবনে রাজ্যপাল পদ্মজা নাইডুর সঙ্গে সস্ত্রীক ইউরি গ্যাগারিন। সূত্র : রাশিয়ান হাউস, কলকাতা…

    পরপর কয়েকদিনের ‘স্বাধীনতা’-র প্রথম পাতা জুড়ে, জালিয়ানওয়ালাবাগের স্মৃতিস্তম্ভ আর আসন্ন রবীন্দ্র-শতবর্ষের গুটিসুটি খবর ছাড়া, বাকিটা নিরবচ্ছিন্ন সোভিয়েত-বন্দনা আর মহাকাশ-চর্চা।

    ১৩ এপ্রিলের প্রথম পাতাখানাই যেমন। ভস্তক-১ কোন পথে মহাকাশে পৌঁছল, ‘ভস্তক’ নামের বাংলা পরিভাষাই বা কী (প্রাচ্য), পৃথিবীর মাটিতে এসে গ্যাগারিন কী বললেন, বিশেষ করে সরকার ও কমিউনিস্ট পার্টির উদ্দেশে কী বললেন, তাঁরা পাল্টা কী বললেন, যাবতীয় খুঁটিনাটি সাজিয়ে সে হাজির পাঠকের দরবারে। এরই প্রেক্ষিতে ওই প্রথম পাতাতেই ছাপা হয়েছে রকেট-বিজ্ঞানের জনক (ঘটনাচক্রে তিনিও রাশিয়ান) কনস্তান্তিন এদুয়ার্দোভিচ ৎসিঅলকভস্কি-র সংক্ষিপ্ত জীবনী, নিচে বাঁদিকের কোণে ব্রহ্মাণ্ড-বিষয়ক কয়েকটি রুশ সাহিত্যের বইয়ের (বাংলায় অনূদিত) বিজ্ঞাপন— সরোজ মুখোপাধ্যায়ের সম্পাদকীয় দূরদৃষ্টির আশ্চর্য উদাহরণ।

    ভেতরের পাতায় ঢুকলে জন কেনেডি, হ্যারল্ড ম্যাকমিলান থেকে বিধান রায়, বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায়, সত্যেন বোসদের প্রতিক্রিয়া। অবতরণের দিন যদি বিজ্ঞানী জেবিএস হলডেন বলেন, পুঁজিবাদের চেয়ে সমাজতন্ত্রের দক্ষতা যে উন্নততর, তার আরও একটা প্রমাণ পাওয়া গেল, তার পরদিনই ডা: ধীরেন্দ্রনাথ সেন খুঁজে পাচ্ছেন ‘মার্কসবাদ-লেনিনবাদী বিজ্ঞানের অশেষ সম্ভাবনা’।

    এমনকী, মা অ্যানা গ্যাগারিনাও ছেলের মহাকাশ-অভিযানের সময়ে রান্না করছিলেন, সে-খবরও তার-যোগে এসে পৌঁছচ্ছে কলকাতায়, নিশ্চিতভাবেই চায়ের দোকান, ড্রয়িংরুমের পিতৃতান্ত্রিক কাঠামো ছাড়িয়ে তা ঢুকে পড়ছে অন্দরমহলে।

    ক্রমশ যত দিন এগোচ্ছে, সমাজতন্ত্র-প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখা বাঙালি তরুণ জানতে পারছে, আকাশ থেকে ইউরি প্রথমে নেমেছিলেন এক যৌথখামারে, প্রথম সংবর্ধনাও পেয়েছেন কৃষক ও ট্র্যাক্টর-চালকদের কাছ থেকে, সাংবাদিকদের কাছে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন, তিনি অভিজাত বংশের ছেলে নন। পাশাপাশি, অভিভূত বাঙালি পাঠক এও জানতে পারছে, আর পাঁচজনের মতোই এই বিস্ময়-মানবেরও দু-কামরার ফ্ল্যাটবাড়িতে, তিন বছর ছুঁই-ছুঁই ইয়েলেনা আর একমাস-বয়সি গেলেনা (উচ্চারণজনিত কারণেই সম্ভবত, যার নাম কোথাও গ্লাওচকা, কোথাও গালেজা, কোথাও গালিয়া ছাপা হয়েছে), এই ছোট্ট দুই মেয়েকে নিয়ে অপেক্ষায় থাকেন ‘লজ্জাশীলা, পিঙ্গলনয়না’ স্ত্রী, ভ্যালেন্তিনা ইভানোভনা গ্যাগারিনা— অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার কারণে যাঁকে নাকি ইউরি জানিয়ে যাননি তাঁর অভিযানের কথা (যদিও, পরে কলকাতায় এসে ঠিক উলটো কথা বলেছেন বলেই খবরে প্রকাশিত হয়েছিল)। কীভাবেই বা ভ্যালেন্তিনা প্রতিবেশীর কাছে খবর পেলেন, কীভাবে ‘তাস’-এর সংবাদ প্রতিনিধি মারফত স্বামীকে অশ্রুঘন বার্তা পাঠালেন, সবকিছুরই পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ পাঠকের খিদে মেটাচ্ছে। এমনকী, মা অ্যানা গ্যাগারিনাও ছেলের মহাকাশ-অভিযানের সময়ে রান্না করছিলেন, সে-খবরও তার-যোগে এসে পৌঁছচ্ছে কলকাতায়, নিশ্চিতভাবেই চায়ের দোকান, ড্রয়িংরুমের পিতৃতান্ত্রিক কাঠামো ছাড়িয়ে তা ঢুকে পড়ছে অন্দরমহলে।

    আর, এই মানসের ঠিক উল্টো মেরুতে আমরা দেখি ‘সুবর্ণরেখা’-র সর্বহারা নায়ক, ছাতিমপুর আয়রন ফাউন্ড্রির ম্যানেজার ঈশ্বর চক্রবর্তীকে (অভি ভট্টাচার্য)। নিচু জাতের ছেলের সঙ্গে বোনের বিয়ে মানতে না পারা, ঠান্ডা-চোখের ঈশ্বরের কানে ফোরম্যান যোগেন মুখুজ্জের (জহর রায়) টুলো পণ্ডিতে ঢঙে, মানভূমী টানে ‘গুগারিন’-এর খবর পড়াটা বিষবৎ ঠেকে, ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’-র কপিটাই সে ছুড়ে দেয় স্টিল প্ল্যান্টের আগুনে। 

    অবশ্য, এ হয়তো নিতান্তই খড়কুটো। এমন কয়েকজন ঈশ্বর চক্রবর্তী ছাড়া, বিশ্বায়ন-পূর্ববর্তী মধ্যবিত্ত বাঙালির মোটামুটি দুই প্রজন্মের…

    অরক্ষিত গোলপোস্ট পাহারা দিতেন অতন্দ্র লেভ ইয়াসিন।

    আর, কল্পনার ছাদে প্রতিদিন এসে নামত ভস্তক-১, নামতেন ইউরি গ্যাগারিন।

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook