এখন ‘কার্টুন’ বললেই ছোটরা চট করে বলে ফেলবে জনপ্রিয় আ্যনিমেশন টিভি সিরিজের কিছু নাম ও চরিত্র— পোকেমন, ছোটা ভীম বা মোটু পাতলু। আজকের বিশ্বায়িত অর্থনীতির যুগে কিছুটা শিশুসুলভ মজা ও হাই টেক বিনোদন জোগানোর বাইরেও যে ‘কার্টুন’ শব্দটির মধ্যে অন্য দ্যোতনাও ছিল, তা আমাদের বারে বারে নিজের সৃষ্টিতে, লেখায়, বক্তৃতায় ও সাক্ষাৎকারে বুঝিয়ে গিয়েছিলেন চণ্ডী লাহিড়ী। নিজের শৈলীটিকে চিনতেন, চেনাতেন, এর অনন্ত সম্ভাবনার কথা বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে বলতেন এবং বাংলায় কার্টুনচর্চার বিলুপ্তির অশনি সংকেত পেয়ে আতঙ্কিত হতেন এই অধুনাপ্রয়াত শিল্পী। বস্তুতপক্ষে, চণ্ডী লাহিড়ী ও কার্টুন, শিল্পী ও তাঁর ফর্ম— অঙ্গাঙ্গীভাবে সম্পৃক্ত হয়ে গিয়েছিল বাঙালির চোখে।
১৯৩০ সালে নবদ্বীপে জন্ম চণ্ডীদাস লাহিড়ীর। ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকার ঝোঁক। দুর্ঘটনাবশত, পেয়ারা গাছ থেকে পড়ে বাঁ-হাতটি হারিয়েছিলেন। বাংলার কার্টুনিস্টদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য, প্রত্যেকেই কম-বেশি উচ্চশিক্ষিত এবং আর্ট স্কুল পাশ না হলেও নিজস্ব অনুশীলনের দ্বারা ড্রয়িং-এ দক্ষতা অর্জন করেছেন। পূর্বসূরি গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, পিসিএল বা প্রফুল্লচন্দ্র লাহিড়ী, শৈল চক্রবর্তী, সমসাময়িক রেবতীভূষণ বা একটু পরবর্তী প্রজন্মের অমল চক্রবর্তীর মতো তিনিও স্বশিক্ষিত কার্টুনিস্ট। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাশ করে তিনি চাকরির খোঁজে কলকাতায় আসেন। ওই শহরে তাঁর সঙ্গে যাঁদের ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছিল, তাদের অনেকেই আর্ট কলেজের ছাত্র, যেমন সুনীল দাশ। চাকরি পেলেন ‘লোকসেবক’ কাগজে।
‘রাত্রে লোকসেবকের সাব এডিটর। দিনে টো টো করে ঘুরে বেড়াই। উদ্দেশ্যহীনভাবে স্কেচ করে যাই।… ‘কার্টুন ছিল নিছকই শখের ব্যাপার। কিন্তু মাঠে-ঘাটে ঘুরে ছবি আঁকার উৎসাহ ছিল প্রথম থেকেই। নামে সাব এডিটর হলেও রিপোর্টারদের সাথে ঘুরে বেরিয়েছি এবং রিপোর্টিংও করেছি।… লোকসেবকের মোটে আঠার টাকা বেতন, তাও দু-মাস বকেয়া থেকে যেত। তাতে খাওয়া কুলোত না, কিন্তু ন্যাশনাল লাইব্রেরীতে যাওয়া চলত।’ চণ্ডী লাহিড়ীর অদম্য জ্ঞানতৃষ্ণা তাকে টেনে নিয়ে যেত বিভিন্ন লাইব্রেরি, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ-এর রিডিং রুম ও রাস্তার ধারে পুরনো বইয়ের পশরায়।
আরও পড়ুন : চুম্বনের প্রকাশ বারবার বদলে গেছে শিল্পে!
লিখছেন গৌরবকেতন লাহিড়ী…
‘১৯৬২ সালে চীন-ভারত সংঘর্ষের ঠিক আগে কোনও এক সময় ‘হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ড’ পত্রিকায় ‘থার্ড আই ভিউ’ নামে দৈনিক পকেট কার্টুন শুরু করি।… সংবাদপত্রে কাজ করার ব্যাকগ্ৰাউন্ড ছিল, সংবাদপত্র কী চায় ভালই বুঝতে পারতাম।’
সেই কার্টুন দেখে ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’-র সন্তোষকুমার ঘোষ চণ্ডী লাহিড়ীকে ভার দিলেন, ‘তির্যক’ নামে একটি পকেট কার্টুনে ছবি আঁকার। এই কাগজের প্রথম পাতার বাঁ পাশে পকেট কার্টুনের ছোট্ট পরিসরে চণ্ডীবাবুর ব্যঙ্গ তূনীর থেকে নিক্ষিপ্ত হত অব্যর্থ ও শানিত কটাক্ষ।
‘যখন আনন্দবাজারে এলাম, তখন চারিধারে কেবল ‘নেই’ ‘নেই’ ডাক। আমি কাজ শুরু করলাম সেই ‘নেই’ ‘নেই’-এর পশ্চাদপটে। সাধারন মানুষ এতই কষ্ট পেতেন যে কার দরজায় যাবেন ভেবে পেতেন না। সকালে কল খুলে দেখলেন জল নেই। কোথাও দেখা গেল কলের জলের সঙ্গে ছোট সাপ বের হয়ে এসেছে। এক কাপ চা মুখে দিয়েছেন, গা ঘিন ঘিন করে উঠল। চায়ে চামড়ার গুঁড়োর ভেজাল।… এক সের চালে (কেজির হিসেব পরে চালু হয়েছে) আড়াই ছটাক কাঁকরের মিশ্রণ সাধারন ক্রেতা প্রাপ্য বলে ধরে নিতেন। রসিক ক্রেতা কাঁকরমেশানো চালের নাম দিয়েছিল কাঁকরমণি। আটায় তেঁতুলের বিচি বা স্টোন পাউডার, সিমেন্টে গঙ্গামাটি, ঘিয়ে পশুচর্বির মিশ্রণ তখনকার নৈমিত্তিক ঘটনা।’
চণ্ডী লাহিড়ীর মতে, কল্যাণকামী রাষ্ট্রের কল্যাণেই কার্টুনিস্টদের সামনে সুযোগ এসেছিল বিপুল। চিকিৎসা, বাসগৃহ, ব্যবসা বাণিজ্য, স্বাস্থ্য ইত্যাদি সবকিছুর দায়দায়িত্ব সরকারের। ফলে, হাসপাতালের বেড থেকে বাড়ি ভাড়া না মেলা— সবেতেই স্ক্যানারে ছিল সরকার। ‘কার্টুনিস্ট হিসাবে আমার কাজ হল দেশের সাধারন নাগরিকদের সংবিধান যে সব অধিকার দিয়েছে সেগুলি লঙ্ঘিত হচ্ছে কিনা খেয়াল রাখা।’
প্রমথ সমাদ্দার ও রবীন ভট্টাচার্যর সমসাময়িক কার্টুন, চণ্ডী লাহিড়ীর মতে, স্থূল বিনোদনের উপাদান হওয়ার বাইরে এগোতে পারেনি। ছাত্রী ও শিক্ষকের প্রেম, মাতালের মাতলামি, চাকরি করা মেয়েদের নিয়ে কৌতুক, ওইসব নিয়ে লঘু তামাশা নয়, বরং গোড়া থেকেই নিজের কার্টুনকে বিপরীত মেরুতে স্থাপন করেছিলেন তিনি। তাই ‘তির্যক’-এর ছোট্ট জানালায় উঁকি মারলে দেখা যেত সমসাময়িক অবক্ষয়ের নানা খণ্ডচিত্র। কালোবাজারি ও অসৎ ঠিকেদাররা পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার বিপুল কর্মযজ্ঞের কনট্র্যাক্ট হস্তগত করছে, হাসপাতালে রোগীর সঙ্গে বিড়াল-কুকুরের সহাবস্থান, চাঁদার নামে তোলাবাজি, নেতাদের ঘুষ ইত্যাদি। সেই সময়ে রাজনীতির দুবৃর্ত্তায়ন সম্পূর্ণ হচ্ছে ধীরে ধীরে, পুলিশের ভূমিকা কখনও খানিকটা উর্দিপরা গুন্ডা, কখনও বা নেতাদের আজ্ঞাবহ দারোয়ানের মতো। খাদ্য আন্দোলনে ছাত্ররা পথে নেমেছেন। পুলিশও লাঠি, কাঁদানে গ্যাস নিয়ে নেমে পড়েছে মোকাবিলায়। ‘তির্যক’-এ কার্টুন বের হল: পুলিশ অফিসার একপ্রস্থ গুঁতুনি দেওয়ার পর গ্ৰেফতার হওয়া ছাত্রকে জিজ্ঞাসা করছেন, ‘বাপের নাম কী?’ ভয়ার্ত ছাত্রটি হাতজোড় করে বলছে, ‘ভুলে গেছি স্যার!’ কিংবা হোমিওপ্যাথিক কলেজে ছাত্রবিক্ষোভ চলছে, অধ্যক্ষ থানায় ফোন করেছেন শান্তিভঙ্গের আশঙ্কায়। ওসি প্রত্যুত্তরে ফোনে জিজ্ঞেস করছেন, ‘কী চাই, হোমিওপ্যাথিক না আ্যলোপ্যাথিক?’ অর্থাৎ, লাঠৌষধি কতটা প্রয়োগ করা যাবে!
তির্যকে আরও দু-একজন কার্টুন করেছেন, কিন্তূ পকেট কার্টুনের অবিসংবাদী শিল্পী বার্ট ল্যাঙ্কাস্টারের মতোই চণ্ডী লাহিড়ী অপ্রতিদ্বন্দ্বী। শুধু রাজনৈতিক বিষয় নয়, খেলাধুলো, পোশাক, শিক্ষাব্যবস্থা, বাসস্থান, পরিবহণ, চিকিৎসা, নারী স্বাধীনতা, পরিবেশ দূষণ, বন্দিমুক্তি, বিজ্ঞান, মনস্তত্ত্ব, অর্থনীতি— সবকিছুই চলে এসেছে তাঁর কার্টুনের বিষয়বস্তুতে।
কার্টুন আঁকার ক্ষেত্রে পিসিএল বা প্রফুল্ল চন্দ্র লাহিড়ীর স্টাইল তাঁকে প্রভাবিত করেছিল। চণ্ডী লাহিড়ীর মতে, ‘কার্টুনিস্ট সংবাদপত্রে থাকেন একজন, বড়জোর দুজন। কাজেই কার্টুনিস্টকে মার খেতে হয়। তিনি সংখ্যালঘু। কেউ একজন ‘এটা কার্টুন হয়নি, কোনো হিউমার নেই’ বলে মন্তব্য করলে কার্টুনিস্টের পক্ষে বোঝানো শক্ত সেটা কার্টুন হয়েছে এবং যথেষ্ট হিউমারসমৃদ্ধ। সংখ্যায় তিনি একক, রিপোর্টার কয়েক ডজন। সাব এডিটর কয়েক ডজন, ফটোগ্ৰাফার কয়েক ডজন কিন্তু কার্টুনিস্ট একেবারে একা।’
তাঁর কার্টুনে খাদ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল সেনের প্রতি কটাক্ষ থাকত। ‘প্রফুল্ল সেনের মূখে গান্ধীবাদ, মনে স্ক্রূর প্যাঁচ।… প্রফুল্ল সেন সকালের আনন্দবাজারে আমার কার্টুন দেখলেই ক্ষেপে যেতেন।… তিনি গোপনে নির্দেশ দিয়ে আনন্দবাজারে বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিলেন।’ বহু কষ্টে সেই বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যে জ্যোতি বসু ছিলেন তাঁর চোখে সবচেয়ে নীরস। একবার মিনার্ভা থিয়েটারে একটি অনুষ্ঠানে সেদিন আনন্দবাজারে প্রকাশিত একটি কার্টুনের সূত্রে চণ্ডী লাহিড়ীকে কুৎসিৎ আক্রমণ করে চরম অসৌজন্যের পরিচয় দিয়েছিলেন। অন্যদিকে, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর সংস্কৃতিমনস্কতার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন চণ্ডী লাহিড়ী। প্রমোদ দাশগুপ্ত, হরেকৃষ্ণ কোঙার, বিনয় চৌধুরী, জাদুকর পি সি সরকার (সিনিয়র), মন্ত্রী ভূপতি মজুমদার ইত্যাদি বিখ্যাত মানুষদের সান্নিধ্যে এসেছিলেন। নাট্যব্যক্তিত্ব শম্ভু মিত্রের সঙ্গে গভীর পারিবারিক সখ্য। বিশিষ্ট দন্তচিকিৎসক বারীন রায়ের সঙ্গে আমৃত্যু ঘনিষ্টতা ছিল।
আনন্দবাজার ছাড়াও তাঁর কার্টুন প্রকাশিত হয়েছে যষ্ঠীমধু, সরস কার্টুন, খেলা, পরিবর্তন, কোলফিল্ড টাইমস, সত্যযুগ প্রভৃতি পত্রিকায়। আনন্দমেলা, শিশুসাথী, পক্ষীরাজ, আনন্দ, কিশোর মন, কিশোর ভারতী, সন্দেশ প্রভৃতি শিশুদের পত্রিকায় তাঁর কার্টুন ও কমিকস নিয়মিত বেরিয়েছে। চচ্চড়ি, Toddle Trouble, বাহারি শৈশব, মিচকে ও নেংটি হল ছোট্ট বন্ধুদেরকে দেওয়া চণ্ডীর উপহার। আটের দশকে দূরদর্শনের চিচিং ফাঁক অনুষ্ঠানে তিনি হাতে কলমে কার্টুনশিক্ষার পাঠ দিয়েছেন। আ্যনিমেশান ছবি করেছিলেন তিনটি—Under the Blue Moon, The Biggest Egg এবং Be a Mouse Again. পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরের জন্য করা তাঁর প্রচারমূলক কার্টুনগুলো ট্রামে-বাসে হোর্ডিংয়ে বা গণমাধ্যমে এখনও চোখে পড়ে। ধন্যি মেয়ে, চারমূর্তি, পাকা দেখা ও ফুলু ঠাকুমা— এই চারটি ছায়াছবির টাইটেল ক্রেডিট চণ্ডী অলংকৃত।
রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তর টেলি সিরিয়াল অবিরত চেনামুখ ও মেঘনাদ ভট্টাচার্যের নাটক বধূতন্ত্রে ব্যবহৃত হয়েছে চণ্ডী লাহিড়ীর অনুকরণীয় কলাকৃতি। গড়িয়াহাট মোড়ের ছায়া স্টোর্স ও এমপি জুয়েলার্সের লোগো তিনি করে দিয়েছেন। গাঙ্গুরাম মিষ্টান্ন প্রতিষ্ঠানের হয়েও কাজ করেছিলেন। শহরের একটি হাসপাতালের ক্যানসার ইউনিট শিশুদের জন্য তাদের কেমোথেরাপি ওয়ার্ডে টাঙিয়ে রেখেছে মন ভাল করা চণ্ডীর কার্টুন। এটা থেরাপির একটা অংশ। যষ্ঠীমধু পত্রিকায় চণ্ডী ঠাকুর ছদ্মনামে লিখতেন, লেখার অভ্যাস ছিল তাঁর সহজাত। কার্টুনের ইতিহাস নিয়ে যেমন লিখেছেন ‘কার্টুনের ইতিবৃত্ত’, তেমনই বাংলা কার্টুনের পথিকৃৎ গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে তাঁর গবেষণার ফসল ‘গগনেন্দ্রনাথ’। ‘বাঙালীর রঙ্গব্যঙ্গচর্চা’ গ্ৰন্থে তাঁর পাণ্ডিত্যের ধার থাকলেও গুরুভার নেই। একটি টিভি চ্যানেলে ‘চণ্ডীপাঠ’ নামে একটি অনুষ্ঠান জনপ্রিয় হয়েছিল। উল্লেখ্য, ‘চণ্ডীর চণ্ডীপাঠ’ নামে একটি রসরচনাও তিনি লিখেছেন। ‘কথায় কথায়’ ও ‘চলমান প্রসঙ্গ’ হল অ্যানেকডোটসের একটি সংগ্ৰহ। চণ্ডীর নিজের কথাতেই, বিদ্যা হিসেবে ‘কার্টুন হল সর্বগ্রাসী।’ তাঁর কার্টুনের বইগুলির মধ্যে উল্লেখ্য হল, Since Freedom, Chandi Looks Around, Visit India with Chandi প্রভৃতি। ‘ছিঁটেফোঁটা’ বইটিতে রয়েছে পরিবেশ দূষণ নিয়ে ভাবনা উদ্রেককারী বেশ কিছু কার্টুন।
তাঁর কার্টুনে খাদ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল সেনের প্রতি কটাক্ষ থাকত। ‘প্রফুল্ল সেনের মূখে গান্ধীবাদ, মনে স্ক্রূর প্যাঁচ।… প্রফুল্ল সেন সকালের আনন্দবাজারে আমার কার্টুন দেখলেই ক্ষেপে যেতেন।… তিনি গোপনে নির্দেশ দিয়ে আনন্দবাজারে বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিলেন।’ বহু কষ্টে সেই বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
২০০৮ সালে চণ্ডী লাহিড়ী বালিগঞ্জের উইভার্স স্টুডিও-তে একটি কার্টুন নিয়ে প্রদর্শনী কিউরেট করেন। সব কার্টুনিস্ট ও কার্টুন-রসিকরা এক জায়গায় মিলিত হন এই উপলক্ষে। ২০১৪ সালে গঠিত ‘কার্টুন দল’-এর সবচেয়ে বর্ষীয়ান সদস্য চণ্ডী লাহিড়ী প্রত্যেক বছরই অশক্ত শরীর নিয়েও হাজির থাকতেন সরকারি চারুকলা মেলায় ‘কার্টুন দল’-এর স্টলে। স্টলের দেওয়ালে ঝুলত তাঁর আঁকা কার্টুন।
১৮ মার্চ, ২০১৮। চণ্ডী লাহিড়ীর মৃত্যুসংবাদ পেয়ে ছুটে গিয়েছিলাম আর জি কর হাসপাতালে। দেখলাম আমার স্বপ্নের মানুষটি শেষ শয্যায় শায়িত। চারিদিকের পরিবেশ অত্যন্ত দীনহীন, অপরিচ্ছন্ন। আর্থিক সচ্ছলতা কেন পেশাদার কার্টুনিস্টদের অধরা থেকে যায়, এটা বড় প্রশ্ন।
‘কার্টুনিস্টরা মহাপুরুষ নন, রাজনীতিবিদ নন, সমাজ সংস্কারক নন, তাদের জীববদ্দশায় দু-একটি ইন্টারভিউ ছাপা হলেও তাদের জীবনী কোথাও ছাপা হয় না।’ আক্ষেপ করেছেন শিল্পী। ‘কার্টুন পুষ্পমাল্য নয়, অস্ত্র।’ চণ্ডী লাহিড়ী বারবার তাকে অভিহিত করেছেন একটি অ্যাগ্ৰেসিভ টুল হিসেবে। এই অস্ত্রে বলীয়ান শিল্পীকে সংবাদপত্রের পলিটিক্যাল ইকনমি আর জায়গা দিতে নারাজ। এই বিপন্নতা, ওই অস্তিত্বের সংকটের শরিক আজ বাংলার ব্যঙ্গ-চিত্রকররা। চণ্ডী লাহিড়ী ও অমল চক্রবর্তী ছিলেন এই ধারার শেষতম প্রতিনিধি।
তথ্য সহায়তা
কার্টুনিস্টের চোখে দেখা। চণ্ডী লাহিড়ী। ধ্রুবপদ, ২০০২। বর্তমানে ‘উদ্ভাস’ থেকে বই আকারে প্রকাশিত।
কার্টুনের ইতিবৃত্ত। চণ্ডী লাহিড়ী
কার্টুন রঙ্গ বিচিত্রা। বিশ্বদেব গঙ্গোপাধ্যায়
বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত চণ্ডী লাহিড়ীর সাক্ষাৎকার।
কমিক্স ও গ্ৰাফিক্স পত্রিকা, চতুর্থ সংখ্যা।