টাঙ্গাইলের সাদাত কলেজে ঢুকতে গিয়ে আচমকা থমকে গেল প্রতুল। কলেজের দেওয়ালে বিরাট পোস্টার মেরে গেছে কেউ। আঠা এখনও শুকোয়নি। তাতে বড় বড় লাল অক্ষরে লেখা—
জগদ্বিখ্যাত ম্যাজিশিয়ান যাদুকর গণপতি
তাঁর আশ্চর্য্য সব ম্যাজিক দেখাইবেন।
কিবে প্রিজন এক্টো, ভৌতিক বৃক্ষ, ভৌতিক বৃক্ষ সহ অদ্ভুত সব যাদু।
না দেখিলে পস্তাইবেন”
এই ‘গণপতি’-র নাম প্রতুল এতবার শুনেছে, আর তাঁর এত কীর্তিকাহিনি প্রতুলের কানে এসেছে, যে, সেই মানুষটি তাঁদেরই টাঙ্গাইল শহরে আসছেন, একথা যেন বিশ্বাস হয়েও হয় না। প্রতুলের দূর সম্পর্কের মামা দীনেশচন্দ্র নন্দী এককথায় গণপতির একলব্যসম শিষ্য। নিজে কোনওদিন চোখে না দেখেও গণপতিকে গুরু মেনেছেন। এই দীনেশই ভাগ্নে প্রতুলের মাথায় ম্যাজিকের ভূত ঢুকিয়েছেন সেই কবে। ভদ্রলোক নিজে খুব ভাল ক্লোজ আপ ম্যাজিক দেখাতেন। কিন্তু স্টেজে না। আত্মীয়দের বাড়িতে বা কোনও অনুষ্ঠানে। প্রতুলের পীড়াপীড়িতে সেই নন্দীমামা তাঁকে শিখিয়েছিলেন হাতসাফাইয়ের নানা ট্রিক, তাসের ম্যাজিক আর ফোর্সিং-এর ছোটখাট কলাকৌশল। কিন্তু প্রতুলের তাতে আশ মেটে না। সে আরও শিখতে চায়। মামা শেষমেশ হাল ছেড়ে দিয়ে প্রতুলকে ইদানীং ম্যাজিকের বই কিনে দিচ্ছেন। হাতে করে বানিয়ে দিচ্ছেন টুকিটাকি যন্ত্রপাতি।
আরও পড়ুন : আত্মজীবনীতে বাংলা নাট্যজগতের ধ্রুবতারাদের স্বরূপ উন্মোচন করেছিলেন বিনোদিনী…
কিছুদিন আগে অবধিও প্রতুলের ধারণা ছিল, তাঁর বাবা ভগবানচন্দ্র বুঝি এই ম্যাজিক নিয়ে খ্যাপামোকে একেবারেই পছন্দ করেন না। তাই বাবা এলেই ছেলে সন্ত্রস্ত হয়ে যেত। কিন্তু একদিন সব ফাঁস হয়ে গেল। প্রতুল দেখত, প্রায়ই বাবা লুকিয়ে লুকিয়ে কাগজে মোড়া কী একটা বই যেন পড়েন! একদিন বাবাকে অনেক সাধ্যসাধনায় বাবা আর লুকোতে পারলেন না। বইখানি এন রুদ্রের লেখা হিপনোটিজমের বই। ব্যস! বাবার সায় আছে জেনে প্রতুল জাদু নিয়ে আরও মেতে ওঠেন।
১৯২৯ সালে টাঙ্গাইলে গণপতি চক্রবর্তী খেলা দেখাতে এলে প্রায় প্রতিদিন প্রতুল যেতেন সেই খেলা দেখতে। বারবার দেখেও যেন আশ মেটে না। কলেজ-ছাত্র প্রতুল নিজে গিয়ে গণপতির সঙ্গে দেখা করল। জানাল, জাদু বিষয়ে তাঁর আগ্রহের কথা। গণপতি একবাক্যে তাঁকে নিজের শিষ্য করে নেন। উপহার দেন, নিজের লেখা জাদুবিদ্যার দু’টি বই। শিখিয়ে দেন বেশ কিছু জাদুর খেলাও। শিষ্যদের শেখানোর ক্ষেত্রে গণপতি ছিলেন অকৃপণ। একথাও বলেন, “কলকাতায় এলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ ক’র।” করেছিলেন প্রতুল। গণপতি হাতে ধরে ব্ল্যাক আর্ট, তাসের খেলা, এমনকী, নিজের ট্রেড সিক্রেট পলায়নী বিদ্যাও শিখিয়ে দেন প্রতুলচন্দ্রকে।
১৯৩১ সালে আইএ পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে পাশ করে অঙ্কে অনার্স নিয়ে বিএ পরীক্ষা দেয় প্রতুল। তাঁর আগেই অবশ্য ম্যাজিক নিয়ে দু’খানি বই লেখা হয়ে গেছে তাঁর। একটির নাম হিপনোটিজম, অন্যটি ‘ম্যাজিক শিক্ষা’। বলাই বাহুল্য, এন রুদ্রের এবং গণপতির বইয়ের এক মস্ত প্রভাব তাতে দেখা গিয়েছিল। বিএ পাশের পর প্রতুল স্থির করলেন, তিনি ম্যাজিশিয়ান রূপেই আত্মপ্রকাশ করবেন আর একেই জীবিকা হিসেবে বেছে নেবেন। বাবা সামান্য গাঁইগুঁই করে রাজি হয়ে গেলেন। প্রতুল ঠিক করলে ভারতীয় জাদুকে বেদের ঝুড়ি আর সাধুদের আখড়া থেকে ছড়িয়ে দেবে বিশ্বের দরবারে। প্রথমেই শ্যামদেশ আর মালয়।
কিন্তু ওখানে তো আর ‘প্রতুল’ নামে যাওয়া যাবে না। নিজের পদবির বানানটাও বদলে নিল প্রতুল। ‘SORCARER’ শব্দের সঙ্গে মিলিয়ে পদবির বানান করে দিলেন SORCAR. টাঙ্গাইলের আশেকপুর গ্রামের কৃষক ঘরের সন্তান প্রতুল মঞ্চে নামলেন P.C. SORCAR হয়ে।
২
পি সি সরকারের প্রথম বিদেশ সফর নিয়ে বিতর্কের অবকাশ আছে। আচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, মালয় না, বরং জাপানেই প্রতুলের দিগ্বিজয়ের সূচনা। তিনি এও বলেছেন, এঁর নেপথ্যে নাকি স্বয়ং সুভাষচন্দ্র বসুর সুপারিশ ছিল। কেমন ছিল পি সি সরকারের খেলা? সুনীতিবাবু লিখছেন, ‘তাঁর (প্রতুলের) প্যাটার অতি চমৎকার। সহজ ইংরাজিতে বলে যান। কিন্তু এই সংবেদনের মধ্যে নিরবিচ্ছিন্ন সাবলীল হাস্যরস বা কৌতুক প্রবাহিত, তা থেকে এঁর মনের সরলতাই প্রকাশ পায়। ভারতীয় অভিজাত বংশের মত পোশাকে তাঁকে মানায়-ও সুন্দর-দামি সোনার সুতোর তাশা কাপড়ের আচকান বা শেরওয়ানি, সরু চুড়িদার পাজামা, নাগরা জুতো, আর মাথায় জড়োয়া কল্গাদার পালক লাগানো সাফা বা পাগড়ি কারও চোখ এড়াতে পারে না।’
এই রাজকীয় পোশাক নিয়ে একটা কথা জেনে রাখা দরকার। তিনের দশক থেকে পাঁচের দশক অবধি বিদেশি জাদুকরদের অনুকরণে অন্য জাদুকরদের মতো পি সি সরকার-ও সাহেবি কোটপ্যান্ট পরে খেলা দেখাতেন। পাঁচের দশকে যোধপুরে খেলা দেখাতে গিয়ে সেখানকার মহারাজা হনবন্ত সিং তাঁকে এই রাজবেশ উপহার দেন। দেবরাজ ইন্দ্র যে মায়াজাল সৃষ্টি করেন, তাই ইন্দ্রজাল। প্রতুল পড়েছিলেন,
অয়ং লোকো, জালম আসীৎ
শত্রুস্য মহতো মহান।
তেনাহম ইন্দ্রজালেন
অমুংস তমসা অভি দদামি সর্বান।।
(এই মহান ভূলোক ইন্দ্রেরই জালস্বরূপ আর এই জাল দ্বারা আমি সকল মানুষকে মোহের অন্ধকারে ঢেকে রাখি– ঋগ্বেদ)
নিজের শো ‘ইন্দ্রজাল’-এর সঙ্গে মিলিয়ে রাজার মতো মঞ্চে উপস্থিত হতে থাকেন প্রতুল। তাঁর পুত্ররাও এই নিয়ম থেকে সরে আসেননি। এমনকী, এই রাজবেশ ভারতীয় জাদুর ট্রেডমার্ক হয়ে ওঠে অচিরেই। কিন্তু সেসব পরের কথা। আগে তাঁর বিদেশ জয়ের কিছু গল্প বলি।
পি সি সরকারের একটা বড় গুণ ছিল, তিনি সবার সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশতে পারতেন। ফলে বহু বিদেশি জাদুকর তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে ওঠেন। তাঁদের থেকে ভাল ভাল খেলাগুলো বেছে, সেগুলো ভারতীয় ছাঁচে ঢেলে বড় বড় মাপের খেলা তৈরি করতেন তিনি। বিখ্যাত জার্মান যাদুকর হেলমুট শ্রাইবারের কথাই ধরি না কেন। ভদ্রলোক ‘কালানাগ’ নামে খেলা দেখাতেন। তাঁর অনুষ্ঠানে একটা রানিং গ্যাগ ছিল। ছোত ৫০০ গ্রাম মতো একটা কলসি থেকে মাঝে মাঝেই জল ঢেলে যেতেন শো-এর শুরু থেকে শেষ অবধি। বালতির পর বালতি ভরে যেত। জল শেষ হত না। পি সি সরকার কালানাগের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়ে সেই যন্ত্রের নির্মান শিখে ওঁর অন্যতম সেরা জনপ্রিয় খেলা ‘ওয়াটার অফ ইন্ডিয়া’ বানালেন। মঞ্চ থেকে গাড়ি ভ্যানিশের খেলাটাও আসলে কালানাগের আবিষ্কার। কালানাগ নিজে আপত্তি না করলেও প্যারিসে তাঁর খেলা দেখে পত্রিকায় লেখা হয়েছিল, “প্রায় অর্ধেকের উপরে খেলা জার্মান ম্যাজিশিয়ানদের থেকে নকল করে প্রাচ্যের খেলা বলে চালানো হয়েছে। যদিও তার মান নেহাতই পানসে।” সরকার বুঝলেন, চেনা ছকে হবে না। প্রচার পেতে গেলে তাঁকে এমন কিছু করতে হবে, যা সকলের চেয়ে আলাদা। পত্রিকার সমালোচকদের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলে লাভের সব গুড় পিঁপড়েয় খেয়ে যাবে। আর ঠিক এখানেই পি সি সরকার এমন এক চাল চাললেন, যা থেকে তিনি সমসাময়িক সকল ম্যাজিশিয়ানদের থেকে কয়েকশো যোজন এগিয়ে গেলেন।
৩
যাঁরা পি সি সরকারের ম্যাজিক নিয়ে একেবারেই শ্রদ্ধাশীল নন, তাঁরাও বহুবার মানতে বাধ্য হয়েছেন, পাবলিসিটিতে ভদ্রলোকের ধারে-কাছে সেযুগের কেউ ছিল না। তিনি মঞ্চের নিগড় থেকে ম্যাজিককে বের করে একেবারে সাধরণের আয়ত্তে নিয়ে এলেন। বিমানবন্দরে, ট্রেনে, দোকানে, বাজারে, বিদেশের রাস্তায় সর্বত্র বিনে পয়সায় তিনি ম্যাজিক দেখিয়ে বেড়াতেন। বড় কিছু না। ছোটখাট হাতসাফাইয়ের খেলা। কিন্তু মানুষের মন জয় করতে তা যথেষ্ট। এখন যে বিদেশে স্ট্রিট ম্যাজিশিয়ানদের এত রমরমা, তার শুরু কিন্তু পি সি সরকারের হাত ধরেই। তিনি বুঝেছিলেন, মাউথ টু মাউথ পাবলিসিটির চেয়ে বড় কোনও পাবলিসিটি হয় না। কিন্তু অন্যটাকেও তিনি ছাড়লেন না। যে দেশে যেতেন, সেই শহরের সেরা পত্রিকার দপ্তরে চলে যেতেন আগেই। বন্ধুত্ব করে নিতেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতেন হাত খুলে। ফলে শো-এর রিভিউতে তারার কমতি হত না। সত্যি বলতে, ভারতীয় জাদু বা প্রাচীন সন্ন্যাসীদের জাদুবলে তিনি যা দেখাতেন, তার একটিও খাঁটি ভারতীয় জাদু নয়। আর খাঁটি ভারতীয় জাদু নামে যেগুলো পরিচিত, সেই বাস্কেট ট্রিক, রোপ ট্রিক কিংবা ম্যাঙ্গো ট্রিকের কোনওটাই তিনি দেখাননি।
অন্যের খেলাকে নিজের করে নেওয়ার সবচেয়ে বড় উদাহরণ বোধহয় সেই বৈদ্যুতিক করাত দিয়ে মেয়ে কাটার খেলাটা। শতকরা ৯৯ ভাগ মানুষ এটাকে পি সি সরকারের নিজের খেলা বলে জানেন। ফলে, এই খেলার আসল আবিষ্কারক হোরেস গোলডিনের নাম হারিয়ে গেছে চিরতরে। কিন্তু সরকার কীভাবে এই ম্যাজিককে হাইজ্যাক করলেন? বিবিসি-তে পি সি সরকারের লাইভ শো ছিল। তাতে তিনি করাত দিয়ে মেয়েটিকে কাটলেন। জোড়া লাগানোর সময় এমন ভাব করতে লাগলেন, যেন চেষ্টা করেও জোড়া লাগাতে পারছেন না। সরকার জানতেন, বিবিসি লাইভ সময়ের ব্যাপারে ভয়ানক কড়া। সময় শেষ হতেই তারা ম্যাজিক মাঝপথে বন্ধ করে খবর পড়া শুরু করে দিল। এদিকে দর্শকদের তো লবেজান! শয়ে শয়ে ফোন আসতে থাকল বিবিসি-র দপ্তরে। পরের দিন খবরের কাগজের হেডিং-এ জায়গা পেলেন পি সি সরকার, আর এই ম্যাজিকটি চিরকালের মতো তাঁর নামের সঙ্গে জুড়ে গেল।
এঁর কিছু আগেই হংকং-এ পলায়নী বিদ্যার খেলা দেখিয়ে তিনি প্রথম প্রচারের আলোয় আসেন। এই খেলাটি সত্যিই বেশ বিপজ্জনক। কিন্তু হুডিনির খেলার সঙ্গে পরিচিত বহু মানুষই এই খেলাকে চিনবেন। হংকং-এর সবচেয়ে দ্রুতগামী ট্রেন আসার সামান্য আগে সরকারকে ট্রেন লাইনের সঙ্গে হাতকড়া দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। দেখা গেল, তিনি ৩৮ সেকেন্ডের মধ্যে নিজেকে ছাড়িয়ে সহাস্যে লাইনের ধারে দাঁড়িয়ে আছেন।
পি সি সরকারের লেখার হাতটিও ছিল চমৎকার। নিয়মিত দেশি-বিদেশি নানা পত্র পত্রিকায় ম্যাজিক আর নিজের কর্মকাণ্ড নিয়ে সচিত্র লেখা প্রকাশ করতেন। নিজের খরচে বই ছাপাতেন। সাহিত্যিকদের সঙ্গে মেলামেশা করতেন, ফলে তাঁদের লেখাতেও উঠে আসত পি সি সরকারের নাম। একসময় ভারতীয় জাদু আর পি সি সরকার সমার্থক হয়ে গেলেন। আর এটাই সরকার চাইছিলেন। SORCAR MEANS SORCERY. দেশে-বিদেশে নানা সম্মানে ভূষিত হন তিনি। দু-বার আমেরিকার স্ফিংস, জার্মানির গোল্ডলরেল, হল্যান্ডে দুইবার ট্রিকস, জাপানের লরেল ও ভারতে পদ্মশ্রী পুরস্কার। তখন কি তাঁর মনে পড়েছিল, বহু বছর আগে তাঁর গুরু গণপতি চক্রবর্তী ঘোষণা করেছিলেন, “ও আমার আর দেশের নাম অধিকতর উজ্জ্বল করবে”?
এ নিয়ে সামান্য আলোচনা প্রয়োজন।
৪
গণপতির ভবিষ্যৎবাণীর দ্বিতীয় অংশ একেবারে সঠিক। ভারতীয় ম্যাজিককে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এক এবং অদ্বিতীয় মানুষ ছিলেন পি সি সরকার। ‘দ্য হিস্ট্রি অফ ম্যাজিক’ বইতে মেলবোর্ন ক্রিস্টোফার এককথায় লিখেছেন “ইন দ্য হোল ওয়ার্ল্ড, সরকার ইজ দ্য নেম অফ ম্যাজিক”। কিন্তু নিজের গুরুর মুখ কি উজ্জ্বল করেছিলেন তিনি? এঁর উত্তর হল না। কারণ প্রতিষ্ঠা পাওয়ার কোনও লিখিত ডকুমেন্টে তিনি গণপতির নাম অবধি উল্লেখ করেননি। ‘যাদুকাহিনী’ বইতে অজিতকৃষ্ণ বসু গণপতিকে সরকারের গুরু বলে উল্লেখ করেছেন। একই কথা লিখেছেন সরকারের গুরুভাই যাদুকর দেবকুমার। কিন্তু পি সি সরকার নিজে তাঁর একটি বইতেও গণপতির কথা বলেননি। ‘ভারতবর্ষ’ পত্রিকায় ‘যাদুবিদ্যা ও বাঙ্গালী’ প্রবন্ধে হুডিনি, থার্স্টটন, হফম্যানের নাম থাকলেও গণপতি অনুপস্থিত। বরং তাঁর ম্যাজিক বংশপরম্পরায় এবং তাঁর গুরু, তাঁর বাবা ভগবানচন্দ্র এমন দাবিও করতে দেখা যায় তাঁকে। মজার ব্যাপার, গণপতিবাবুর ‘যাদুবিদ্যা’ বইটি তাঁর মৃত্যুর পর আবার ছাপা হলে প্রকাশকের কথায় লেখা হয়েছিল, “গণপতি বাবুর সুযোগ্য শিষ্য প্রখ্যাতনামা যাদুকর পি সি সরকার মহাশয় দ্বারা গ্রন্থখানি আদ্যোপান্ত সংশোধন করাইয়া..”। এদিকে গণপতির অন্ত্যেষ্টির সময় কলকাতায় থাকলেও এবং তাঁকে খবর দেওয়া হলেও পি সি সরকার যে আসেননি, সে খবর পাই জাদুসূর্য দেবকুমার আর অজিতকৃষ্ণ বসুর লেখায়। অজিত নাকি সবিস্ময়ে বলেছিলেন, “সরকার এটা ঠিক কাজ করেনি”।
৫
১৯৭১ সালে চেরিফুলের দেশ জাপানে খেলা দেখাতে গিয়ে আচমকা পি সি সরকারের হৃদযন্ত্র স্তব্ধ হয়ে গেল। চলল নানা রকমের কন্সপিরেসি থিওরি। কেউ বলল, তাঁকে নাকি বিষপ্রয়োগে হত্যা করা হয়েছে। কেউ বলল, তিনি সাধনা করতে করতে সিদ্ধিলাভ করেছেন। এদিকে দেশে খবর এল তাঁর ছেলে প্রদীপের কাছে। তিনি বারবার বাবার কাছে শুনেছিলেন ‘দ্য শো মাস্ট গো অন’। যাই হোক না কেন, শো ক্যানসেল করা যাবে না। একদিকে বাবার মৃতদেহ দেশে ফিরছে, অন্যদিকে বুকের পাঁজর জ্বালিয়ে, দু-চোখে আগুন জ্বেলে হাসিমুখে রাজবেশে মঞ্চে নামলেন জুনিয়র পি সি সরকার।
দ্য কিং ইজ ডেড। লং লিভ দ্য কিং।