ভারতের জাতীয় ভাসান সংগীত ‘তাম্মা তাম্মা লোগে’ নামক হিন্দি গানটি যে আদতে একটি আফ্রিকান গানের নকল— তা একদিন ফট্ করে ধরা পড়ে যায়। গানটি যে-বছর বেরয়, সে-বছরই আবার ওই একই সুরে অন্য একটি বিপুল জনপ্রিয় হিন্দি গান আসে বাজারে, ‘জুম্মা চুম্মা দে দে’; অমিতাভ বচ্চন হাতে কলাই করা মগ নিয়ে নাচছেন তাঁর একঘেয়ে আইকনিক ভঙ্গিতে। গানটি গেয়েছেন সুদেশ ভোঁসলে, অমিতাভের কণ্ঠস্বর নকল করে গান গেয়ে যিনি প্রতিষ্ঠা পান। প্রথম গানটির সংগীত পরিচালককে গিয়ে তৎকালীন সাংবাদিকরা চেপে ধরেন, জানতে চান কেসটা কী হল? উনি বলেন যে, আসল সুরটার অনুপ্রেরণা নিয়েছেন তিনি। কিন্তু ‘অ্যারেঞ্জমেন্ট’ আলাদা ও অনন্য। আফ্রিকানরা হেরে গেছে তার কাছে। খুবই সুখের কথা, সন্দেহ নেই তাতে। যুগযুগান্ত কেটে যাচ্ছে, নকলের দর বেশি সর্বত্র। পাসপোর্ট থেকে জলের বোতলের ব্র্যান্ড— সবই নকল একদম চোখের ওপর, সোচ্চারে, বুক ঠুকে। ওই যে দু’টি গান আটের দশক থেকে আজ অবধি বহু মানুষকে পথে-ঘাটে সাপ নৃত্য করতে উদ্বুদ্ধ করে, তাদের আদৌ কেউ জানতেও চায় না, আসল গানটি কেমন ছিল।
ঘটনাচক্রে মাত্র কয়েকদিন আগেই কাণ্ডটির কথা জানতে পারলাম, পুরনো একটি সাক্ষাৎকার দেখতে পেয়ে। এমনকী, একই সুর নকল করে, একই বছরে আরেকটি গান হচ্ছে দেখে, অপর গানটির সংগীত পরিচালকরা অনুরোধ করেন, যেন এই গানটি না প্রকাশ করানো হয়। ‘তাম্মা তাম্মা..’-র পরিচালক সেই প্রসঙ্গে বলেন, তারা যা খুশি করতে পারেন, তাতে কিছুই পাল্টানো যাবে না। কারণ ওঁর অ্যারেঞ্জমেন্ট আলাদা এবং অবশ্যই অনন্য। নকলি দ্রব্য নিয়ে লিখতে বসেই প্রথম এই ঘটনাটাই মনে পড়ল। বস্তুত বেশিরভাগ আধুনিক গানেরই বোধহয় এইরকমই ভাগ্য।
আরও পড়ুন : যুগলের গোপনীয়তার মালিকানা আছে এদেশে? লিখছেন
গুলশনারা খাতুন…
কিন্তু শুধু গান? নকল আলপিন, নকল এরোপ্লেন, নকল বাড়ি, নকল ঘড়ি— কোন জিনিসটির নকল নেই এই বিশ্বে? আগে সিনেমা-টিনেমাতে খুব দেখা যেত, নকল বর সেজে নায়িকার বাড়ি গিয়ে নায়ক আসলে প্রেমে পড়ে যাচ্ছে। এই সিনেমাটা আবার ইংরেজি সিনেমার নকল। কী জ্বালা! সেই তো একদিন না একদিন লোকে ধরেই ফেলবে বাবা! তবে এসবে যায় কেন লোকে?
এর উত্তরে আমরা সবাই জড়ামড়ি করে একটা বিতিকিচ্ছিরি অবস্থানে আছি। আমরা, মানে এই মানুষ দল। পৃথিবীর বেশ উল্লেখযোগ্য একদল প্রাণী, এই আমরা।
আচ্ছা, এই যে ধরুন, আপনার একটা সিনেমা দেখে খুব আনন্দ হল। মনে হল, এই যে নায়িকা, তার সঙ্গে আমার খুব মিল। তাই আপনি ওই অমুক ছবির তমুক নায়িকার মতো সাজার জন্য জামাকাপড় কিনে শ্বেতশুভ্র কানাডার ব্যাকড্রপে পায়চারি করবেন। আজকাল যাকে বলে, মুখ্য চরিত্র সিনড্রোম, তার একশেষ অবস্থা। এবার আপনি প্রথমে জামা কিনতে গেলেন। ততক্ষণে আপনি খবর পেয়ে গেছেন। ওই অমুক ছবির নায়িকা, যিনি একটি একা গরিব মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করছিলেন, সেই চরিত্রের পরনের জামাকাপড়, জুতো, ব্যাগ মিলিয়ে যা খরচ হয়েছে, তাতে যাদবপুরের মতো জায়গায় একটা এক কামরার ফ্ল্যাট হয়ে যায়। তখন? মনের মধ্যে করুণ সুরে ব্যায়লা বাজে কি বাজে না? তখন মন মানতে চায় যে, ব্যাগে মাত্র একটা চা আর একটি সিগারেটের মতো রেস্ত এককোনায় পড়ে আছে? উঁহু। বেশিরভাগেরই চায় না। তখন ফুটপাথের দোকান থেকে হাঁক আসে, ‘হে অমৃতজ্যোতি’ মার্কা। ‘হুবহু এক জামা পাবেন রে বাবা! নায়িকা স্যাটিন, আপনার পলিয়েস্টার। নায়িকা উটের চামড়ার ব্যাগ আপনার পি ইউ লেদার।’
আরে হোক না! ক্যানাডার বদলে শান্তি ঘোষ স্ট্রিট। দূর থেকে তো বোঝা যাবে না।
এই এক জিনিস দেখা গেছিল নয়ের দশক থেকে দু’হাজার সালের প্রথম ভাগ পর্যন্ত। রিমেক গান, রিমিক্স গান আর সিটিগোল্ডে। রফি তো আর নেই, কিন্তু অবিকল রফির মতো সোনু নিগম। যতটা অবিকল নন। ততটা আবেগ দিয়ে ভরাট করে দিলাম না-হয়। কান শুধু দু-একটা মোচড়ের মিল খুঁজছে। পেয়ে গেলেই কেল্লা ফতেহ্! জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায় বেঁচে থাকতে থাকতেই ইন্দ্রনীল সেন তাঁর গান গেয়ে গোল্ডেন ডিস্ক পেয়েছিলেন। ‘দূরের বলাকা’ এক অবিস্মরণীয় সাফল্যের নাম। আর ছিল নকল সোনার গয়না। উনিশ শতক থেকেই ‘গিল্টি সোনা’ যথেষ্ট প্রতিপত্তি পেয়ে গেছিল ঘরে ঘরে। দেশ, পৃথিবী জুড়ে। গিল্ডেড যুগ থিম হয়ে ছিল না ক’দিন আগে মেট গালায়? সব কিছুতেই সোনার জল। আমাদের বাড়িগুলোতে সোনার জল করা রূপোর গয়নার চল ছিল এই ক’দিন আগে অবধি। কিন্তু সিটি গোল্ড ডায়নামিকটাই একেবারে উল্টে দিল। সরাসরি অ্যালুমিনিয়ামে গিল্টি। আগুনের মতো ছেয়ে গেল গোটা ভারত! পরে তো শোনা গেল যে ও পালিশ সোনারও নয়, ধাতব রং, চামড়ার পক্ষে জঘন্য। প্রতি ঘরে এই ত্রিদেবের অধিষ্ঠান হয়েছিল এই দেশে।
কিন্তু কেন? কী থেকে নকলি জিনিসের বিক্রেতা এমন বড় ঝুঁকি নেয়? কেন ক্রেতারাই বা সে ঝুঁকি ভাগ করে নেয়? তার একরকম সদুত্তর দেওয়া খুব কঠিন। অনেকগুলো কারণ মিলে এই পুরো চক্র তৈরি হয়। এই যে, আমি একটা জিনিসকে হুবহু নকল করব এবং সেটার নকল বলেই সদর্পে বাজারে আনব, এই ভাবের বিভাব আসে কোত্থেকে? প্রধান কারণ, সৃজনশীলতার প্রতি অসততা। আমি যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে বা ভাষায় লিখতে না পারি, তাহলে চেষ্টা করতে পারি লেখার, বার বার মকশো করতে পারি। হয়তো যাদের লেখা পড়ে আমার লেখার তাড়না তৈরি হয়েছে, তাদের মতো লিখব প্রথম-প্রথম খানিক। কিন্তু তেমন লেখার পরে সর্বপ্রথম আমিই যে বুঝতে পারব যে, আমি নকল করছি! এ আমার নয়। সেক্ষেত্রে মানে মানে চেপে যাওয়াই ভাল ছিল, কিন্তু এরপরেই আসে দ্বিতীয় কারণটি— লোভ। আমার গান বা লেখা বা সিনেমা বা গবেষণাপত্র নকল হলে কী হবে, তাই বলে কি ছাপব না নাকি! কিস্যু না করে, স্রেফ নকল করে যদি আসলের চেয়েও বেশি ব্যবসা পাওয়া যায়, সেই আনন্দ কে না পেতে চায়? একটি সত্যি আর্মেসের ব্যাগের যে দাম, তা একটি মধ্যবিত্ত পরিবার এ-জীবনেও কিনবেনা। কিন্তু নকল আর্মেস ফুটপাথ থেকে কোটি কোটি মধ্যবিত্তে কিনে নিয়ে যান এই দেশে। আসল আর্মেস ব্যাগের দামটি নকল দিয়ে অযুতবার তোলা হয়ে যায় ফুটপাথের দোকানির এক সিজনে।
এখানে মোটামুটি একটা অভিমুখ পাওয়া যাচ্ছে দেখছি, তৃতীয় কারণে ঢোকার। অর্থনীতি। অর্থনীতি আমাদের সংগতি তৈরি করে। রুচি অর্থনীতি থেকে তৈরি হয় না, তবে বশে থেকে চলে। এবার এতদিনে নিশ্চয়ই সবাই জেনে গেছেন, ওসব মায়া-টায়া কিছু না, জগৎ একটি বিলবোর্ড-স্বরূপ। যাতে আমি আপনার আমিকে ছাপতে পারলে চ্যালচেলিয়ে স্বর্গে চলে যাব। কিন্তু ছাপার জন্য যে বিকট শব্দযুক্ত অধিকতর সিসি-যুক্ত বাইকটি চাই, হায় তাকে কেনার পয়সা নাই! অতএব, দে বাইকের সাইলেন্সর খুলে! ফটাশ্ আওয়াজটা তো হচ্ছে! অর্থনীতি আমাদের নকল করার কতগুলো করুণ কারণ জোগায়। যার যে যে-স্তরের অর্থনীতি, তার কারুণ্যের স্তরটাও তেমনই। এই বিপুল জনসংখ্যার দেশ, যেখানে বিসলারি কালের গতিতে বরসাত-এ পরিণত হয়েছে, সেখানে অর্থনীতি দু-দিককেই থোড়াই কেয়ারে পরিণত করেছে। যে-মানুষ হাতে করে নকল দিচ্ছে, সে কিন্তু মনে মনে জানে এটা নকল। কিন্তু সে হয় নিজেকে বোঝায়, কেউ বুঝতে পারবে না; নতুবা ভাবে, বুঝলেই বা কী? না নিয়ে যাবে কোথায়? আর যে বা যারা কিনছে, তাদের কাছে যা পাচ্ছি, তার ধারণাটাই খুব একটা স্পষ্ট নয়। রফি কেন রফি, সোনু কেন রফি নন, এটা তারা জানতে চান না। গলা নকল করা নিয়ে কথা। অত সময় নেই বাপু! তেমনি বিসলারি কেন বরসাত হয়ে গেলেন, তা জেনে কী হবে বলতে পারেন? হুট করে রাস্তায় জল তেষ্টা পেলে মানুষ কি জল খাবে না কি পপুলার কালচারের উদবর্তন নিয়ে ভাববে?
এখানে নকল পরিবেশকের দুটো ধারণাই এক সঙ্গে ক্রিয়াশীল হয়। অর্ধেক জানতেও পারে না, বাকি অর্ধেক জানতে পারলেও কিছুই বিরাট একটা প্রতিরোধ-প্রতিবাদ টাইপ হয় না। হালের সবচেয়ে বড় নকলের খবর এসেছে ওষুধের বাজারে। আজকাল পৃথিবীর সর্বত্র, আমাদের দেশ তো বটেই, নকল ওষুধে ছেয়ে গেছে। দুঃখের বিষয়, এই নকল জিনিস কেনার সময় ক্রেতাকে আসলের দামই দিতে হয়। এখানে ঠিক সস্তার থিওরি খাটে না। বরং দাম দিতে হয় সর্বাধিক মূল্যে, একেবারে রোগীর জীবন। নকল থেকে আসল চেনা দুঃসাধ্য হয়ে উঠছে দিনকে দিন। বাকি সবকিছু, এমনকী, জাল নোট ধরে ফেলারও বিভিন্ন উপায় আছে, কিন্তু জাল ওষুধ? আমরা ক্রেতারা যে একেবারে অনভিজ্ঞ রোগ-বালাইয়ের বিষয়ে, কে বলে দেবে, কী দেখে, কেমন করে চিনব? জীবনদায়ী ওষুধেও জালিয়াতি! নকল করা আর হাসি-ঠাট্টার বিষয় রইল কই?
অথচ, মানুষ নকল ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না জন্মানোর পর দীর্ঘ একটা সময় ধরে। গবেষকরা তো বলেছেনই, চর্মচক্ষুতে হামেশাই দেখা যাচ্ছে প্রাণীকুলে একটি শিশু যখনই জন্মায়, তার নকল করা শুরু হয়। সে তার মায়ের মুখ নাড়ানো দেখে হাসে, বাবার পেটে নাক ঘষা নকল করতে যায়। দাদু কেমন মুখ করে আছে দেখায়, পাখি কেমন করে ডাকে তা দেখায়… এই সব, সব, সব নকল। হরবোলাদের তো পেশাই নিখুঁত নকল করা। আজকাল একটি জনপ্রিয় টেলিভিশন শো-এর মুল আকর্ষণই হচ্ছে বিভিন্ন সেলিব্রিটির নকল করা। আমেরিকান টিভি-র এসএনএল, বা স্যাটারডে নাইট লাইভ এই কাজ দীর্ঘদিন করে আসছে। তেমনি যারা কণ্ঠী হন, মানে কোনও জনপ্রিয় গায়কের গানের গলা, গায়কি— সব নকল করেন, তারাও যুগে যুগে প্রতিষ্ঠিত।
কিন্তু বিনা সংকোচে নকলকে আসল বলে চানালোর যে মনোভাব, মান যাক, প্রাণ যাক— এর কারণ বোধহয় আত্মবিশ্বাসের অভাবও। আমার দ্বারা যে আদৌ কিছু করা সম্ভব, যেটা আমারই, একথা নিজেকে মোটেও বিশ্বাস করাতে পারেন না বেশিরভাগ মানুষই। তাই যেটা ইতিমধ্যেই সফল হয়েছে, তার মুখোশ এঁটে যদি মৌচাকে ঢিল মারতে পারি, ব্যস! আজ আমরা এমন একটা সময়ে শেষ অবধি এসে দাঁড়ালাম, যেখানে নকলি, জালিয়াতি এমন মুড়িমুড়কি হয়েছে যে, ফার্স্ট কপি লিখে বিক্রি করতে হচ্ছে। তারও বাজার তুঙ্গে। নিত্যদিন ইউটিউব, ফেসবুক, ইন্সটাগ্রামে লক্ষাধিক পোস্ট যাচ্ছে দামি জিনিসের নকল কোথায় পাবেন, তা নিয়ে। এ-কাজে শামিল হয়েছে আধুনিক প্রযুক্তি। আপনি মশারি টাঙিয়ে বসে আছেন। ছবি তুলে কী না কী বোতাম টিপে দিলেন, এআই আপনাকে আইফেল টাওয়ারের সামনে দাঁড় করিয়ে দিল। সে কী জেল্লা আপনার! শুধু কি তাই? এক-এক হাতে এগারো-বারোটা আঙুলও দিয়ে দেয়। আসলে যে এআই দিয়ে হুবহু নকলটা বানানো যায়, সেটার অনেক দাম তো, এইটা ফ্রি ভার্সন। সেই অর্থনীতি! একটু মানিয়ে-গুছিয়ে নিন না ভাইটি। এমনিও শেষ ঠিকানা শ্মশান ঘাট। ছবি তো দেখবে চেনা লোকেরাই। খুব রঙ্গ-তামাশা হবে, যা হোক! এই লাইককটার নুটি বেঁধে মিলিসেকেন্ডের আত্মশ্লাঘাকে সাজানো! আহা! নকলের খরিদ্দারের আনন্দ দেখে কে! আসলের মর্যাদাটি নেই, অথচ হুবহু নকল করার এই কৌতুকপূর্ণ চমকটা সবসময় জনতাকে সাংঘাতিক আকৃষ্ট করে।
যারা নকল বিক্রেতা, তাদের গল্পটা আবার আলাদা। এখন দেখুন, এই হচ্ছে বাজারের অবস্থা। যা দেবেন— তাই নিয়ে ঢাকঢোল, নাচানাচি করে একটা খবর বাঁধিয়ে বসবে। যদি ধরা পড়ে যায় তো, তাহলে মিনিটপাঁচেক কি বড়জোর তিনবেলা চেঁচামেচি। না-হলে একেবারে হিরণ্ময় নিস্তব্ধতা। সেখানে বাজার থেকে টাকা তোলার এমন মিষ্টি রাস্তা কি আর হয়? আপনি ‘অ্যাবা’ ব্যান্ডের নামও শোনেননি। কিন্তু ‘মিল গয়া হামকো সাথি মিল গয়া’ আপনি, আপনার বাবা এবং একটা জনজাতি— গোটাটা মিলে শুনেছে। স্টেজে এই গান গাইলে প্রেক্ষাগৃহে উন্মাদনা! কত কত ক্যাসেট, রেকর্ড বিক্রি। কত নতুন ছবির অফার! যার পিছনে আমার বিন্দুমাত্র বিনিয়োগ নেই, অথচ পরিবর্তে নাম, যশ, তারকার মর্যাদা এবং অবশ্যই অর্থলাভ। উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে আছে বুভুক্ষু ক্রেতাকুল। যাদের অপার, অনিঃশেষ, গণচাহিদা পসারি-র যুক্তির বড় কারণ হয়ে চিরকাল দাঁড়িয়ে আছে। এ-যাবৎকালের স্বর্ণযুগ থেকে সিটিগোল্ড যুগ— সবই এই নকলের দর বাড়ার নামান্তর, গ্রহণযোগ্যতা মায় উদযাপন বাড়ারও।
এসবের প্রেক্ষাপট ছিল অসচেতনতা। ক্ষুদ্র গণ্ডিওলা মানুষের কাছে তার গণ্ডির বাইরের কোনও বস্তুর নকল-আসল বোঝার ক্ষমতা থাকে না। ইন্টারনেট গত তিরিশ বছরে এবং সমাজমাধ্যম গত দশ বছরে যে অসীম দূরত্ব লঙ্ঘন করেছে, তাতে আর কোথাও কিছু লুকিয়ে রাখা যাচ্ছে না। এর আগেও যায়নি অবশ্যই। নইলে ‘তাম্মা তাম্মা…’ যে আফ্রিকার গানটির নকল, সেটাও কেউ জানতে পারত না, কিন্তু এখন আরো বেশি বেশি লোক জানছে। এই জানতে পারার ফলে একদল লোক কেটে পড়ছে, তাদের পূর্বের অঙ্গীকারের থেকে। তাদের গুরু যে আসলে টুকলিমাস্টার— এই পরাজয় মেনে নিতে পারেন না অনেকেই। এমন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। অন্যদিকে অর্থনীতি যাদের এতদিনে মূল স্রোতে অংশ নিতে সক্ষম করেছে, তারা আবার এই আসল-নকলের হোরিখেলায় মগ্ন হচ্ছে। ধরা পড়ে যাচ্ছে রোজ, বেদম আওয়াজ খাচ্ছে।
কিন্তু যা নই, তা হওয়ার লোভ বোধহয় মানুষের সহজাত। তাই কিছুতেই থামতে পারছে না।