ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • ছোট মানে কেন্নো


    ঋভু চট্টোপাধ্যায় (June 25, 2024)
     

    ঘুম থেকে উঠেই আমার মনে হল, এরকম এই প্রথমবার। অন্যদিন দিব্যি হেগেমুতে, মুখ ধুয়ে, এক কাপ মায়ের গন্ধ জড়ানো চা, তারপর বাকি কাজ। আজ কিন্তু এক্কেবারে আলাদা, বেশ বুঝতে পারলাম আমার হাত চায়ের কাপ পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে না, তার আগেই ছোট হয়ে এক্কেবারে গর্তে ঢুকে যাচ্ছে। আচ্ছা গর্ত মানে কি পকেট হতে পারে, মানে বলতে পারি আমি গর্ত থেকে টাকা বের করলাম, অথবা এক প্যাকেট সিগারেট কিনে গর্তে ঢুকিয়ে নিলাম! আগে কত বার এক কেজি আলু কিনে দিব্যি পকেটে ভরে বাড়ি আনতাম, কেউ কিছু বুঝতেই পারত না; মা ভাবত আমি ভুলে গেছি, কারণ ভুল শব্দটা এক্কেবারে আমার রক্তের সাথে জড়িয়ে আছে। কত দিন-রাতে দাঁত মেজে ভুলে গেছি, ভেজা ব্রাশ আঙুল লাগিয়ে দেখে বোঝার চেষ্টা করেছি।

    ‘লোকে শুনলে হাসবে।’ বাবা বলে ওঠে।

    ‘হ্যাঁ রে দাদা, তোর অবস্থা তো দিন-দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। দু-দিন পরে জিজ্ঞেস করবি, আমি পায়খানা গেছিলাম?’

    ‘না গো, আবার কাউকে বলবে একটু দেখে দাও তো, ভিজে আছে কি না।’ কথাগুলো মা বলেই রান্নাঘরে চলে গেল।

    বাবা সেই সময়ে সারা বাড়ি পুজোর পরে শান্তিজল ছেটাচ্ছে। আমার দিকে একবার তাকিয়ে বলে, ‘একটু ধর্মকম্ম কর, ব্রাহ্মণের ছেলে, গায়ত্রী জপতপ তো কিছু করিস না।’

    জপ, তপ শব্দ দুটো কি ধ্বন্যাত্মক অব্যয়? তা না হলে আমার শরীরে কোনও ব্যয় হচ্ছে না অথচ আমি…।

    ‘বাবা, আমাকে গায়ত্রী জপ করতেই হবে?’  

    ‘শোনো, ছেলের কথা শোনো, আরে হাঁদারাম গায়ত্রী ঋগ্বেদের সূক্ত। শুধুমাত্র ভূঃ, ভূবঃ ও স্বঃ এই তিনটি শব্দ দিয়ে ত্রিলোক এমনকী আমাদের মনের তিনটি স্তরকে প্রকাশ করে। চেতন, অর্ধচেতন ও অচেতন।’

    মাথা ধরে যাচ্ছে, আমার তো তিনটে স্তরেই অন্য কিছু ঘোরে। ঘরে থাকলে এক্ষুনি ধর্মের বাবা, মা, দাদু, দিদা, সবাইকে টেনে নিয়ে এসে মাথার খাবে। আমি যে এইরকম ভাবে দিন-দিন বেঁটে হয়ে যাচ্ছি, সে-ব্যাপারে কারোর কোনও নজর নেই। এর থেকে বাইরে যাওয়া অনেক ভাল, অন্তত কিছু সময় একটু ফ্রেশ হাওয়া পাওয়া যাবে।

    ‘কীরে বেরোচ্ছিস না কি? আজ বিকালে ছুটকিকে দেখতে আসবে, মিষ্টি কিনে আনবি, আর বিকালে বাড়ি থাকিস না, তোকে দেখেই হাজার প্রশ্ন করে।’

    ঠেক ২

    ‘বাইরেই তো আছি, ঘর আর বাইরের মধ্যে বিপরীত শব্দ ছাড়া আর কি কিছু পার্থক্য আছে? মাঠে একটু ছুটে মদনের দোকানে লাইন দিয়ে এক কাপ চা খাব। আচ্ছা লাইন মেরে আর লাইন দিয়ে এই দুটোর মধ্যে কী পার্থক্য?’

    ‘মেয়ে হলে মেরে, ছেলে হলে দিয়ে।’

    ‘শালা চার অক্ষরের বোকা, তুই যদি মেয়ে হতিস কী হত?’

    ‘উলটে যেত।’

    ‘চুপ কর, বেশি কাঁঠালি করিস না। মদনদার চা খা, তারপর ফোট।’

    ‘আমার কাজ আছে, তোদের মতো বাপের পয়সায় ফুটুনি মারি না।’

    ‘মন্টা আমাদের মধ্যে এই মুহূর্তে স্বাবলম্বী, একটা শাড়ির দোকানে ক্যাশে বসে। আমাদের আরও অনেককে দোকানে থাকতে বলেছে। সন্তু রাজিও ছিল, খোঁজখবর নিল, বলল, বৌদিদের ভিড় কখন হয়?’

    ‘ছিঃ, তুই শাড়ির দোকানে চাকরি নেওয়ার আগেই বৌদির কথা জিজ্ঞেস করছিস, এরপর চাকরি দিলে তো রেপ করে দিবি।’

    ‘না রে মন্টা, এক্কেবারে সন্তুকে দোকানে ঢোকাবি না, এক্কেবারে শেষ হয়ে যাবি, কোনদিন ফেঁসে যাবি।’

    কথায়-কথায় এরকম ভাবে ভুল ধরা প্রদীপের অভ্যাস, এই মুহূর্তে বামপন্থী রাজনীতির পিছন ধরে বসে আছে আর আঁতলামি মারছে,আমরা বলি বাতিল পার্টির আঁতেল মেম্বার।

    রেগে যায়, চিৎকার করে বলে, ‘তোরা বামপন্থার কী বুঝিস, একদিন বামপন্থা সারা পৃথিবীতে রাজ করবে।’

    ‘সেদিন তুই কী করবি প্রদীপ?’ আরও জ্বলন ধরিয়ে আমি জিজ্ঞেস করি।

    ‘ছিঁড়বে’, সন্তু বলে ওঠে।

    ‘ভাল হচ্ছে না! ভাবিস না আমি প্রতিবাদ করব না, গণতান্ত্রিক উপায়ে এর প্রতিবাদ করব, আমাদের প্রত্যেকের ধর্ম আলাদা।’

    ‘একদিকে ধনপূর্বক ঋ-ধাতুর উত্তর মক প্রত্যয় যোগে ধর্ম, এর অর্থ যেখানে ধন পাওয়া যায়। আবার ধৃ ধাতুর উত্তর মন প্রত্যয় যোগেও ধর্ম, অর্থে যা ধারণ করে। তুই কিন্তু বলতে পারবি না এ ধার্মিক বা এ ধার্মিক নয়।’ সুনন্দের এই কথাগুলো শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গেই সন্তু জিজ্ঞেস করল, ‘এই ধন মানে কি লিঙ্গ?’

    ‘বাল! এ ছাড়া আর কিছু শেখোনি? জীবনে একটু সঠিক কর্ম করো, তা হলে অনেক কিছু পাবে, না হলে মারাবে।’

    ‘কর্ম, তুই জানিস আলেকজান্ডারকে ইস্পাত উপহার দেওয়া হয়েছিল, আর এই লোহা ইস্পাত গলানোর কাজ করত অসুর নামে একটি জাতি, occupational tribe, তাদের প্রতিকৃতি আজ তোমাদের মা দুর্গার পায়ের নীচে।’ কথাগুলো বলে সন্তু চুপ করে বসে রইল।

    আমি ক্ষেপে গেলাম। বিরক্ত লাগছে এবার ঘরে-বাইরে সব জায়গায় শুধু ধর্ম, আচার-আচরণ। এটাই বিরক্তিকর, এই বয়সের ছেলে; এই বছর চার কলেজ শেষ হয়েছে, কোথায় আলোচনা করব চাকরিবাকরি, পাড়ার কোন মেয়ের বিয়ে হয়ে গেল, তা নয়; শুধু ধর্ম, অসুর। শালা এখন অসুর নয়, শ্বশুরের কথা আলোচনা কর।

    ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমি আলোচনা করছি, আমাদের ওপরের পাড়ার শ্রেয়া, বাপের হেবি ক্যাশ, ভাবছি ওই মালটাকেই তুলব।’

    মিন্টুর কথাটা শুনেই সন্তু বলে উঠল, ‘আগে ভাল করে হেগে আয়।’

    বাইরে বেরিয়ে এসে দেখলাম কয়েকটা পিঁপড়ে মাটির ভিতর থেকে সারি দিয়ে বেরিয়ে আসছে, শরীরটা কেমন যেন গর্ত-গর্ত বলে চিৎকার করতে আরম্ভ করে দিল, মাথা থেকে পা পর্যন্ত গুটিয়ে যাচ্ছে, গুটিয়ে-গুটিয়ে আরও ছোট হয়ে যাচ্ছে।

    ঠেক ৩

    ভাল লাগল না। এমনি করেই আগে দুটো ঠেক ছেড়েছি, তাও পরীক্ষার পরে মাত্র চার মাসে। ঠেক মানেই এই মেয়ে, মদ, চাকরি। মারাত্মক বিতর্কিত। সবটার সাথে সব কিছু জড়িত, তার মানে পড়াশোনা সমান, চাকরি সমান, বিয়ে সমান, ছেলেমেয়ে সমান, তাদের পড়াশোনা সমান, তাদের চাকরি সমান, তাদের বিয়ে সমান, তাদের ছেলেমেয়ে এবং টু বি কনটিনিউড। তার মানে প্রথম থেকে সব স্টপ। কী ভাবে এই যে আমি পড়াশোনা করলাম, আর কিছু করব না, প্রশ্ন আসবে অনেকেই জিজ্ঞেস করবে, বোনকে দেখতে এসে। আমি উত্তর দেব, যেমন এতদিন দিয়ে এসেছি, কখনও ওরাল, কখনও রিটিন, কখনও চুপ করে বসে। আচ্ছা ঘুরিয়ে দিলে কেমন হয়; যেমন আপনি যে মেয়েটিকে ভালবাসেন তার দাড়ি কাটুন, অথবা ও আপনার সামনে মোটা গোঁফ পাকিয়ে বলবে, ‘কেয়া রে পুত্তর?’ আপনি বলবেন উপস্থিত, অমনি আপনার পিরিয়ডস আরম্ভ হবে, আপনি অন্ধকারে একটা রাস্তার ওপর দিয়ে ছুটে বা এ-গলি ও-গলি ঘুরে জিজ্ঞেস করবেন কোথায় দোকান, আমার হেভি ফ্লো প্যাড চাই। আপনি একটা মুদিখানা দোকান পাবেন, প্যাডের কথা বলবেন, দোকানি অবাক হয়ে আপনার দিকে দেখে একটা খবরের কাগজে মুড়ে আপনাকে দেবে আর আপনি নিয়ে ছুট ছুট ছুট। আচ্ছা এবার কোথায় যাওয়া যাবে, কোন টয়লেট! আপনি তো জেন্টস, অথচ আপনার পিরিয়ডস আর আপনার সেই পছন্দের মেয়েটির মোটা গোঁফ, নিয়মিত দাড়ি কাটে।

    ঘুরিয়ে দিন, বাবাকে শাড়ি পরান, মাকে প্যান্ট, তারপর পালা করে রান্নাঘর-অফিস। পরিবর্তন আসতেই পারে, এক সময়ে আমরা তো মায়ের পরিচয়ে বাঁচতাম, বাঁচার চেষ্টা করতাম। মিশর, সোমালিয়া সুদান-সহ বেশ কয়েকটি দেশে ভগাঙ্কুর, বা যোনির বাইরে ও ভিতরের ঠোঁট কেটে বাদ দেওয়া হয়, বলবেন এটাই তো সুন্নৎ, পুরুষের যেমন হয়। হয় তো! তাই তো বলা হচ্ছে পালটে দিন, এক্কেবারে উলটে দিয়ে পালটে দিন।

    ‘তুই কি ছোট থেকেই পাগল, না কি বড় হয়ে পাগল হলি? মানে এই কলেজ ছেড়ে যখন বান্ধবীর কাছ থেকে লেঙ্গি খেলি, তারপর থেকেই কি আঁতলামি বাড়ল? আঁতেলদেরও কিন্তু মার্কেটে হেব্বি ডিমান্ড।’

    ‘লেঙ্গি খাওয়া! শালা কোন বাঙালি একবারও লেঙ্গি খায়নি বল তো? বিনয় মজুমদারের মতো মানুষ গায়ত্রী নামের এক মহিলার  থেকে লেঙ্গি, ভাবা যায়! আসলে কোনও সিস্টেমের মধ্যে না থেকে সেই সিস্টেমটা জানতে পারা যাবে না, ওই সিস্টেমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা যাবে না। তুমি বড়-বড় দার্শনিকের কথা ভাবো, ফুকো বুর্জোয়া শ্রেণির বিরুদ্ধে ছিলেন অথচ নিজে মাকর্সবাদ থেকে জীবনের মাঝখানে সরে গেছিলেন, তাঁর সব লেখাও কারা পড়ে? বুর্জোয়া সম্প্রদায়! বেচারার এড্স‌ হয়েছিল। কিন্তু মজার ব্যাপার হল, তুমি কোনও সাধারণ শ্রমিককে গিয়ে জিজ্ঞেস করো তো, আচ্ছা ডায়ালেকটিক মেটিরিয়ালিজম কাকে বলে? বলতে পারবে না, আসলে তার দরকার নেই। আমরা কয়েকজন আঁতেল এই একটা বাদকে আঁকড়ে ধরে বরবাদ হতে চাই, একেই হয়তো পাগলামির ইতিহাস বলে, হিস্ট্রি অফ ম্যাডনেস।’

    ‘তোকে তোর বাড়িতে কী ভাবে সহ্য করে বল তো? বোনের এখনও বিয়ে হয়নি, কেউ যদি জানতে পারে দাদা পাগল আর বিয়ে হবে?’

    ‘তোর মা আছে?’

    ‘হ্যাঁ। থাকবে না কেন? মা, বাবা, বোন সবাই আছে।’

    ‘আচ্ছা, তুই কোনও দিন বোনকে বাবা বলিস না কেন?’

    ‘বাল! সকাল থেকে গাঁজা মেরে এসেছিস না কি? বোনকে বাবা বলব কেন; বাবা তো বাবা, বোন আলাদা।’

    ‘দোকানে গিয়ে কোনদিন বলবি তো এক লিটার আটা দাও, অথবা এক ডজন কেরোসিন।’

    ‘উফ্, তুই কী উন্মাদ রে!’

    ‘ধর আজ থেকে তুই মা-কে বোন বলছিস, বোনকে বাবা, বাবাকে মা।’

    ‘তোকে কুকুর, অথবা শুয়োর।’

    ‘ইয়েস। বুঝলি এতক্ষণে। কিন্তু তুই আমাকে বলবি না, কারণ কুকুর নামে একটা কিছু আছে। কুকুর বলতেই আমাদের চোখের সামনে একটা কিছু ভেসে ওঠে। তেমনি মা, বাবা, সবাই। আসলে সব আলাদা, আমরা সব কিছু আলাদা ভাবে তৈরি করি, আমাদের সুবিধার জন্য বেঁধে রাখি। আমার মা, সেই সূত্রে একজন আমার বাবা, একজন বোন, একজন দাদা, একজন বউ। তুমি নিজের বোনের কথা মনে হলে জোর করে ভাল ভাববে আর লোকের বোনের সাইজ মাপবে, তার মানে তুমি বেঁচে আছ।’

    ‘ভাই রে, তোর বোনের কথা একটু ভাব, তোদের বাড়ি তো বনেদি ব্রাহ্মণবাড়ি, একেই ব্রাহ্মণদের বিয়ে দেওয়া খুব কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে, তার ওপর তুই আর এমনি করিস না! যত ক্ষ্যাপাগিরি করবি তত তোর বোনের বিয়ে এক মাস করে পিছিয়ে যাবে।’

    ‘বোনকে আজ আবার দেখতে আসবে, আমাকে তো বিকালে বাড়িতে থাকতে বারণ করেছে।’

    ‘দেখলি তো, ভাব একবার, এবার একটু সিরিয়াস হ, একটা চাকরির চেষ্টা কর।’

    ‘চাকরি তো পেয়ে যাব, কিন্তু চাকরি মানে তো সেই একই কথা— বিয়ে, ছেলেমেয়ে, পছন্দ না হলে সেই পরকীয়া, আচ্ছা বাবুলদা তোমার বাবার পরকীয়া ছিল?’

    ‘তুই কোনও দিন এই ঠেকে আসবি না, আর কথাগুলো তোর বাবাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করবি। যখন রায়দের ঠাকুর দিতে আসবে তখন জিজ্ঞেস করিস— বাবা, তোমার পরকীয়া ছিল?’

    ‘বাবার তো পরকীয়া ছিল, এটা তো দোষের নয়; তুই বিশ্বাস করিস একজন মানুষ আর একজন মানুষের সাথে সারাটা জীবন সুস্থ সম্পর্কের মধ্যে থাকতে পারে? না পারে না, কিন্তু সবাই মুখ চেপে কাজ করে। এটা অনেকটা পায়খানা চেপে মর্নিং ওয়াক করবার মতো। সেই কমপ্রোমাইজ, আমি এর-ই বিরোধী।’

    ‘তুই যেভাবে পৃথিবীকে দেখিস, সেভাবে সবাই দেখতে আরম্ভ করলে তো সব কিছু একদিন শেষ হয়ে যাবে, সবাই যদি বলে আমি কমপ্রোমাইজ করব না, বেরিয়ে যাব, তবে তো মুশকিল।’

    ‘একটু আগেই বললাম আমরা সবাই আলাদা, অথচ সবাই এক। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য এগিয়ে যাচ্ছি আর অন্যের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য পিছিয়ে যাচ্ছি।’

    ‘তোর এই ফুটোজ্ঞানের জন্যেই এখনও কোনও চাকরির ব্যবস্থা করতে পারলি না; তোকে যে চাকরি দেবে, তাকে তো সুইসাইড করতে হবে। তোর সাথে কথা বললে আমরাও পাগল হয়ে যাব, আমাদেরও ইচ্ছেশক্তি চলে যাবে।’

     ঠেক ৪

    ‘আপনার চাকরি-বাকরিতে সত্যি মন আছে তো ?’

    ‘কেন থাকবে না! এই তো কয়েকদিন আগে আরেকটা গাড়ির শোরুমের মালিকের ইন্টারভিউ নিতে গেছিলাম, আজ আপনার ইন্টারভিউ নিতে এলাম।’

    ‘আপনি ইন্টারভিউ নিতে গেছিলেন?’

    ‘হ্যাঁ, চাকরিটা তো আমি করব, ইন্টারভিউ কি আমার বাবা নেবে?’

    ‘কী জিজ্ঞেস করলেন?’

    ‘একটাই মাত্র প্রশ্ন করলাম, আপনি এগোচ্ছেন না পিছোচ্ছেন?’

    ‘উনি কী বললেন?’

    ‘শুনতে পেলাম না, তার আগেই বুঝতে পারলাম আমি ছোট হতে আরম্ভ করেছি, শরীরটা গুটিয়ে যাচ্ছে, লোকে যাকে কেন্নো বলে।’

    ‘তা হলে! আমরা তো একজন কমবয়সি ছেলেকে কাজে চাই, কেন্নোকে তো নয়।’

    আর দাঁড়ালাম না, বলা ভাল দাঁড়াতে পারলাম না। বাইরে বেরিয়ে এসে দেখলাম কয়েকটা পিঁপড়ে মাটির ভিতর থেকে সারি দিয়ে বেরিয়ে আসছে, শরীরটা কেমন যেন গর্ত-গর্ত বলে চিৎকার করতে আরম্ভ করে দিল, মাথা থেকে পা পর্যন্ত গুটিয়ে যাচ্ছে, গুটিয়ে-গুটিয়ে আরও ছোট হয়ে যাচ্ছে। বেশ ভাল, বাড়িতে থাকলে কেউই খেয়াল করবে না।

    ছবি এঁকেছেন চিরঞ্জিৎ সামন্ত

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook