গলির সামনে গিয়ে থমকে দাঁড়াল সুনন্দ। সাদা বড় বাড়িটা নেই। এখানেই থাকার কথা। একদম এখানে। ঠিক গলির মুখে। বাড়ির একদিকে বড় মাধবীলতার ঝাড় উঠে গেছে তিনতলার ছাদ অবধি। থোকা থোকা সাদা-গোলাপি ফুল। মৌমাছি উড়ছে। প্রজাপতি এসে ঘুরেফিরে দেখে যায়। শীতের আগে শুঁয়োপোকা বেয়ে ওঠে লতা বেয়ে। ঘাড় উঁচু করে দেখতে হয় সবুজ পাতা আর সাদা-গোলাপি ফুলেরা দোল খায়, হালকা সুগন্ধ ভাসে। সুনন্দ নাক তুলে শুঁকেছে কতদিন। খুব মন দিয়ে লক্ষ করতে হয়। চারপাশের অন্য গন্ধের মধ্যে মাধবীলতা যদি হারিয়ে যায়।
চারপাশে আরও বহু চেনা-অচেনা গন্ধের ভিড়। গলাগলি করে থাকে। বর্ষার কামিনী, প্রথম বৃষ্টিমাখা কদম। ঝরে পড়া বকুল, শরৎসকালে শিশির মাখা শিউলি, রাতে তারার মতো ফুটে থাকা হাসনুহানা। এই বাড়িতে কত গন্ধ।
ডালের ফোড়নে রাঁধুনি না কারিপাতা, সে-ও তো এসে পৌঁছয়। সুস্বাদু সুখাদ্যের আঘ্রাণ। শুধু ঘ্রাণ নয়, ঘ্রাণে অর্ধভোজন। নাক তুলে শুঁকে নেওয়া আজ মাংস হচ্ছে? তার মানে আজ রবিবার। আজ পড়া নেই। ছুটি।
ছুটি আর মাধবীলতার গন্ধ ওর ভাল লাগে।
সুনন্দ একা দাঁড়িয়ে থাকে। সুনন্দ যে একা, সুনন্দ জানে না। আমরা জানি। আমরা যারা দূর থেকে ওকে দেখছি, আমরা অনেক দিক থেকে ওর দিকে তাকাচ্ছি, লক্ষ করছি ওকে, আমরা দেখছি ও একা। অথচ সুনন্দ আজ হয়তো সত্যিই একা নয়। ওই তিনতলা বাড়িটা তাকে ডাকল বলেই তো সে এল। গলির সামনে অবধি ঠিকঠাক এল। ওকে জিগ্যেস করুন, ও স্পষ্ট বলবে, বাড়িটা ওকে ডেকেছিল। বাড়ির দুটো ভাঙা ইট, দরজার পাশে ঝুলে থাকা জাল বানাতে ব্যস্ত একটা মাকড়সার সঙ্গে ও গতকালও কথা বলেছে। যেভাবে একটু আগে পথের লাল সুরকি, অশ্বত্থের ছায়ার বেড়ে ওঠে উইঢিপির সঙ্গে ওর কথোপকথন শুনেছি আমরা। পেনসিলে আঁকা ভুল ছবির মতো, এ-জীবন থেকে সুনন্দ এই বাড়িটাকে মুছে ফেলতে পারবে না। পারবে না কোনওদিন।
সুনন্দ এসে দাঁড়িয়েছে এক ঘিঞ্জি মফস্সলে। বইয়ের দোকান নেই, আছে নোনাধরা ক্লাবঘর। অবসর নিয়ে বৃদ্ধদের জমায়েত। ‘দেশের অবস্থাটা দেখছেন, কী হবে বুঝতে পারছেন কিছু? গ্যাসের দাম কত হল মজুমদারদা?’ মজুমদার থেকে বাগচী, গুপ্ত থেকে দাশ, কুণ্ডু থেকে চৌধুরী প্রশ্ন ঘুরে যায়। উত্তর আসে না। ঢুলতে-ঢুলতে খবরের কাগজ পড়া, তারপর সে কাগজ স্খলিত হয়। তাঁরা ঝিমাতে থাকেন। এখানে কি এখন বিপ্লব মানে মানবশৃঙ্খল?
বাড়ির গেটের কারুকাজ সুনন্দর স্পষ্ট মনে আছে। মোটা গ্রিল। আড়াআড়ি দাগ টানা যেন। ওপরে ত্রিশূলের মতো। খুব ইচ্ছে করত, একবার যদি বেয়ে ওঠা যায়। সেই যেবার চোর এসেছিল, সে কি এই গেট বেয়েই ভেতরে ঢুকেছিল? নাও হতে পারে। ওই ফলা লাগানো গেটে পা রাখবে কোথায়, চোরেদের কি ডানা থাকে?
বাড়ির পিছনে খুব উঁচু পাঁচিল। গোবিন্দ একবার পাঁচিল থেকে পড়ে গেল। পিছনের পাঁচিলের কাছে একটা ঝাঁকড়া পেয়ারা গাছ ছিল। কী মিষ্টি পেয়ারা! পেকে টসটস করত। ভেতরটা লালচে। ডাঁশাগুলো খেতেও দারুণ। মচমচে মিষ্টি বিস্কুটের মতো। গোবিন্দ চুপি চুপি পেয়ারা পাড়তে উঠেছিল। রাঙাপিসিমা খুব জোর হাঁক দিল, ‘কে র্যা আবার গাছে উটেচিস!’ গোবিন্দ সাধারণত এইসব হাঁকডাকে বিন্দুমাত্র চমকায় না। সেদিন কী যে হল! ডাল থেকে লাফিয়ে পাঁচিলে পা দিয়ে নামতে গেল। ব্যস। একদম পা ফসকে… ওর গোড়ালি শুধু একটু মচকে গিয়েছিল। ভাগ্যিস নীচে ভুসভুসে কাদামাটি। না হলে আরও বড় বিপদ ঘটত সেদিন। হাত-পা কিছু একটা ভাঙত। রাঙাপিসিমাই তো আবার ডেকে চুন-হলুদ গরম করে মাখিয়ে দিল। পুরনো কাপড় ছিঁড়ে বেঁধে দিল পায়ে। বকল একটু।
‘ভর দুক্কুরে পেয়ারা গাছে না উঠলে তোদের ভাত হজম হয় না?’
গোবিন্দ অপরাধীর মতো ঘাড় নীচু করে বসে থাকে। রাঙাপিসিমাকে চটানো যাবে না।
সতুকাকু অবশ্য কান পেঁচিয়ে দিয়েছিল খুব জোরে।
‘আর যাবি মগডালে উঠতে? ভরদুপুরে এইসব কীর্তি! ফের যদি দেখেছি পেয়ারা গাছে বাইছিস, কান টেনে ছিঁড়ে পুকুরে ফেলে দেব। বাঁদর কোথাকার!’
গোবিন্দ হাসল। দুষ্টু হাসি। ভাবখানা এমন, আবার উঠব তো বটেই, তুমি আমায় ধরতে পারলে তো!
সতুকাকুও হাড়ে-হাড়ে জানে, ভরদুপুরে দুষ্টু ছেলের দল গাছে উঠবেই। কেউ মানা করলে শুনবে না।
সিমুই পরদিন ঠোঁট ফোলাল। ‘আমাকে নিলি না তো তোরা, ওইজন্য পা মচকে পড়েছিস। বেশ হয়েছে।’ গোবিন্দ কটমট করে তাকিয়ে বলল, ‘ভরদুপুরে পেত্নি আর শাঁকচুন্নিরা গাছ বাইলে ভূতেরা পালটা ঢেলা ছুড়ে মারে, জানিস না? তুই গেলে সকলে মিলে ওই ঢেলা খেতাম।’ বলে ফিক ফিক করে হাসল। ব্যস। সিমুই কী রেগে গেল! ওর হাতে কলাপাতায় মোড়া আমড়ার আচার ছিল। একটুও দিল না। সব একা-একা খেল।
সুনন্দ পেয়ারা খেতে ভালবাসে। কিন্তু এই পাড়ায় পেয়ারা কাউকে কিনে খেতে হয় না। সকলের বাড়িতেই দু-তিনটে গাছ। তবু অন্যের বাড়ির গাছ বেয়ে, পেয়ারা চুরি করে খাওয়ার মজাই আলাদা। সুনন্দদের বাড়িতে পেয়ারা গাছ দুটো পুকুরপাড়ে। জলের ভেতর সেখানে খইয়ের মতো ফুটতে থাকে বৃষ্টিফোঁটা। পেয়ারা পাড়তে গিয়ে পেয়ারা জলে পড়ে গিয়েছে কতদিন। ইশ! গাছপাকা হালকা সবজে পেয়ারাটা টুপ করে ডুবে যায় অনায়াসে। যেন কত জন্মের অপেক্ষা তার অতল গহিনে যাওয়ার।
সুনন্দর ডুবে যেতে ইচ্ছে করে। সাধ হয় জলের তলায় গিয়ে ছেঁচে নেবে পুরনো শব্দ, ফেলে দেওয়া রাগ, ছিটকে যাওয়া অভিমান, ছিঁড়ে যাওয়া ভালবাসার গিঁট। ডুবে যেতে যেতে ধরে নেবে কলাগাছের ভেসে যাওয়া গোড়া। খোলা আকাশের নীচে, ভরা বর্ষার পুকুরের জলে শাপলাদলের সঙ্গে সাঁতার কাটা। সে-স্মৃতি সোনালি সাপের খোলসের মতো বুকজুড়ে শুয়ে আছে। কেন এদের মধ্যে বেঁচে থাকবে সে? কী আছে তার? ঘরের জানালায় ভয়েল শাড়ি কেটে পর্দা ঝোলানো, আর ঘরের মধ্যে থেকে ভেসে আসে টিভির আওয়াজ। সে-আওয়াজ চাপা দেয় উষ্মা, ক্ষোভ, প্রতিবাদ আর বিরক্তি। পর্দাটানা অন্ধকারে কতদিন কামনার শীৎকার, কখনও ব্যর্থকাম রমণীর অবরুদ্ধ কান্না। ভোরের বিভ্রম কাটিয়ে হেঁটে হেঁটে বটতলার শ্মশানের দিকে গেলে দেখা যায় জ্বলন্ত চিতা থেকে ধোঁয়ার সঙ্গে বাতাসে মিশে যায় অঙ্গারকণা। সূক্ষ্ম অথচ স্পষ্ট। এ-দেহের অবশ্যম্ভাবী পরিণতি। সুনন্দ ওই গুঁড়োছাই হয়ে মিশে যাবে একদিন বাস্তুতন্ত্রে।
সে একা যাবে না। সকলকেই যেতে হবে একদিন।
২.
সুনন্দ জানে, চলে যেতে হবে। তবু চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। বাড়িটা নেই। এখানেই ছিল। আরও একটা। পিন্টুদের লালরঙা দোতলার পরেই ছোট একটেরে সাদা বাড়ি। ওটা সিমুইদের সাদা বাড়ি। যে-বাড়ির মধ্যে লাল সিমেন্টের ঠান্ডা মেঝেতে আঁকা লক্ষ্মীর পা। সারি সারি পায়ের চিহ্ন। পাশে ধানের ছড়া। সিমুই লক্ষ্মীর পা আঁকতে শিখিয়েছিল, ‘প্রথমে একটা ইংরেজি এস এঁকে নিবি। পরেরটা উলটো এস। বেশি বড় না, ছোট-ছোট। তারপরে ওই এস-এর মাথায় টপ টপ করে ফোঁটা ফেলবি। ওই চালপিটুলিগোলা বাটিতে আছে, ন্যাকড়া ডুবিয়ে আঙুল দিয়ে চেপে সাবধানে ফেলবি। গোল গোল আঙুল হয়ে যাবে। মা লক্ষ্মীর পা আঁকা খুব সোজা। এই দেখ না আমি কেমন করে আঁকছি।’ এমন করে বলে, বলতেই থাকে, যেন সুনন্দ আঁকতে পারে না, কিছুই পারে না। সিমুই যত্ন করে শেখায়— মাছ, পান, পদ্ম, শঙ্খলতা, কনকলতা। উঠোনের স্থলপদ্ম গাছ থেকে ওরা রাত থাকতে পেড়ে আনে ফুল। পাহারা দেয় রাতভর। পাছে কেউ চুরি করে নেয়। ভোরবেলা তুলে আনে। ঝুড়িতে করে রেখে দেয় ছাদের ওপরে। শিশির লেগে আরও তাজা হয় ফুল। দুপুরে সাজিয়ে দেয়। ওদের লক্ষ্মীর পটের সামনে কলাগাছের খোলে বানানো সাদা মেঘের ঢেউ। নৌকোতে ধান, কড়ি, নলথুড়ি ফুল। আশ্চর্য নৌকা। এই নৌকাতেই কি মা লক্ষ্মী উঠে পাড়ি দেন দূরের দেশে? বাণিজ্য হয়। এদেশে-ওদেশে আদান-প্রদান। সেইরকম নৌকো করেই একদিন সিমুই শহরে যাবে। নিশ্চয়ই যাবে। ও পড়তে যাবে। ওর খুব শখ ও আরও পড়বে। কাঁধে ব্রোচ এঁটে, কুঁচি দিয়ে জলডুরে শাড়ি পরবে। ধনেখালি শাড়ি পরে কলেজে যাবে। ফিসফিস করে সিমুই এইসব গল্প শোনায় সুনন্দকে। তখন লক্ষ্মীর পাঁচালি পড়ে ওর মা। শেষ হলে প্রসাদ বেড়ে দেন সকলকে। সুনন্দর হাতের মুঠো গলে টুপ করে পড়ে যায় খইয়ের মুড়কি। মুঠোর মধ্যে ভিজে ওঠে তিলের নাড়ু।
পেঁচা উড়ে উড়ে ডাকে ‘কো জাগতি’। পূর্ণিমায় গাছের তলা, পুকুরের জল, বহুদূরের গলিপথ সব ফটফটে সাদা। অন্ধকারের আভাসমাত্র নেই কোথাও। সব চোখের কাছে এসে যায়। ঘরে ঘরে উলুধ্বনি, শাঁখের আওয়াজ। গভীর রাতে লক্ষ্মী এসে দাঁড়িয়ে একবার খুঁজে নেয়, কে জাগে। সিমুই জেগে থাকে। ওর ঘরে কম শিখায় হারিকেন জ্বলে। সিমুই একা চিলেকোঠার ঘরে বসে রুলটানা খাতার পাতায় গোটা গোটা অক্ষরে চিঠি লেখে। সোনাদিদাকে চিঠি লেখে। লম্বা চিঠি।
‘সোনাদিদা,
মা আমাকে একটুও ভালবাসে না। কাল আমাকে মাত্র তিনটে নাড়ু খেতে দিল। বলল, বেশি খাস না, পেট কামড়াবে। অথচ আমার সামনেই ভাইকে ছ’টা দিল। আমি বলেছিলাম, ওকে বেশি কেন দিলে। ও তো ছোট, ওর আরও বেশি করে পেট কামড়াবে। মা আমাকে ঠাস করে চড় মারল। তারপর চোখ লাল করে বলল, মেয়েমানুষের অত মুখে মুখে চোপা ভাল নয়। বড় বেশি নোলা তোমার। আচ্ছা দিদা, মেয়েমানুষ কি মানুষ নয়? মা-ও মেয়েমানুষ, তবে মা জ্যাঠাইমার সঙ্গে ঝগড়া করল কেন? সেটা বুঝি মুখে মুখে চোপা নয়? ওরা যে সব কাঁচকি মাছের বাটিচচ্চড়ি খাচ্ছিল সে দিন, হুশহাশ শব্দ হল, বলছিল আহা এই দিয়ে আরও এক থাল ভাত উঠে যাবে, ওদের তবে নোলা নেই? লোভ নেই? ও দিদা, দিদা গো, আমি এবার তোমার কাছে যাব। তুমি একবার নান্টুমামাকে পাঠিয়ে দিও। আমি ওর সঙ্গে চলে যাব। তুমি আমার প্রণাম নিয়ো। নান্টুমামা আর ভজুয়াদাকেও আমার প্রণাম দিও। কালু আর বিশুর জন্য আদর পাঠালাম। ওদের দুপুরে ভাত দেবার সময় কানে কানে আমার সব কথা বলে দিও কিন্তু।
ইতি
তোমার সিমুই।’
সুনন্দর কাছে সিমুইয়ের ঠিকানা নেই। দিয়েছিল একবার, হারিয়ে গেছে। সিমুই ঠিকানা দিয়ে বলেছিল, চিঠি দিস। চিঠি লেখা হয়নি। ঠিকানা মনে থাকলে এখন একবার যাওয়া যেত। ভরদুপুরে ওর বাড়ি গিয়ে পড়লে সিমুই নিশ্চয়ই মুখ টিপে হেসে বলত, ‘এই এখন এলে, দু’গাল ভাত খেয়ে যাও না। দুপুরবেলার অতিথি তুমি, না খাইয়ে ছাড়ি কী করে?’ বলে সিমুই ভাত বাড়তে বসত। ভাত, ডাঁটাচচ্চড়ি, অড়হর ডাল, কুলের অম্বল। ও যা খায়! সুনন্দ দেখত, ওর চাঁপাকলির মতো আঙুলগুলো এখন শীর্ণ। শিরা-ওঠা হাতে ঢলঢল করছে দুটো প্লাস্টিকের চুড়ি। গায়ে আর সোনাদানা কিচ্ছু নেই। হাত-কান-গলা সব খালি। কী করে থাকবে? ক্ষয়রোগে ওর বরটা অকালে চলে গেল। ওষুধ-পথ্যির খরচ আছে না! ওর ঘরে রোজগার করার আর লোক কই? তার ওপর বর যখন হাসপাতালে, এখন-তখন অবস্থা, ওর ভাসুর-দেওর সব সাঁট করে কী এক কাগজে ওকে দিয়ে সই করিয়েছিল। ও ভাল বোঝেইনি। তখন ঘরে স্বামী যায়-যায় অবস্থা, টাকার দরকার ওর, ও কি অত খুঁটিয়ে সব দেখেছিল নাকি! আর বুঝতে যাবেই বা কেন! নিজের ভাসুর, নিজের দেওর, তারা যে তাদের অসুস্থ মেজোভাইয়ের বউকে ভবিষ্যতে সম্পত্তির কোনও ভাগ দেবে না, সবটা চুপচাপ নিজেদের নামে লিখে নেবে, এ-কথা কেউ বিপদের সময়ে আঁচ করতে পারে?
বরটা মরেই গেল। জমানো টাকাপয়সা যা ছিল সব কুড়িয়ে-কাচিয়ে শেষ। সিমুই ওদের হাতেপায়ে ধরে শ্বশুরের ভিটের এক কোনায় পড়ে আছে। ওর তো আর কোথাও যাবার জায়গা নেই। বাপ-মা গত। বাপ-মা থাকলেও কি আর দেখত? তারা বিয়ে দিয়ে মেয়ের দায় ঝেড়ে ফেলেছে। ভাই আর ভাজের সংসারে হাততোলা হয়ে থাকতে বড় কষ্ট। তার চেয়ে মেয়েমানুষের শ্বশুরঘরই ভাল। কাঁটা বিঁধলেও সয়ে যায়। নিজের শোবার ঘরটা সিমুই ভাগে পায়নি। ভাসুর বলল, স্বামী মরেছে, অত বড় ঘর নিয়ে তুমি একলা মেয়েছেলে কী করবে? ঠিকই তো! তবে একলা মেয়েছেলে নয়, একলা মেয়েমানুষ সে। একা আর বোকা। তবু মানুষ। মৃত্যুভয়ের চেয়েও তার ধর্ষিত হবার ভয় বেশি।
সিমুইয়ের ভাগে পড়ল একটা পুঁচকে ঘর, সামনে এক চিলতে উঠোন। পুঁইলতা বেয়ে উঠেছে মাচায়, পাশে একটেরে মাটিতে লাউকুমড়োর বীজ লাগায়। ফনফনিয়ে বেড়ে ওঠে সব। দাওয়ায় তোলা উনুনে সিমুই ফুটিয়ে নেয় যা হোক। একবেলা রান্না, ভাতে ভাত। রাতে চিঁড়েমুড়ি যা খুশি খেয়ে নিলেই হল। একটা ছেলেপুলে থাকলেও নয় কাজকর্ম কিছু থাকত। কেউ নেই, তাই…। তবে একেবারে কাজ না করে শুয়ে-বসে থাকার মেয়ে সিমুই নয়। সারা দিন ধরে কিছু না কিছু সে করতেই থাকে। বড়ি দেয়, আচার বানায়, কাঁথা সেলাই করে, চিঁড়ে কোটে, মুড়ি ভাজে। সব কাজই আশেপাশের ঘরে অন্য কারও কোনও ফরমায়েশি কাজ। তারা নিজেদের জিনিস কড়ায়-গণ্ডায় বুঝে নেয়, বদলে ওর হাতে দেয় কিছু। টুকটাক। খানিক চাল, দু’মুঠো ডাল। কখনও একটু তেল বা আলু-পটল। ওর একার পেট চলে যায় দিব্যি। সিমুই বোঝে ওরা দয়া করে দিচ্ছে। কখনও ঠকাচ্ছে। যা পাওনা, তার চেয়ে কম দিল কিছু। তা দিক। অত ভাবাভাবির মেয়ে নয় সিমুই। বাপের ঘরে কী এমন খাতিরযত্ন পেয়েছে সে যে, এখন পরের কাছে এতকিছু দাবি করতে যাবে! হ্যাঁ, দাবি করতে পারত বইকি! সে বিধাতাপুরুষের কাছে। দুর্ভাগ্যের ফাটা কপাল বয়ে ঠোক্কর খেতে খেতে সিমুই সেটুকু অনুযোগও করে না আজকাল। কী হবে ভগবানকে বলে? পাথরচাপা কপাল ওর। না হলে তো ওই ছেলেটাকেই… কত করে পুজোর ঘরে কপাল ঠুকে বলেছিল, ওকেই আমার বর করে দিও ঠাকুর। ও ছাড়া আর কেউ বোঝে না আমায়। আমার পুতুলবেলার সাথি ও। ওর সঙ্গে কত্ত গুছিয়ে সংসার করব, দেখো। তা ওই ভগবান শুনল কথাটা? বদ্ধ কালা একটা! পাথর, পাথর! শিলনোড়ার চেয়েও শক্ত পাথর।
বিয়ের দিন দেখেছিল দূর থেকে। সুনন্দ কোমরে গামছা বেঁধে পরিবেশন করছে বরযাত্রীদের। ওর ফর্সা দোহারা চেহারায় ধুতি আর লাল গামছা, রাজপুত্তুরদের এর চেয়ে বেশি কী লাগে? সিমুই চোখ মুছল। পাশ থেকে কে যেন বলল, ‘আহা, এর পরে কত কান্না বাকি পড়ে আছে রে!’ সিমুই আর বলতে পারল না সুনন্দকে, মুখ ফুটে স্পষ্ট করে বলা হল না, ‘তুই তো আমার বর হতে পারতিস, তাই না? কী লাভ হল শহরের কলেজে গিয়ে লেখাপড়া শিখে… চাকরি তো পেলি না এখনও। একটা কাজকাম কিছু পেলে কিন্তু তোর হাত ধরেই চলে যেতাম তোর ওই মেসবাড়িতে। বাসন মাজতাম, ঘর মুছতাম, উনুন ধরিয়ে রান্না করতাম… সব পারি আমি। সব।’
সিমুই মুখ ফুটে বলেনি কিছু। অথচ সুনন্দ শুনতে পেত। সকলে ভাবে ছেলেরা মেয়েদের মনের কথা বোঝে না। কে বলেছে বোঝে না! ঘাসেরা দিব্যি বোঝে শিশিরের শব্দ। শিশির বোঝে শিউলির টুপটাপ। কখন কেন ঝরে পড়ে। সেইরকম সুনন্দ বুঝত। আর বুঝে ফেলেছিল বলেই পালিয়ে চলে গেল শহরে। ভিতু একটা। রামভিতু। ভাবল, সিমুই সুখে থাক, আনন্দে থাক।
সিমুইদের বাড়িটা কেমন ঘেয়ো কুকুরের মতো চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্লাস্টার নেই। ছাদে কোথাও টালি। কিছু ঝুলে পড়েছে গর্ভিণী কুকুরের পেটের মতো। দরজার কাঠ পচে গর্ত। জানলার গ্রিল ভাঙা। কাঁচা নর্দমার পাঁক থিকথিক করে বাড়ির পিছনে। তোলা উনুনের সাদা ধোঁয়ার গন্ধ ঘিরে আছে রান্নাঘরের দিকে। বড় একটা অশ্বত্থ জবরদখল করেছে দালানের এক কোনা। তার পাতা থেকে জল টুপিয়ে পড়ে নীচে জমে থাকা আগাছা বাতিল ইট আর পাতার স্তূপের ওপর। পাতার বিছানায় জেগে রয়েছে ব্যাঙের ছাতা। ছোট–বড়-মাঝারি। হালকা ঘিয়ে রং। গাছের গুঁড়িতে লতিয়ে উঠেছে অজানা কী এক লতা। বেড় দিয়ে রেখেছে গাছটিকে। তাকে না উপড়ে হাত ছোঁয়ানো যাবে না অশ্বত্থের গায়ে। ছায়াচ্ছন্ন চারদিক। রান্নার জন্য আর কোনও ঘর অবশিষ্ট নেই। যা আছে, তার দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখ জ্বালা করে। মানুষ নেই কোথাও। শুধু ভাঙা ঘরের মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসে নোনাজলমাখা দীর্ঘশ্বাস।
সিমুই সুনন্দকে হারিয়ে ফেলেছে। সুনন্দ সিমুইকে।
৩.
হারিয়ে গেছে ইস্কুল-দিন। ওইদিকে ইস্কুল। প্রাচীন অশ্বত্থ-জটলায় অশোক, নান্টু, নবু, বাদল, সুজয়, কমল। কেউ সাইকেলে, কেউ পায়ে হেঁটে, কেউ বাসে আসে। কম্পাস ধার নিয়ে ফেরত দেওয়া হয়নি নান্টুকে।
সুনন্দ ঢোকামাত্র হাসির হররা।
‘এই হাসছিস কেন রে?’
‘ওই যে দেখ, তোর পোস্টাপিস খোলা।’
সুনন্দ চমকে তাকায় হাফপ্যান্টের বোতামের দিকে, এবার হাসির ফোয়ারা ছিটকে আসে আরও জোরে।
‘ঠক ঠকা ঠক ঠকালাম, কাগের গু খাওয়ালাম…’ সুনন্দ ছুটে যায় ওদের দিকে, রেগে যেতে যেতে নিজেও হেসে ফেলে। আর ছুটতে ছুটতে ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে মাঠ। মাঠের পশ্চিম পাঁচিলের গায়ে, বেড়ে ওঠা সে কোন প্রাচীন কালের শিরীষ গাছের ঝিরিঝিরি চেরা পাতাগুলো দুলে দুলে হাসে। একেবারে হাওয়া-না-থাকা দুপুরেও নড়ে পাতাগুলো। কার ডাকে সাড়া। আছি আছি জানান দিয়ে যায় বোধহয়। ইস্কুলের গা বেয়ে চলে যাওয়া শীর্ণ খাল, এই সেদিনেও যার জলে ঝাঁপ দিত মাছরাঙা, পাড়ে চরে বেড়াত কোঁচবক, সাদা লম্বা একজন ধ্যানে বসত এক ঠ্যাঙে, তার চোখ বন্ধ কি খোলা সুনন্দ দেখতে পায়নি কোনও দিন। সেই খালটা আরও শুকনো। যেন প্রবীণ চামড়া ঝুলে পড়েছে, রক্তশূন্য শরীর তার। জলে কিলবিল করে মশার লার্ভা, তেচোখো মাছ ছেড়ে দিলে গপ করে গিলে খাবে ওই জীবগুলোকে। তারা আর পরিপূর্ণ হয়ে উঠে আসবে না জল থেকে হাওয়ায়। উড়ে উড়ে এসে বসবে না ফুলগাছে, অলস গরুর পিঠে-গলায়। বদ্ধ জলে মাছ বাঁচে না। তাই মশার জীবনচক্র নিঃশঙ্ক। মাছির দল নিশ্চিন্তে বসে আর উড়ে যায় আবর্জনা পায়ে মেখে। নিঃশব্দে জীবাণু ছড়িয়ে দেবে অন্যত্র। কাকেরা প্রকাশ্যে ঝগড়ায় মাতে। রাজনীতির তরজা। ক্ষমতা দখলের লড়াই। কার কত বখরা। তার হিসেব।
এখন সুনন্দ চারপাশে কোনও ফুটবল মাঠ খুঁজে পায় না। মাঠ নেই। ভ্যানিশ। জাদুর ছোঁয়ায় যেন মিলিয়ে গেছে কোথায়। অথচ একটা বিরাট মাঠ ছিল। একদিকে শিরীষ-শিমুল-জারুল-অমলতাস। গোলপোস্টের বার যেখানে পোঁতা ছিল, সেখানে কৃষ্ণচূড়া-রাধাচূড়া পাশাপাশি। মাঠময় ছড়িয়ে থাকত রংবেরঙের ফুল। লাল হলুদ বেগুনি। হাওয়ায় উড়ত। পায়ে ফুটবল নিয়ে একে-ওকে টপকে যেতে যেতে সুনন্দ থমকে যেত। ফুলগুলো পায়ের কাছে তাকিয়ে রয়েছে। করুণ চোখ। গাছের ডাল থেকে ঝরে পড়েছে কখন। মাটির কানে কানে তার ফিসফাস। যাবার সময় হল। ফুরিয়ে যাবার বেলা। ওদের কাউকে পা দিয়ে পিষে দিতে ইচ্ছে করে না সুনন্দর। ও থেমে যায়। আর যেই ও দাঁড়িয়ে পড়ে, সেই ফাঁকে পিছন থেকে, পাশ থেকে, সামনে থেকে, বিভিন্ন দিক থেকে অপু শিবু কানাই হারু লাট্টু ওর পায়ের বল কেড়ে নিয়ে দৌড়য়। গাল দেয় জোরে। সকলে মিলে ছুটতে থাকে গোলপোস্টের দিকে। একটা শিওর শট শুধু। বল জালে জড়াবেই। বন্ধুরা চেঁচায়— হাঁদা, হাঁদা, ভ্যাবলা কোথাকার। তোর জন্য আরেকটু হলে…। বলটা বাড়াতে পারিস না! অপদার্থ কোথাকার। সুনন্দ ফুলটাকে দেখে একমনে। ও কি হাসল একটু? ধন্যবাদ জানাল? কীসের ধন্যবাদ! পড়ে পাওয়া চোদ্দোআনা জীবনটার জন্য! সুনন্দ কিছু করেনি। শুধু দাঁড়িয়ে পড়েছিল।
অনেক নাম ভিড় করে ফুটবল মাঠে। নিরবয়ব নাম। রাজু আত্মহত্যা করেছে। তপনের হার্ট-অ্যাটাক। খুব কম বয়সে। অপু বিদেশে। কানাই ব্যবসা করছে। শহরে থাকে, এ পাড়ার বাড়ি আর নেই। ভিটেমাটি বিক্রি করে চলে গেছে দূরে। আরও অনেক নাম। তারা রোগা না মোটা, কালো না ফর্সা, সরল না সংকোচন, উপপাদ্য না বহুব্রীহি— কিছুই মনে পড়ে না। মনে পড়ে না মিডল বেঞ্চ। ক্লাসের একষট্টিজন, স্কুলের হাজারখানেক… সবাইকে দেখেছিল সবাই। মনে থাকেনি। ধূসর কুয়াশায় দল বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকলে যেমন আলাদা করে চেনা যায় না কাউকে। ঠিক তেমন।
বারপোস্টের মাথায় চুপ করে বসে থাকে শালিখ। একটা শালিখ। কী যেন করতে বলেছিল লাট্টু। ও নিজে করত। একটা শালিখ দেখে দাঁড়িয়ে পড়ত। তারপর একটা কাক আর কলাগাছ দেখার জন্য এদিক-ওদিক পাগলের মতো খোঁজ।
‘আর রক্ষা নাই, আজ শিওর কপালে রামক্যালানি!’ ঘুরপাক খাচ্ছে, আর বলছে লাট্টু।
‘কেন রে? এবার কী করেছিস?’
ফুঁসে ওঠে শান্ত ছেলেটা। ‘কী আবার করব, অ্যাঁ! করার আছেটা কী! বাপের যদি মনে হয় আজ পিটবে, তো ভগবানের বাপও তাকে আটকাতে পারবে না, আজ নির্ঘাত সেই দিন… দেখ ওই একখান শালিখই আজ দেখতে হল… আর চারপাশেও দেখ, আজ একটা কাক নাই, কলাগাছ নাই ধুস’, আক্রোশে লাট্টু একখানা ঢিল কুড়িয়ে ছুড়ে মারে দূরের গোলপোস্টের ওপর বসে থাকা একলা শালিখটার দিকে। তার ধারেকাছে পৌঁছয় না ঢিলটা। কাজলকালো চোখদুটি মেলে সে কোন দিগন্তে তাকিয়ে উদাসীন। লাট্টুর বাবা মাঝরাতে ঘরে ফিরে অভাবের সংসারে ঘ্যানঘ্যানে রুগ্ন বউ আর চারটে ছেলেমেয়েকে বেমক্কা পিটলে তার দায় কি ওই একলা শালিখটার?
সুনন্দ চুপ করে দাঁড়ায়। গোলপোস্ট মুছে গেছে। লাট্টু মুছে গেল ইস্কুলে থাকতে থাকতেই। ভেদবমি হল। পেটের জ্বালায় যা পেত, তাই খেত ছেলেটা। ঘরের আধপেটা খাবার খেয়ে ইস্কুলে এসে হাঁই হাঁই করত। খেয়েই মরল। বরং না খেয়ে ওর বাকি ভাইবোনগুলো টিকে গেল সব। তারা নিশ্চয়ই লাট্টুর মরে যাওয়ার পর একটা পেটের ভাগ কমে যাওয়ায় খুশি হয়েছিল। ওর মা কাঁদেনি। কান্নার শক্তি ছিল না। ওর বাপ, যে-বাপ ওকে মাঝরাতে পেটাত, সে বাংলার ঘোরে পাক্কা এক ঘণ্টা কেঁদেছিল। সে-কান্নায় যত না অনুতাপ, তার চেয়েও বেশি হাহাকার। কিছু ফেরত আসবে না। এতদিনের অপচয়। এতদিন ধরে ইস্কুলের খরচ, বইখাতার দাম, জামাকাপড়, খাইখরচ… সব ছাই।
লাট্টুর মৃতদেহ দেখেনি ওরা। মাঝরাতে মরেছে, ভোররাতে শ্মশানে পুড়িয়ে দিয়েছে ওকে। ইস্কুলে একটা ব্ল্যাকবোর্ডে গঁদের আঠা দিয়ে সাঁটা ছোট একটা সাদা-কালো ছবি। অনেক অল্পবয়সের। সেটাতেই রজনীগন্ধার মালা দিল হেডস্যার। বাংলার স্যার পকেট থেকে রুমাল বের করে, চোখ মোছার বদলে কপালের ঘাম মুছে কী একটা কবিতা বললেন। রবীন্দ্রনাথ মৃত্যু নিয়ে কী একটা কবিতা লিখে গেছেন, তার আধখানা শোনালেন। ভাঙা গলায় ইতিহাসের বুড়ো অবনীবাবু শ্যামাসংগীত গাইতে চাইছিলেন। হেডস্যার বারণ করলেন। এরা লাট্টুকে কেউ আদৌ চিনত কি? লাট্টু তো মাসে দিনদশেক ইস্কুলে আসত। লাস্ট বেঞ্চের আগের বেঞ্চে বসত। অ্যাটেনডেন্স রেজিস্টার দেখে লাট্টুর ভাল নাম ‘ললিত কুণ্ডু’ খুঁজে বের করা হয়েছে। কানাইয়ের হাতের লেখা ভাল বলে ও বাংলা খাতা থেকে একটা রুলটানা কাগজ ছিঁড়ে, বড় বড় করে কালো কালি দিয়ে নাম লিখেছে। ছবির তলায় সেই নামটার ওপর দিয়ে ঝুলছে রজনীগন্ধার মালা। জল ছিটিয়ে তাজা করা মালা থেকে জল নেমে ভিজিয়ে দিচ্ছে নাম। ললিত কুণ্ডুর মধ্যের অক্ষর গলে নামছে। ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে ‘লি’ আর ‘কু’। ফাউন্টেন পেনের কালিতে লেখা বর্ণ মুছে গেল, লাট্টুও। একেবারে ভ্যানিশ। কাঠপেন্সিলের লেখা যেমন রবার দিয়ে ঘষে তোলে ওরা, সেভাবেই ইস্কুল মুছে দিল লাট্টুকে।
সুনন্দ রাস্তা পার হতে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে হঠাৎ। হাইওয়ের ওপর দিয়ে ছুটে চলা লরির পিছনে ঝুলে থাকা লোহার রড দেখে গা শিরশির করে। রাস্তায় একধারে বিছিয়ে রাখা ধানপাট। রোদে শুকোয়। শেষরাতের হিম উড়ে গিয়ে এখন শুধুই শুকনো রোদ। হেমন্ত দুপুরের তাপে সেঁকে নেয় শরীর। ঘুমিয়ে থাকা স্মৃতিকোষগুলো নড়েচড়ে ওঠে। শ্যাওলাধরা ঘাটটাও নেই।
(চলবে)
ছবি এঁকেছেন চিরঞ্জিৎ সামন্ত