ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • শুধু কবিতার জন্য : পর্ব ২৯

    শ্রীজাত (September 2, 2023)
     

    কয়েকটি কবিতা


    সারারাত জেগে থাকার পর যে-ট্রেন আসে
    তাকে বন্ধু বলে ডেকো।
    সে পেরিয়ে এসেছে কত-না যুদ্ধের খবর, কত সাইরেন
    আর কত নাবালিকার বিয়ের নহবত
    সে পেরিয়ে এসেছে গোটা একটা দেশের ইতিহাস
    পাঠ্য বইয়ে লেখা
    তার ক্লান্ত ইঞ্জিনে, দেখো, লেগে আছে
    রাজনীতি, সংসদ, মোর্চা আর অভিযানের ধুলোবালি।
    প্যান্ট্রি থেকে ওই বেরিয়ে আসছেন জীবনদেবতা
    ত্রাণে ও নিরন্নে খাবার দিতে দিতে ক্লান্ত, অবসন্ন…
    তুমি যাবে কতদূর, বড়জোর পরের স্টেশনে
    আর তারই মধ্যে এক দশকের ওঠাপড়া
    দাঁড়িয়ে থাকবে লাইনের পাশে গাছপালা সেজে
    এই দেশ, এই নির্মম ছদ্মবেশ মেনে নেওয়া ছাড়া
    যাত্রী হিসেবে তোমার আর উপায় নেই। 


    দক্ষিণের জানলা খুললে ভেসে আসে প্রবাদ।
    পুবের, লিফলেট।
    এহেন ভাঙা বাড়িতে এক রাতের চড়ুইভাতি তোমাদের।
    গ্রামীণ গানের সামনে হাঁটু মুড়ে বসা
    যেন জুতো খুলে দিতে চাইছ তার, দেখতে চাইছ
    পায়ে কাঁটা ফুটে আছে কিনা।
    এ-বাড়িতে জুড়িগাড়ি ছিল, ছিল বাগানে পরীর ফোয়ারা
    এখন জ্যোৎস্না শুধু উচ্চবিত্ত, কৃপণতাহীন
    মাংসে নুন কম হলে, ভাত ধরে গেলে
    কেউ ছুটে আসবে না আর।


    সরগরম পেয়ালার মধ্য দিয়ে এই সকাল
    খবরের কাগজের টাটকা রক্তের মধ্য দিয়ে এই ঝলমল
    রেডিওর বিজ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে ফুটন্ত এই ভালবাসা
    সফেদ দুধের মতো মিথ্যেকথার মধ্য দিয়ে এই স্নেহ বিনিময়
    শহর, গড়িয়ে চলা আয়ুক্ষয়ের মতো এই শহর,
    লিফলেট ও গ্লো-সাইনে নখ গেঁথে উঠে দাঁড়ানো এই শহর
    বিশাল এই দৈত্যকে পুষবে কে,
    কে খাওয়াবে দু’বেলা, মাথায় হাত বুলিয়ে দেবেই বা কারা
    যখন মিছিল থেকে বেরিয়ে আসছে হিলহিলে সিদ্ধান্ত
    আর কনভয় থেকে ছিটকে উঠছে শিশুর খিলখিল
    তালাবন্ধ কারখানাদের গোঙানি কোনও জন্ত্রণার নয় যখন, সঙ্গমের
    তখন তুমি সুটকেস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছো মাঝরাস্তায়।
    হয় সরে যাও, নয় ঠিক করো, কোনদিকে যাবে।


    সাতাশ বার ঘষামাজার পর একটি ভালবাসা চমকে উঠল।
    তার ফুল খিলে গুলশন গুলশন যে আসলে কত বড় রাজনীতি
    তা বুঝতে দিলো না কিছুতেই।
    সেও এক শিল্প। সেও এক চারুকলা। একাডেমি। বোর্ড।
    নিরন্নের মুখের সামনে রাখা থালার মতো নির্মম তার প্রীতি ও শুভেচ্ছা
    সে সাঁটিয়ে দিলো তরুশাখায়, মেঘপুঞ্জে, বাতাসবাহনে।
    ছুটে আসা কিশোর-কিশোরীদের হাসির মতো ঢিলে তার জামা
    বৃদ্ধার চোখের মতো ম্লান তার অন্তর্বাস
    সে আজ টাঙাবে ছাদে ছাদে, জাহাজের মাস্তুলে ও মিনারের টঙে।
    ভালবাসা, আশ্চর্য হিংস্র প্রাণী, ফের জেগে উঠল আজ দিকে দিকে
    বিষাদ, ছুটিতে গেল বাক্স গুছিয়ে।


    অবশ্যই আপনাকে বলতে চাইছি যে আপনাকে আমার ভাল লাগছে,
    কিন্তু তার বদলে আমি অমুকের উপন্যাসের কথা বলছি।
    বলছি এ-বছর চাইলেই ফসল হতে পারত আরও ভাল ও উজ্জ্বল
    ট্যুরিস্টদের সংখ্যা বেড়ে গেলে চাই নতুন হোটেল ও রেস্তোরাঁ
    বলছি পরিযায়ী পাখিদের স্মৃতিশক্তি নিয়ে কার যেন একটা প্রবন্ধ পড়েছিলাম
    আর সেদিনই হাত থেকে পড়ে ভেঙে গেছিল চিন থেকে আনা কাচের কাপ।
    যখন বলছি এসব, স্টেশনে রোদ পড়ে এসেছে চুপচাপ
    আর ফুলবিক্রেতা মেয়েটি ভারী আনমনে কথা বলছে তার পুতুলের সঙ্গে।
    অবশ্যই বলতে চাইছি যে আপনাকে কতই ভাল লাগছে আমার,
    বদলে আমি এইসব বলছি
    আর আপনিও উদাস তাকিয়ে সায় দিচ্ছেন, যেন কিছুতেই এসে যায় না কিছু।
    ভালবাসার কথা, ভাললাগার কথা এত যে কঠিন,
    বেড়াতে না এলে তা আমার জানাই হতো না।


    হলুদ দোতলা বাড়িগুলি ভাল লাগে।
    ভাল লাগে তাদের বারান্দা থেকে মেলে রাখা কাপড় ও দুশ্চিন্তারাশি
    এত বাতাস দেয় এখানে যে গাড়িঘোড়া উড়ে যেতে চায়
    তাদের দ্বিধা ও গতিপথ নিয়ে।
    ভাল লাগে ওই দূর থেকে আসা খবরের ঝাঁক
    যারা আর একটু পরেই বিলি হবে দরজায় দরজায়
    তাদের শিরোনাম খুলে খুলে বেরিয়ে আসবে
    ফুলদানি ও খেলনা কিছু।
    এক সাইকেলবালকের আজ আসার কথা এ-পথ দিয়ে
    এক স্কুলকিশোরীর ফিরে যাবার কথাও বটে।
    মাঝে দেখা হবার যে-ফুরসত,
    মাঝে চোখ বিনিময়ের যে-মুহূর্ত,
    তাকে আমরা এখনও বিক্রি করিনি, এই যা।     

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook