প্রতি বছর নভেম্বর, ডিসেম্বর নাগাদ নাট্যপরিচালক বন্ধু কৌশিকের কাছে ওদের দল স্বপ্নসন্ধানী-র আগামী বছরের পরিকল্পনার খোঁজ নিই, আর মুখিয়ে থাকি কবে ও প্রথম স্ক্রিপ্ট পড়ে শোনাবে— মঞ্চস্থ নাটকের চেয়েও এই প্রথম পাঠ বেশি রোমাঞ্চকর। দলের সদস্য না হলেও সাধারণত এই সেশনে ওরা আমায় থাকতে দেয়। লকডাউনের এলোমেলো সময়টা কাটিয়ে উঠে যখন কৌশিক ফোন করে বলল, ওরা নতুন নাটক ভাবছে, স্বাভাবিকভাবেই আমি উত্তেজিত:
‘কী ভাবছ?’
‘আরিব্বাস! স্ক্রিপ্ট কে করবেন?’ (উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় ওদের জন্য অসাধারণ রূপান্তর করেছিলেন ‘ম্যাকবেথ’-এর, কয়েক বছর আগে, উনিই নিশ্চয়ই…)
‘তুমি।’
(স্তব্ধতা)…
‘রসিকতা হচ্ছে?’
‘একদম না।’
‘কী? কে? অসম্ভব! হবে না আমার দ্বারা!’
‘তোমার দ্বারা-ই হবে, আমি ভেবেই বলছি।’
‘বাংলায় শেক্সপিয়র— মঞ্চস্থ হবে— আমি অনুবাদ করব? ভাবলে কী করে?’
‘কেন, ক্লাসে পড়াও না তুমি?’ (সে তো পড়াচ্ছি, পঁচিশ বছর ধরে পড়াচ্ছি। তাই বলে বঙ্গানুবাদ! তাও আবার ‘হ্যামলেট’— দীর্ঘ, জটিল স্বগতোক্তি, অসংখ্য, জটিল ব্যাখ্যা; তথ্য— তত্ত্ব— তর্ক! Words, words, words….)
অনেকক্ষণ চাপান-উতোর চলতে থাকে; অবশেষে ওর সঙ্গে আমার একটা রফা হয়— এখন কেউ জানবে না; গোটা কয়েক দৃশ্য অনুবাদ করে পাঠাব… যদি মনোনীত হয়— এগোব। কাক-পক্ষীতেও টের পাবে না। নতুন করে পড়তে বসি।
এখানে বলে রাখা ভাল আমার শেক্সপিয়র-অনুবাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা, যাকে বলে, একটু ‘হটকে’। সদ্য পূর্ণসময়ের অধ্যাপনার চাকরিতে যোগ দিয়েছি, মফস্সলের কলেজ, প্রাক্তন শিল্পাঞ্চল। অন্যান্য টেক্সটের সঙ্গে বরাদ্দ হলেন শেক্সপিয়র, ‘ম্যাকবেথ’ পড়াতে হবে তৃতীয় বর্ষের ছাত্রছাত্রীদের। প্রচুর উৎসাহ নিয়ে ক্লাসে গেলাম, মাথার মধ্যে ভিড় করে আছেন কলেজ স্ট্রিটের দিকপাল মাস্টারমশাইরা— অরুণ কুমার দাশগুপ্ত, জ্যোতি ভট্টাচার্য, সুকান্ত চৌধুরী, সুভাষ বসু, শান্তা মহলানবীশ…। ভেবে রেখেছি খুব সংক্ষেপে শেক্সপিরিয়ান ট্র্যাজেডি-র ‘এসেন্স’ দিয়ে শুরু করব। শুরু করলাম বটে, কিন্তু কেমন যেন বেসুরে বাজে? একটু উসখুশানি, আড়চোখ? একটু থমকে গেলাম, আর সেই অবসরে উঠে দাঁড়াল এক ছাত্র, অল্প বিনয় ও বেশ খানিকটা আদেশ মেশানো স্বরে বলল, ‘হিন্দি মে বোলিয়ে’। ‘সেকী! হিন্দি মে শেক্সপিয়র কী করে পড়ায়গা রে?’, নীরবে আর্তনাদ করে ওঠে মন। ‘সে তো বিশাল ভরদ্বাজ-কা কাম হ্যায়!’ সারেন্ডার করলাম— ‘আমার হিন্দি এই ইংরেজির চেয়েও দুর্বোধ্য ঠেকবে তোমাদের, তার চেয়ে অল্পস্বল্প বাংলা মে বলি, তোমরা বরং তার হিন্দি করকে আমায় শেখাও?’ মহোৎসাহে শুরু হল আমাদের সমবেত মাল্টিলিঙ্গুয়াল শেক্সপিয়র-চর্চা। দেখতে দেখতে ‘ম্যাকবেথ’-এর ‘এসেন্স’ ধরে ফেলল তারা, পরীক্ষার খাতায় দিব্যি লিখেও এল। আমার হিন্দিটা অবশ্য… থাক সে-কথা!
যাই হোক, বেশ কয়েক সপ্তাহ পর, দিলাম পাঠিয়ে প্রথম দিকের কয়েকটা দৃশ্য, দুরুদুরু বুকে। পরিচালকের পছন্দ হয়ে গেল, মেসেজ এল— ‘পারফেক্টলি পারফর্মেবল!’ ‘পারফর্মেবল’? মানে তাত্ত্বিক Susan Bassnett-এর সফল নাট্য-অনুবাদের অন্যতম শর্ত ‘পারফর্মেবিলিটি’র কথা হচ্ছে? অনুবাদ শুরুর আগে যেটা বার বার মনে হচ্ছিল আমার? নাটক তো শুধু পড়ার জন্য লেখা নয়, নাটক মঞ্চস্থ হতে চায়, নাটকের ভাষা যে-কারণে একইসঙ্গে বৌদ্ধিক এবং শরীরী। নাটকের টেক্সটের মধ্যেই অন্তর্লীন তার মঞ্চায়নের ‘কোড’— অভিনেতার অঙ্গভঙ্গি, ইঙ্গিত, সংলাপ, মঞ্চ বা স্পেস ব্যবহার, আবহ, ইত্যাদি। নাটক অনুবাদ যে-কারণে অন্যান্য টেক্সট— মানে গল্প, কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ ইত্যাদি— অনুবাদের থেকে আলাদা, জটিল। টেক্সটের ভাষার সঙ্গে সঙ্গে মঞ্চের ভাষাকেও অনূদিত হতে হয়। তাছাড়া অনূদিত নাটকে তো কেবল সংলাপের ভাষা, বা ক্ষেত্রবিশেষে, ঘটনার প্রেক্ষাপট বদলায় না— সামনে বসা মানুষগুলোও পাল্টে পাল্টে যান, অন্য দেশ, অন্য শহর, অন্য স্মৃতি, অন্য সংস্কৃতি নিয়ে আসেন তাঁরা। ‘হ্যামলেট’ সম্ভবত তাঁর সর্বাধিক প্রচলিত, আলোচিত, অনূদিত, মঞ্চস্থ, এবং উদ্ধৃত নাটক। ১৬০৩ সালে ইংল্যান্ডে প্রকাশিত— ডেনমার্কের রাজা, রানি, রাজপুত্র ও তাদের জট-পাকানো সম্পর্ক, তাদের দুর্ভেদ্য মনস্তাত্বিক জটিলতার কাহিনি— কীভাবে, কোন ভাষায় বললে ২০২২-এর কলকাতার মিশ্র-বাংলা-বুলির দর্শক শুনবে? বুঝবে? কীভাবে খানদানি শেক্সপিরীয় নির্যাস তরলায়িত না করে, একাডেমির দোতলার শেষ পংক্তির দর্শকটির কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব প্লটের গভীরে জড়ানো রাজনৈতিক বিষাক্ততা, অক্ষমতার বিপন্নতা ও ক্ষমতার আস্ফালন? কীভাবে আলগোছে ধরিয়ে দেওয়া যায় নাটকের আধুনিকতার অন্তরালে ‘রিভেঞ্জ ট্রাজেডি’র আদল? আদৌ কি সম্ভব, ‘হ্যামলেট’-এর মতো দীর্ঘ, জটিল, রাজনৈতিক, রেনেসাঁ দর্শনে ঠাসা, বহুস্তরীয় টেক্সটের একুশ শতকীয় বাংলা মঞ্চায়ন?
তার ওপর ‘হ্যামলেট’ নাটকের চরিত্রলিপি বিশাল— সমাজের প্রায় সব স্তরের, সব বয়সের মানুষ ঘোরাফেরা করে মঞ্চে; তারা প্রত্যেকে আলাদা ভাষায় কথা বলে। মানে ভ্রাম্যমাণ নাটকের দলের গরিব অভিনেতার ভাষা আর পরজীবী রোসেনক্রানত্জ-গিল্ডেনস্টার্ন-এর ভাষা আলাদা— আবার এই দলের অভিনীত গ্রিক নাটকের ভাষা একেবারেই অন্যরকম— গারট্রুড আর ওফেলিয়া এক ভাষায় কথা বলে না, হ্যামলেট আর হোরেশিও সহপাঠী, কিন্তু আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি অবশ্যই তাদের শব্দচয়ন আলাদা করে দেয়। আর পোলোনিয়াস? কীভাবে অনুবাদ করব বৃদ্ধের শব্দভারাক্রান্ত সংলাপ? দর্শকের মস্তিষ্ক ভারী না করে?
কৌশিকের প্রস্তাবে ভীত হওয়ার মূল কারণ ছিল এগুলোই। কিন্তু পরিচালক হিসাবে ওর ব্রিফ আমাকে অবশেষে কিছুটা হলেও সাহস দেয়: আমি মাস্টারমশাইয়ের মতো করে ভাবছি, কৌশিক ধরিয়ে দেয়, আমাকে সচেতন দর্শকের মতো ভাবতে বলে; বলে আমি যেভাবে হ্যামলেট দেখতে চাইব মঞ্চে, সেভাবেই স্ক্রিপ্ট করতে। এমনকী যে দু-একটা অনুবাদ আগেই হয়েছে ‘হ্যামলেট’-এর, সেগুলোও পড়তে বারণ করে। Tabula rasa! কাজ শুরু করি, নেশা ধরে যায় অচিরেই। পূর্বপাঠ ও পড়ানোর চক্কর থেকে বেরিয়ে চরিত্রের সঙ্গে তার সংলাপের ভাষার সাযুজ্য রাখার দিকে মন দিই, মানে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করি। হ্যামলেটের গোটা সাতেক স্বগতোক্তি আছে নাটক জুড়ে, অতিব্যবহৃত ‘To be, or not to be, that is the question’; ‘There are more things in Heaven and Earth, Horatio’, বা ‘Frailty, thy name is woman’,-এর বাইরেও অপূর্ব সুন্দর সব কথা, কবিতা, দর্শন। সেগুলোর জন্য খাটতে হয়েছে প্রচুর— নায়কের বিষাদ, অবসাদ, হতাশা, প্রেম, প্রেমহীনতা, চাতুর্য্য, ব্যঙ্গ, সিনিসিজম— যেন হারিয়ে না যায়, খেয়াল রাখার চেষ্টা করেছি। বাকি কাজ তো অভিনেতার! প্রযোজনাটিতে অবশ্য কিছু ‘সলিলকি’ ইংরেজিতেই রাখা হয়েছে; কারও কারও মতে যা ছন্দপতন ঘটিয়েছে, আবার অনেকের পছন্দও হয়েছে। অবশ্যই সব কিছু ছাপিয়ে গেছে তরুণ ঋদ্ধির পরিণত অভিনয়, বহু-বহুদিন বাংলা মঞ্চ মনে রাখবে এই ‘হ্যামলেট’কে।
বাংলায় শেক্সপিয়র ভাবতে গিয়ে বার বার আমার মাতৃভাষার সমৃদ্ধ শব্দভাণ্ডারের সন্ধান পেয়ে পুলকিত হয়েছি। একটা উদাহরণ দিই— তৃতীয় অঙ্কের প্রথম দৃশ্যে হ্যামলেট ওফেলিয়াকে আঘাত করার উদ্দেশ্যে বলে, ‘Get thee to a nunnery!’ ‘Nunnery’-তে হোঁচট খাই; দুটো অর্থ হয় জানি— কনভেন্ট আর বেশ্যালয়। কী করে মেলাই দুই বিপরীতকে, ছন্দপতন না করে? শব্দ এসে যায় নিজেই— ‘মঠে গিয়ে থাকো না কেন? অথবা কোঠায়!’ মঞ্চে ঋদ্ধি যখন সব তিক্ততা, হতাশা মিলিয়ে এই অংশটি বলে, আর দর্শক তাতে সাড়া দেন, খুব ভাল লাগে। এরকম কথার খেলার সুযোগ নিয়েছি বেশ কয়েকবার। আশ্চর্য লেগেছে, যখন প্রত্যেকটি স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়া পেয়েছি দর্শকাসন থেকে— সবাই তো মূল নাটকটির সাথে পরিচিত নন! তৃতীয় অঙ্কেরই বিখ্যাত ‘বাঁশিওয়ালা’-র দৃশ্যে হ্যামলেট বিশ্বাসঘাতক বন্ধু গিল্ডেনস্টার্ন-কে জোর করে বাঁশিতে ফুঁ দিয়ে সুর বের করতে বললে, সে প্রতিবাদ করে বলে, ‘হবে না হুজুর। আমার মধ্যে সুর জিনিসটাই যে নেই, আমি চূড়ান্ত বেসুরো!’ তার উত্তরে হ্যামলেটের কথাগুলো, ‘সামান্য বাঁশিতে সুর তুলতে পারো না, আর আমাকে বাজিয়ে দেখতে চাইছ তুমি?… বাঁশি-কাঁসি যে নামেই ডাকো না কেন, তোমার সুরে আমি বাজব না…!’ অবধারিত হাততালি পায়।
যেমন পায় হ্যামলেটের প্রবেশমুহূর্তে ক্লডিয়াসের সাথে কথোপকথন:
‘আহ্, হ্যামলেট! দয়া করে দেখা দিলে অবশেষে!’
‘দয়া কম, দায় বেশি।’
‘মুখ অন্ধকার কেন?’
‘না না, অন্ধকার কোথায়? একটু ঝলসে গেছে বোধহয়, এত জৌলুস!’
এই সাধুবাদ প্রাপ্য অবশ্যই শেক্সপিয়র-এর ‘ইউনিভার্সাল অ্যাপিল’ আর বাংলাভাষার ভাণ্ডারে বিবিধ রতনের ‘কম্বো’র!
পোলোনিয়াসের ‘ভারী কথার বোঝা’ অনুবাদ থেকে অবশ্য কৌশিক আমাকে উদ্ধার করে, আর এখানেই মজা পেয়েছি সবচেয়ে বেশি। আমাদের হ্যামলেটে পোলোনিয়াস নেই, আছেন পোলোনিয়া, সকলে যাকে ‘আম্মা’ বলে সম্বোধন করে। এই রূপান্তরের মধ্যে অনেকে নারীবাদের ছোঁয়া পান, অনেকে ডিকন্সট্রাকশনও বলেছেন! তবে কোনও তত্ত্বের তাগিদে নয়, আমাদের ক্ষেত্রে এই লিঙ্গ-পরিবর্তন হয়েছে নিতান্তই দলের প্রয়োজনে— পোলোনিয়াস করার মতো পাকা অভিনেতার অভাব ছিল সেই মুহূর্তে, অথচ দিতিপ্রিয়া সরকারের মতো শক্তিশালী অভিনেত্রী মজুত ছিলেন দলে। তাই ‘আম্মা’— পোশাক-আশাক সমেত, জনপ্রিয় দক্ষিণী নেত্রীর আদলে ভেবেছিলাম পোলোনিয়ার চরিত্রটিকে— ক্ষমতালোভী অথচ ব্যক্তিগত জীবনে দুর্বলতার মাশুল দিতে হয় যাকে। তবে তার ভাষা একেবারেই রাজনীতির বুলি নয়, ভারী ভারী দর্শনও আওড়ায় না সে। কিছুটা পোলোনিয়াসের সবজান্তা, কথাসর্বস্ব, বিশ্বস্ত, শুভাকাঙ্ক্ষী রাজ-অনুচর; আবার কিছুটা সন্তানের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখতে চাওয়া একজন মা, এবং সর্বোপরি বাকি সবার মতো রাজনীতির খেলায় অসহায় ‘উলুখাগড়া’— এভাবে ভেবেছিলাম পোলোনিয়াকে। পরিচালকের নির্দেশ অনুযায়ী পোলোনিয়াকে ‘মেয়েদের ভাষায়’ কথা বলানোটাই হয়তো আমার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। চেষ্টা করেছি তাকে আলাদা ‘ইডিয়ম’ দিতে, কতটা সফল হয়েছি জানি না, তবে আমার খামতি ঢাকা পড়ে যায় দিতিপ্রিয়ার অসাধারণ বলিষ্ঠ সিরিও-কমিক অভিনয়ের গুণে, চরিত্রপাঠে, দর্শকের বাহবায়।
স্বপ্নসন্ধানী-র প্রযোজনার বৈশিষ্ট্য প্রচ্ছন্ন রাজনৈতিক চেতনা আর কাব্যের অনবদ্য মিশেল, ‘হ্যামলেট’-এও তার অন্যথা হয়নি। অনেকে আমায় তার জন্য সাধুবাদ জানান, সে-প্রশংসা আমার প্রাপ্য নয়, পরিচালকের। আমি শুধু আমার মতো করে আমার প্রিয় নাট্যকারকে পড়তে চেয়েছি, আর নতুন করে প্রেমে পড়েছি তাঁর সৃষ্টির। তবে পরমপ্রাপ্তি যদি কিছু ঘটে থাকে এই ‘হ্যামলেট’-যাত্রায়, তা হল নাসিরুদ্দিন শাহের রিভিউ এবং তাতে অনুবাদের যথার্থতার উল্লেখ। কৌশিক গ্রিনরুমে আলাপ করিয়ে দিয়েছিল, বুকের লাগামছাড়া ধুকপুকানির কারণে ‘নমস্কার’ আর ‘ধন্যবাদ’ ছাড়া কিচ্ছু বলে উঠতে পারিনি, ছবি তোলার কথা মাথায় আসেনি, কেবল মুহূর্তগুলি মনে গেঁথে গেছে…