এভাবেই ঘুমে-নির্ঘুমে আরও অনেকক্ষণ চলে গেল। ব্রহ্ম ঠাকুর পড়ে আছেন তো আছেন। রোদের তেজ মাঝখানে মারাত্মক ছিল, এখন সহনীয়। ব্রহ্ম একবার জেগে উঠে ভাবলেন এখন হয়তো শেষ বিকেল। গলাটা খাঁখাঁ করছে। হঠাৎ মাথাটাও গুলিয়ে গেল। তিনি সব ভুলে গেলেন, কেন তিনি এভাবে জলের মধ্যে পড়ে আছেন, কেন নড়লে-চড়লে বিপদ, এসব আর মাথায় রইল না। ওঙ্গেদের দ্বীপের ঘটনা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ তাঁর মনে হল, তাই তো, ওখানে তো তিনি গাছের আড়ালে লুকিয়েছিলেন, এখানে তবে কেন বৃথা জলের মধ্যে পড়ে নাকানিচোবানি খাচ্ছেন! তাঁর তো একটু ভেতরের দিকে যাওয়া দরকার, গাছের ছায়ায় যাতে রাতটা কাটানো যায়। এসব ভেবে ব্রহ্ম ঠাকুর উঠে দাঁড়ালেন। এখনও তাঁর হাত বাঁধা। তবে জলে ভিজে চোখের বাঁধন খানিকটা আলগা হয়েছে। তিনি ঝাপসা ঝাপসা দেখতে পাচ্ছেন খানিকটা।
তীরের দিকে হাঁটতে শুরু করলেন ব্রহ্ম। জল ঠেলে দশ বারো পা যাওয়ার পরই পেছনে, অর্থাৎ সমুদ্রের দিক থেকে অচেনা আদিম ভাষায় চিৎকার শুনলেন, আর শুনলেন ঝুপঝাপ আওয়াজ। কারা যেন চেঁচাতে চেঁচাতে দৌড়ে আসছে তাঁর দিকে। ব্রহ্ম ঠাকুর হাঁটা থামিয়ে তাদের দিকে ফিরে দাঁড়ালেন।
ঠিক এই সময়ে, প্রায় একই সঙ্গে তাঁর কাঁধে এবং পিঠে দুটো তির দ্রুত এসে গেঁথে গেল। ব্রহ্ম বুঝলেন, তিরগুলো মেরেছে এই দ্বীপের অধিবাসী সেন্টিনেলিজ়রা। পাড়ে জঙ্গলের মধ্যে কোথাও এই তিরন্দাজেরা লুকিয়ে ছিল, ব্রহ্মকে লক্ষ করছিল। এবারে তিনি উঠে দাঁড়ানোয় তারা সতর্ক হয়েছে, তির মেরেছে। ব্রহ্মের মনে হল— তিরগুলো নিশ্চয়ই বিষাক্ত।
পিঠে আর কাঁধে বিষতির বেঁধা অবস্থায় ব্রহ্ম ঠাকুর উপুড় হয়ে পড়ে গেলেন সমুদ্রের জলে।
৩৬।
(অন্যদিকে, ঘন্টা চার-সাড়ে চার আগে)
দুরন্ত শারীরিক সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছেন ওঙ্গে চৌধুরি। অশ্বত্থ গাছের ঝুরি ধরে নীচে নেমে এসে বিলি গিলচারকে এক মোক্ষম লাথিতে পর্যুদস্ত করেছেন। এই বয়সেও সুপারফিট তিনি। তারপরেও তাঁর কথায় ঝরে পড়ছে আফশোস। আশ্চর্যের দিকে তাকিয়ে ওঙ্গে বললেন— স্যরি ম্যান। গিলচার হঠাৎ এসে পড়ে। ওকে তো আমাদের উপরে কনফ্রন্ট করবার কথা ছিল না। তাই তোমায় সতর্ক করতে ফোন আমি করেছিলাম, কিন্তু লাইন পেলাম না। বোধহয় কুয়োর এতটা নীচে তোমার নেটওয়র্ক ছিল না। এটা আমাদের আগে চেক করে নেওয়া দরকার ছিল। এদিকে ও নামতে শুরু করবার পর অত উপর থেকে হাতে পিস্তল নিয়েও কিছু করা যাচ্ছিল না, উপর থেকে নীচে বিলি গিলচারের হাতে টিপ করব কী করে? অগত্যা পিস্তলটা ড. কিশিমোতোর হাতে চালান করে আন্দামানের আদিম মানুষদের কাছ থেকে শেখা একটা বিদ্যাই কাজে লাগাতে হলো। আশা করি বুঝতে পারছ, আমায় কেন লোকে ‘ওঙ্গে চৌধুরি’ বলে ডাকে। ওঙ্গেদের সঙ্গে শুধু বন্ধুত্বই করিনি আমি, টুকটাক কিছুকিছু কাজের জিনিস শিখেও নিয়েছিলাম। কিশিমোতোকে পিস্তলটা দিয়ে এলাম যাতে ও উপরটা সামলাতে পারে।
আশ্চর্য স্বস্তির হাসি হাসছিল। ব্রহ্ম ঠাকুরের তো কোনও জবাব নেই বটেই, এখন দেখা যাচ্ছে সমান্তরাল ব্রহ্মাণ্ড থেকে আসা তাঁর প্রোজেকশনেরও তুলনা নেই। এই ওঙ্গে চৌধুরির কাছে তাকে পাঠানোর ব্যাপারটা যে এভাবে কার্যকরী হবে, কেউ ভাবতে পেরেছিল?
আপাতত দুটি আগ্নেয়াস্ত্র তাগ করা আছে বিলি গিলচারের দিকে। এরিক দত্ত পকেট থেকে তাঁর কোল্ট বের করেছেন। সুযোগ পেয়ে মাটি থেকে সাধের ব্যারেটা কুড়িয়ে নিয়ে তা ঝেড়েঝুড়ে ধুলো মুছে কাঁপাকাঁপা হাতে বাগিয়ে ধরেছেন ন্যাড়া দাদু। ওঙ্গে চৌধুরি কিছুক্ষণ আগেই বিলির গলা শক্ত করে ধরে থাকা তাঁর হাত একটু আলগা করেছিলেন। বিলি গিলচার আঁক শব্দ করে পড়ে গেছিল মাটিতে।
হঠাৎ আশ্চর্যর খেয়াল হল, বিলি এক আঙুল এক আঙুল করে ডান পাশটায় সরে যাওয়ার চেষ্টা করছে। ও হরি— ডানদিকেই খানিক তফাতে পড়ে আছে বিলির পিস্তল। এটা দেখতে পেয়েই আশ্চর্য একলাফে সেদিকটায় গিয়ে টুক্ করে বিলি গিলচারের বন্দুকটা মাটি থেকে কুড়িয়ে হাতে তুলে নিল। তারপর সেটা দুহাতে নাচাতে নাচাতে বিলিকে বলল— আপনার সঙ্গে আমার আলাপ নেই। তবে আলাপ করে খুশি হলাম। মি. গিলচার, একটা জিনিস নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। আমরা সবাই ড: ব্রহ্ম ঠাকুরের বন্ধু। তাঁকে আমরা প্রাণ দিয়ে ভালবাসি, ভালবাসতে চাই। কারণ তিনি মানুষের উপকার করেন। কেউ বিপদে পড়লে তাকে সাধ্যমতো বাঁচাবার চেষ্টা করেন। তাই আপনাকে এটুকুই বলার— তাঁকে কোথায় রেখে এসেছেন, তা না বলে আপনার কোনও উপায়ই নেই বাঁচবার। এবার বলুন, ভদ্রভাবে বলবেন, নাকি অন্য পন্থা নিতে হবে?
হঠাৎ ওপর থেকে শোনা গেল কিশিমোতোর গলা। তিনি চেঁচিয়ে বললেন— একটু দূরে সমুদ্রের ধারে কপ্টার নামিয়েছে গিলচার। আমি বিলি যেদিক থেকে এল, সেদিকে একটু এগিয়ে দেখে এলাম। ফোর-সিটার কপ্টার, আমাদের মধ্যে তিনজন যেতে পারবে। আমার মনে হয় এরিক, আশ্চর্য আর ওঙ্গে চৌধুরি যান। আমি আর মি. অবস্থী এখানে বিলি গিলচারকে পাহারা দিচ্ছি। আপনার দ্রুত গিয়ে পাইলটকে কবজা করুন। এক্ষুনি আপনাদের রওনা দেওয়া দরকার যদি ড: ব্রহ্ম ঠাকুরকে বাঁচাতে হয়। ওই পাইলট নিশ্চয়ই জানে, কোথায় ব্রহ্মকে পাওয়া যাবে…
ড. কিশিমোতো ঠিকই বলেছেন। বিলি গিলচারের পেছনে সময় নষ্ট করবার দরকার নেই। তাঁকে ঠেলেঠুলে ঢুকিয়ে দেওয়া হল কারাগার কক্ষটিতে। টেনে বন্ধ করা হল দরজার ছিটকিনি। গিলচারের পকেটে কয়েকটা ওষুধের শিশি আর একটা অ্যাম্পিউল পাওয়া গেছিল, এরিক দত্ত সেগুলো চিনতে পারলেন— ওগুলো ড. কিশিমোতোর তৈরি করা বিষনিরোধক। তিনি নিজেও আগে বিভিন্ন অভিযানে এই ওষুধগুলো ব্যবহার করেছেন। এরিক পকেটে পুরে নিলেন ওগুলো। তারপর আশ্চর্য এবং ওঙ্গে চৌধুরি দৌড় লাগালেন সমুদ্রতীরে রাখা হেলিকপ্টারের দিকে। এরিক ঠিকমতো দৌড়তে পারছেন না, তাঁর পায়ে চোট, তিনি খোঁড়াতে খোঁড়াতে ওদের পেছনে গেলেন।
দুটো উদ্যত আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তিনজন ব্যক্তি সমুদ্রের ধারে রাখা কপ্টারটায় হামলা করতে পারে, আগাম ভাবেনি কপ্টারের চালক। স্যাম নামের বন্দুকধারী আরেকটা লোকও ছিল সেখানে। কিন্তু এরিক দত্ত, আশ্চর্য এবং ওঙ্গে চৌধুরির সম্মিলিত শক্তির বিপক্ষে দু’জন অপ্রস্তুত ব্যক্তি তেমন একটা প্রতিরোধ তৈরি করতে পারল না। তারপর একটু চাপ দিতেই তারা বলে দিল, ব্রহ্ম ঠাকুরকে তারা নামিয়ে দিয়ে এসেছে দুর্ধর্ষ আদিম হিংস্রজাতি সেন্টিনেলিজ়দের হিংস্রতার জন্য কুখ্যাত, অগম্য এক দ্বীপে। ক্যাপ্টেনের কাছ থেকে ওঙ্গে চৌধুরি জেনে নিলেন অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশের ঠিকানা সমেত দ্বীপটার সাংকেতিক নাম। তিনি ‘হুম’ শব্দ করে একবার মাথা নাড়লেন। দ্বীপটি পরিচিত।
দু’জন লোককে বাঁধবার মতো দড়ি কপ্টারের মধ্যেই পাওয়া গেল। দড়ি দিয়ে ওদের ভাল করে বেঁধে ফেলল আশ্চর্য এবং ওঙ্গে চৌধুরি। তবে ওঙ্গে চৌধুরিকে নার্ভাস দেখাচ্ছিল। বাঁধাছাঁদা করতে করতেও তিনি বারবার বলতে লাগলেন— কী করে বাঁচাব? ঠাকুরকে কী করে বাঁচাব?
আশ্চর্য বলল— আর এক মুহূর্তও দেরি নয়, আমাদের এই কপ্টারটা উড়িয়ে এক্ষুনি রওনা দিতে হবে ওই দ্বীপটার দিকে। সেক্ষেত্রে আমরা এই চালককে বাঁধছি কেন? গানপয়েন্টে ওকে নিয়ে ওড়া হোক।
ওঙ্গে চৌধুরি ডানপাশে সরে গিয়ে সমুদ্রের ধারের একটা বেঞ্চে ধপ করে বসে পড়লেন। যেন আশ্চর্যের কথা তিনি শুনতেই পাননি।
আশ্চর্য ব্যাকুলভাবে চিৎকার করতে যেতেই তার জামাটা খামচে ধরলেন এরিক দত্ত। বললেন— ওঙ্গে চৌধুরি ভাবছেন। ওঁকে ভাবতে দাও। এই পরিস্থিতিতে কী করে উদ্ধার অভিযান চালাতে হবে তা ওঁর থেকে বেটার বলতে পারবেন, এমন লোক গোটা আন্দামানেই নেই।
ওরা দু’জন গিয়ে দাঁড়াল বেঞ্চে বসা ওঙ্গে চৌধুরির পাশে। ওঙ্গে এতক্ষণে একটু ধাতস্থ হয়েছেন। ধরা গলায় বললেন— আমাদের আশা করতে হবে ব্রহ্ম ঠাকুর বেঁচে আছে। ভীষণ নাছোড় এবং অবাস্তব একটা আশা। ধরে নিতে হবে, বহুদিন আগে ওঙ্গেদের দ্বীপে নেমে বাঁচবার যে কৌশল ওকে আমি শিখিয়েছিলাম তা অবলম্বন করেছে ঠাকুর এবং এখনও বেঁচে আছে। এটা ভেবে নিতে পারলে তবেই পরিকল্পনা করা যাবে একটা রেসকিউ অ্যাটেম্পটের। এবং সেই পরিকল্পনায় হেলিকপ্টারের অপশন প্রথমেই বাদ যাবে।
আশ্চর্য কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল কেন হেলিকপ্টার ব্যবহার করা যাবে না।
— কারণটা সিম্পল। হেলিকপ্টারের সারা গায়ে সভ্যতার অগ্রগতির গর্বিত উচ্চারণ, যেটা সেন্টিনেলিজ়রা যেকোনও কারণেই হোক, সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করে। ওদের দ্বীপের আকাশে আজ ভোরে একবার হেলিকপ্টার উড়েছে। আবার হেলিকপ্টার উড়লে ওরা সাংঘাতিক বিরক্ত হবে, সন্দেহও করবে। ওরা তো তখন আমাদের হাতের কাছে পাবে না, হাতের নাগালে পেয়ে যাবে বেচারা ঠাকুরকে। তারপর তার কী দশা ওরা করবে ভাবতে পারছ?
এরিক দত্ত বললেন— তা হলে আমরা কী করব? পুলিশ আমাদের সাহায্য করতে পারবে না কোনওভাবে?
— পুলিশ সেন্টিনেলিজ়দের দ্বীপের মতো স্পর্শকাতর এলাকায় চট করে নাক গলায় না। উঁচু-মহলের পারমিশন ছাড়া এক পাও এগোবে না ওরা। সুতরাং পুলিশ বা মিলিটারি ভেবে লাভ নেই। ঠাকুর তো তেমন একটা কেউকেটা নন!
এরিক বললেন— আমায় কিন্তু অনেকেই চেনে। আমি কি যোগাযোগ করে দেখব?
আশ্চর্যও সম্মতি দিয়ে বলল— আমি যাঁকে নিয়ে এসেছি সেই মি. মুকুন্দ অবস্থী একজন বিখ্যাত লোক, পুলিশের ওপর মহলে এমনকী মিলিটারিতেও ওঁর জানাশোনা বিস্তর—-
— ওই ন্যাড়া বন্দুকবাজ জোকারটা? সত্যিই? ও কি পারবে ফোর্স-কে বলে একটা লঞ্চ সেন্টিনেলিজ়দের দ্বীপের যেদিকটায় এরা ব্রহ্ম ঠাকুরকে নামিয়েছে তার উলটোদিকে নোঙর করে রাখতে? তাহলে একটা পরিকল্পনা করা যায়। একটু সময় লাগবে। আজকে রোদ আছে, তাহলে ঘন্টা তিনেকে হয়ে যাবে। সভ্যতার গন্ধ ছাড়াতে ঘন্টা তিনেক সময় আর চড়া রোদ লাগবে। এই ঘন্টা তিনেক যদি ঠাকুর বেঁচে থাকতে পারে, তবে ওকে উদ্ধার করবার এটাই একমাত্র উপায়। ঠিক আছে! মি. এরিক দত্ত, আপনি আপাতত এই দু’জন ভাড়াটে গুন্ডার পাহারায় থাকুন। আশ্চর্য, তুমি দৌড়ে গিয়ে ওই মাথায় ফেট্টি বাঁধা ন্যাড়াটাকে ডেকে নাও। আমাদের গাড়িটা রাখা আছে। এক্ষুনি বেরোতে হবে, কয়েকজন স্থানীয় লোকের বাড়ি যাওয়া দরকার…
৩৭।
সমুদ্রের দিক থেকে যারা দৌড়ে আসছিল ড: ব্রহ্ম ঠাকুরের দিকে, ব্রহ্ম জলের মধ্যে মুখ থুবড়ে পড়বার পর তারা দেখতে পেল, তাঁর পিঠে আর কাঁধে দু’টি তির বিঁধে আছে। এর ফলে তাদের কোলাহল আরও বাড়ল। তারা অজানা ভাষায় চেঁচাতে শুরু করল। জঙ্গলের ফাঁকফোকরে লুকিয়ে থাকা তিরন্দাজ সেন্টিনেলিজ়রাও অদ্ভুত আওয়াজ করে জবাব দিল। ব্রহ্ম ঠাকুর কী হচ্ছে না হচ্ছে এসব নিয়ে ভাবা বন্ধ করলেন। তাঁর ক্লান্ত মাথা আর এত ভজঘট সইতে পারছে না। চোখ বন্ধ করে পড়ে থাকলেন তিনি, নিস্পন্দ। তাঁর মনে হল, অনন্তকাল তিনি এভাবেই পড়ে আছেন।
আসলে কিন্তু জলের মধ্যে তাঁর তির বিঁধে উপুড় হয়ে পড়বার পর দু’মিনিটও কাটেনি। ব্রহ্ম ঠাকুর অনুভব করলেন তাঁকে জল থেকে চ্যাংদোলা করে তুলে বয়ে নিয়ে চলেছে তিন চারজন জংলী মানুষ। জলে ভিজে ঢিলে হয়ে যাওয়া চোখবাঁধা কাপড়ের ফাঁক থেকে তিনি দেখতে পেলেন তাদের বলশালী নেগ্রেটো শরীর, সারা শরীরে সাদা রং করা। প্রথমে তিনি ভাবলেন এটাই তাঁর শেষ। আর বেশিক্ষণ আয়ু নেই। তারপর অবাক হয়ে গেলেন দেখে যে তাঁকে ডাঙার দিকে নয়, আরও জলের দিকেই নিয়ে চলেছে জংলীরা। আসন্ন মৃত্যুর আগে ব্রহ্মের একটু দৈহিক আরাম পাওয়ার সাধ হল। খানিকক্ষণ যদি এই জলে ভেজা ভাব থেকে মুক্তি পাওয়া যেত!
তিনজন বামন সাইজের জংলী মানুষ এসে প্রথমেই দুটো বিষতির টেনে তুলে ফেলেছে ব্রহ্মের পিঠ আর কাঁধ থেকে। তারপর ক্ষতস্থানে কী যেন ঘষে দিয়েছে জোরে ঠুসে। ব্রহ্মকে বহন করে সেন্টিনেলিজ়দের দ্বীপের অদূরে সমুদ্রে ভাসমান একটি ভেলাতে তুলল ওরা। ভেলাটিতে অপেক্ষা করছিল আরেকজন তাদেরই সমগোত্রীয়। এই ভেলাটি বাঁশের, বনজ লতা দিয়ে বাঁশগুলোকে টানটান করে বেঁধে এটা তৈরি হয়েছে। টানাহ্যাঁচড়ায় আরও অনেকটা খুলে যাওয়া চোখের বন্ধনীর ফাঁক দিয়ে ভেলাটা দেখে ব্রহ্ম ঠাকুরের ভীষণ চেনা লাগল। এই ভেলাটা তিনি আগে কোথাও দেখেছেন…
(আগামী কিস্তিতে সমাপ্য)
ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র