৩৪।
পাঁচধাপ উপর থেকে চিৎকার-চেঁচামিচিটি করেছেন ‘ন্যাড়া জেঠু’ মুকুন্দ অবস্থী স্বয়ং। তিনি জানতেন, বিলি গিলচার কুয়োয় নামতে শুরু করলে আশ্চর্য ওঙ্গে চৌধুরির ফোন-কল পাবে এবং সে ঠিক সময়ে সতর্ক করে দেবে তাঁকে। তাঁর পায়ে হঠাৎ কী একটা সুড়সুড় করছিল, তিনি ডান পায়ের মোজাটা নামিয়ে দেখতে গেছিলেন কোনও পোকা-টোকা ঢুকল কি না। হাজার হোক, স্যাঁতসেতে একটা পিছল জায়গায় দাঁড়িয়ে আছেন তিনি, নানা রকম পোকামাকড় সরীসৃপ তো এখানে থাকবেই! এমন সময়েই বিলি গিলচার অতর্কিতে উপর থেকে নেমে এসে তাঁর হাতে মারেন এক মোক্ষম চাপড়। এরই পরিণতি তাঁর হাউমাউ চিৎকার এবং ব্যারেটা বন্দুকের কুয়োর নীচে ভূপতন।
সম্বিৎ ফিরতেই ন্যাড়া জেঠু একটা হিংস্র লাফ দিয়ে পাঁচ ধাপ নীচে এসে পড়লেন তাঁর রিভলভারটার কাছেই। সঙ্গেসঙ্গেই শোনা গেল বিলি গিলচারের গমগমে গলার আওয়াজ— উঁহু উঁহু উঁহু, মাটিতে পড়ে যাওয়া বন্দুকটা ছোঁওয়ার মূর্খামি আমি যেন কাউকে করতে না দেখি। আশা করি তোমরা ঠিকই দেখতে পাচ্ছ, আমার পিস্তলটা আমি তাগ করে রেখেছি সোজাসুজি আমার প্রিয়তম বন্ধু এরিক দত্তের দিকেই।
আশ্চর্য বিলি গিলচারের কথাগুলো শুনতে শুনতে পুরো পরিস্থিতিটা খতিয়ে ভাবতে থাকল। গিলচার নিশ্চয়ই প্রথমে ড: ব্রহ্ম ঠাকুরকে কোথাও লুকিয়ে রেখে, তারপর ফিরে এসেছে তার এই গোপন ঠেকে। আসবার উদ্দেশ্য— এরিক দত্তের সঙ্গে মোকাবিলা। এই কুয়োয় নামবার আগে সে নির্ঘাত ওঙ্গে চৌধুরি আর কিশিমোতোকে দেখে ফ্যালে। ওরা তো গোপনে পাহারা দিচ্ছিল ওপরটায়! সে তাদের মহড়া নিয়েছে এবং মনে হচ্ছে, ঘায়েলও করেছে। গিলচারের হাতে ধরা না পড়লে এবং আহত না হলে ওরা নিশ্চয়ই যথাসময়ে ফোন করে জানাত! এখন তা হলে উপায়? কীভাবে সামলাবে সে অস্ত্রধারী গিলচারকে?
বিলি গিলচারের বন্দুক সত্যিই এরিকের বুকের দিকে তাগ করা আছে। এই পরিস্থিতিতে কোনওরকম চালাকি করতে পারবে না আশ্চর্য। ভয়ংকর ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। সেই ঝুঁকি নেওয়া যাবে না। তবে অন্য একটা পথ আছে বাঁচবার। গিলচারকে অন্য ব্রহ্মাণ্ড থেকে ভবিষ্যতের বার্তা বহনকারী ব্রহ্ম ঠাকুরের প্রোজেকশনের জানিয়ে যাওয়া কথাগুলো বলতেই হবে। এইরকমভাবে কার্যকলাপ চলতে থাকলে যে ব্রহ্ম ঠাকুর একা মরবেন না, অপঘাত মৃত্যু নাচছে বিলি গিলচারের কপালেও— সেটা বলে দিলে যদি গিলচার নিজেকে সংশোধন করে বা এই ধরনের শয়তানি থেকে নিজেকে বিরত করে! এসব কথা দ্রুত চিন্তা করছিল আশ্চর্য। এটা বলা ছাড়া আর তো অন্য কোনও উপায় নেই। স্পষ্ট বোঝাই যাচ্ছে তাদের নিয়ে মারাত্মক কিছু একটা করতে চলেছে উইলিয়াম ‘বিলি’ গিলচার।
গিলচার হাতের বন্দুকটা লক্ষ্যে স্থির রেখে সিঁড়ি দিয়ে আরও তিনধাপ নেমে এসে এরিককে বললেন— তোমার প্রাণের বন্ধু টেগোরের একটা হিল্লে করে দিয়ে এলাম। এবার তোমার পালা। তা তোমার এইসব ‘শৌখিন যাত্রাপার্টি’সুলভ সঙ্গীসাথীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে কী করে বল তো? কিশিমোতোর ট্রানসমিটার তো বন্ধ! এই ন্যাড়া বুড়ো আর হিরোমার্কা ছুঁড়ো— এরা আমাদানি হল কোত্থেকে? এরা বাঁচাবে তোমায়? হাঃ হাঃ হাঃ! উলটে সবাই মিলে শাস্তি পাবে আমার হাতে। পিকনিক করবে আমার কারাগারে বন্দি হয়ে! বলব নাকি সবাইকে, কাল আমার উপর ক্যারাটে ফলাতে গিয়ে তোমার কী দশাটাই না হয়েছিল? এখনও ল্যাংচাচ্ছ নিশ্চয়ই?
এমন সময় খুব দ্রুত কয়েকটা ঘটনা ঘটে গেল। বিলি গিলচারের হাতে বেমক্কা একটা ক্যারাটে-লাথি এসে লাগল বটে, তবে তা মারলেন অন্য এক ব্যক্তি। লাথিটা লাগবার আগে মুহূর্তের ভগ্নাংশের মধ্যে শোনা গেছিল এক সড়সড় শব্দ— সিঁড়িটার উলটোদিকে ঝুলে থাকা অশ্বত্থ গাছের লম্বা ঝুরি বেয়ে নেমে এসেছিলেন কেউ। আওয়াজটা শুনে হতচকিত হয়ে সেদিকে তাকিয়েছিল বিলি। কিছু বুঝে ওঠবার আগেই, হাতে বলিষ্ঠ এক পদাঘাত খেয়ে তার পিস্তলটি হাতছাড়া হয়ে যায়। এবং এরপর এত কাণ্ড ঘটানোর কুশীলব শ্রীযুক্ত ওঙ্গে চৌধুরী ব্যালেন্স হারানো বিলি গিলচারকে তার জামা ধরে টেনে দাঁড় করান। বজ্রমুষ্ঠিতে গলা টিপে ধরে তাঁর নিজস্ব উচ্চারণে ঘোষণা করেন— হেই ম্যান! ইওর গেম ইজ় আপ।
৩৫।
ব্রহ্ম ঠাকুরের জ্ঞান যখন ফিরল তখন আকাশে বেশ চড়া রোদ উঠে গেছে। কতটা সময় কেটেছে নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। ব্রহ্ম বালুতটে লম্বালম্বিভাবে উপুড় হয়ে পড়েছেন, তাঁর মাথাটা সমুদ্রের দিকে, পা জঙ্গলের দিকে। জল বাড়ছে, জোয়ার শুরু হচ্ছে এখন। মাঝেমাঝেই জল এসে লাগছে ব্রহ্মের মুখে, মাথায়। নুন জল ঢুকছে তাঁর মুখে। বমি পেয়ে যাচ্ছে। তবুও ব্রহ্ম উঠে দাঁড়াবার কোনও চেষ্টাই করলেন না।
তাঁকে ফেলে দেওয়ার সময় সম্ভবত দ্বীপের এদিকটায় কোনও স্থানীয় অধিবাসী বা সেন্টিনেলিজ় ছিল না। তবে যদি তারা থাকতও, তারা দেখতে পেত লোকটি স্বেচ্ছায় নেমে আসছে না। বরং তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। এতে তার উপর তাদের ক্রুদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা কমত। এটা মনেমনে হিসেব করেই ব্রহ্ম অবতরণের দ্বিতীয় অপশনটি বেছে নিয়েছিলেন।
ব্রহ্ম বুকে হেঁটে সরীসৃপের মতোই ধীরেধীরে সমুদ্রের দিকে এগোতে থাকলেন। এখন যতটা পারা যায় জলে মিশে থাকাই ভাল। বহু বছর আগে যখন আন্দামানে এসেছিলেন, ওঙ্গেদের দ্বীপে সফল অভিযানের পর তাঁর ইচ্ছে হয়েছিল, সেন্টিনেলিজ়দের আস্তানাতেও একবার ঢুঁ মারবেন। ওঙ্গে চৌধুরিও সঙ্গে আসতে রাজি হয়ে যান। একটা ছোট জাহাজে করে এই দ্বীপের দিকে আসা হয়েছিল, মাঝসমুদ্রে জাহাজটা নোঙর ফেলে দাঁড় করিয়ে জাহাজ থেকে ভাসানো হয়েছিল একটা ডিঙি। ওঙ্গে চৌধুরি আর তিনি যখন তীরের একশো গজের মধ্যে পৌঁছেছেন, তখন জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসেছিল দু’জন প্রায় নিরাবরণ মানুষ। তাদের হাতে তীর ধনুক, ধনুকের ছিলা লোকটির তুলনায় প্রায় দেড়গুণ দীর্ঘ। একটু পরেই তাদের সংকেত পেয়ে আরও জনাচারেক আদিম মানুষ সেই সৈকতে জড়ো হয়। ব্রহ্ম ঠাকুররা বিপদ বুঝে কোনওরকমে সেই ভেলায় সোজা হয়ে উঠে দাঁড়ান। ব্রহ্মের দু’হাতে ধরা ছিল দু’টি নারকেল। ওঙ্গে চৌধুরির উঁচু করা হাতের একটিতে ছিল একটা প্লাস্টিকের ঝুড়ি, অন্যটাতে প্লাস্টিকের গামলা। এগুলো আসলে বন্ধুত্বের চিহ্ন। দূর থেকেই বুঝিয়ে দেওয়া— তাঁরা বন্ধুভাবে এসেছেন। কিন্তু এসবে কোনও কাজই হয়নি। অবিলম্বে তীরে দাঁড়ানো ছ’জন সেন্টিনেলিজ় আকাশের দিকে তির ছুড়তে শুরু করে। সঙ্গে শুরু হয় তাদের তিড়িংবিড়িং নাচ এবং হাত দিয়ে দূরে চলে যাওয়ার ইশারা করা। এমনভাবে হিসেব করে তারা তির ছুড়েছিল, তিরগুলো একটা কোণাকুনি পথে সোজা ডিঙিতে এসে পড়ল। ব্রহ্মরা তৎক্ষণাৎ ডিঙিতে নিচু হয়ে বসে পড়েন, প্লাস্টিকের গামলা দিয়ে মাথা ঢেকে নেন। ভাগ্য ভাল কয়েকটি অতিরিক্ত গামলা ছিল নৌকাতে। সে যাত্রায় তাঁদের সেন্টিনেলিজ় অভিযানের ইতি ঘটেছিল এভাবেই।
সমুদ্রের দিকে আরও সরে গিয়ে জলে ডুবে সেন্টিনেলিজ়দের চোখের আড়ালে থাকবার যে নীতি নিয়েছেন ব্রহ্ম এখন, তা অন্যরকমভাবে অবলম্বন করেছিলেন ওঙ্গে দ্বীপের অভিযানে। সেখানে তাঁদের নিতে হয়েছিল গাছের আড়াল। তবে এখন গাছের আড়ালে যেতে গেলে তাঁকে উঠে দাঁড়াতে হবে, সেটা এখানে করা সম্ভব না, কারণ ব্রহ্ম এখানে একটি মৃতদেহের অভিনয় করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে বলে মনে করছেন। আশা করছেন, তাঁকে ভেসে আসা মৃতদেহ ভাবলে সেন্টিনেলিজ়দের তাঁর প্রতি আক্রোশ বা আগ্রহ, কোনটাই থাকবে না। তবে এটা ভাবতে ভাবতেই একটা গা হিম করা তথ্যের কথা মনে পড়ে গেল তাঁর। একবার রাতের অন্ধকারে এখানে, বুশ পুলিশের একটা ডিঙিতে করে নামিয়ে রেখে যাওয়া হয়েছিল ঝুড়ি চাপা দেওয়া কতগুলো মুরগি, লাল নীল সুতো আর কয়েকটা পুতুল। দিনকয়েক পরে বুশ পুলিশ এসে যা দেখে, তাতে তারা পরিষ্কার বার্তা পেয়ে যায়— সেন্টিনেলিজ়দের সঙ্গে মিশতে আসা চলবে না। মুরগিগুলোকে পাথর দিয়ে গলা কেটে, পুতুলগুলোর গলা মুচড়ে ছিঁড়ে বালি চাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল। সুতোগুলোর চিহ্ন ছিল না, সেগুলো হয়তো উড়ে গেছিল হাওয়ায়।
এসব কথা মনে পড়ায় ব্রহ্ম নিজেই নিজেকে সতর্ক করলেন। এগুলো ভাবলে আত্মবিশ্বাস তলানিতে পৌঁছবে, আত্মরক্ষার শক্তি কমবে। এখন বরং ভাবা দরকার ওঙ্গেদের দ্বীপে সফল অভিযানের কথা। ‘কোয়াসিমোদো’ ওরফে ড. কিশিমোতো সিনিয়রকে আদিম জনগোষ্ঠীর হাত থেকে উদ্ধার করে আনবার কথা ভাবাই এখন বুদ্ধিমানের কাজ। কী হয়েছিল সেখানে? অনেকদিন আগের কথা। তবুও ব্রহ্ম ক্রমশ বাড়তে থাকা খিদে তেষ্টা অগ্রাহ্য করে প্রাণপণে সেই অভিযানের কথা মনে করতে চেষ্টা করলেন।
এভাবে আরও ঘন্টা দেড়েক চলে গেল। ব্রহ্ম ধীরেধীরে এখন অনেকটাই ঢুকে এসেছেন সমুদ্রের মধ্যে। পুরো শরীর ভিজে, আলখাল্লাটা ভিজে চুপচুপ করছে। সমুদ্রের হাওয়ায় কেঁপেকেঁপে উঠছেন তিনি। উপুড় হয়ে শুয়ে থাকা অবস্থায় একবার বমিও করে ফেললেন। নিশ্চয়ই জ্বর এসে গেছে। এখনও সেন্টিনেলিজ়রা কেউ এদিকে আসেনি, অথবা এসে থাকলেও তাঁকে মৃতদেহ ভেবে পাত্তা দেয়নি। তাঁর চোখ বাঁধা, হাতও বাঁধা, পা খোলা থাকলেও নড়বেন না বলেই ঠিক করেছেন, তিনি জানবেন কী করে কেউ তাঁকে দেখছে কি না! তবে তাঁকে কেউ উদ্ধার না করলে এভাবে বেশিক্ষণ বাঁচা যাবে না। খিদে তেষ্টায় জলে ভিজে কতক্ষণ থাকবেন? শেষমেষ হয়তো অন্য পরিকল্পনা করতে হবে। উঠে দাঁড়াতেই হবে। তবে ব্রহ্ম নিজের মগজকে সচল রেখেছেন। প্রাণপনে মনে করছেন ওঙ্গেদের দ্বীপে তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা। অনেকটা মনেও পড়েছে।
ওঙ্গেদের দ্বীপে প্রথমেই নিজেদের লুকিয়ে রাখবার পরিকল্পনা করেছিলেন ওঙ্গে চৌধুরি এবং ব্রহ্ম। কারণ লুকিয়ে থেকেই জেনে নিতে হত জাপানি বিজ্ঞানী ওঙ্গেদের দ্বীপে এসে কোনও গণ্ডগোল পাকিয়েছেন কি না। ভেলা থেকে নেমেই ভেলাটা দু’জন মিলে সরিয়ে ফেলেছিলেন একটা ঝোপের আড়ালে। তারপর সেখানেই গুটিসুটি মেরে বসেছিলেন আধবেলা। সঙ্গে শুকনো খাবার আর অল্প জল। পরেরদিন একদম ভোর রাতে ওঙ্গে চৌধুরি নিজের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কয়েকটা গাছের তলায় রংবেরঙের পুঁতির মালা আর দেশলাই রেখে আসেন। অনেক পরে ওইসব গাছগুলোর কাছে গিয়ে দেখা গেল উপহারগুলো আর পড়ে নেই, অর্থাৎ ওঙ্গেরা তা গ্রহণ করেছে। এরপর ওঙ্গে চৌধুরি পরিচিত এক ওঙ্গে পুরুষের নাম ধরে ডাকাডাকি করলেন খানিকক্ষণ। তিনি এসে সাদরে তাঁকে নিয়ে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানালে অত্যন্ত সাবধানে ব্রহ্ম ঠাকুরের সঙ্গে তাঁর পরিচয় করিয়ে দেন তিনি। এই এতক্ষণ ব্রহ্ম আড়াল থেকে বেরোতে পারলেন। তখন তিনি হারিয়ে যাওয়া জাপানি বিজ্ঞানী সিনিয়র কিশিমোতোর ছবি দেখান। ওঙ্গে চৌধুরি আকারে ইঙ্গিতে আদিম মানুষটিকে বোঝান, এই লোকটিকে উদ্ধার করতেই এসেছেন আরেকজন সভ্য মানুষ। তার আসবার আর অন্য কোনও অসাধু উদ্দেশ্য নেই।
সিনিয়র কিশিমোতোকে ওঙ্গেরা শেষ পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছিল। কিশিমোতো তাঁর কাকার স্মৃতিচারণে উল্লেখ পাওয়া বিশেষ কিছুর সন্ধানে ওঙ্গেদের দ্বীপের যে অঞ্চলে যেতে চেয়েছিলেন, সেখানে অবশ্য যেতে দেওয়া হয়নি তাঁকে। সেই রহস্য অমীমাংসিতই থেকে গেছে। কিশিমোতোকে ওঁর এই অতিরিক্ত কৌতূহলী স্বভাবের জন্য গাছের লতাপাতা দিয়ে বেঁধে রেখেছিল ওরা। তবে অনাহারে রাখেনি। খেতে দিয়েছিল আস্ত মৌচাক আর বিশেষ এক ধরনের ফল। মৌচাক থেকে মধুপান করতে গিয়ে যথেচ্ছ মৌমাছির কামড় খেয়েছিলেন তিনি, গায়ে জ্বরও ছিল বেশ ভালই। তবুও ছাড়া পাওয়ার পর দ্বিগুণ উৎসাহে ডায়রিতে আঁকা একটি মানচিত্রের এক ঝলক দেখিয়েছিলেন ব্রহ্মকে। দেখিয়ে জানিয়েছিলেন, ওই মানচিত্র নিয়ে তাঁর পরবর্তী অভিযানের পরিকল্পনার কথা।
সিনিয়র কিশিমোতোর মধুপানের কথা মনে পড়ায় ব্রহ্ম ঠাকুরের আচ্ছা বিপদ হল! জলতেষ্টা আর খিদে দুটোই অসম্ভব বেড়ে গেল। ব্রহ্ম ভাবলেন, কোনও মনোরোগীর এ অবস্থা হলে তাকে কী পরামর্শ দিতেন তিনি? ঘুমিয়ে পড়া ছাড়া অন্য কোনও পথ নেই। হ্যাঁ এটাই এখন বাঁচবার রাস্তা। যে কোনওভাবে তাঁকে এখন ঘুমোতেই হবে।
(ক্রমশ)
ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র