ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • শব্দ ব্রহ্ম দ্রুম : পর্ব ২৩


    রূপম ইসলাম (June 9, 2023)
     

    পর্ব ২২

    বিলি গিলচারের হঠাৎ চিৎকারে হেলিকপ্টারের চালকের পাশে বসা মুশকো গুন্ডাটিকে এবার ঘুরে তাকাতেই হল।

    — শাট আপ টেগোর। শাট আপ। তুমি কাল রাতে বহুবার আমায় অপমান করেছ। ইনফ্যাক্ট বহুদিন ধরেই তুমি আমায় টার্গেট করে রেখেছ। পুরনো অতীতের কথাই যদি তুলি, তোমার রেসিস্ট মনোভাব একেবারে নগ্নভাবে সামনে আসবে। কী ধরনের নোংরামি মনে পোষণ করে তুমি স্টিফেন হকিংকে ইমেইল করেছিলে যে বিলি গিলচারের সঙ্গে তুমি কাজ করতে চাও না?

    — ওটা আমার একটা সেন্টিমেন্ট বিলি। তোমার কোনও দোষ ছিল না, আমি ক্ষমা চাইছি ওই চিঠির জন্য। কিন্তু দোষ করেছিলেন তোমার মাতামহ, মারাত্মক দোষ করেছিলেন। সেলুলার জেলের কাঠামোটা যতদিন থাকবে, ততদিন কোনও ভারতীয় ভুলবে না, স্বাধীনতার জন্য কী কষ্টটাই না পেয়েছে তাদের পূর্বপুরুষরা, আর সেই কষ্টের অন্যতম মূল কাণ্ডারী ছিলেন তোমারই দাদু ব্যারিসাহেব—

    — আমার দাদু ডেভিড ব্যারি কোনও অন্যায় করেননি টেগোর। স্টপ অ্যাকিউজ়িং আ ডিসিপ্লিনড অ্যান্ড ডেডিকেটেড গভর্নমেন্ট-সারভেন্ট অ্যান্ড অ্যান এক্সিলেন্ট জেলার। বরং তুমি স্বীকার করে নাও, তোমার পূর্বপুরুষ ছিল খুনী, অপরাধী। সে তার অপরাধের শাস্তি পাওয়ার জন্যই সেলুলার জেলে এসেছিল—

    ব্রহ্ম ঠাকুর বিলি গিলচারের থেকে নিজের চোখ সরিয়ে নিলেন। তারপর যখন ফিরে তাকালেন, তখন দেখা গেল তাঁর চোখে অবিনীত এক আত্মপ্রত্যয় ঝকঝক করছে। গম্ভীর গলায় ব্রহ্ম ঠাকুর বললেন— তুমি ঠিক বলেছ বিলি। আমার পূর্বপুরুষ ছিলেন খুনের আসামী। সেই শাস্তি ভোগ করতেই তিনি সেলুলার জেলে এসেছিলেন। কিন্তু সেই শাস্তি হওয়ার কথা ছিল আইনমাফিক। জেলার ব্যারিসাহেব কোনও আইন মানতেন বলে ইতিহাসের পাতা সাক্ষ্য দেয় না। বরং ব্যারিসাহেব বলতেন, তিনিই এখানকার ঈশ্বর, তাঁর আদেশই আইন। আচ্ছা বিলি, তুমি কি মনে কর? তোমার দাদু সত্যিই ঈশ্বর ছিলেন? নাকি এ ব্যাপারে একজন সার্টিফায়েড মনোরোগবিশেষজ্ঞের মতামত শুনবে? আমি যদি বলি ডেভিড ব্যারি লোকটা ছিল এক অসুস্থ মনোরোগী? একজন বিকৃতমনস্ক সাইকোপ্যাথ? ইতিহাসের এক কলঙ্কিত অধ্যায়ের কুখ্যাত রূপকার?

    ৩০।

    রৌদ্রোজ্বল সুন্দর সকাল। একটা জিপ ছুটে চলেছে পোর্ট ব্লেয়ার শহরের মধ্যে দিয়ে। জিপটায় ড্রাইভারসমেত পাঁচজন আরোহী। কিন্তু আলাদা করে চোখে পড়ছে ন্যাড়া মাথায় বুটিদার ফেট্টি বাঁধা লোকটিকে। তিনি কাঁপাকাঁপা হাতে একটা রিভলভার শক্ত করে ধরে রেখেছেন গাড়ির মেঝের দিকে তাগ করে, যাতে গাড়ির বাইরে থেকে আগ্নেয়াস্ত্রটা চট করে দেখা না যায়।

    আশ্চর্য জিজ্ঞেস করল— বন্দুকটা কি লোডেড?

    — অবশ্যই। মুকুন্দ অবস্থী আনলোডেড বন্দুক স্পর্শ করে না।

    — এটা হাতে নিয়ে বসে আছেন কেন বলুন তো? আপনার হাত তো এখনও কাঁপছে! একটা দুর্ঘটনা যদি ঘটে যায়…

    — মাই ডিয়ার আশ্চর্য। যদি দুর্ঘটনা ঘটে তবে তোমার বাজে বুকনি তার জন্য দায়ী হবে। আমি তো বলছি, রিল্যাক্স করো। টেনশন করবেই না একদম! শুধু কোথায় গুলি করতে হবে যথাসময়ে আমায় বলবে। ওটা তখন আমার দায়িত্ব। এখন চুপ করে তুমি সমুদ্রের শোভা দ্যাখো।

    এই মুহূর্তে সমুদ্রের ধারের রাস্তা দিয়েই গাড়িটা ছুটছিল। এবার শহরের ভিতরের দিকে বাঁক নিল। পোর্ট ব্লেয়ারের কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ ল্যান্ডমার্ক অতিক্রম করে শেষমেষ আশ্চর্যের বলে দেওয়া ঠিকানায় গিয়ে দাঁড়াল। এটা একটা নবনির্মিত হাসপাতাল। হাসপাতালের সামনে গাড়ি থেকে নামবার সময় আশ্চর্য অবস্থীসাহেবকে আরেকবার সতর্ক করল— আপনি কিন্তু আপনার বন্দুকটা লুকিয়ে রাখুন, প্লিজ়।

    — ডোন্ট ওয়রি মাই বয়। এসব নিয়ে চিন্তাই করবে না, লেকচারও দেবে না। বরং বিপ্লবের গল্প শোনো। কাম্পুচিয়ায় সেবার—

    উচ্ছ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করলেও কথাটা মাঝখানে থামিয়ে দিতে বাধ্য হলেন মুকুন্দ। আশ্চর্য তাঁর পাশে নেই, সে ইতিমধ্যেই খানিকটা এগিয়ে গেছে। অগত্যা জেঠু চলার গতি বাড়ালেন।

    আশ্চর্য হাসপাতালের মধ্যের করিডোর পেরিয়ে, পেছনের দরজাটা দিয়ে বেরনোমাত্রই বুড়ো অশ্বত্থ গাছটা দেখতে পেল। রোমাঞ্চিত হল সে গাছটার বয়স আন্দাজ করে, কম করে হলেও দুশো-আড়াইশো বছর তো হবেই, ঝুরির বাহুল্য দেখেই এটা অনুমান করা যাচ্ছে। পরিত্যক্ত কুয়োর পাশে পৌঁছে হাতটা বাড়িয়ে সে অশ্বত্থ গাছের পেছনে লুকনো ইঁটের সিঁড়িটা নির্দেশ করল সবাইকে। তার হাতে একটা হাতে আঁকা ম্যাপ, যেটা সে গতরাতের আগন্তুকের বর্ণনা অনুযায়ী এঁকে নিয়েছে। সেটা অনুযায়ীই সে গাছ এবং কুয়োটা খুঁজে পেয়েছে। কুয়োর নীচে নামবার সিঁড়িটার দিকে আঙুল দেখিয়ে সে সঙ্গীদের বলল— এই পথে আমাদের নীচে নামতে হবে। সিঁড়িটা যেখানে শেষ হবে, সেই দেওয়ালে একটা চৌকো গর্তের মধ্যে লুকনো তালা আছে। গুলি করে সেটা ভাঙতে হবে। তবেই লুকনো দরজা খুলবে। আর নীচে যদি বাই চান্স বিলি গিলচারের দেখা আমরা পাই, তবে তার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। একমাত্র সেই আমাদের বলতে পারবে ড: ব্রহ্ম ঠাকুরের সন্ধান। আরেকটা কাজও আছে, গুলি করে তালাটা ভাঙছি যে জন্য। আমাকে যা বলা হয়েছে তা যদি সত্যি হয়, তবে ওই লুকনো দরজার পেছনেই একটা ছোট্ট ঘরে বন্দি হয়ে আছেন এরিক দত্ত। অতএব তাঁকে মুক্ত করাই এখন আমাদের প্রথম কাজ।

    ড. কিশিমোতো, ওঙ্গে চৌধুরি, মুকুন্দ অবস্থীরা আশ্চর্যের পিছুপিছু লাইন করে নীচে নামলেন। যেহেতু সময়টা ভরা সকাল, চমৎকার রোদ উঠেছে, তাই অনেকটা নীচে হলেও ঠিকরে আসা রোদের আলোয় দেওয়ালগুলো দেখা যাচ্ছে। দেওয়ালের গায়ে গর্ত অনেকগুলোই আছে, কিন্তু একেবারে চৌকো একটা গর্তকে দেখে আশ্চর্য আলাদা করে চিনতে পারল। সে হাতটা ঢুকিয়ে দিল গর্তটার মধ্যে। পাশ থেকে ওঙ্গে চৌধুরি বললেন— সাবধান। সাপখোপ থাকতে পারে। বিষাক্ত পোকাও থাকতে পারে।

    আশ্চর্য হাতটা বার করে বলল— না, মি. চৌধুরি। ওসব কিছু নেই। এটা নিয়মিত ব্যবহার করা হয়। ভেতরে একটা কলকব্জা সত্যিই আছে। মি. অবস্থী, এবার আপনার বন্দুকটা আমায় দিন।

    মুকুন্দ অবস্থী চোখ কপালে তুলে বললেন—

    মানে?

    — মানে গর্তটার মধ্যে ফায়ার করে এই তালাটা ভাঙতে হবে। আপনার হাতটা যেভাবে কাঁপছে তাতে আপনাকে ফায়ার করতে দেওয়া যায় না—

    — ব্রাদার আর ইউ ক্রেজ়ি! শোনো শোনো, তুমি আমার ব্যাপারে কিছুই জানো না। একবার কাম্পুচিয়ায়—

    ন্যাড়া জেঠু মুকুন্দ অবস্থীর কাম্পুচিয়ার বিপ্লবের গল্প এবারেও শোনা হল না। একটা প্রচণ্ড আওয়াজে কেঁপে উঠলেন সবাই। চমকে দেখা গেল, গর্তটা থেকে প্রচণ্ড ধোঁয়া বেরুচ্ছে। আসলে ওঙ্গে চৌধুরি ইতিমধ্যেই ওখানে গুলি করেছেন। তিনি নিজের পিস্তলটা দেখিয়ে বললেন— তোমরা তর্ক করছিলে দেখে পকেট থেকে এটা বের করলাম। চিন্তা কোরো না। এখনও এটার লাইসেন্স আছে আমার। স্যরি মি. অবস্থী। আই হোপ ইউ উইল ডেফিনেটলি গেট আ সেকেন্ড চান্স টু ফায়ার ইয়োর গান!

    মুকুন্দ অবস্থী কটমট করে তাকালেন। কী বলবেন ভাবছেন। কড়া কিছু কথাই হয়তো বলতেন, কিন্তু সে সুযোগও মিলল না। বিকট জোরে কানের কাছেই ঘরঘর করে একটা শব্দ হওয়ায় প্রচণ্ড ভয় পেয়ে লাফিয়ে উঠলেন। সবাই দেখলেন, অদ্ভুত কায়দায় দেওয়ালটা ভেতরের দিকে ঢুকে যাচ্ছে।

    ন্যাড়া জেঠু মুকুন্দ অবস্থীর কাম্পুচিয়ার বিপ্লবের গল্প এবারেও শোনা হল না। একটা প্রচণ্ড আওয়াজে কেঁপে উঠলেন সবাই। চমকে দেখা গেল, গর্তটা থেকে প্রচণ্ড ধোঁয়া বেরুচ্ছে। আসলে ওঙ্গে চৌধুরি ইতিমধ্যেই ওখানে গুলি করেছেন। তিনি নিজের পিস্তলটা দেখিয়ে বললেন— তোমরা তর্ক করছিলে দেখে পকেট থেকে এটা বের করলাম। চিন্তা কোরো না। এখনও এটার লাইসেন্স আছে আমার।

    ৩১।

    বিলি গিলচারের ফরসা মুখটা রাগে লাল হয়ে উঠেছে। কাঁপতে কাঁপতে তিনি বললেন— টেগোর, তুমি ভুলে যেও না কোথায় বসে আছ তুমি। একদম মুখ সামলে কথা বলবে…

    ব্রহ্ম অবশ্য থামলেন না। আত্মস্থ ভঙ্গিতেই বলে চললেন— আমার দাদুকে আরও অনেকের মতোই জুতে দেওয়া হয়েছিল তেলের ঘানিতে, কলুর বলদের মতো। সারাদিন ধরে শেকল পরে তিনি ওই ঘানির চারিদিকে ঘুরতেন, আর তাঁর ঘুরবার ফলে বিরাট একটা চাকায় পেষাই হত নারকেল, তেল তৈরির জন্য। থামবার উপায় ছিল না, গতিও কমাতে পারতেন না। দিনে ৩০ পাউন্ড তেল তৈরির হুকুম ছিল যে! শোনো বিলি, একটা স্বাস্থ্যবান বলদ ওইভাবে দিনে ৯-১০ পাউন্ডের বেশি তেল তৈরি করতে পারে না, ৩০ পাউন্ড তৈরি করা একটা না খেতে পাওয়া, জল চাইলে বেতের পিটুনি খাওয়া তৃষ্ণার্ত মানুষের পক্ষে কী করে সম্ভব! তিনি পারতেন না। কেউই প্রায় পারতেন না। তারপর এই অপরাধে তাঁদের বিবস্ত্র করে একটা কাঠের তেপায়া স্ট্রাকচারে বেঁধে যথেচ্ছ পেটানো হত সন্ধেবেলায়—

    এ কথা বলতে বলতেই ব্রহ্ম ঠাকুরের চোখের কোলে স্পষ্ট হয়ে উঠল জলের রেখা।

    বিলি গিলচার সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করেই বললেন— সেলুলার জেলে কী শাস্তি হবে, তা ঠিক করবে ওখানকার কর্তৃপক্ষ আর তৎকালীন সরকার। কেন অতীত নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছ টেগোর? যতক্ষণ তোমার ধড়ে প্রাণ আছে, চারপাশের প্রকৃতির অপার্থিব সৌন্দর্য উপভোগ করে নাও বরং। নিজেকে একজন নিকৃষ্ট উগ্রপন্থীর বংশধর হিসেবে প্রতিপন্ন করবার, সাধ করে করুণরস আমদানি করবার তো তোমার কোনও প্রয়োজনই নেই হে! ঢপের জ্যোতিষচর্চা করে লোক ঠকিয়ে আর আমাদের মতো প্রথম বিশ্বের উন্নত জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মেলামেশা করে দিব্যি তো জীবনের একটা বড় অংশ কাটিয়ে দিলে। আমার পেছনে লাগতে আসা তোমার বিরাট বড় একটা ভুল, যার সংশোধনের আর কোনও সুযোগই আমি তোমায় দেব না। ওহে ক্যাপ্টেন, আমাদের পৌঁছতে আর কত দেরি? শোনো টেগোর, তোমাকে আমার এবং আমার বাণিজ্যিক পার্টনার, মহান শিল্পপতি এবং অস্ত্র ব্যবসায়ী আকুসির পক্ষ থেকে এখন দিচ্ছি বিনামূল্যে নতুন অঞ্চল পরিভ্রমণের সুযোগ। জারোয়ারা হিংস্র ঠিকই, তবুও ওদের কেউকেউ এখন সভ্য মানুষের সঙ্গে যোগাযোগে রাজি হয়েছে। একেবারে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে যারা, তারা হল সেন্টিনেলিজ়। ওদের ওখানেই, মানে সেন্টিনেলিজ়দের দ্বীপেই হেলিকপ্টার থেকে তোমায় নামিয়ে দেব। কী? এবার জমবে মজা— বলো? ফ্র্যাংকলি স্পীকিং, আমার নিজের ওখানে নামবার অবশ্য সাহস নেই, কে জানে যদি ওখানকার অসভ্যরা বিষতিরটির মারে! তা তুমিই আমাদের সবার হয়ে ঘুরে এস, কেমন? ফিরতে পারলে তোমার সেন্টিনেলিজ়দের সঙ্গে দিনরাত্রি কাটানোর অভিজ্ঞতা লিখে ফেলতে পারবে। গ্যারান্টি দিচ্ছি, আমাদের তৈরি বোমার চেয়েও ওটা চড়া দামে বিকোবে! আর এই যে—

    এই বলে বিলি পকেট থেকে বের করলেন একটা পিস্তল। হিংস্রভাবে হেসে বললেন— এটা মি. আকুসির দেওয়া একটা প্রীতি উপহার, বুঝলে ব্রামহো! আমি নিতে চাইনি, চরিত্রগতভাবে ভদ্রলোক তো, কুণ্ঠা রয়েই যায়— কিন্তু কী সুন্দর কাজে লাগছে বলো তো এখন! এই হল অস্ত্রের মহিমা, পলকের মধ্যেই মূল্যবোধ পালটে দেয়! নেহাত আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসেবেই এটা তাক করে রাখছি তোমার মুন্ডুর দিকে। ওখানে নামতে তুমি রাজি না হলে কী হবে, যাতে সহজে বুঝতে পার!

    এটা বলে নিজেই নিজের রসিকতায় মুগ্ধ হয়ে খ্যাক খ্যাক করে হাসতে থাকলেন কোঁকড়া চুলের মিষ্টি চেহারার সাহেব উইলিয়াম ‘বিলি’ গিলচার। হাসির দমকে তাঁর সোনালি চশমা নাকের সামনে নেমে এল খানিকটা।

    ব্রহ্ম ঠাকুরেরও মুখে হাসি ফেরত এল। এই সব বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে তাঁর দিকে কেউ বন্দুক তাগ না করলে যেন তিনি ঠিক ছন্দটাই পান না! বিলির পিস্তলটা দেখে তাঁর চোখ ঝকঝক করে উঠল। তিনি বললেন— নামব না মানে? এতো আমার স্বপ্ন! আগেরবার যখন এসেছিলাম, তখন জাহাজ থেকে ডিঙি ভাসিয়েও ওখানে নামতে পারিনি, কোনও কারণে সেন্টিনেলিজ়রা ঠিক সেই সময়েই খেপে উঠেছিল বলে। এবার হেলিকপ্টার থেকে নামলে ওরা নিশ্চয়ই ভাববে আকাশদেবতা নামছেন, ওরা দূরত্ব বজায় রাখবে, হয়তো খাতির-টাতিরও করবে। এই সুযোগটার জন্য বিলি, আমি আমরণ তোমার কাছে কৃতজ্ঞ থাকব, সরি ‘আজীবন’ কথাটা ভরসা করে বলতে পারছি না। তাই তোমরা চিন্তা কোরো না। আমি খুশি মনেই নামব। খালি যাওয়ার আগে আমার একটা সমস্যার সমাধান তুমি করে দিয়ে যাও—

    বিলি চোখ বড়বড় করে তাকালেন ব্রহ্মের দিকে। হাতে ধরা পিস্তলটা নাচাতে নাচাতে বললেন—  এখনও মুরোদ আছে তোমার রসিকতা করবার? তা আগে তোমার বাঁদিকে দেখে নাও—ওই যে দ্বীপটা, দেখতে পাচ্ছ? ওখানেই অভিনীত হবে দ্য গ্রেট ব্রামহো টেগোরের জীবন নাটকের একেবারে শেষ অঙ্ক। এবার বলে ফেল, কী তোমার সমস্যা। চট করে বলো তো দেখি— সময় আর বেশি বাকি নেই!

    (ক্রমশ)

    ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook