ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • ফোনে রং, মনে রাইট

    শ্রীজাত (May 20, 2023)
     

    পাপনের কাছে রোজ দুপুরবেলায় একটা ফোন আসত। ভুল করেই আসত, কিন্তু আসত ঠিকই। তার আগে পরিস্থিতিটা একটু বলা দরকার। আটের দশকের একেবারে শেষদিক, পাপন নাইনে পড়ে। সে-সময়ে মধ্যবিত্ত পাড়ায় যাদের বাড়িতে ফোন থাকত, তাদের রবীন্দ্রজয়ন্তীতে প্রধান অতিথি করা হত, এইরকম একটা অবস্থা। তা আমাদের পাড়ায় যে-তিনটে বাড়িতে ফোন ছিল, তার মধ্যে পাপনদের বাড়ি একটা। আমরা তাই পাপনকে বিকেলের ক্রিকেটে সহজে আউট করতাম না, কারণ আমরাও ওদের বাড়ি থেকে টুকটাক ফোন করতাম, বা আমাদের নামের ফোন ওদের বাড়িতে এলে পাপন হাঁক পেড়ে ডাক দিত।

    পাপনের বাবা ছিলেন সরকারি হাসপাতালের নামজাদা ডাক্তার, মা বেসরকারি কলেজের জাঁদরেল অধ্যাপক। দুজনকেই আমরা বেশ ভয় পেয়ে চলতাম। দুজনেই সকাল থেকে সন্ধে বাড়ির বাইরে থাকতেন, তাই ছুটির দিনে পাপন বাড়িতে একাই। এইরকম একখানা একাকী গরমের ছুটিতে ব্যাপারটা শুরু হয়। হ্যালো, পিন্টু বলছ?’ নামের একটি ফোনকল ঠিক বেলা তিনটে নাগাদ পাপনদের ফোনে আসতে থাকে। এখানে বলে নেওয়া দরকার, কণ্ঠটি সুমধুর এবং সুনিশ্চিতভাবেই কোনো মরমী কিশোরীর। পাপন তখন ‘ম্যায়নে প্যয়ার কিয়া’ দেখে ফেলেছে, পুজোর জামা প্যান্টে সে-ছাপ সে রেখে চলে। দেখেছে বলেই, প্রথম দিনই বুঝতে পেরেছিল, মেয়েটির গলার সঙ্গে ভাগ্যশ্রী’র খুব মিল।

    সঙ্গে যদিও এটাও বুঝতে পেরেছিল যে, তার নিজের সঙ্গে পিন্টুর কোনও মিল নেই। তাই প্রথম দিনই সে জানায়, ‘আমি পিন্টু নই। রং নাম্বার।’ এই বলে সে ক্রেডল-এ শান্ত রিসিভার নামিয়ে রাখে। কিন্তু যেটা হয়, সেটা হল, ওই পাগল-করা গরমের দুপুরে ফেরিওয়ালাদের হাঁককে টেক্কা দিয়ে পাপনের কানে ওই একটি নরম বাক্য এসে ধাক্কা দিতে থাকে। ‘হ্যালো, পিন্টু বলছ?’ সে-যুগে এসব ঘটনা হামেশাই ঘটত। ফোনের লাইন মাঝপথে বেঁকে অন্য কারও রাস্তায় ঢুকে পড়াটা স্বাভাবিকই ছিল একরকম। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল, সহজ ও স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু ওই গরম দুপুর, একাকী পাপন আর ওইরকম একটি আকুতিময় নরম গলা মিশিয়ে যে-ব্যাপারটা তৈরি হল, সেটা আর সহজ থাকল না। ক্যালকুলাসের মতো হয়ে উঠল অচিরেই।

    কিছুতেই সে-আকুতি পিন্টু অবধি পৌঁছয় না, কেননা রোজ দুপুরে এই ফোনটা পাপনের বাড়িতে আসতে থাকল। ‘হ্যালো, পিন্টু বলছ?’— তৃতীয়দিন যখন এই কণ্ঠটি পাপনের কানে এল, তখন সে নিঠুরের মতো এই করেছ ভাল ভেবে রিসিভার নামিয়ে রাখতে পারল না। বদলে বলে বসল, ‘আমি পিন্টু নই, পাপন। কিন্তু তুমি আমার সঙ্গেও কথা বলতে পারো।’

    হত না, যদি এই একদিনেই ব্যাপারটা মিটে যেত। কিন্তু বোঝা গেল যে, মেয়েটিরও স্কুলে গরমের ছুটি চলছে, তারও মা-বাবা সারাদিন বাড়ি থাকেন না, সে তাই দুপুরে তার মনের পিন্টুকে ফোনে খোঁজে। কিন্তু কিছুতেই সে-আকুতি পিন্টু অবধি পৌঁছয় না, কেননা রোজ দুপুরে এই ফোনটা পাপনের বাড়িতে আসতে থাকল। ‘হ্যালো, পিন্টু বলছ?’— তৃতীয়দিন যখন এই কণ্ঠটি পাপনের কানে এল, তখন সে নিঠুরের মতো এই করেছ ভাল ভেবে রিসিভার নামিয়ে রাখতে পারল না। বদলে বলে বসল, ‘আমি পিন্টু নই, পাপন। কিন্তু তুমি আমার সঙ্গেও কথা বলতে পারো।’

    এই শুরু হল কথা। যা বোঝা গেল, তা হচ্ছে এই যে, ক্লাস এইটের পম্পিকে ছেড়ে গেছে ক্লাস টেনের পিন্টু। গরমের ছুটি, তাই রোজকার স্কুল-করিডোরে দেখা হওয়াও বন্ধ, তার মধ্যে এই রং নম্বরের উটকো ঝামেলা। কিছুতেই পিন্টু পর্যন্ত পৌঁছনো যাচ্ছে না। এখন সহজ হিসেব বলে, ক্লাস টেন আর এইটের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে ক্লাস নাইন। যেখানে পাপন পড়ে। তাই রং নম্বর যে আদতে রাইট, সেটা বুঝতে পাপনের দেরি হল না। পাপন তখনও একা পুরুষ, কোনও নারীকে জীবনে পায়নি। পম্পির কণ্ঠ ও কাহিনি তার মনকে গরমের দুপুরের আইসক্রিমের মতোই গলিয়ে দিল। পম্পিও, পিন্টুর প্রতি সব ক্ষোভ, অভিমান, অভিযোগ পাপনের কাছে উগরে দিয়ে কেমন পাখির মতো হালকা হয়ে গেল। এবং একদিন বিকেলে, কাছাকাছির একটা বাসস্টপে তারা দুজন দেখা করল। তারপর যা হবার তা-ই হল। ‘ম্যায়নে প্যয়ার কিয়া’ সিজন টু ঘটে গেল ভারতীয় দর্শকদের অগোচরেই। টেলিফোন কোম্পানির একটি ভুল যে কত মহার্ঘ্য হয়ে পারে, আমাদের পম্পি আর পাপনই তার জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ। তাদের সম্পর্ক এখনও পাকাপোক্ত, সেইসব পুরনো টেলিফোনের ভারী রিসিভারের মতোই।

    গন্ডগোল হয়েছিল কেবল একটাই। এই কথা ও কাহিনির ফাঁকে পাপনের আসল নম্বরটা পম্পির চাওয়া হয়নি। আর পম্পির নম্বরও পাপন চেয়ে রাখেনি। তখন তাদের ফোনের চেয়ে মনে কথাই বেশি হত। বছরখানে পর আরেক গরমের ছুটির দুপুরে টেলিফোন কোম্পানি নিজের ভুল শুধরে নেওয়ায় পম্পির ডায়াল করা নম্বর ঠিক জায়গায় গিয়ে আঘাত করে, এবং পিন্টু ফোনটা তোলে। পম্পি এক বছরের অভ্যাসবশত বলে বলে, ‘হ্যালো, পাপন বলছ?’ তখন পিন্টুর মনের কী অবস্থা হয়েছিল, তা সহজেই অনুমেয়।

    ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র  

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook