ব্রহ্ম তেরচা দৃষ্টিতে তাকালেন নিজের হাতে ঝুলিয়ে রাখা রিভলভারটার দিকে। তিনি তো জানেনই যে রিভলভারটা ফাঁকা, ওতে গুলিটুলি ভরা নেই। বেশিরভাগ সময়েই থাকে না। ব্রহ্ম গোলাগুলি চালানোয় খুব একটা বিশ্বাস করেন না, তবে রিভলভার উঁচিয়ে ধরতে তাঁর বেশ ভালই লাগে। বিপক্ষকে ভয় দেখাতে পারলে যুবক বয়সের উত্তেজনা যেন ফেরত পান। এই ছোকরা কিশিমোতো শেষ কথাটা এমন তেরিয়াভাবে বলল, যেন এর প্রাণে ভয়ডর নেই। ব্রহ্ম ভাবলেন, দেব নাকি আরেকবার বন্দুকটা উঁচিয়ে ভয় দেখিয়ে? তারপর ভাবলেন— ধুস! অতিরিক্ত যাত্রাপালা হয়ে যাবে!
কিশিমোতো ডোন্টকেয়ার ভাব অব্যাহত রেখেই বললেন— শুনুন ড: ঠাকুর, একটা বিশেষ ব্যাপারে স্যর ক্যাভি বিশেষজ্ঞের মতামত দিচ্ছেন ঠিকই, তবে খালি হাতে নয়, উপযুক্ত পারিশ্রমিকের বিনিময়ে! আসলে ‘বিটিটু’ প্রকল্পের একটা অতি গোপন শাখায় স্যর ক্যাভি আইজ়্যাক প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দিয়েছেন, ঠিক ওই তিন বছর আগেই। একটা বন্ডে তিনি সইও করেছেন বলে শুনেছি, যাতে ১০০ শতাংশ গোপনীয়তা রক্ষা করায় তিনি চুক্তিবদ্ধ। তবে আপনি একটা ব্যাপার একদম সঠিক বলে ফেলেছেন। গবেষণাকেন্দ্রের সম্ভাব্য জায়গা সংক্রান্ত আপনার পর্যবেক্ষণ এবং অনুমান অভ্রান্ত। এই শাখার প্রধান কার্যালয় সত্যিই রস আইল্যান্ডে, ওখানকার জরাজীর্ণ এক প্রাচীন গির্জায়। এই দ্বীপটা আপাতদৃষ্টিতে পর্যটকে ঠাসা বলেই এটাকে নিয়ে কেউ সন্দেহ করতে পারেনি এতদিন। …যাই হোক, অনেক কথাই তো বলে ফেললাম এক ধাক্কায়। অত্যধিক তথ্যের বোমাবর্ষণ যাকে বলে! এক্ষুনি আরও কথা শুনতে চাইবেন নাকি ড: ঠাকুর? নাকি একটু বিরতি নেবেন?
ব্রহ্ম ঠাকুর নিরুত্তর রইলেন খানিকক্ষণ। ব্যথিতমুখে অন্যদিকে তাকালেন। তারপর চূড়ান্ত আক্ষেপের ভঙ্গিতে মাথা নাড়তে নাড়তে বললেন— কী বলছ কিশিমোতো! বিশ্বাস করতেই যে প্রাণ চায় না এসব! স্যর ক্যাভি সম্পর্কে আমি যা জেনেছিলাম, তিনি অত্যন্ত বিবেচক একজন মানুষ। আলাপ করেও মনে হয়েছিল তিনি মানুষের ভালর জন্য চিন্তা করেন। সেই তিনি এতটা আপস করবেন? অ্যাটমিক রিঅ্যাকটর নিয়ে গবেষণা যে যুদ্ধসামগ্রী উৎপাদনে অতি সহজেই ব্যবহৃত হতে পারে, তা কি তিনি জানেন না?
— শুধু খারাপটা ভাবছেন ডক্টর! কেন? এখানে একটা ওয়র্মহোলের সম্ভাবনা তো আছেই! সে নিয়ে কাজ এগোতে গেলেও তো পরমাণু গবেষণা জরুরি! আমার মনে হয়, ক্যাভি মোটেই কাজটাকে ‘কম্প্রোমাইজ়’ ভাবছেন না। তিনি মানুষের হিতাকাঙ্ক্ষাতেই কাজ করছেন।
ব্রহ্ম ঠাকুর আবার মাথা নেড়ে বললেন— নাহ্ কিশিমোতো। গন্ধটা অত্যন্ত সন্দেহজনক। ওয়র্মহোল নিয়ে কাজ হবে, স্যর ক্যাভি তাতে যোগদান করবেন, আর আমি জানব না? এরিক দত্ত জানবে না? কই, স্টিফেন হকিং তো কোনওদিন আমাদের এমন অন্ধকারে রাখেননি! বিটিটু প্রোজেক্টে বিলি গিলচার তো হকিং সাহেবেরই প্রতিনিধি! তবে দাঁড়াও দাঁড়াও! এরিক কি এসব জানে নাকি? সে এতসব জানে বলেই আন্দামানে আমায় নিয়ে আসবার জন্য এত উতলা হয়েছিল? আমার কিন্তু তা মনে হয় না, জানো! এতটা সমুদ্রসফর করে আমরা এলাম, এরিক কিছুই বলবে না? কিশিমোতো… কিশিমোতো… কিচ্ছু মিলছে না। কিছুতেই হিসেবটা মেলাতে পারছি না! বড্ড বুড়ো হয়ে গেলাম— মাথাও আর কাজ করতে চাইছে না— বোধহয় আমাকে দিয়ে আর কিছুই হবে না…
নিজেকে নিয়ে অসহায়ভাবে ক্ষুব্ধ, বৃদ্ধ সহকর্মীর এতটা আবেগে ভেসে না গিয়ে ‘ম্যাটার অফ ফ্যাক্ট’ ভঙ্গিতে কিশিমোতো বললেন— না না, ডক্টর, একটা বিষয় তো আপনি ঠিকই ধরেছেন! কাজটা আপাতদৃষ্টিতে গোলমেলে না লাগলেও নিজেদের মধ্যেই এই গোপনীয়তার বাড়াবাড়িটা বেশ সন্দেহজনকই বটে… এভাবে আমাদের মতো একটা গোপন গ্রুপ অফ সায়েন্টোলজিক্যাল অ্যাকটিভিস্টস— যারা মানবতার মুক্তিতে আস্থা রাখে, এলিয়েন ইন্টারভেনশনে বিশ্বাস করে, তাদের নিজস্ব বন্ডিং ঘেঁটে যেত তো বাধ্য! ঠিকই ডক্টর। এটা হওয়া উচিত ছিল না!
ব্রহ্মের চোখ হঠাৎ চকচক করে উঠল। তিনি বললেন—আরেহ, ভাল কথা মনে করালে তো! অনেকদিন পর এই ‘সায়েন্টোলজি’ কথাটা শুনলাম। ‘সায়েন্টোলজি’ ব্যাপারটা দারুণ একটা আইডিয়া, নো ডাউট। তোমার বাবা তো বিষয়টায় খুবই বিশ্বাসী, এই মতবাদের উদ্ভাবক এল. রন হাবার্ডের অনুগামীই তাঁকে বলা চলে। তবে কী জানো, হাবার্ডের সব কথা আমি আবার মানি না। এই নিয়ে তোমার বাবা, মানে সিনিয়র কিশিমোতোর সঙ্গে আমার কম তর্ক হয়নি। তোকিয়োতে তোমাদের বাড়িতে বসেই কত কথা-কাটাকাটি হয়েছে, সুস্বাদু অক্টোপাস সুশি, আদার আচার আর গ্রিন আনিয়ান সহযোগে খেতে খেতে।— ব্রহ্ম ঠাকুর জিভ দিয়ে ঠোঁটটা চেটেই মুখটা বিকৃত করে ফেললেন— তবে ‘চার্চ অব সায়েন্টোলজি’—হুঃ! তিতকুটে বিস্বাদ একটা ঢপবাজি! ধর্মের বিপরীতে দাঁড়িয়ে সেই তো আবার একটা ধর্মই বানালি রে বাবা! যত ঢপের চপ! শোনো হে জুনিয়র, মনে রেখো— ধর্ম মাত্রই পরিত্যাজ্য। একদম খারাপ একটা জিনিস। ওর ভুল প্রয়োগ হবেই, হতে বাধ্য— আর তাতেই যুদ্ধটা লাগবে, ভেদাভেদ তৈরি হবে। ঠিক যেমন প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা অনেক সময়ই নতুন প্রতিষ্ঠানের জন্ম দেয়। বিপ্লবী নেপোলিয়ন যেমন করে নতুন একনায়ক হয়ে ওঠেন। না না! ধর্মকে কোনওমতে উন্নত মানবসভ্যতায় আর ঢুকতে দেওয়া চলবে না। ওটা ছুঁচ হয়ে ঢুকবে, বেরবে ছুঁচোবাজির মতো তিড়িংবিড়িং করতে করতে। শোনো কিশিমোতো, শুনে নাও—আমি ‘চার্চ অফ সায়েন্টোলজি’তে একেবারেই বিশ্বাসী না। তোমাদের কয়েকজনের তৈরি করা ছাঁচে ঢালতে পারবে না আমায়, সে চেষ্টাই কোরো না। বেছে নিতে হলে ওই কাল্টের কেউকেউ যেমন মুক্তক্ষেত্র বা ‘ফ্রি জ়োন’ বেছে নিয়েছে, ওদের চার্চের আওতার বাইরে দাঁড়িয়ে, আমিও সেই দলেই থাকব।
পছন্দের বিষয় পেলে ব্রহ্ম বড্ড বেশি বকবক করেন। তাঁর আর স্থান-কাল-পাত্রের হুঁশ থাকে না। স্বাভাবিকভাবেই এখন এত বক্তৃতা কিশিমোতোর পোষাল না। তাঁকে খানিকটা বিরক্ত, খানিকটা অন্যমনস্ক দেখাচ্ছিল। তাঁর মাথায় এখন ঘুরছে অন্য কথা। তাঁবুটার বাইরে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে এলেন তিনি। ব্রহ্মও কিশিমোতোর দেখাদেখি আলখাল্লার বাঁ পকেটে (ডান পকেটের দিকটা তিনি একটা বিশেষ কারণে ব্যবহার করেন না) রিভলভারটা ঢুকিয়ে নিয়ে বেরিয়ে এলেন তাঁর পিছুপিছু। কিশিমোতো খোলা জায়গাটার এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখছিলেন কেউ তাঁদের দু’জনকে লক্ষ করছে কি না। চারপাশে তেমন কাউকে দেখা গেল না।
অস্থায়ী এই তাঁবুটার সামনের দিকে তাকালে সমুদ্রতট চোখে পড়ে। ওঁরা দুজনেই দেখতে পেলেন— সেখানে রাখা আছে চারটি স্পিডবোট। এই বোটগুলো ‘বিটিটু’ প্রকল্পের কাজেই ব্যবহৃত হচ্ছে। বোটগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই কিশিমোতো হঠাৎ বললেন— শুনুন ডক্টর, এখন এসব ধর্মতত্ত্ব নিয়ে কূটকাচালির সময় নয়। বরং এক কাজ করা যাক। চলুন, আপনাকে রস দ্বীপে ‘বিটিটু’-র নতুন গবেষণাগারে নিয়ে যাই। বিলির ওয়র্মহোল কনসেপ্টটার পেছনে কোনও ফাউল প্লে থাকবার আপনার সন্দেহটা ঠিক না ভুল, তার একটা এসপার-ওসপার হয়েই যাক। … এই, কে আছেন? বোটের সারেং কে এখন ফ্রি আছেন? চটপট আসুন তো! আর আপনিও চলে আসুন ড: ঠাকুর, বোটে উঠে পড়ি আমরা…
ব্রহ্ম ঠাকুর চট করে এগোলেন না। ভুরু কুঁচকে তাকালেন। কিশিমোতোর সম্পর্কে এখনও নিঃসন্দেহ হওয়া যাচ্ছে না— একটা দোলাচলে ভুগছেন তিনি। জাপানি তরুণের এই প্রস্তাব একটা ফাঁদও তো হতে পারে!
১২।
শ্রদ্ধেয় ছদ্মবেশশিল্পী বাপন শিকদার আশ্চর্যকে বললেন— শোনো হে সুপারতারকা। এতো ছটফট করলে পরে ব্রেকআপ হবে, মেকআপ হবে না। এরপর যদি ওরকম উচাটন হয়েছ, রাম-চাটন খেতে হবে। একেবারে স্থির হয়ে স্ট্যাচু হয়ে বসবে। নইলে স্মৃতিভল্লুকের জায়গায় বানিয়ে দেব তোমার মুণ্ডু, আমার মাথা! তখন বুঝবে মজা! আমার তো একটা রেপুটেশন আছে! সেটা খারাপ করা চলবে না একদম। তাহলে কিন্তু বাপন শিকদারকে পাবে না। অন্য লোকও তো আছে ছদ্মবেশের লাইনে। ফিলিপ ঘোষ চলবে? অথবা ধরো রসুল সিনহা?
— না না বাপনদা। আমার বাপন শিকদারকেই চাই। আপনি যাকে বলে— রং মাখানো, টুপি পরানো, মানুষের ভোল পালটানোর খেলায় একেবারে আদি এবং অকৃত্রিম ব্যক্তিত্ব। কথা দিচ্ছি, আমি আর নড়বচড়ব না। একেবারে নট নড়নচড়ন নট কিচ্ছু। আসলে তখন কী যেন একটা হল। একটা কারেন্ট লাগবার মতো ব্যাপার হল। আপনি শকটক দিলেন না তো বাপনদা?
বাপন শিকদার একমনে কাজ করে চলেছেন। আশ্চর্যের মুখে লাগানো হচ্ছে আঠা। তার উপরে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে পাতলা রবারের মতো চ্যাটচ্যাটে পদার্থ। আশ্চর্যের মুখটা একেবারেই চেনাশোনার বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে। মুখটা দেখে খুশি হয়ে ল্যুপে চালানো গানটার সুরে দুলেদুলে বাপন বললেন— দেখে এলাম। সব দেখে এলাম!
ভবতোষ কৌতূহলী চোখে তাকালেন তাঁর দিকে। বললেন— কী দেখে এলেন বাপনদা?
— দেখে এলাম। ভাল্লুকের কাটা মাথাগুলো সব সাজানো রয়েছে! দেখে এলাম!
এতক্ষণে বাপন, বেল্লিক উল্লুক খ্যাঁকশিয়াল থেকে ভাল্লুকে পৌঁছেছেন। শুনে খানিকটা নিশ্চিন্তই হলেন ভবতোষ। বললেন— কোথায় বাপনদা? কোথায় দেখলেন?
— কোথায় আবার? আমার মগজে। আমার মগজের রাস্তায় মগজের সারিসারি দোকান। সেই সব দোকানেই থরে থরে ভাল্লুকের মুণ্ডুগুলো সাজানো রয়েছে। সব-ওসব দেখে—
বাপন শিকদারের কথা শেষ হল না। মেকআপের চেয়ার থেকে ছিটকে উঠে দাঁড়াল আশ্চর্য। তার শরীরের মধ্যে দিয়ে বয়ে গেছে তীব্র আরেক ঝলক বিদ্যুৎ। এবারে সে আন্দাজ করতে পেরেছে কী এর উৎস। তার পকেটে রাখা ড: ব্রহ্ম ঠাকুরের বাড়ির চাবি থেকেই নির্ঘাত ওই কাণ্ড ঘটছে। গতকাল রাতে ব্রহ্ম চাবিটা আশ্চর্যের অজান্তেই রেখে দিয়েছিলেন তার পকেটে। সেই চাবিটাই বারবার শক দিচ্ছে? কিন্তু শক দেওয়ার কারণটা কী? আশ্চর্য ভাবতে চেষ্টা করল— কী কারণ হতে পারে। এখন মাঝেমাঝে চাবিটা কেঁপেকেঁপেও উঠছে, অর্থাৎ সেটা চলে গেছে ভাইব্রেশন মোডে। আশ্চর্যর মনে হল— অনভিপ্রেত কিছু একটা নিশ্চয়ই ঘটছে ব্রহ্মদার বাড়িতে। এভাবেই হয়তো চাবিটা তাকে সে খবর দিচ্ছে। চাবিটার মধ্যে এ’রকম সিগন্যালিং-এর ব্যবস্থা যে আছে, তা অবশ্য বলে যাননি ব্রহ্ম। নিশ্চয়ই শেষ মুহূর্তের তাড়াহুড়োয় এটা জানাতে ভুলে গেছেন।
মেকআপের চেয়ার থেকে লাফ দিয়ে উঠে পড়ায় বাপন শিকদার রেগে গেছেন। বেশি রেগে গেলে তাঁর মুখ খানিকটা বেঁকে যায়। তখন আ-কারান্ত শব্দগুলো খানিকটা অ্যা-কারান্ত হয়ে যায়। পেছন থেকে তিনি চিৎকার করছেন— ন্যা ন্যা! মেকঅ্যাপ-ক্যালীর এই অপম্যান অ্যামি সহ্য করব্যা ন্যা…
আশ্চর্য অবশ্য সে চিৎকারে কর্ণপাত করল না। এখন ওসবের সময় নেই। পরে তাঁকে বুঝিয়ে বললেই হবে। দরকার হলে পা ধরে ক্ষমা চেয়ে নেবে।
আধা-ভাল্লুক আধা-মানুষের মেকআপ নিয়েই বেরিয়ে এসে গাড়িতে উঠে আশ্চর্য ড্রাইভারকে বলল— কেদারনাথ! জলদি চলো। ব্রহ্মদার বাড়ি। ক্যুইক!
১৩।
কিশিমোতো একজন বোটের চালককে ডেকে বুঝিয়ে বললেন কোথায় যেতে হবে। তারপর ড: ঠাকুরকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আবার বললেন— আসুন ড: ঠাকুর। যেতে হলে দেরি করে লাভ নেই। একটু পরেই অন্ধকার হয়ে যাবে, আপনি বয়স্ক মানুষ, আপনার অসুবিধে হবে অন্য পাড়ে। শুনুন, আপনাকে আশ্বস্ত করে এটুকু এখন বলছি, আমিও এ মিশনের উদ্দেশ্য যে সুবিধের নয়— প্রথমে এমন কথাই ভেবেছিলাম। অসততা সন্দেহ করে প্রথমে আমি এই গবেষণার বিপক্ষেই দাঁড়িয়েছিলাম। তবে এখন আমি যে সে ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত, যে এটা মন্দই, তা বলতে পারছি না! যাই হোক না কেন, আমারও যথেষ্ট আগ্রহ আছে তাই বিষয়টা তলিয়ে দেখবার।
ব্রহ্ম বললেন— কিশিমোতো, তুমি কি ভাবছ আমি অকারণে কুডাক ডাকছি? কিছু প্রমাণ তো ইতিমধ্যেই আমি পেয়েছি যাতে এই সম্ভাবনাই প্রকট হচ্ছে! আমার কথার উপর ভরসা হয় না তোমার?
— বেশ, আপনার সন্দেহ যদি সত্যি হয় এবং তা যদি প্রমাণিত হয়, তবে আমাদের একজোট হতে হবে এর বিরুদ্ধে। আমরা কে কে কতটা একজোট, বা আদৌ একজোট কি না, তা তো জানি না! তাই বিলি গিলচারের দাবির প্রতি এখনও আস্থা রেখেছি। অবশ্য আস্থা না রেখে যে উপায়ও নেই, সে ইঙ্গিত বিলির কথাতেই আমি পেয়েছি। চলুন, রসদ্বীপের উদ্দেশ্যে এক্ষুনি রওনা হই। পথে আপনাকে সেসব কথা খুলে বলছি…
ব্রহ্ম ঠাকুর এবারে আর আপত্তি করলেন। পাটাতনে পা দিয়ে বোটে উঠে এলেন তিনি।
বোট চলতে শুরু করেছে। ঘন সবুজ সমুদ্রের জল। ফেব্রুয়ারি মাস, তাই বৃষ্টি নেই। এখন বিকেল। আকাশ ঘন নীল। ছবির মতো লাগছে। এখানকার জলে সামুদ্রিক শ্যাওলার পর্যাপ্ত উপস্থিতিই এমন রঙের কারণ। স্পিডবোটের গতি তৈরি করছে সাদা ফেনা। ফেনা কেটে ভুটভুট আওয়াজ তুলে এগিয়ে চলেছে বোট। বোটের চালক জানালেন, চল্লিশ মিনিট লাগবে রস-এ পৌঁছতে…
(ক্রমশ)
ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র