ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • গামা বেড়াল : পর্ব ১


    পম্পা বিশ্বাস (January 21, 2023)
     

    অতঃপর? অফিস থেকে ফিরে এসে চা-জলখাবারের আশায় চৌকি-আসীন। ক্রমে আধশোয়া। খাবার আনবে মেজ বৌদি। … রুবেন্সের এক শরীরী নারী। মাঘনবৎ গাত্রবর্ণ। কোমলাঙ্গী। তবে অঙ্গের দিকেই শুধু নজর যায়। মুখমণ্ডলে নয়। খুলির মধ্যে গ্রে-ম্যাটার কোথায়? বুদ্ধিহীনা মেয়েছেলে বিশেষ। হুঁঃ! বেশির ভাগ মেয়েলোকই তাই। শরীরসর্বস্ব। কেউ নবনীতার মতা নয়। নবনীতা, তুমি এক দূরতম দ্বীপ…। অনেকদিন বাদে এমন এক বিরল মানবী পাওয় গেছে। শরীরে এবং মনীষায় সমুজ্জল। নবনীতার উপস্থিতি ক্রমেই রক্তের মধ্যে ঢুকে যাছে। এই রোমাঞ্চকর প্রবেশ-প্রক্রিয়া কী এক উন্মাদ-উচাটন ভাব আনয়ন করছে।

    এর আগে বিবাহ-প্যাঁচে যাকে দু-পায়ের আলিঙ্গনে পাওয়া গিয়েছিল, সে এখন জ্যান্ত ঝুলছে দেওয়ালে। ছবি হয়ে। কেন জ্যান্ত? না, তাকে ডিভোর্স করতে বাধ্য করিয়েছে, এই শর্মা। এই পদ্মনাভ। আর, ছবির সুন্দরী হল, বুগলি।

    দাড়ি-গোঁফের বাড়বাড়ন্তময় পদ্মনাভ সাইকেল-চক্করে যে-সময়ে রাস্তা দাপাত বুগলিদের বস্তিঘরের সামনে, বুগলি তখন চেয়ে-চেয়ে দেখত এই জংলা দাড়ি-গোঁফের বেঁটে মস্তানকে। বুগলির অসহ্য সুন্দর অবয়বে আর পটলচেরা চোখে মুগ্ধতা দেখে পদ্মনাভ তখন জ্বলছে। ওই মেয়েকেই চাই। এবং সত্যি বলতে কী, পেতে কোনও অসুবিধাই হয়নি। নিজের ভাল রেজাল্টকে অবলম্বন করে অনেক বড়-বড় স্বপ্নঘূর্ণিতে ঘুরপাক খেতে-খেতে অবশেষে বয়স চলে যাই-চলে যাই অবস্থায় পরীক্ষা দিয়ে সরকারি করণিক হরন। এবং নিয়মিত মাইনেপ্রাপ্তির কারণে ভীষণ সুপাত্র। কাজেই বুগলি ঘরে এসেছিল বউ হয়ে। কিন্তু অশিক্ষিতের ঝাড় ছিল ওটা। ঝগড়াটে। তদুপরি তে-এঁটে গোঁয়ার। এবং সেই সঙ্গে ওর ছিল অসহ্য চাতুরি। তবুও ওকে অফিসে নিয়ে গিয়ে স্ত্রী বলে সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়েছে। সামর্থ্যের বাইরে গিয়েও রসেবশে রেখেছে। অথচ কাজের সূত্রে একদিন বারুইপুরে গিয়ে ফেরার ট্রেন থেকে পদ্মনাভ দেখতে পায়, বুগলি স্টেশনে একটা লোকের সঙ্গে কথা বলছে। বজবজ থেকে এক লাফে বারুইপুর! বেশ ঘনিষ্ঠ ভঙ্গি দুজনের।… ট্রেন থেকে পদ্মনাভের স্টেশনে লাফ। দেখ না দেখ, লোকটা কোথায় হাওয়া!

    ঘেঁটি ধরে বুগলিকে নিয়ে বাড়ি ফেরা। এবং প্রবল জিজ্ঞাসাবাদ…। কিন্তু বুগলি ক্রমাগত জেদ করতে থাকে যে, কোনও লোক-টোক ছিলই না। কিছুতেই স্বীকার করল না সত্যিটা।

    ‘তুমি ওখানে কী করছিলে?’

    ‘তোমাকে বলব কেন?’

    ‘বুগলি, ভাল হবে না বলছি! তোমায় বলতেই হবে।’

    ‘বলব না। কী করবে?’

    … পদ্মনাভকে মিথ্যা বলা? মালটার স্পর্ধায় সে হতভম্ব! আর সেই পলাতকটাকে তো কোনওদিন ভুলবেই না! একটা কারণ এই যে, ব্যাটাকে দেখতে অনেকটা পদ্মনাভেরই মতো। বেঁটে, গোঁফ-দাড়ি-আকীর্ণ মুখ, হালকা টাক, শরীরের গঠন ও দেহভঙ্গিতে মিল।… সেই সময়েই অফিসে নবনীতার যোগদান। কিন্তু আক্ষরিক অর্থে সে তখনও দূরতম দ্বীপই।

    বারুইপুর স্টেশনে দেখতে পাওয়া লোকটা কে ছিল? সেই জিঘাংসায় অনেক রাত বিনিদ্র কেটেছে। অথচ অশিক্ষিত-রূপসী বুগলি দিনকে দিন নিজের জেল্লা বাড়িয়েছে। আর আজ দ্যাখো, দেওয়ালে বুগলির বাস্ট ঝুলছে। ও ছিল মদিগ্লিয়ানির নারী। … সম্বিত ফিরল বউদির ডাকে, ‘পদ্ম, তুমি ঘুমোচ্ছ! ওঠো, ওঠো। চা-জলখাবার খাও।’

    ‘হুঁ।’

    পা-টা টানটান করতে গিয়ে নরম লোমশ শরীরে পা লাগল। ‘মানিপেনি’র গায়ে পা লেগে গেছে। মায়ের আদরের বিন্তি মেনি।

    সে বলল, ‘ম্যাঁও-ও-ও।’

    ‘ইচ্ছে করে করিনি রে। যা, যাঃ, মায়ের কাছে যা।’

    ‘বিন্তি আয় রে!’ বউদি ডাকল।

    ‘বউদি, মানিপেনির কানের পাতার এই অবস্থা হয়েছে? ক-দিন খেয়াল করিনি…। এত ক্ষত বেড়ে গেল? ওই গামা শয়তানের কাজ না? আজকাল কি প্রায়ই আসে?’

    ‘আর বোলো না। প্রায়ই এসে ওকে ঠেসে ধরে কান কামড়ায়। ব্যাটাকে তাড়াও।’

    ‘দেখছি দাঁড়াও। শায়েস্তা করে ছাড়ব।’

    মনে-মনে দাঁত কিড়মিড় করে— এত বাড় বেড়েছে? উন্ড অফ লাভের সংখ্যা এত?

    কানের পাতায় শুকনো-আধাশুকনো ক্ষত নিয়ে বউদির পায়ে পায়ে মানিপেনি চলে যায়। 

    খেতে-খেতে আবার ঝুলন্ত বাস্ট অনেক কিছু মনে পড়াচ্ছে। … বারুইপুরের পরের ঘটনা অফিসপাড়ায়। একদিন টিফিন করতে রাস্তায় বেরিয়ে দেখে, বেশ খানিকটা দূরে, উলটো ফুটপাথে একটা মোটাসোটা মাঝ চল্লিশের টেকোর সঙ্গে বুগলি কথা বলতে-বলতে একটা ট্যাক্সিতে ওঠার উপক্রম করছে। পদ্মনাভ লম্বা পা ফেলে রাস্তা পেরোতে শুরু করল। অমনি বুগলিও পদ্মকে দেখতে পেল। আর এক লাফে ট্যাক্সিতে লোকটাসুদ্ধ উঠে দে চম্পট। পদ্মনাভ তখন মাঝরাস্তায়। এত বড় বজ্জাতি! দেখতে পেয়েও এত বড় অবহেলা! খুন চড়ে গেছিল মাথায়। বাড়ি ফিরে জান কবুল উতোর-চাপান। এমনকী চড়-থাপ্পড় অবধি। কিন্তু বুগলির এক কথা, ‘আরে বাবা, লোকটাকে আমি চিনি না। তুমি কেন গোয়েন্দাগিরি করতে আসছিলে? আমার রাগ হয় না, না? মাথায় রক্ত চড়ে গেল। আর ওটাতে শেয়ারে উঠে পড়লাম। ভাগের ট্যাক্সি।’

    ‘কিন্তু তুই ওখানে গেছিলি কেন খানকি?’

    ‘তোর অফিসেই তো যাচ্ছিলাম খানকির ছেলে! নোংরা কথায় আমার সঙ্গে পারবি তো? বলছি, লোকটাকে আগে কোনওদিন দেখিনি।’       

    আবার মিথ্যে! পদ্মনাভর বুক জ্বলে যাচ্ছে। আর রাতে কিনা একে নিয়েই এক বিছানায়…! রাগে মুখটা বিকৃত হয়ে যাচ্ছিল। চোখে ছুটছিল আগুন। ঠোঁট ফাঁক। মনে হচ্ছিল লালা বেরিয়ে আসবে।

    বারুইপুরের পরের ঘটনা অফিসপাড়ায়। একদিন টিফিন করতে রাস্তায় বেরিয়ে দেখে, বেশ খানিকটা দূরে, উলটো ফুটপাথে একটা মোটাসোটা মাঝ চল্লিশের টেকোর সঙ্গে বুগলি কথা বলতে-বলতে একটা ট্যাক্সিতে ওঠার উপক্রম করছে। পদ্মনাভ লম্বা পা ফেলে রাস্তা পেরোতে শুরু করল। অমনি বুগলিও পদ্মকে দেখতে পেল। আর এক লাফে ট্যাক্সিতে লোকটাসুদ্ধ উঠে দে চম্পট। পদ্মনাভ তখন মাঝরাস্তায়। এত বড় বজ্জাতি! দেখতে পেয়েও এত বড় অবহেলা! খুন চড়ে গেছিল মাথায়। বাড়ি ফিরে জান কবুল উতোর-চাপান। এমনকী চড়-থাপ্পড় অবধি।

    এদিকে, অফিসে, নবনীতা ধীর গতিতে অনিবার্য লক্ষ্যে অনেক-অনেক কাছে চলে আসছিল। হ্যাঁ, নবনীতা। ডিভোর্সি। তিন বছরের ছেলের মা। … রম্য। হাস্যোজ্জ্বল। স্মার্ট। মনীষাময়ী। কখনও পরিবেশ ওকে দিয়ে দু-কলি কবিতা বলিয়ে নেয়। আবার কখনও পরিস্থিতি ঠিক সময়ে কোনও ক্লাসিকের সঠিক সংলাপটা ওর মুখে জুগিয়ে দেয়। চমৎকারিত্বের এক উজ্জ্বল বলয় ওকে সারাক্ষণ ঘিরে রাখে। ওর সঙ্গে ময়দানে হাঁটতে ভাল লাগে। গঙ্গার ধারে বসতে ভাল লাগে। মাঝে মাঝে শরীর কি শরীরকে চায়? হয়তো। আর ঘরে সেই সময়ে বুগলি ধারাবাহিকভাবে বিবমিষা জাগাচ্ছিল। নবনীতার পদ্মর কাছে এগিয়ে আসাটা কোনও অঘটন নয়। কারণ পদ্ম নিশ্চিত জানে, যে, তাকে ঠেকানোর ক্ষমতা কোনও নারীর নেই। সে যতই রমণীরত্ন হোক না! এই বেঁটে, দাড়ি-গোঁফের জঙ্গলের কাছে মেয়েরা সবেগে ধাবিত হবে। কারণ, সে যে পদ্মনাভ!

    বিয়ের দু-বছর পরের ঘটনা মনে পড়ছে। বুগলি মামাবাড়ি যাবে বলে জানিয়ে দিচ্ছে। সে একাই যেতে চায়। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বুগলির সঙ্গ ধরে নিল পদ্ম। সর্বদাই সে সত্যের অনুসন্ধানে রত। তাছাড়াও অবাধ্যতা সে কদাপি বরদাস্ত করে না। ভোলে না অপমান। যে-মশাটা পদ্মর রক্ত খেয়ে যায়, সেই বিশেষ মশাটাকে পদ্ম হার্গিস বাঁচতে দেয় না। আর তার ল্যাজে পা দিয়ে কেউ পার পাবে?

    মামাবাড়িতে ঢোকার আগে যে মিষ্টির দোকানটা আছে, সেখানে মিষ্টি কিনছিল বুগলি। পদ্ম পৌঁছে গেল অকুস্থলে। মামা বললেন, ‘অনেকদিন বাদে এলে প্রবীর। কিন্তু তুমি এখানে? বুগলি আর ওর বর এক্ষুনি আসবে।’

    ‘আমি পদ্মনাভ। বুগলির বর।’

    ‘এ হে হে! ছি ছি! দেখো দিকি কী কাণ্ড! তোমাকে একেবারে প্রবীরের মতো দেখতে। বিয়েতে যেতে পারলাম নয়া…।’

    ‘কে প্রবীর?’

    ‘ও কেউ না। আমার ছেলের এক বন্ধু।’

    … আচ্ছা রে! বারুইপুর স্টেশনের পলাতকটা তাহলে বুগলির মামাতো দাদার বন্ধু! ভেতরে-ভেতরে ফুঁসছে ফুজিয়ামা। দুয়ে-দুয়ে চারই তো হয়!

    মামাবাড়িতে দুপুরের খাওয়া সেরে অ্যালবাম-ট্যালবাম ঘাঁটতে-ঘাঁটতে অনেকগুলো ছবিতেই আবিষ্কার করে সেই তাকে…। এ কী! এ তো সেই লোকটা! বুগলির সঙ্গে ট্যাক্সি চড়ে পালানো মোটাসোটা টেকোটা! এত চমক অপেক্ষা করে ছিল মামাবাড়িতে?

    ‘বুগলি, এটা কে?’

    ‘ছোট মামার শালা।’

    ‘এর সঙ্গেই তো ট্যাক্সি চড়ে ছিলে ডালহৌসিতে?’

    ‘এ সে না। সে তো একটা অচেনা লোক ছিল।’

    ‘ফের মিথ্যে কথা!’

    ‘আমি মিথ্যে কথা বলি না।’

    ‘প্রবীর কে?’

    ‘কে জানে, কে?’

    হিংস্রতায় দুই হাত মুঠো পাকায় পদ্ম। মনে-মনে গর্জায়— দাঁড়া রে শয়তানি! তোর ছেনালি আমি বের করছি। তোর জিভটা গোড়া থেকে ছিঁড়ে উপড়ে নেব। তবে আমার নাম পদ্মনাভ! তখন আর মিথ্যে বলতে পারবি না। করছি ব্যবস্থা।

    … যাই হোক না কেন, বুগলি নামক ডাস্টবিনটার সঙ্গে আর থাকা নয়। আগুনে পোড়াও শালা অসতীকে। যেভাবে হোক, ডিভোর্সটা পেতেই হবে। আগুন-ফাগুনের যুগ আর নেই! তবে অন্য অনেক কিছুই আছে। একবার ধ্যান দিলে কোনও সমস্যাই পদ্মের কাছে বাধা নয়।

    ‘বুগলি, আমার ট্রান্সফার হয়ে গেছে হাওড়ায়। ওখানে একটা ঘর ভাড়া নিতে হচ্ছে। দু-একদিনের মধ্যে পেয়ে যাব। সামনের সপ্তাহের মধ্যেই জয়েন করতে হবে। গোছগাছ শুরু করে দাও।’

    ‘সে কী! এখান থেকে অফিস গেলে হয় না?’

    ‘না। যা বললাম তাই করো।’

    ‘আমার খুব অসুবিধে হবে।’

    ‘কেম?’

    ‘সব বন্ধুরা এখানে। দেখা করতে গেলে অনেক দূর ঠেঙিয়ে আসতে হবে।’

    ‘চোপ।’

    মনে-মনে বলে, ফেঁসে গেছিস রে, ক-অক্ষর গো-মাংস। থুঃ!

    পরদিন অফিস-করিডোরে রঞ্জনের সঙ্গে দেখা। ‘পদ্ম, তোমার ঘর ভাড়া ফাইনাল করে এলাম। আমার বাড়ি থেকে অবশ্য মাইলখানেক দূরে হয়ে গেল। তুমি তো খুব বেশিদিনের জন্য নিচ্ছ না। বাড়িওয়ালাকে সেরকমই বলা আছে। বাড়িওয়ালা আমাদের পাড়ায় থাকেন।’

    ‘ওহ! মার্ভেলাস। এত তাড়াতাড়ি করতে পারবে ভাবিনি। আরে, তোমাদের মতো বন্ধুরা আছে বলেই বেঁচে আছি।’

    ‘ভাটিও না। তোমার প্ল্যানটা কী? বউকে ওখানে নিয়ে গিয়ে কী ট্রিটমেন্ট করবে? বাড়াবাড়ি করে ফেলো না। তোমায় খুব ভয় পাই গো।’

    ‘ওকে এমন ট্রিটমেন্ট দেব না, যে, জীবনে ভুলবে না! সুর সুর করে ডিভোর্স দিয়ে দেবে।’

    (চলবে)

    ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook