ভারতের শিল্পকলাকে অভ্যাস, নাড়াচাড়া এবং লালনপালনের জন্য ভারতীয় ভূ-খণ্ডে এবং বিভিন্ন দিকে ভারতীয় শিল্পসমাজের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হয়েছিল, এ একদম স্বাধীনতার গোড়ার দিকের কথা। সেই লালনপালনের প্রক্রিয়া ও প্রসার যে এখনও সমানভাবে সক্রিয় এবং গতিশীল, তা গত কয়েক দিনে ফের নতুন করে প্রমাণিত হল। রাজ্য ও সমকালের বিভিন্ন কঠিন সময়ে, এমনকী অতিমারী বিশেষত কোভিডকালেও শিল্পকলার এই ধারক-বাহক প্রতিষ্ঠান যেমন ‘সংগীত নাটক অকাদেমি’ বা ‘জোনাল কালচারাল সেন্টার’গুলি কোনওরকমভাবে আদৌ সক্রিয় ছিল কি না, উদাসীন হয়ে কিংবা গয়ংগচ্ছ করে তাদের কার্যপ্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছিল কি না, এমনটা অনেকেরই কৌতূহল ও সন্দেহের পরিসরও গড়ে তুলেছিল। যদিও, হপ্তাখানেক আগেই, ‘সংগীত নাটক অকাদেমি’ তাদের এ বছরের বিভিন্ন ক্ষেত্রের পুরস্কার প্রাপকদের তালিকা বের করেছে। এবং প্রতি বছরের নিয়মিত পুরস্কারপ্রাপ্তির তালিকার পাশাপাশি, এই বছরের জন্য বিশেষ করে, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষেও একটি পুরস্কারের ঘোষণা করেছে। এই বিশেষ পুরস্কারটির জন্য ৮৬ জন বর্ষীয়ান শিল্পী ও শিল্পবাহীর মনোনয়ন তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, যাঁদের বয়স ৭৫ বছরের বেশি এবং পূর্বে কোনওরকম পুরস্কারপ্রাপ্তি তাঁদের ঘটেনি। এই পুরস্কার স্মারকের পাশাপাশি ১ লক্ষ টাকা অর্থ পুরস্কারও ধার্য হয়েছে। কোনও সন্দেহ নেই, এই ‘অমৃত অ্যাওয়ার্ড’-এর যোগ্য মানুষ বহু রয়েছেন ভারতে, কিন্তু ৮৬ জনের তালিকায় তাঁরা জায়গা করে নিতে পারেননি। তদুপরি অকাদেমি-কে এই প্রয়াসের জন্য ভূয়সী প্রশংসা করতেই হচ্ছে।
অকাদেমি-র তরফে বিভিন্ন বার্ষিক পুরস্কারের পাশাপাশি এই অমৃত অ্যাওয়ার্ডও ঘোষিত হয়েছিল অকাদেমির কর্তৃপক্ষের মাধ্যমেই। বার্ষিক পুরস্কারগুলির মধ্যে রয়েছে তিনটে অন্যতম পুরস্কার— ‘সংগীত নাটক অকাদেমি’ পুরস্কার, যা কিনা কিংবদন্তি ও বিখ্যাত শিল্পীদের দেওয়া হয়। আছে ‘উস্তাদ বিসমিল্লা খাঁ যুব পুরস্কার’, যা ৪০ বছরের নিচে নৃত্য, নাটক ও সংগীতের সঙ্গে জড়িত শিল্পীদের জন্য। আর আছে ‘সংগীত নাটক অকাদেমি ফেলোশিপ’, যা হল অকাদেমির সর্বোচ্চ সম্মান। ২০২২ সালে অকাদেমি বিশাল বড় তালিকা প্রকাশ করেছে, আসলে তিন বছরের পুরস্কারপ্রাপ্তির তালিকা। ২০১৯, ‘২০, ‘২১ সালের। এই সবক’টা বছরের পুরস্কারের ঘোষণাই স্থগিত ছিল লকডাউন, অতিমারীর বিভিন্ন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কারণে। অনলাইনে সহস্র বর্ষীয়ান প্রখ্যাত শিল্পী ও স্কলারের নাম ঘুরে বেড়াচ্ছে তালিকা-সহ, কিন্তু অকাদেমি-র নিজস্ব ওয়েবসাইটে সেই তালিকার চিহ্নমাত্র নেই। এখনও সেখানে ২০১৮ সালের পুরস্কার তালিকা। আশা করা যায়, এই আপডেট করার জন্য আরও তিনটে বছর তারা নেবে না।
তাই, হপ্তাখানেক আগে অনেক মনোনীত শিল্পীর নামই প্রকাশ করা হয়। সেই তালিকায় এমন কিছু শিল্পীও রয়েছেন, যাঁরা এই ঘোষণায় দীর্ঘসূত্রিতা ও গড়িমসির জন্য ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত হলেও, শেষমেশ পুরস্কার গ্রহণে সম্মতও হয়েছেন। এভাবে দেরি হওয়ার ফলে বঞ্চিত, অপমানিত, অবহেলির হওয়ার ধারণা তৈরি হওয়াই স্বাভাবিক এবং তা জায়েজ। কিন্তু সেসব কথার হেঁচকি তুলে পুরস্কার গ্রহণের ঘনঘটাই বা কেন? নিজের সিদ্ধান্তে দৃঢ় হোন। প্রত্যাখ্যান করে দিন পুরস্কার! কিংবা, প্রস্তুত থাকুন সেই মনোনীত না হওয়ার তালিকার জন্য, যেখানে আছে সম্মান সহবৎ ও স্পোর্টসম্যান স্পিরিট দেখানোর জন্য পুরস্কার ঘোষণা।
ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র