ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • বিশ্বকাপের ডায়েরি: পর্ব ১


    অনুপম রায় (December 14, 2022)
     

    বিশ্বকাপের মাঠে প্রথমবার

    এক এয়ারপোর্ট ভত্তি লোক ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার জার্সি পরে মাঝরাতে এয়ারপোর্ট দাপিয়ে, কাঁপিয়ে ঘোরাঘুরি করছে। এটা কাতার না কলকাতা বোঝা দায় হলেও এটা কলকাতা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দরের ছবি। প্রথমে দেখলে ঠাহর হবে এটা কাতার বিমানবন্দর না কলকাতা! তারপর মনে হবে, কলকাতায় আর কোনও লোক কি বাকি আছে, না কি সব্বাই চলেছে ফুটবল বিশ্বকাপ দেখতে? কেবল ছেলেছোকরা নয়, বেশ বয়স্ক লোকজনও যাচ্ছেন। চারবছর পরের বিশ্বকাপ দেখতে পাবেন কী পাবেন না, সেই আশা না করে, কাতার অভিমুখে রওনা দিচ্ছেন। আমি কথাগুলো বিজ্ঞের মতো বলতে পারছি, কারণ আমিও এদেরই দলে, ফুটবল পাগল যারা। আমিও কাতার যাচ্ছি। মাঝরাতের প্লেন। কিন্তু বিমানবন্দর দেখে মনে হচ্ছে, তখনও যৌবনবতী সন্ধে। আমি যেরাতের কথা বলছি, তখনও কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা হয়নি। তখনও ব্রাজিল হেরে গিয়ে অর্ধেক কলকাতাকে মনে দাগা দেয়নি। অতএব, মাঝরাতে আকাশের পানসি হইহই করে কাতার চলল। 

    কাতার-এ নেমে ট্যাক্সি করে গেলাম হোটেল। ট্যাক্সিচালক, বাঙালি। বাংলাদেশের লোক। কাতার-এ দেখলাম প্রচুর বাঙালি, বিশষত বাংলাদেশি মানুষজন থাকেন। বাংলাদেশি রেস্তোরাঁ রাস্তার এদিকে-ওদিকে। এমনকী বাংলা হরফে নাম অবধি লেখা সেই সব রেস্তোরাঁর। দারুণ লাগল। এই যে কলকাতা থেকে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা এবং এখানে এসে বাংলাদেশের ফ্লেভার— এ তিনটের মিলমিশ একটা অবিশ্বাস্য় কম্বিনেশন। যাকে বলে ট্রুলি বাঙালি। 

    হোটেলে এক রাউন্ড ঘুমিয়ে নিয়ে সকালে উঠে ব্রেকফাস্ট করতে গেলাম। বাংলাদেশি একটি রেস্তোরাঁয়। তেল ছাড়া পরোটা আর মাংস দিয়ে প্রাতঃরাশ সারলাম। হোটেল ফিরে ফের এক রাউন্ড ঘুম দিয়ে উঠে রেডি হয়ে খেলা দেখতে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়লাম। 

    আমাদের কাছে টিকিট ছিল আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডস কোয়ার্টার ফাইনালের। কিন্তু তার আগের খেলা ব্রাজিল-ক্রোয়েশিয়ার। কিন্তু সেই খেলা ঘরে বসে দেখে আমাদের লুসেইল স্টেডিয়ামে পৌঁছতে দেরি হয়ে যেত। তাই আমরা অনেক আগে স্টেডিয়ামের কাছাকাছি পৌঁছে একটা জায়েন্ট স্ক্রিন খুঁজে বের করে, সেই স্ক্রিনে খেলা দেখার চেষ্টা করলাম। 

    টান টান উত্তেজনা, পেট গুরগুর আর  সেলিব্রেশন মুডের মধ্যে ধাঁই করে গোল করে রেজাল্ট সমান সমান করে দেওয়ার মধ্যে যে চমক রয়েছে, তা আর কিছুতেই নেই। আর এই যে অঘটন, সেটা ঘটল  ৮৩ হাজার দর্শকের সামনে। তার যে প্রতিক্রিয়া, সেটা মাঠে না থাকলে বোঝানো প্রায় অসম্ভব। টিভিতে ভাল খেলা দেখাই যায়। কিন্তু স্টেডিয়ামের উন্মাদনাটা অনুভব করা যায় না। ওটাই প্রাপ্তি।  

    স্টেডিয়ামের কাছে যে মেট্রো স্টেশন, সেখানে নেমে স্টেডিয়ামের কাছাকাছি পৌঁছে জায়েন্ট স্ক্রিন খুঁজতে প্রচুর প্রচুর হাঁটতে হল। প্রায় দেড়-দুঘন্টা হেঁটে একটা স্ক্রিন পেলাম। তাতে ব্রাজিল-ক্রোয়েশিয়ার ম্যাচ দেখলাম। ম্যাচ তো ৯০ মিনিটে শেষ হল না। ক্রোয়েশিয়ার তো দেখছি বেশির ভাগ ম্য়াচই এক্সট্রা টাইম অবধি গড়ায়। এবং তারপর পেনাল্টি শুট-আউট। কী জানি, এ বার সবার মনই বোধহয় খচখচ করছিল যে পেনাল্টি শুট-আউট হলে ব্রাজিল হয়তো হেরে যাবে। গেলও তাই। 

    কিন্তু আমরা এ বার তড়িঘড়ি ছুটলাম আমাদের স্টেডিয়াম এবং পরবর্তী খেলার উদ্দেশ্য়ে। এক তো আগেই হেঁটে হেঁটে পা খুলে আসছে, তার ওপর এই স্টেডিয়ামে আমরা সিট পেয়েছি ছ’তলায়। আর সিঁড়িগুলো বেজায় খাড়া। ভারতের যে কোনও পুরনো মন্দিরের মতো। উঠছি তো উঠছি। কিন্তু মন মনে বলছি, জীবনে প্রথম বিশ্বকাপের ম্যাচ স্বচক্ষে দেখছি, তা-ও কোয়ার্টার ফাইনাল। দুটোই বাঘা-বাঘা টিম। এটুকু কষ্ট করাই যেতে পারে।

    নিজেদের সিটে পৌঁছে দেখলাম, চারদিকে শুধু আর্জেন্টিনার সমর্থক। মাঠটা নীল আর সাদা রঙে ভর্তি। সারা মাঠে শ’খানেক নেদারল্যান্ড-এর সাপোর্টার আছে কি না সন্দেহ! খেলা দেখতে আসা দর্শকের এ রকম উন্মাদনা আগে সত্যি দেখিনি। আর এই উন্মাদনার একটা কারেন্ট যেন সবার মধ্যে ছড়িয়ে যায়। সারাক্ষণ তো মেসির জয়গান চলছেই। এর মধ্যে মেসি নামল প্র্যাকটিস-এ। আর তো স্টেডিয়ামকে ধরে রাখায় যায় না। ফেটে পড়ছে উল্লাস, উন্মাদনা আর উত্তেজনায়। 

    এর পর খেলা শুরু হল। খেলা নিয়ে কী আর বলব, সবাই তো নিশ্চয়ই টেলিভিশনে দেখেছে। তবে হ্যাঁ, টক্করের খেলা হয়েছে। নেদারল্যান্ডস শেষ মুহুর্তে, বলা যায় শেষ সেকেন্ডে যে ভাবে ফ্রি-কিক থেকে গোলটা শোধ করেছে, ওটাকেই বোধহয় ফুটবল ম্য়াজিক বলে। অঘটন হলে এমনটাই হওয়া উচিত। টান টান উত্তেজনা, পেট গুরগুর আর  সেলিব্রেশন মুডের মধ্যে ধাঁই করে গোল করে রেজাল্ট সমান সমান করে দেওয়ার মধ্যে যে চমক রয়েছে, তা আর কিছুতেই নেই। আর এই যে অঘটন, সেটা ঘটল  ৮৩ হাজার দর্শকের সামনে। তার যে প্রতিক্রিয়া, সেটা মাঠে না থাকলে বোঝানো প্রায় অসম্ভব। টিভিতে ভাল খেলা দেখাই যায়। কিন্তু স্টেডিয়ামের উন্মাদনাটা অনুভব করা যায় না। ওটাই প্রাপ্তি।  

    পেনাল্টি শুট-আউটের সময় প্লেয়ারদের যে টেনশন, কেউ মাথা নীচু, কেউ চোখ বন্ধ, চার-পাঁচজন মিলে একসঙ্গে কাঁধেকাধ মিলিয়ে জড়িয়ে রয়েছে, পেনাল্টি যখন হচ্ছে, তার উল্লাস আবার যখন মিস হচ্ছে, তার টেনশন আর হতাশা। তার পর আর্জেন্টিনার জিতে যাওয়া এবং নেদারল্যান্ডস-এর বিদায়। কারও কারও শেষ ওয়ার্ল্ডকাপের মর্মান্তিক শেষ। বিশ্বকাপের উঠোনে তাদের আর পা রাখা হবে না, তার কষ্টের সঙ্গে আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের আনন্দ মিশে একটা অদ্ভুত ব্যথা আর আনন্দের দাগ কেটে দিচ্ছিল মনে।  

    খেলা শেষে ফেরার সময় এল। হেঁটে হেঁটে যাব মেট্রো স্টেশনের দিকে। স্টেডিয়াম থেকে মেট্রো স্টেশন প্রায় ৪৫ মিনিট। হাজার হাজার লোক রাস্তায় হাঁটছে। আমাদের এখানকার অষ্টমীর ঠাকুর দেখার ভিড় আর ওখানে বিশ্বকাপ পুজোর ভিড় একই রকম। এমন একটা পরিবেশ, এমন একটা সামগ্রিক ছটফটানি যে আমার জীবনে পেলাম, এটা বিরাট একটা ব্যাপার। 

    অপেক্ষা করছি পরের কোয়ার্টার ফাইনাল দেখার। আমাদের কাছে ফ্রান্স-ইংল্যান্ডের টিকিট। অল-বয়েত স্টেডিয়ামে খেলা হবে। ওই স্টেডিয়ামের কাছাকাছি আবার একটা জায়েন্ট স্ক্রিন খুঁজে বের করতে হবে আমাদের।  আপাতত সেই সব ভাবনাচিন্তাই চলছে। 

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook