প্রাচীন প্রমাদ
১.
তুমি কি দেখেছ শিরা?
চাপা আলো, কানের ভিতরে, এমন নীলাভ শীত
বহুদিন স্বপ্নে আসে না
বন্ধুর মৃত্যু আসে, প্রেমিকার ছেড়ে চলে যাওয়া
অথচ গভীরে দেখি মেয়েটি অচেনা
বন্ধু খবর নেয় ঘুম ভাঙে, দেখা হয় পথে
স্বপ্নের শ্মশান থেকে রক্ত দাগ ধুয়ে মুছে যায়
সে এসে দাঁড়ায় নীচে
নাম ধরে ডাকে
এক থলি খই নিয়ে ঘুম থেকে দ্রুত নেমে আসি
২.
তোমাকে নগ্ন দেখব
তাই বুঝি পরিশ্রম সারি
এত চোখ, এত পর্দা, সূর্যের ঢেকে যাওয়া মেঘে
এমন মাতাল দিনে শাস্তির সামান্য আয়োজন
অথচ প্রকট হয়ে ঘরে
ঘুমিয়ে পড়লে জানি একেবারে শিশু হয়ে ওঠো
স্নেহশীল পিতা আমি
যৌনতা ভুলে তাই তোমাকে কন্যার মতো দেখে
যে-হাত কোমরে যেত, শুধরে নিই মাথার উপরে
আরও বাঁচো, স্নেহে, স্বপ্নে, এ-জীবন দীর্ঘায়ু পাক
৩.
চোখ বুজে গাইছে দেবতা
মায়ের মাথার কাছে ‘গীতা’ রেখে মেজোমাসি
রান্না ধরেছে
কেউ আসা বাকি আর? নাহলে বেরোতে হবে
দ্রুত
ছেলের গানের নীচে বাবার অজস্র কান্না ভাসে
দুপুর ফুরোয়
কে বসে পাশের ঘরে? এলোচুল, কোমরের নীচে
লম্বা শালোয়ারে তার লেখা আছে সংস্কৃত শ্লোক
ছেলেটি ড্রইং শিখবে,
বাবা চাইবে ঘর ফাঁকা হলে
ছেলেকে লুকিয়ে তাকে মা হওয়া শেখাতে আবারও!
৪.
শেষযাত্রা শ্মশান পেরিয়ে
রোজের অভ্যাসমতো
তেল নিতে দাঁড়াল দোকানে
সামনে বিয়ের গান, চেনা সাজে প্রিয় সে কিশোরী
আমার দুঃখের স্বপ্নে সুখী হতে দেখে তাকে
এবারও অবাক হই, ভাবি
যদি এ-পৃথিবী জানে ভালোবাসা ছিল
তবে আজ রাতে স্বামীর উঠোনে
প্রবল ঋতুস্রাবে ভেসে যাবে সাজানো বিছানা
অনেক তো দেরি হল
এবার সুযোগমতো বলে দাও মতের অমিলে
যে-ব্যথা দিচ্ছ তাকে, আমি তার কতটুকু নিলে
আমাকেই মেনে নিত তোমাদের লোলুপ পৃথিবী?
৫.
খাটিয়া দক্ষিণে মুখ,
কান্নার পদ্ধতি থাকে না
যে যেখানে ফাঁক পায়, দুনিয়ার শোক জড়ো করে
অস্থায়ী সংসার পাতে
রাত হয়,
বাড়ি ফিরে যায়
বন্ধুর মৃত্যুকে নিয়ে আমাদের গল্প শোনাতে
ঘুম ভাঙে
ভাগ্যিস, না হলে
কীভাবে বলব তাকে, অসময়ে যন্ত্রণার কথা
কীভাবে বলব মৃত্যু, হত্যাদৃশ্যে, গতকাল রাতে
যে-গুলিটি পাওয়া গেছে তার গায়ে আঙুলের ছাপ
এখনও আমাকে বলে মৃত্যু কিন্তু সমাধান নয়!