ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • ওদের কোথাও যাবার ছিল না


    আহসান ইকবাল (October 29, 2022)
     

    বিজ্ঞানীর স্ট্যাচু

    জোহরের নামাজ পড়তে গিয়েই আমরা কথাটা শুনতে পাই আর হতবুদ্ধি হয়ে যাই, ওরা এত সাহস পায় কী করে সেটা ভেবে। আমরা সবাই দৌড়ে, হেঁটে, স্লোগান দিতে-দিতে মিলিত হই। মসজিদের মাইকের কল্যাণে আরও অনেকে যুক্ত হলে আমাদের গতি আরও বাড়তে থাকে। আমরা জোয়ারের স্রোতের মতো বল্কাতে-বল্কাতে ছুটে চলি। আজ তো আর শুক্কুরবার নয় যে, দোকানপাট বন্ধ হয়ে যাবে! তাই, দাবানলের মতোই কথাটা ছড়িয়ে পড়েছিল আর সবাই পিল পিল করে দোকানের ঝাঁপ টেনে, বাজার বন্ধ করে, অফিস-কাছারি ফেলে শামিল হয়েছিল আমাদের সাথে। 

    এত মানুষের মিলন আর একই দাবিতে, একই লক্ষ্যের এই মিছিল আমাদের দাবিকে ন্যায্য করে তুলেছিল। আমাদের দাবি ন্যায্য না হলে কি আর এত মানুষ মেলে এই মিছিলে! সত্যের পক্ষে কাজকর্ম ফেলে, গলা ফাটিয়ে, সিনা ফুলিয়ে, হাতে হাত ধরে পথে কেন নামে মানুষ— যদি সেটা ন্যায় আর সত্য না হয়? আকাশ- বাতাস কাঁপিয়ে, সফেদ পাঞ্জাবি পরা মুষ্টিবদ্ধ হাত আকাশে উঁচিয়ে ‘নারায়ে তাকবীর’ বলে চিৎকার করে উঠলে ঢেউয়ের মতো হাজারও সফেদ পাঞ্জাবির হাতা অসহায়ের মতো গুটিয়ে, দৃঢ় মুষ্টি উন্মুক্ত করে; শত কণ্ঠ আল্লাহ্‌-র শ্রেষ্ঠত্বকে জানান দেয় চরাচর কাঁপিয়ে, ‘আল্লাহু আকবার!’ আমাদের সাদা পাঞ্জাবির হাতা, পায়জামার ঝুল, কওমি-হাক্কানী-পাঞ্জাবি-আফগানি-কিস্তি টুপিতে ঢাকা মাথার ওঠানামা, গতি সব কিছু মিলে এক শ্বেতশুভ্র অনন্ত অনলের কথা মনে করিয়ে দেয়। আমরা স্ফুলিঙ্গের মতো ফুটতে-ফুটতে মার্চের শুকনো ধুলো উড়িয়ে ছুটতে থাকলাম, যেন হযরত ওমরের দুরন্ত ঘোড়া ছুটেছে মরুর ধুলো উড়িয়ে— আমরা সেই তেজকে ধারণ করে চললাম আমাদের প্রাণপ্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-কে নাফরমানির হাত থেকে রক্ষা করতে ।    

    আমাদের কারো জানা ছিল না, দেশে এত-এত স্কুল-কলেজ আছে সেগুলোর কোনোটার সামনে কোনো স্ট্যাচু মানে মূর্তি আছে কি না! আমরা নামজাদা মুরারিচাঁদ, ব্রজমোহন, ব্রজলাল, কারমাইকেল এমন অনেক-অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কথা বলি, খুঁজি কিন্তু কোথাও এমন নজির পাই না যেখানে মূর্তি আছে। আর এইসব শুনে, জেনে আমাদের ক্রোধ আরও দ্বিগুণ হতে থাকে। কিন্তু ততক্ষণে আমরা পুলিশের বাধার মুখে পড়ে, আমাদের প্রাণের অধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনেক দূরে দাঁড়িয়ে পড়তে বাধ্য হই।

    সাদা দাগগুলো মাথা থেকে চুঁইয়ে কপাল, চশমা হয়ে কাঁধে-বুকে ছিটে পড়েছিল। পুলিশের বাধা পেয়ে আমরা যখন ফুঁসে উঠছিলাম, তখন নেতাদের সাথে সমঝোতায় কিছু নেতা, মূর্তির কাছে পৌঁছে গেছে দেখে, আমরা উৎসুক দর্শকের মতো শুধু তাকিয়েছিলাম; এই অবসরে আমরা ভেবে পাইনি, একদিনের মূর্তির গায়ে এত পাখি হাগু করল কেমন করে! পচা ডিম বা চুনকালি না তো?

    আমাদের সুরমা-টানা তেজি চোখের জ্যোতি মিথ্যা হতে পারে না; আমরা দূর থেকেই স্পষ্ট দেখতে পাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠের মাঝেই পুলিশ, নেতা, ছাত্র-কর্মচারীদের হই-হট্টগোলের ঠিক মধ্যে একটা মূর্তি অনড় দাঁড়িয়ে আছে। অবিকল মানুষের মতো, অবিকল এই প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানের শিক্ষকের মতো নোংরা, না-পাক চেহারা নিয়ে। গলায় ফুলের মালার মতো কী যেন আর সফেদ ফতুয়ার জায়গায় ধুলোরঙের ময়লা-ময়লা জামাকাপড় পরা। ঠায়-নিথর দাঁড়িয়ে থাকায় আমাদের তার জামাকাপড়ের ভাঁজগুলোকে খুব নিখুঁত বলে মনে হয়। আমরা বুঝে পাই না, এই তল্লাটে এমন নিখুঁত কারিগর কোথা থেকে এল যে, অবিকল আমাদের হেড স্যারের চেহারা গড়ে দিল! সব থেকে অবাক ব্যাপার, আমরা এত দূর থেকে হলপ করে বলতে পারি যে, আমরা স্পষ্ট দেখেছি তাকে একদম নিখুঁত মানুষের মতো মূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে; এমনকী অনেকদিন দাঁড়িয়ে থাকতে-থাকতে মূর্তির মাথায় পাখিরা হাগু করলে সাদা চুনের মতো যে-দাগ হয়, তা সমেত। সাদা দাগগুলো মাথা থেকে চুঁইয়ে কপাল, চশমা হয়ে কাঁধে-বুকে ছিটে পড়েছিল। পুলিশের বাধা পেয়ে আমরা যখন ফুঁসে উঠছিলাম, তখন নেতাদের সাথে সমঝোতায় কিছু নেতা, মূর্তির কাছে পৌঁছে গেছে দেখে, আমরা উৎসুক দর্শকের মতো শুধু তাকিয়েছিলাম; এই অবসরে আমরা ভেবে পাইনি, একদিনের মূর্তির গায়ে এত পাখি হাগু করল কেমন করে! পচা ডিম বা চুনকালি না তো?

    আমরা কিছু মুহূর্ত থমকে যাই, আমাদের কাছে স্কুলের মাঠে মূর্তি স্থাপনের কথাটা এর থেকেও বেশি গ্রহণীয় বলে মনে হয়। ভয়ে, রাগে, আমাদের আহত অনুভূতি বোধশূন্য হয়ে ওঠে। আমরা আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে মহান সৃষ্টিকর্তার শ্রেষ্ঠত্ব পুনরুদ্ধারের উদ্দেশ্যে হাঁক ছাড়ি, ‘নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবর!’  

    পাখির হাগু নিয়ে আমাদের গবেষণার আগেই আমরা সামনে থেকে নতুন করে হুংকার শুনে আবার জ্বলে উঠি— কিন্তু পুলিশের চাপে এগোতে পারি না, আবার সাহসও করি না! আমাদের সবার জানা ছিল পুলিশে ছুঁলে ৩২ ঘা আর সেই ঘা-এর ব্যথা জোগায়-জোগায়* আমাদের মনে করাবে তাদের কথা। তাই, দূর থেকেই আমরা আস্ফালন করতে থাকি। এক পর্যায়ে সামনের নেতাদের দেখাদেখি জুতো-স্যান্ডেল ছুঁড়ে মারতে শুরু করি আমরা। কিন্তু অনেক দূরে থাকায় আমাদের হালকা-পলকা স্যান্ডেল-জুতো অতদূর না পৌঁছালে আমরা পাশের দোকান থেকে প্রচুর ডিম কিনে নিয়ে আসি। প্রথম ছোঁড়া ডিমটা লাগতেই মূর্তিটা নড়ে ওঠে বলে আমাদের মনে হয়। আর আমরা অবাক হয়ে চোখ ডলে নিই, ধন্দে পড়ি; কারণ, আমাদের মনে হয় মূর্তিটা আমাদের দিকে মুখটা ঘুরিয়ে আবার আগের ভঙ্গিতে ফিরে যায়। ততক্ষণে ডিম মারার সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিতরা ইটের টুকরা, মাটির ঢেলা ছুঁড়তে থাকে এবং ভারী বর্ষণের মতো ডিম-ইটের টুকরা-মাটির ঢেলা মূর্তির গায়ে লাগায় সেটা শুধু কেঁপে-কেঁপে ওঠে। সম্ভ্রান্ত স্কুল কমিটি, আমাদের নেতারা এবং পুলিশ বাহিনী আমাদের এই সাঁড়াশি আক্রমণ দেখে দূর থেকে শুধু তাদের সন্তোষজনক টুথপেস্ট দিয়ে মাজা ঝকঝকে দাঁত বের করে দেখালে, আমরা আরও উৎসাহিত বোধ করি। ঠিক তখন একজন দূত এসে আমাদের জানায়, এই সেই কাফের হেডমাস্টার কাম বিজ্ঞান শিক্ষক, যে নিজেকে বিজ্ঞানী বলে মনে করে আর বলে যে, ‘মানুষ তো ধপাস কইর‍্যা আকাশ থেইক্ক্যা পড়ে নাই, গাছেও ধরে নাই, মানুষ ভূমিষ্ট হইছে তাঁর মাতৃ জঠর থেকে— বাবা মায়ের সঙ্গমের ফলে!’ 

    আমরা কিছু মুহূর্ত থমকে যাই, আমাদের কাছে স্কুলের মাঠে মূর্তি স্থাপনের কথাটা এর থেকেও বেশি গ্রহণীয় বলে মনে হয়। ভয়ে, রাগে, আমাদের আহত অনুভূতি বোধশূন্য হয়ে ওঠে। আমরা আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে মহান সৃষ্টিকর্তার শ্রেষ্ঠত্ব পুনরুদ্ধারের উদ্দেশ্যে হাঁক ছাড়ি, ‘নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবর!’   

    * অমাবস্যা, পূর্ণিমার সময়

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook