তখনও জহরলাল নেহেরু জন্মাননি, গান্ধীজির বয়স সবে তিন বছর। স্বাধীন ভারতবর্ষের কথা তো ছেড়েই দিলাম! তা আসতে তখনও আরও পঁচাত্তর বছর… সেই সময়কার সাপ্তাহিক ‘অমৃতবাজার পত্রিকা’র (২১ এপ্রিল, ১৮৭২) ‘কর্ম্মখালী’ বিজ্ঞাপন :
‘জেলা বর্দ্ধমানের অন্তঃপাতি গুষ্করা স্টেশনের ২ ক্রোশ পূর্ব্ব মাহাতী গ্ৰামস্থ ইংরাজি বঙ্গ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য আছে। মাসিক বেতন ৪০্|| এবং অবস্থান জন্য স্কুলের মধ্যে পাকা দোতলা ঘর বিনা ভাড়ায় প্রাপ্ত হইবেন। ঐ স্থানের জলবায়ু অতি স্বাস্থ্যকর। যাঁহাদের প্রধান শিক্ষকের পারদর্শিতা আছে অথবা যাহারা বি.এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কি অতি সামান্য নম্বরের জন্য অকৃতকার্য্য হইয়াছেন তাঁহাদিগের আবেদন সমধিক আদরণীয় হইবেক। এতদিন পর্যন্ত্য একটিই শিক্ষক দ্বারা কার্য্য নির্ব্বাহ হইতেছিল, কিন্তু এক্ষণে ঐ পদে এক জন স্থায়ী লোক নিযুক্ত করিবার মানসে পুনর্ব্বার বিজ্ঞাপন দেওয়া গেল|| নিম্নলিখিত ব্যক্তির সমীপে স্ব ২ প্রশংসা পত্র সমেত ইংরাজি আবেদন পত্র প্রেরণ করিতে হইবে।’
লক্ষণীয়, তৎকালীন ৪০ টাকা মাইনের পর, ফ্রি-তে স্বাস্থ্যকর স্থানে পাকা বাড়িতে থাকার হাতছানি। অল্পের জন্য বি.এ. ফেল যথেষ্ট সমাদৃত, অর্থাৎ অনুমান করে নেওয়া যায় পাক্কা ফেলরাও বিবেচনাতে থাকছেন।
সাপ্তাহিক ‘অমৃতবাজার পত্রিকা’য় প্রকাশিত আরও দুটি ‘কর্ম্মখালী’ বিজ্ঞাপনের কথা উল্লেখ করব এখানে। দুটোরই তারিখ : ১৬ এপ্রিল, ১৮৭০।
‘মেমারির ৪ ক্রোশ দূরে বাহার গ্ৰামের মধ্য শ্রেণী ইংরাজী স্কুলের নিমিত্ত প্রধান পণ্ডিত আবশ্যক। বেতন ১৫ টাকা। যাঁহারা নর্ম্মাল স্কুলের প্রথম শ্রেণীর পাঠ সমাপন করিয়া পরীক্ষোত্তীর্ণ হইয়াছেন, কেবল তাঁহারাই অবিলম্বে প্রার্থনা করিবেন।’
‘প্রধান শিক্ষকের পদ রংপুর জেলার কুণ্ডী গোপালপূরস্থ ইং বঙ্গ বিদ্যালয়ে। বেতন ৩৫ টাকা। ভূম্যাধিকারীর পুত্রকে প্রাইবেট পড়াইলে বাসা খরচ লাগিবে না। প্রবেশিকা পরীক্ষোত্তীর্ণ ব্যক্তিগন আবেদন করিবেন।’
স্কুল সার্ভিসের ঝুলি থেকে বেড়াল বেরিয়ে পড়ার ব্যাপক শোরগোলের কাকতালে সাপ্তাহিক ‘অমৃতবাজার পত্রিকা’র পাতায় চোখ পড়ল উনিশ শতকের সাতের দশকের ‘কর্ম্মখালী’র বিজ্ঞাপনে। অর্থাৎ, দেড়শো বছরের পুরনো দিনের হারানো বিজ্ঞাপন। তখন চাকরি নয়, চাকুরেরই অভাব। উনিশ শতকের শিক্ষা ও সচেতনতার ঢেউগুলো সেই সবে অখণ্ড বাংলার বুকে আছড়ে পড়ছে। তখনও তামাম বাংলার গ্রামে-গঞ্জে শিক্ষার্জনের ভরসা টোল ও পাঠশালা। লর্ড হার্ডিঞ্জের ১০১টি স্কুলের লক্ষ্য সম্পূর্ণতা পায়নি, বিদ্যাসাগরের হাতে গড়া কুড়িটি আদর্শ বিদ্যালয় (১৮৫৫-১৮৫৬) এবং স্ত্রীশিক্ষা প্রসারে প্রায় চল্লিশটি বালিকা বিদ্যালয় (১৮৫৭-১৮৫৮) হুগলি-নদিয়া-বর্ধমান-মেদিনীপুরে সবে চালু হয়েছে। এছাড়াও অখণ্ড বাংলার শিক্ষিত শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ যে ইতিউতি শিক্ষার আলোকবর্তিকাটি সযত্নে জ্বালিয়েছিলেন, তার অকাট্য প্রমাণ বোধহয় এই ‘শিক্ষক চাই’ বিজ্ঞাপনগুলি। একই বিজ্ঞাপন বার বার দেওয়া হচ্ছে দেখে বোঝা যাচ্ছে, পেশা হিসেবে শিক্ষকতায় কেউ আসতে চাইছেন না। যদিও এই অনীহার গল্প শুনেছি, গত শতকের ষাট-সত্তরের দশক অবধি বর্ধিষ্ণু পরিবারের ক্ষেত্রে বহাল ছিল। উনিশ শতকে মধ্যবিত্ত শিক্ষিত বাঙালির গড়পড়তা কর্মজীবন বলতে কেরানিগিরি। যদিও উচ্চশিক্ষা লাভের পর অনেক খ্যাতনামারা শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। উল্লেখ্য, শিক্ষাপ্রেমী বিদ্যাসাগর, মদনমোহন তর্কালঙ্কার, গিরিশচন্দ্র বিদ্যারত্ন, শিবনাথ শাস্ত্রী প্রমুখ। তবে সাধারণ মানুষের ভাবনায় তখন বোধহয় জনপ্রিয়তায় এগিয়ে ছিল ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হওয়া। পিছনে ফিরলে দেখা যাবে, সময়ের দাবি মেনে বাঙালির পছন্দের কর্মসংস্থান বারে বারে বদলেছে। বিশ শতকের চল্লিশ-পঞ্চাশ দশকের পাত্রপাত্রীর বিজ্ঞাপনে পাত্রের যোগ্যতার মাপকাঠিতে সর্বাগ্রে ছিল ব্যারিস্টার, অ্যাডভোকেট, ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার। পরবর্তীতে নয়ের দশকে এবং শতক বদলের কালে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারদের বাজার ছিল তুঙ্গে। এখন ইদানীং ডাক্তারি পেশার সম্মান তথা গ্রহণযোগ্যতা বজায় থাকলেও ইঞ্জিনিয়ারদের সেই কদর নেই। বরং তুল্যমূল্যের বিচারে আর আর্থিক সঙ্গতির নিরিখে গত দু’দশকে শিক্ষকতার পেশায় মধ্যবিত্ত বাঙালির ঝোঁক বেড়েছে। পেশার চাহিদা বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে তাকে ঘিরে প্রতিযোগী তথা প্রতিযোগিতার বাজার তুঙ্গে, আর এই বিপুল বাজারের অন্ধিসন্ধিতেই ঘাপটি মেরে থাকে কালোবাজারি। যাই হোক, এই সময়ের কথা থাক, আমাদের আলোচ্য যে-সময়কাল, সেখানে কিন্তু শিক্ষকতার কোনও বাজারই তখন গড়ে ওঠেনি। ফলে সেই পেশায় প্রবেশের জন্য স্বাস্থ্যকর জলবায়ু, বাসা ভাড়া ফ্রি করে দেওয়ার প্রলোভন। আসুন, আরও কয়েকটি ‘কর্ম্মখালী’র বিজ্ঞাপনে চোখ রাখি—
‘দিনাজপুর— রাজারামপুর ইংরাজী বাঙ্গালা স্কূলের নিমিত্ত একজন ইংরাজী শিক্ষক আবশ্যক। বেতন ২০ বিংশতি মুদ্রা। তদ্ব্যতীত বাসা খরচ দেওয়া হইবে। প্রার্থিদিগকে এন্ট্রান্স পরীক্ষার সার্টিফিকেট দর্শাইতে হইবে, এবং ব্রাহ্মণ জাতি হওয়া আবশ্যক।’ (‘অমৃতবাজার পত্রিকা’, ২৬ মার্চ, ১৮৭০)
‘কুষ্টিয়া ইং বাং স্কূলের প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। বেতন ৫০। সত্বর ৬০ টাকা হওয়ার সম্ভাবনা। এন্ট্রান্স ক্লাস যাঁহারা উত্তমরূপে পড়াইতে পারেন, তাঁহারই আবেদন করিবেন। কুষ্টিয়া স্কুলের অনারেরী সেক্রেটারীর নিকট আবেদন করিতে হইবে।’ (‘অমৃতবাজার পত্রিকা’, ২৬ মার্চ, ১৮৭০)
লক্ষণীয়, ‘ইংরাজী বাঙ্গালা’ স্কুলের জন্য একজন ‘ইংরাজী শিক্ষক আবশ্যক’; পাশাপাশি তাঁর ‘ব্রাহ্মণ জাতি হওয়া আবশ্যক’। সময়কাল ১৮৭০। সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ পদে আসীন হয়ে বিদ্যাসাগর মশাই ব্রাহ্মণ, বৈদ্যের পাশাপাশি কায়স্থদের জন্য কলেজের দরজা খুলেছেন, কিন্তু বাংলার সর্বত্রই তখন জাতপাতের বেড়াজাল। সময়ের ব্যবধানে এখনও শিক্ষকতা-সহ নানান সরকারি চাকরিতে শূন্য পদের অনুপাতে জাতিভিত্তিক যে-শ্রেণিবিন্যাস, তাও লক্ষণীয়। এই বিজ্ঞাপন সেই সময়ের শিক্ষা, শিক্ষক, শিক্ষকতার পরিচয়ের পাশাপাশি এক সমাজ-দর্পণও।
বিজ্ঞাপনে উল্লেখ্য বেতনের তথ্য জানাচ্ছে, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের প্রধান শিক্ষক ৫০ টাকা, দ্বিতীয় শিক্ষক ২৫ থেকে ৩৫ টাকা, পণ্ডিত ১৫ থেকে ২০ টাকা। যদিও রাজপরিবারের গৃহশিক্ষকের মাইনে ছিল নজরকাড়া, ১৭ ডিসেম্বর, ১৮৭৪-এর ‘অমৃতবাজার পত্রিকা’য় প্রকাশিত বিজ্ঞাপনে দেখতে পাচ্ছি :
‘জেলা মেদিনীপুরের অন্তঃগত – এষ্টেন মছলন্দপুরের মধ্যে মহিষাদল রাজ বাটিতে রাজকুমার দিগকে ইংরাজী পড়াইবার ও রীতিনীতি শিক্ষা করাইবার জন্য একজন উপযুক্ত শিক্ষকের প্রয়োজন। মাসিক বেতন ১০০ শত টাকা। যিনি সাবেক সিনিয়র এসকলারসিপ হোলডার অথবা এম.এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ অথচ শিক্ষকতা কার্য্য করিয়া তাহার রীতিনীতিতে বিশেষ পারগ হইয়াছেন, এমত সৎ স্বভাব বিশিষ্ট কর্ম্মপ্রার্থিগণের আবেদন সমধিক আদরণীয় হইবে। কর্ম্মপ্রার্থিগণ স্ব স্ব প্রশংসা পত্রের অনুলিপি সহ ডিসেম্বর মাসের ২০ দিনের মধ্যে নিম্ন স্বাক্ষরকারীর নিকট আবেদন করিবেন।
শ্রীকান্তি চন্দ্র দাস
দেওয়ান মহিষাদল রাজ বাটি।’
ভাবুন, রাজবাড়ির মনমতো শিক্ষকের মাইনে সেই সময়ের প্রধান শিক্ষকের দ্বিগুণ; কোনও-কোনও ক্ষেত্রে তারও বেশি। প্রসঙ্গক্রমে উক্ত রাজবাড়ির দেওয়ান প্রদত্ত আর একটি বিজ্ঞাপন উল্লেখ করি—
‘জেলা মেদিনীপুরের অন্তঃপাতি মহিষাদল রাজবাটীর খাজাঞ্জিগিরি পদ শূন্য হইয়াছে মাসিক বেতন ৩০ ত্রিশ টাকা। যে ব্যক্তি বাঙ্গালা মোহরের গিরি কার্য্যে বিশেষ পারদর্শী হইবেন ও ইংরাজি লিখিতে পড়িতে পারিবেন, এবং দুই হাজার টাকা আপন কর্ম্মের জামিনীর মাতর্ব্বরিতে ডিপজিট রাখিতে ক্ষমবান হইবেন, তিনি বর্ত্তমান ডিসেম্বর মাসের মধ্যে আপন আপন যোগ্যতার সার্টিফিকেট সহ নিম্নের লিখিত ব্যক্তির নিকট দরখাস্ত করিলে যোগ্যতা বিবেচনায় নিয়োগ করা যাইবেক।’ (‘অমৃতবাজার পত্রিকা’, ১ জানুয়ারি, ১৮৭৪)
একালের শিক্ষকরা ভেবে শ্লাঘা বোধ করতে পারেন, সেই সময়ের আচ্ছে দিনে রাজার অ্যাকাউন্টেন্টের মাস-মাইনের তুলনায় শিক্ষকের মাসিক তনখা ছিল তিনগুণেরও বেশি। যদিও সেই সময়কালে ছেলেদের চাকরিকেও সরাসরি উমেদারি আখ্যা দিচ্ছেন অনেকেই। যেমন ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকার (১২ সেপ্টেম্বর, ১৮৮১) সম্পাদকীয়-তে ‘চাকুরি বা উমেদারী’ শিরোনামে লেখা হয়েছিল :
‘আজকাল দয়ালু গভর্ণমেন্টের কৃপায় ভারতের অধিকাংশ স্থানে বিদ্যালয় সংস্থাপিত হওয়াতে বিদ্যালাভ অতি সহজ হইয়াছে।… এটি সুখের বিষয় তাহাতে সন্দেহ নাই; কিন্তু দুঃখের বিষয় লোকে যত বিদ্যা শিক্ষা করিতেছেন, ততই যেন তাঁহারা সাহসহীন হইয়া পড়িতেছেন।… চাকুরিই এখন আমাদের সকলেরই জীবনাবলম্ব হইয়া পড়িয়াছে। পূর্ব্বে হিন্দুগণ যে পরভাগ্যােপজীবীকে জীবন্মৃতের মধ্যে গণনা করিয়া গিয়াছেন, কালক্রমে তিনিই এখন সমাজের শ্রেষ্ঠ! কামার কুমোর সকলেরই লক্ষ্য এখন চাকুরি। সুতরাং চাকুরির বাজারে আগুন লাগিয়া গিয়াছে। ইংরেজ গবর্ণমেন্টও আর সকলকে চাকুরি দিতে পারিতেছেন না। দিবেন কেমন করিয়া! পঞ্চবিংশতি কোটি কর্ম্ম খালি না থাকিলে ত আর সকলকে চাকুরি দিতে পারা যায় না। অত কর্ম্ম কোথায় আছে? থাকিবার সম্ভাবনা নাই।’
প্রায় দেড়শো বছর আগে যা ছিল কিঞ্চিৎ বিদ্রুপ, আজ তা ঘোরতর বাস্তব। এই ভয়ানক বাস্তবে দাঁড়িয়ে, সেই ‘পরভাগ্যপোজীবী জীবন্মৃত’ তত্ত্বটির মধ্য দিয়েই সেই স্বাবলম্বনের হৃতগৌরব ফিরে আসতে পারে।
পরিশেষে, সেই সময়কালে স্ত্রীশিক্ষার ক্ষেত্রে একটি আশাব্যঞ্জক ছবি তুলে ধরা যাক। এ-কথা তো সর্বজনবিদিত যে, উনিশ শতকে অশিক্ষা ও সংস্কারের জমাটবাঁধা অন্ধকারকে যথাসাধ্য দূর করে, বাঙালির মধ্যে শিক্ষা ও সচেতনতার নিবিড় পাঠটি দিয়েছিলেন রামমোহন, বিদ্যাসাগর ও দেবেন্দ্রনাথের মতো মনীষী-সহ আরও অনেকেই। উজ্জ্বল নক্ষত্রের কাছে হয়তো অনেক তারা নিষ্প্রভ হয়ে যায়, কিন্তু মনে রাখতে হবে সেইসব তারারাও তৈরি করেছিল তার সাধ্যমত আলোকবৃত্ত। এই বিজ্ঞাপনে যেমন কিছুটা আভাস পাওয়া যায় :
‘আটীয়ার অন্তর্গত কাগমারি বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষয়িত্রীর পদ শূন্য আছে। মাসিক বেতন ১৫ টাকা। বাঙ্গালা ও শিল্পকর্ম্ম শিক্ষা দিতে হইবে। ভদ্র হিন্দু মহিলার আবেদন সর্ব্বাপেক্ষা আদরণীয় হইবে।’ (‘অমৃতবাজার পত্রিকা’, ২৮ এপ্রিল, ১৮৭০)
যদিও সেই সময়কালে মেয়েদের শিক্ষা যথেষ্ট বাধাবিপত্তির মধ্যে ছিল; শিক্ষয়িত্রীর জীবিকা ছিল সনাতনী সমাজের দৃষ্টিতে নিন্দনীয়। ‘বামাবোধিনী’ পত্রিকার ১৮৭০ সালের এপ্রিল মাসের বিজ্ঞাপনের বয়ান ছিল এইরকম :
‘শিক্ষয়িত্রী হইতে ইচ্ছুক হউন আর না হউন যে সকল ভদ্ররমণী বিদ্যাশিক্ষার্থ অভিলাষিণী, তাহাদিগকে ছাত্রী করুন, বরং তাঁহাদিগের নিকট কিছু কিছু বেতন লইতে পারেন। কতকগুলি ছাত্রী হইলে বিদ্যালয়টী একেবারে জমিয়া যাইবে এবং অন্ততঃ স্ব স্ব অন্তঃপুরে থাকিয়া তাহাদিগের দ্বারা শিক্ষয়িত্রীর কার্য্য চলিতে পারিবে।’
সেই সময়কার মেয়েদের মুকুর এই ‘বামাবোধিনী’র কণ্ঠস্বরেই স্পষ্ট, সেকালের স্ত্রীশিক্ষার তমসাচ্ছন্ন প্রহরটি। যদিও তার সমান্তরালে কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়, চন্দ্রমুখী বসু, সুরবালা ঘোষ, শশীবালা বন্দোপাধ্যায়, নিস্তারিণী চক্রবর্তী, বিধুমুখী বসু প্রমুখেরা, সেই প্রায়ান্ধকারে বিন্দু বিন্দু আলোর মতো উজ্জ্বল শুকতারা হয়ে স্ত্রীশিক্ষার অনুকূলে আলো ছড়িয়ে গেছেন।
ছবি সৌজন্যে : লেখক