ভ্রামরী দেবীর গল্প আমাদের কাছে পরিচিত হয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশের মল্লিকার্জুন মন্দির থেকে। কথিত আছে অরুণাসুর নামে এক অসুর ছিল। তিনি সুরক্ষা প্রার্থনা করেছিলেন এমন সমস্ত প্রাণীর কাছ থেকে যাদের কোনও পা নেই, দুই পা বা চার পা আছে । এর অর্থ হল তিনি প্রত্যেক মাছ, পাখি, পশু এবং মানুষের আঘাত বা আক্রমণের হাত থেকে সুরক্ষিত ছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন এটি তাঁকে অমরত্ব দেবে। তাই তিনি দেবতাদের উৎপীড়ণ করতে থাকেন। দেবতারা এক সময় ভ্রামরী দেবীকে ডেকে পাঠালেন। তিনি তখন তাঁর শরীর থেকে ছয় পেয়ে এক কীট তৈরি করেছিলেন যা অসুরকে আক্রমণ করে তাকে হত্যা করেছিল। এইভাবে, প্রকৃতি এমন কিছু তৈরি করে যা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। এই ধারণাটি হিন্দু পুরাণে বারবার পাওয়া যায়। একজন অসুর একটি বর চান যা তাকে বিশ্বাস করায় যে সে মৃত্যুকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। কিন্তু দেবতারা তার গঠনের মধ্যেই একটি দুর্বলতা খুঁজে পান এবং তা কাজে লাগান। অরুণাসুরের গল্প কীটপতঙ্গের অস্তিত্বকে মূলস্রোতের মধ্যে জায়গা করে দেয়।
হিন্দু পুরাণে কীটপতঙ্গের অস্তিত্ব খুব প্রচলিত বা জনপ্রিয় নয়। হিন্দু পৌরাণিক কাহিনীতে সমস্ত কীটপতঙ্গের মধ্যে, যেটি প্রাধান্য পায় তা হল মৌমাছি কারণ মৌমাছিরা ফুলের কাছে গিয়ে মধু তৈরি করতে পারে। আমরা প্রেমের দেবতার সাথে মধুমক্ষিকার একটি সংযোগ পাই। কথিত আছে প্রেমের দেবতা কামদেবের একটি ধনুক রয়েছে। ধনুকের অঙ্গ আখ দিয়ে তৈরি এবং এর ছিলা মৌমাছি দিয়ে তৈরি। এভাবে মৌমাছিরা প্রেমিক ও প্রেয়সীর রূপক হয়ে ওঠে। মধু প্রেম এবং আবেগের অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে।
কৃষ্ণের বিভিন্ন লৌকক উপকথায় , আমরা বিখ্যাত ভাভর গীতে মৌমাছির উপস্থিতি দেখতে পাই। কৃষ্ণ রাধাকে ছেড়ে চলে গেলে, তিনি মৌমাছির রূপ ধারণ করে রাধার সাথে দেখা করতে ফিরে আসেন। রাধা অভিযোগ করেন যে কৃষ্ণ সেই মৌমাছির মতো যে ফুল থেকে ফুলে চলে যায়, অথচ রাধা গাছের ডালে আটকে থাকা ফুল। তিনি যেভাবে থাকেন সেভাবে নড়াচড়া করতে পারেন না এবং তিনি যে গ্রামে থাকেন সেখানেই থেকে যান৷ এই আবেগটি গাঙ্গেয় সমতলের বারমাসি গানের একটি প্রতীক হয়ে ওঠে যেখানে মহিলারা তাদের ভ্রমণে ব্যস্ত প্রিয়জনদের জন্য আকুল আকাঙ্ক্ষা করেন।
সারা বিশ্বের পৌরাণিক কাহিনীতে কীটপতঙ্গরা একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। বাইবেলের পৌরাণিক কাহিনীতে, হামাগুড়ি দেওয়া ভয়ঙ্কর কীট শয়তানের সাথে যুক্ত যাকে এমনকী ফ্লিসের লর্ড উপাধি দেওয়া হয়। গ্রিক পৌরাণিক কাহিনীতে, মিনোসকে অভিশাপ দেওয়া হয়েছে যে যদি সে তার স্ত্রী নয় এমন একজন মহিলার শরীরে বীর্যপাত করে তবে সে শরীর থেকে কীটপতঙ্গ নির্গত করবে। তার প্রেমিকদের বাঁচাতে মিনোস বিশ্বের প্রথম কনডম আবিষ্কার করেন। আর্কেন নামক নারী বলেছিল সে দেবী এথেনার চেয়েও ভাল সুতো বুনতে পারে, তাই দেবী তাকে শাপ দিয়ে মাকড়সায় রূপান্তরিত করেন।
তারপরে ইওসের গল্প তো আছেই। ইওস ছিলেন ভোরের দেবী, যিনি তার প্রেমিককে অমরত্ব দেন কিন্তু অনন্ত যৌবন নয়। সেই প্রেমিক শেষমেষ সিকাডায় পরিণত হয়। মিশরের পুরাণকথায়, এক ধরনের গুবরে পোকাকে খুব মূল্য দেওয়া হয়, যারা গোবরের পিণ্ড পাকিয়ে গড়িয়ে নিয়ে যায়। কারণ তাদের দেখে প্রাচীন কবিদের মনে হত, এভাবেই কোনও দিব্য কীট সূর্যকে রাত্রির আকাশে গড়িয়ে এনে সকাল সৃষ্টি করে। রোমান পুরাণে, প্রজাপতি, আত্মার প্রতীক হয়ে ওঠে। জাপানি পৌরাণিক কাহিনী গঙ্গাফড়িংকে সাহসের প্রতীক হিসাবে সম্মান করে, কারণ একটি গঙ্গাফড়িং সেই মশাটিকে খেয়েছিল যার কামড়ে সম্রাট মারা গিয়েছিলেন।
এইভাবে কীটপতঙ্গ, পৌরাণিক কাহিনীর অন্য সব কিছুর মতো, ব্যবহারিক থেকে আধিভৌতিক ধারণাগুলিকে যোগাযোগের জন্য একটি রূপক হিসাবে পরিণত করা যেতে পারে।