রাজ্যের মুখ্যসচিবের ছেলের বিয়ে। কনের বাড়ি চতুশ্চক্রযানে আধঘণ্টা। নয়া ট্রেন্ডের এক ঝাঁ-চকচকে এসইউভি-তে বরযাত্রী হিসাবে উপবিষ্ট পলিতকেশ মুখ্যসচিব এবং ধোপদুরস্ত মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যসচিব আশাই করেননি তাঁর একমাত্র পুত্রের শুভ বিবাহে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এভাবে উপস্থিত থাকবেন এবং তা-ও প্রায় বরকর্তারূপে। অপ্রত্যাশিত প্রাপ্তিতে মুখ্যসচিব আপ্লুত এবং বিগলিত। কৃতজ্ঞচিত্তে ধন্যবাদ জ্ঞাপনের জন্য তিনি উন্মুখ হয়ে রয়েছেন। তাঁর এই নিদারুণ ব্যাকুলতা স্বাভাবিক। কিন্তু তিনি ভেবে উঠতে পারছেন না কীভাবে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবেন। কিছুক্ষণ উশখুশ করার পর সবেমাত্র তিনি মুখ্যমন্ত্রীর দিকে সুস্মিত নেত্রে তাকিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী তাঁর প্রতি দৃষ্টিপাত করে জানতে চাইলেন, ‘আচ্ছা মি. গুপ্তা, এটাও কি একটা ঐতিহাসিক পদক্ষেপ?’
মুখ্যসচিব পড়লেন মহা ফাঁপরে। ‘এটাও’ বলতে স্যার যে ঠিক কোন বিষয়টা বোঝাতে চাইছেন, তিনি চট করে ধরতে পারলেন না। ‘মুখ্যমন্ত্রী’ নামক টিভি চ্যানেল স্থাপনের ঘোষণা— না, নতুন সরকার স্থাপনের প্রথম চার বছর যাতে কোনও সরকার বিরোধী আন্দোলন না-হয়, সে-বিষয়ে বিরোধী দলনেতার সঙ্গে ডাবের জল-শশা সহযোগে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর— না কি ‘সকলের জন্য বিনোদন’ প্রকল্পের শুভ সূচনা— কোনটাকে যে স্যার ‘ঐতিহাসিক পদক্ষেপ’ বলছেন তা বুঝে উঠতে না পেরে তিনি শুধু একটু মুচকি হেসে তাঁর পরবর্তী কথার জন্য অপেক্ষা করে রইলেন।
‘আপনার পূর্বসূরিদের কাছে একটু খোঁজ নিয়ে দেখবেন তো মি. গুপ্তা, এ-জিনিস পূর্বে এ-রাজ্যে কখনও ঘটেছে কি না?’
মুখ্যসচিব তখনও হাতড়াচ্ছেন। শেষমেশ জিজ্ঞাসা করতে বাধ্য হলেন, ‘কোন জিনিস, স্যার?’
‘অ্যাঁ! কোন জিনিস এখনও তা বোঝেননি? এই যে আমি, মানে… রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, আপনার, মানে… রাজ্যের মুখ্যসচিবের ছেলের বিবাহবাসরে থাকতে চলেছি— এ-ঘটনা রাজ্যের ইতিহাসে কখনও ঘটেছে?’
এখন মুখ্যসচিব পরিষ্কার বুঝতে পারলেন। কিন্তু একটা ব্যাপারে তাঁর মনে খটকা রয়েই গেল। ‘বিবাহবাসরে থাকতে চলেছি’ বলতে স্যার আসলে কী বোঝাতে চাইলেন? উনি কি শেষ পর্যন্ত ছেলে-ছোকরাদের সঙ্গে বাসর জাগবেন না কি! কথাটা মনে আসতে তাঁর নিজের কাছেও সেটা অবিশ্বাস্য মনে হল। রাজনীতির কারবারিরা যতই আনপ্রেডিক্টেবল হোন, আর স্যার যতই স্টেপ আউট করুন না কেন, এতটা এগোবেন বলে মনে হয় না। তিনি নিজেকে বোঝালেন— স্যার আসলে তাঁর ছেলের বিবাহানুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথাই বলতে চেয়েছেন।
ধাতস্থ হয়ে মুখ্যসচিব এবার মুখ খুললেন। ‘স্যার, মন্ত্রী-সচিব সম্পর্কে এটা যে একটা ঐতিহাসিক পদক্ষেপ, সে-বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। আর… স্যর, আপনি চাইলে শুধু এ-রাজ্যে কেন, ভূ-ভারতে এ-ঘটনা কখনও ঘটেছে কি না— সে-বিষয়ে খোঁজখবর করে আপনার কাছে রিপোর্ট জমা দেব।’
ইতিমধ্যে লেটেস্ট ডিজাইনের আইফোন নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু করে দিয়েছেন টেকস্যাভি মুখ্যমন্ত্রী। ‘এই দেখুন মি. গুপ্তা, নিউজ চ্যানেলের আক্কেল! ব্রেকিং নিউজ হিসাবে শুরু করে দিয়েছে দেখাতে’, মুখ্যমন্ত্রীর গলায় উচ্ছ্বাস, ‘দেখুন, দেখুন, কয়েকটা নিউজ চ্যানেল আবার এক্সক্লুসিভ ক্যাপশনে লাইভ আমাদের এই শোভাযাত্রা টেলিকাস্ট করছে!’
মি. গুপ্তা মোবাইল স্ক্রিনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে গাড়ির উইন্ডো দিয়ে বাইরে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলেন। আলোকোজ্জ্বল শহর ছেড়ে ন্যাশনাল হাইওয়ে দিয়ে ঝড়ের গতিতে ফোর হুইলার এগিয়ে চলেছে নির্দিষ্ট গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলেন তিনি। ‘কী ব্যাপার মি. গুপ্তা?’ মুখ্যমন্ত্রীর কণ্ঠস্বরে একটু লজ্জিত হয়ে তিনি তাকালেন।
মুখ্যসচিবকে একটু চিন্তিত দেখে মুখ্যমন্ত্রী আশ্বস্ত করলেন, ‘আপনি চিন্তায় পড়ে গেলেন নাকি? দূর, অত ভাবছেন কেন? ভাবনার কিস্যু নেই। মিডিয়ায় আমার লোকজনও কিছু কম নেই। আর… আর, এই দেখুন— তারা ইতিমধ্যে দেখাতেও শুরু করে দিয়েছে— মুখ্যমন্ত্রী মুখ্যসচিবকে নিয়ে ‘মউ’ স্বাক্ষর করতে চলেছেন। আর মউ স্বাক্ষরের স্থান যে বিবাহবাসর এবং যে-শিল্পপতির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হচ্ছে তিনি যে মুখ্যসচিবের ছেলের শ্বশুর, তা নিছকই সমাপতন।’
এর পর মুখ্যসচিবের আর কী-ই বা বলার থাকতে পারে! মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গে রয়েছেন বলে প্রথম থেকেই একটু অস্বস্তি বোধ করছিলেন তিনি। কিন্তু এই প্রথম একটু চাপ অনুভব করতে লাগলেন। গলাবন্ধের ফাঁসটা একটু আলগা করে নিতে-নিতে মনে করার চেষ্টা করলেন, রাজপুরুষের সঙ্গে সখ্য নিয়ে চাণক্য কিছু বলেছেন কি না!
ঠিক পিছনের গাড়িতেই রয়েছেন মিসেস গুপ্তা। মিসেস গুপ্তা ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রী। একটু-আধটু শখের নাট্যচর্চা করেন। বিগত কয়েক মাস ধরে ভেবে চলেছেন শেক্সপিয়রের ‘ম্যাকবেথ’ অবলম্বনে একটি নাট্য প্রযোজনার কথা। কিন্তু ইদানীং তাঁর সেই উৎসাহ আগের তুলনায় অনেক স্তিমিত হয়ে পড়েছে। মাস সাতেক আগে যখন মি. গুপ্তা রাজ্যের মুখ্যসচিব নিযুক্ত হন তখন রাজ্যের পরিস্থিতি ছিল অগ্নিগর্ভ। রাজনৈতিক সংঘর্ষে রোজই প্রায় দু-চারজন মারা যাচ্ছিল। প্রশাসনিক দুর্বলতা পৌঁছেছিল চরমে। কিছুতেই রোধ করা যাচ্ছিল না রক্তপাত, লাশের মিছিল। তার উপরে কেন্দ্রের বিরোধী সরকার রাজনৈতিক সুবিধা আদায় করার জন্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজ্য সরকার যে ব্যর্থ এবং রাজ্যে আইনের শাসন যে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে, সেটা ফলাও করে প্রচার করছিল। সেই সময় মনে হচ্ছিল, রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। সে-সময়ে মিসেস গুপ্তা তাঁর ‘ম্যাকবেথ’ প্রযোজনার সুপ্ত ইচ্ছার কথা মি. গুপ্তাকে জানিয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতি শাসন মানে যে চরম আমলাতান্ত্রিকতা এবং শীর্ষ আমলা হিসাবে মুখ্যসচিবের যে সর্বেসর্বা হয়ে ওঠার সম্ভাবনা— এমন কোনও সমীকরণ মিসেস গুপ্তাকে তাড়িত করেছিল কি না তা অবশ্য মি. গুপ্তা জানেন না।
‘মি. গুপ্তা, আপনার ছেলের শ্বশুরমশাই… আই মিন মি. সিনহার যেন কীসের বিসনেস?’ মুখ্যমন্ত্রীর কথায় চমক ভাঙল মি. গুপ্তার। একটু থতমত খেয়ে তিনি বললেন, ‘মিডিয়ার।’
একটু সামলে বসে মুখ্যমন্ত্রী জানতে চাইলেন, ‘প্রিন্ট, না ইলেকট্রনিক?’
‘আগে শুধু প্রিন্ট ছিল, এখন ইলেকট্রনিক মিডিয়াতেও পা রেখেছেন।’
‘ইনফ্লুয়েনশিয়াল?’
‘তা বলতে পারেন, স্যার।’
‘এদের স্টান্সটা কী?— কর্তাভজা না পাবলিক খ্যাপানো?’
স্যার কী বলতে চাইছেন মি. গুপ্তা তা বুঝে একটু সময় নিয়ে বললেন, ‘আমি তো খুব একটা ফলো করি না স্যার। তবে গিন্নির মুখে শুনেছি এদের টিআরপি নাকি খুব হাই।’
মুখ্যমন্ত্রী বলে উঠলেন, ‘ঠিক আছে, ঠিক আছে। আর বলতে হবে না। এবার বুঝতে পারছি। বুঝলেন মি. গুপ্তা, এ-বাজারে নেগেটিভ ক্রিটিসিজম— সরকার বিরোধিতা পাবলিক একটু বেশিই খায়।’
মি. গুপ্তা মনে-মনে বললেন, ‘এর হাত ধরেই তো আপনিও ক্ষমতায় এলেন স্যার।’
মুখ্যমন্ত্রী কিছু একটা বলতে গিয়েও চুপ করে গেলেন।
মি. গুপ্তা তখন ভাবছিলেন গভর্নমেন্ট এবং মিডিয়ার সম্পর্ক নিয়ে। কীভাবে এরা পরস্পরকে ব্যবহার করে, অথচ একে অপরের প্রতি অসূয়া পোষণ করে। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনমত দ্বারা নির্বাচিত সরকার তো আসলে আইন প্রণয়নকারী আইনসভা— লেজিসলেচার। আর সংবাদমাধ্যম তো স্বাধীন মতামত প্রকাশের ক্ষেত্র। গণতন্ত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই দুটি স্তম্ভেরই যেখানে সংবেদনশীল হওয়া প্রয়োজন, সেখানে উভয়েই সময়বিশেষে কেমন অতি-স্পর্শকাতর হয়ে ওঠে। দুয়েরই আসল লক্ষ্য জনপ্রিয়তা অর্জন এবং ক্ষমতা ধরে রাখা। আর সেটা করতে গিয়ে প্রয়োজনে উভয়েই কেমন সীমারেখা লঙ্ঘন করতে দু’বার ভাবে না।
এদিকে তা-না-না-না করতে-করতে মুখ্যমন্ত্রী বেমক্কা বলেই বসলেন, ‘তা মি. গুপ্তা, আপনি কি ভেবে দেখেছেন, আমি আপনার ছেলের বিয়েতে বরযাত্রী হিসাবে যাচ্ছি কেন?’
মি. গুপ্তার মুখে এসেই গিয়েছিল, ‘মউ স্বাক্ষর করতে।’ কিন্তু তিনি তো আর এমনি মুখ্যসচিব হননি! বিশেষ-বিশেষ ক্ষেত্রে মুখ বন্ধ রাখতে পারার ক্ষমতা তাঁর প্রায় সহজাত গুণ বলে তিনি একটু ঘুরে সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে শুধু মুখ্যমন্ত্রীর দিকে তাকালেন।
‘দেখেছেন তো মিডিয়া কেমন আমার ভাষা ব্যবহার, বাচনভঙ্গি, হ-য-ব-র-ল সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলে। কিন্তু আপনার মতো বিচক্ষণ এবং বুদ্ধিমান মানুষের নিশ্চয়ই এটা বুঝতে কোনও অসুবিধা হয় না যে, আমি হিসেব না করে এক পা-ও ফেলি না, বা এমন একটা কথাও বলি না, যা আমার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সিদ্ধি করে না। আপনিই বলুন না, পাতি পাবলিক আমাকে যেভাবে নিজেদের সাথে আইডেন্টিফাই করতে পারে, আজ পর্যন্ত দেশের অন্য কোনও পলিটিশিয়ানকে আম-আদমি সেভাবে নিজের বলে ভাবতে পেরেছে?’
মুখ্যসচিব কিছু বলার আগেই মুখ্যমন্ত্রী মুচকি হেসে বলে উঠলেন, ‘ওহ, আপনি বুঝি বুদ্ধিজীবীদের কথা ভাবছেন? ও ব্যাটারা যদিও বাস্তুঘুঘু, তবে আমার পলিটিক্সের নাগাল পাওয়া ওদের কম্ম নয়। আপনি নিশ্চয়ই এটা এতদিনে বুঝেছেন যে, পোলিশড বুদ্ধিজীবী যাকে ভাবে সস্তা জনপ্রিয়তা, সেটাই আসলে আমার ক্যারিশমা— ভোট ব্যাঙ্ক কবজা করার ইউএসপি। আর মজা কী জানেন মি. গুপ্তা, সবচেয়ে বড় যে-অস্ত্র— প্রতিশ্রুতি, সেটাকে তো আমি প্রায় শিল্পের পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছি। আমি আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে দেখেছি— বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়েই আনপড় গরিব-গুর্বোগুলোকে সন্তুষ্ট করে সহজেই ভোট-বৈতরণী পার হওয়া যায়।’
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের সারমর্ম বুঝতে মুখ্যসচিবের সময় লাগল না। তাঁর মনে পড়ে গেল, তিনি এমন একটা কানাঘুষো শুনেছিলেন যে, স্যার নাকি প্রথম জীবনে একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ হেড হিসাবে তাঁর লার্নেড কলিগদের সাফল্যের সঙ্গে সামলাতে পারেননি। তাঁকে নাকি বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। শেষপর্যন্ত পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, তিনি ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ বলে রণে ভঙ্গ দেন। তাহলে কি অধিকার সচেতন শিক্ষিত মানুষকে সামলাতে যে মেধা-মনন-বুদ্ধিবৃত্তি এবং যোগ্যতা লাগে তার তুলনায় লাখো-লাখো সাধারণ পাবলিক সামলানো কিছু-কিছু রাজনীতিবিদের কাছে জলভাত?
‘হ্যাঁ, তা যা বলছিলাম মি. গুপ্তা। আপনার ছেলের বিবাহসভায় আমার অ্যাপিয়ার হওয়ার কারণ জানতে আপনার নিশ্চয়ই ভীষণ কৌতূহল? সেটাই স্বাভাবিক। আপনার জায়গায় আমি থাকলে আমারও কিউরিওসিটি হত। আসলে… বুঝলেন মি. গুপ্তা, কয়েকটি বিষয় নিয়ে বেশ কিছুদিন আমি একটু টেন্সড হয়ে রয়েছি। বিশ্বস্ত সূত্র থেকে বেশ কিছু খবর কয়েক মাস ধরে আমার কাছে আসছে। প্রথম দিকে খুব একটা পাত্তা দিইনি। কিন্তু দু’একটা ঘটনার পর যখন ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখলাম দুয়ে-দুয়ে চার হলেও হতে পারে, তখন আর ব্যাপারটাকে হালকা ভাবে উড়িয়ে দিতে পারিনি। সত্যি বলতে কী— আপনার মোটিভ এবং কানেকশন নিয়ে আমি একটু কনসার্ন হয়ে রয়েছিই বটে।’ মুখ্যসচিবের দিকে সরাসরি স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নাটকীয় ভাবে চুপ করে গেলেন।
মুখ্যসচিবের পেট গুড়গুড় করতে লাগল। তিনি নিশ্চুপ বসে রইলেন।
মুখ্যসচিবের মুখ থেকে চোখ না সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আবার বলতে শুরু করলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকারের হোম মিনিস্টারের সঙ্গে আপনার দোস্তি, পিএমও-তে ঘন-ঘন যোগাযোগ আর রাজ্যপালের কাছে বিশেষ দূত প্রেরণের রহস্য ডিকোড করতে না পারা পর্যন্ত আমি কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছিলাম না। আর সেই সময়েই মেঘ না চাইতে জলের মতো এসে হাজির হল আপনার ছেলের বিবাহানুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র। আপনিই বলুন মি. গুপ্তা, এই মওকা কি আমার মতো ধুরন্ধর রাজনীতির কারবারির ছাড়া উচিত? আপনার জাল কতটা ছড়িয়েছে বা আদৌ সেটা ছড়িয়েছে কি না তা সরেজমিনে দেখার জন্য নিজেই সশরীরে হাজির হয়ে গেলাম। যতই হোক, কেন্দ্রে এখন বিরোধী সরকার এবং ভারী সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে তাদের পক্ষে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে যে-কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া অসম্ভব কিছু নয়। আর এ-কথাও তো অস্বীকার করতে পারি না— রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার যা পরিস্থিতি, তাতে রাষ্ট্রপতি শাসন লাগু হওয়ার আওতা থেকে রাজ্য সর্বতোভাবে আজও বেরিয়ে আসতে পারেনি।’
এসি কারের মধ্যে বসেও মুখ্যসচিব ঘামতে শুরু করে দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী গলায় ঈষৎ ব্যঙ্গের হাসি মিশিয়ে বলে চলেছেন, ‘এদিকে গোলা পাবলিক ভাবছে, মুখ্যমন্ত্রী মউ সই করতে চলেছেন আর তার থেকেও বেশি গোলা অথচ নিজেকে বিচক্ষণ ভাবা বুদ্ধিজীবীর দল ভাবছে, মুখ্যমন্ত্রী উৎসবের শিলান্যাস থুড়ি উদ্বোধন করতে-করতে নিজেও বোধহয় উৎসবের অঙ্গীভূত হয়ে গেলেন!’
ছবি এঁকেছেন অনুষ্টুপ সেন