ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • সামথিং সামথিং: পর্ব ৩০


    চন্দ্রিল ভট্টাচার্য (May 14, 2022)
     

    নষ্ট-আলজিয়া

    নস্টালজিয়া পাপ যদি নাও হয়, মুদ্রাদোষ তো বটেই। মুদ্রা কথাটাও বাদ দেওয়া যায়। একটা লোক হয়তো ২২ বছর বয়সে বুভুক্ষু হয়ে সারা বিকেল পথে ঘুরত, একটা এগ রোল কিনে খেলে বাকি রাস্তা হেঁটে ফিরতে হবে ভেবে পঁচিশবার হোঁচট খেত, মেয়েদের দিকে হন্যে দৃষ্টিতে তাকাত এবং তার ব্রণভরা গালে কখনও কণামাত্র আদর বর্ষিত হয়নি ভেবে তড়পে মরত, গলিতে হিসি করতে গিয়ে দেখত কারা দেওয়ালে মা কালীর ছবি এঁকে দিয়ে গেছে। সেই লোকটাই হয়তো ৪২ বছর বয়সে সুস্থিত গেরস্থ, বড় বাড়ি, গাড়ি, হাই-প্রোফাইল চাকরি, দেওয়ালে ফোর-কে টিভি, সংসারে স্ত্রী-সন্তান। অথচ তাকে জিজ্ঞেস করো, সে রেগুলার হা-পিত্যেশ করছে ২২ বছরের জীবনের জন্য। সেই দিনকাল নাকি ছিল পবিত্র ও উত্তেজনাময়, বন্ধু-পরিবৃত আর স্বাস্থ্য-ঝলমল, প্রেমের ইঙ্গিত-ঋদ্ধ ও হরদম যৌনতা-বিদ্ধ, প্লাস এক টাকায় মিলত বিটনুন-দেওয়া ছোলাসিদ্ধ। তাকে টাইম মেশিনে হুহু উড়িয়ে নেওয়া গেলে দেখতে পেত কতখানি মিথ্যে সে নিজেকে বলছে, কতটা ভাঁওতা দিয়ে মেখেছে তার স্মৃতিকে, কীভাবে ফোটোশপে মুছে নিয়েছে মেচেতা ছ্যাৎলা বিষফোড়া, যোগ করেছে ঠোঁটের ডগায় নিপুণ রাঙা তিল। এভাবেই, যুগের পর যুগ লোকে অতীতকে নির্মাণ করে চলেছে ইচ্ছাপূরণের কাসুন্দি ছড়িয়ে, হুবহু ভবিষ্যতের মতোই, যা-ছিল আর যা-হলে-ভাল-হত একত্রে গোল্লা পাকিয়ে আনতাবড়ি কেটেছেঁটে ও গুলেমিশিয়ে মণ্ড গিলে নিচ্ছে অহর্নিশ, এমনকী অন্যকেও গেলাচ্ছে যদ্দূর সম্ভব।

    সবচেয়ে ঝামেলা হল, স্মৃতিকে সততই সুখের করে তোলার এই বদভ্যাস, সিপিয়া-টোন ঝাপসা ফোটোগ্রাফে গা-জোয়ারি সুখ পুঁতে দেওয়ার প্রবণতা, শুধু ব্যষ্টির নয়, সমষ্টিরও। তাই যে-দিন চলে গেছে, তার সিনেমা সঙ্গীত সাহিত্য সবই হয়ে ওঠে বাধ্যতামূলক ভাবে মহত্তর, তার চিকিৎসা-ব্যবস্থাকে মনে হয় আন্তরিক ও ধন্বন্তরিওলা, তার অর্থনীতিকে দৃঢ় ও সচ্ছল। বাজার-বিক্রেতা তখন ছিল মিশুকে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ছিল সদাজাগ্রত, সামাজিক নিরাপত্তা ছিল নিশ্ছিদ্র, ক্লাবের ছেলেরা ক্যারমপ্রিয় ও নারী-উদ্ধারক। একটা গোটা সমাজের এই ফ্ল্যাশব্যাক-রূপকথার প্রথা ব্যক্তিগত দেয়ালার চেয়ে অনেক খারাপ, কারণ এই মৌখিক ইতিহাস পরবর্তী প্রজন্ম শোনে ও অনেকটা বিশ্বাস করে, সবার তথ্য ঘেঁটে সত্য বুঝে নেওয়ার আগ্রহ ও শ্রমাভ্যাস থাকে না। তারাও জপতে থাকে, বাপ-দাদার মতো, উরিব্বাপরে ষাটের দশকের আইডিয়া-চালাচালি, উরেভাইরে সত্তরের বিস্ফোরণ। অথবা ওয়াও রঘু ডাকাতের কী সৌজন্য, ফিটন গাড়ির কী রোমাঞ্চ, ফাটাকেষ্টর কী বীরত্ব, ক্যাডারের কী আনুগত্য। এই ভুল (বা আধা-ভুল, বা সোয়া- সাড়ে- পৌনে-ফ্যান্টাসি) বেশ কিছুদিন ঘুরতে ঘুরতে নড়তে নড়তে অনায়াসে গুচ্ছ হৃদয়ে নির্ঘাত-সত্যের স্টেটাস পেয়ে যায়, আর তার ভিত্তিতে বহু সমষ্টি-ক্রিয়া অবধি নির্ধারিত হয়। 

    যেমন হল ফিলিপিনসে। সেখানে, এক স্বৈরাচারীর ছেলে বিপুল ভোট পেয়ে রাষ্ট্রপতি হয়ে গেলেন। কারণটা বোধহয় এই: বাবার অপশাসনের স্মৃতি জনগণের মনে এখন ঝাপসা, এবং বিগত বীভৎস দিনগুলোর ওপর এসে পড়েছে ‘এখনকার চেয়ে নিয্যস ভাল ছিল’-র অযৌক্তিক কিন্তু আকাঙ্ক্ষা-ফ্লেভার টপিং। ফার্দিনান্দ মার্কোস সিনিয়র, যিনি ১৯৬৫ থেকে রাষ্ট্রপতি ছিলেন, ১৯৭২ সালে ফিলিপিনসের পুরো নিয়ন্ত্রণটাই হাতে নিয়ে নেন। আর এক বছর পর তাঁর দ্বিতীয়বারের রাষ্ট্রপতিগিরি ছেড়ে দেওয়ার কথা ছিল, সেসব ভাবনা শিকেয় তুলে মার্শাল ল ঘোষণা করেন, পার্লামেন্ট তুলে দেন, আদালতের গোটা দায়িত্বও কুক্ষিগত করেন, সেনাবাহিনীর লোক ও পুলিশ গিয়ে গিয়ে বিরোধীদের গ্রেফতার ও হত্যা করতে থাকে। এরপর কী হয়, সহজেই অনুমেয়, মানবাধিকার বলে দেশে কিছু থাকে না, চূড়ান্ত দারিদ্রে সাধারণ মানুষ জীবন কাটান, দেশ ঋণে ডুবে যায়, আর মার্কোস পরিবারের সম্পদ উন্মত্ত ফুলেফেঁপে ওঠে। স্বৈরাচারের মসৃণ চাকা গড়াচ্ছিল, কিন্তু ১৯৮৩ সালের একটি খুন খেলা ঘুরিয়ে দেয়। মার্কোসের এক বিরোধী দলনেতা ছিলেন বেনিনো অ্যাকুইনো। তাঁকে মার্কোস ১৯৭২-এই গ্রেফতার করেন, মৃত্যুদণ্ডও দেওয়া হয়, কিন্তু মার্কোস তা মকুব করতে বাধ্য হন আন্তর্জাতিক চাপে পড়ে। ১৯৭৮-এ জেলের ভেতর থেকেই বেনিনো নতুন দল গড়েন ও নির্বাচনে লড়েন, দলের সকলেই হারেন সেই নির্বাচনে। ১৯৮০-তে তাঁর হার্ট সার্জারি দরকার হয়, বেনিনো বলেন তিনি হয় আমেরিকায় গিয়ে অপারেশন করাবেন, অথবা জেলে মরবেন, মার্কোসের ডাক্তারদের বিশ্বাস করবেন না। তাঁকে সপরিবার আমেরিকা যেতে অনুমতি দেওয়া হয়, সম্ভবত এই শর্তে: তিনি মার্কোসের নামে বিদেশে কিছু বলবেন না। সার্জারির পর দ্রুত সেরে উঠে বেনিনো মার্কোসের বিরুদ্ধে আমেরিকা জুড়ে বক্তৃতা দেন (কারণ ‘শয়তানের সঙ্গে চুক্তি কোনও চুক্তি নয়’), খুব জনপ্রিয়ও হন। ১৯৮৩-তে তিনি ঠিক করেন দেশে ফিরবেন, কারণ মাতৃভূমির এমন দুরবস্থা, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সরাসরি লড়াই শুরু করতেই হবে। মার্কোস সরকার তাঁকে দেশে ফেরার অনুমতি দেয় না, তবু তিনি জোর করেই ফেরেন, প্লেনে সাংবাদিকদের বলেনও যে তিনি নামার তিন-চার মিনিটের মধ্যই সব শেষ হয়ে যেতে পারে, এবং তা-ই হয়। এয়ারপোর্টেই তাঁকে গুলি করে মারা হয়। এবার তাঁর বিধবা স্ত্রী কোরি-কে নেত্রী করে দেশ জুড়ে প্রকাণ্ড প্রতিবাদ শুরু হয়, ১৯৮৬-তে মার্কোস ফের একটা নির্বাচন ডাকতে বাধ্য হন, মার্কোসের বিরুদ্ধে দাঁড়ান কোরি বেনিনো। বিকট কারচুপি করে মার্কোস ভোটে নিজেকে জয়ী ঘোষণা করার পর, দেশের মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়, প্রবল আন্দোলন শুরু হয়— কিন্তু শান্তিপূর্ণ ও অহিংস— শেষে এই ‘পিপলস পাওয়ার রেভোলিউশন’ অপ্রতিরোধ্য হয়ে দাঁড়ায় এবং সেনাবাহিনী অবধি নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের গুলি করতে অস্বীকার করে আর মার্কোসের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। মার্কোস পরিবার এবার হাওয়াই-তে পালায়, কিন্তু পালাবার সময় নিয়ে যায় ক্রেট-ক্রেট দামি জিনিস, গয়নাগাঁটি, জামাকাপড়, এবং কোটি কোটি টাকা, মানে, ডলারের হিসেবেও বহু বিলিয়ন। শাসনের সময় মার্কোসের পরিবার ১০ বিলিয়ন ডলার নয়ছয় করেছিল, অভিযোগ। পালাবার পর রাষ্ট্রপতির প্রাসাদে রাষ্ট্রপতির স্ত্রীর ৩০০ জোড়া জুতো পাওয়া যায়, তা তাঁদের যথেচ্ছাচারের প্রতীক হিসেবে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। মার্কোসের ছেলে (একই নাম, তাঁকে তাই জুনিয়র বলাই ভাল) তখন ২৮, ওঁদের সঙ্গেই পালান। 

    ১৯৯০-এর দশকে এই পরিবার ফের গুটিগুটি ফিলিপিনসে ফেরে, জুনিয়র রাজনীতিতে ঢোকেন (সিনিয়র মারা যান ১৯৮৯ সালে), এবং এখন, মার্কোসের সেই ফৌজি আইন জারির ঠিক ৫০ বছর পরে, এবং মার্কোস পরিবার জনগণের বিপ্লবে তাড়া খেয়ে পালানোর ৩৬ বছর পরে, তাঁর ছেলে (এখন ৬৮ বছর বয়স) নির্বাচনী বক্তৃতাগুলোয় তাঁর বাবার শাসনের সময়টাকে দুরন্ত অর্থনৈতিক উন্নয়নের সময় বলে বর্ণনা করলেন, বললেন মানবাধিকার হরণের যে ঘটনাগুলো বলা-কওয়া হয়, তা বিস্তর বাড়িয়ে-চাড়িয়ে। এও বললেন, আমাকে আমার পূর্বপুরুষ দিয়ে বিচার করছেন কেন, আমাকে দিয়েই বিচার করুন! বয়স কম ছিল, অত বুঝিনি, পরিবার কী অপরাধ করছে না-করছে। (যুক্তিটা খারাপ নয়, কিন্তু তাঁর মা’র বিরুদ্ধে (যিনি এখনও জীবিত) তাহলে ছেলে একটাও কথা বলছেন না কেন? দেশের সম্পদ চুরি করার দায়ে মা’কে জেলে ভরা নিয়ে কোনও প্রতিশ্রুতি নির্বাচনী বক্তৃতায় শোনা গেল না কেন? মার্কোস পরিবারের কাছ থেকে কত বিলিয়ন কেড়ে দেশের উন্নতিকল্পে লাগানো হবে, হিসেব কষছেন না কেন?) তরুণ প্রজন্ম মার্কোসের শাসন দেখেনি, তারা এখনকার গণতন্ত্রের বিরাট ফাঁকফোকর ও দুর্নীতি দেখেছে আর রাগে ফুঁসেছে। আগেকার দিন খুব ভাল ছিল বললে সকলেরই ধাঁ করে প্রত্যয় হয়, জুনিয়র ঢাক পিটিয়ে বলছেন তাঁর বাবার কড়া মুঠোর তলায় অপরাধের হার অনেক কমে গেছিল। যাঁরা মার্কোসের অধীনে ভয়াবহ অন্ধকার দিনগুলোর মধ্যে দিয়ে গেছেন তাঁরাও এখন অনেকেই নস্টালজিয়ায় ফোঁৎ-ফোঁৎ কাঁদছেন। স্মৃতিধোঁয়াবাজি হামলে পড়ে ফিকে করে দিচ্ছে এমনকী জাতির অপমানের অধ্যায়। 

    জুনিয়রের এই ক্যাম্পেনের শুরু বছর দশেক আগে থেকে, যখন মার্কোস পরিবারের শাসনে আসলে ফিলিপিনস কত সুখে ছিল এবং সেই পরিবারের বিতাড়ন কী অন্যায়— এই মর্মে কিছু চালাক-সম্পাদনার ভিডিও ইউটিউবে ছড়ানো শুরু হয়, এবং তাতে এন্তার মিথ্যে কথা ঢেলে অভিনব সিরাপ বানানো হয়। এখনকার শাসনে তিতিবিরক্ত অনেকেই সে কথা বিশ্বাস করতে শুরু করে। ফিলিপিনসের গরিব অঞ্চলে আবার এমন ধারণা অনেকের আছে, যে কাঁড়িকেত্তর টাকা চুরি করে মার্কোস পরিবার পালিয়েছিল, যার প্রায় কিচ্ছুই তারা ফেরত দেয়নি, তা ক্ষমতায় এলেই দীনগরিবের উন্নয়নে লাগাবে বলে মজুত রেখেছে। হবেও বা, শোনা তো যায় পৃথিবীর কোথাও না কোথাও শিংওলা ঘোড়া আছে, হ্রদে আছে কথা-বলা মাছ। যে টাকাগুলো তারা তখন জনগণকে ক্ষুধার্ত রেখে নিজেরা মেরে দিল, তা হঠাৎ আজ জনগণের  কল্যাণার্থে ব্যয় করবে কেন, যদি তারা অতই দয়ালু হয় তাহলে তখন ধারাবাহিক নিষ্ঠুর অমানবিক কাণ্ড করত কেন, এর উত্তর বোধহয় মূর্খেরা বা নস্টালজিকেরা খোঁজে না। এই জুনিয়র অতি চালাক, টিভিতে কোনও বিতর্কে অংশ নেননি, ইন্টারভিউও দেননি, যাতে তাঁর পরিবার নিয়ে কোনও জবাবদিহি করতে না হয়। মিথ্যের ওপর ভর করে তিনি গুচ্ছের লোকের মন জিতেছেন এবং ভোটে জিতলেন প্রকাণ্ড ব্যবধানে। 

    আসলে একটা দগদগে বর্তমান ক’দিনের মধ্যে অতীত হয়ে যায়, সরাসরি যাদের ছ্যাঁকা লাগেনি তারা এখনকার দহনটাকেই সর্বোচ্চ ব্যথা বলে হইহই করে, তারপর ‘আহা কী সোন্দর দিন কাটাইতাম’ এসে ভাসিয়ে নিয়ে যায়, সর্বনাশের বাসায়। আমাদের রাজ্যের বাম-শাসনের সঙ্গে  স্বৈরাচারের তুলনা কখনওই হয় না, কিন্তু আজকাল অতীতকে হোকাস-ফোকাস ভোলার (ও ভোলাবার) প্রবণতার সঙ্গে একটা লাইন টানা যায়। অনেকেই এখন তৃণমূলের শাসনে নাহক বিরক্ত, অনেকের মুখেই আজ সিপিএম-জমানার প্রশংসা। তারা শিক্ষিত ছিল, তাদের নিয়ে এত মিম সম্ভব হত না, তারা এত টাকা মারত না, বরং তক্তপোশে শুয়ে অনাড়ম্বর জীবন কাটাত। অবাক লাগে, বামফ্রন্ট ক্ষমতা থেকে পিছলেছে বেশিদিন নয়, যে-নেতাদের নাম করে নব্য সিপিএমরা সহানুভূতি ও সমর্থন কুড়োনোর চেষ্টা করেন, সে পাণ্ডাদের চূড়ান্ত ঔদ্ধত্যের কথা এর মধ্যে ভোলার প্রশ্ন ওঠে না। তাঁরা শিক্ষিত ছিলেন, সাধারণ জীবনযাপন করতেন, এদিকে পার্টির গুন্ডা মস্তান লোফার পুষতেন যারা গিয়ে ছাপ্পা ভোট মারত ও সিপিএম-বিরোধী শক্তিকে দনাদ্দন ধোলাই দিত। তাঁরা প্রোমোটারকে সুবিধে পাওয়াতেন ও পাড়ার ক্লাবকে হাতে রাখতেন। তাঁরা কথায় কথায় সাধারণ মানুষকে অপমান করতেন ও হাবেভাবে বোঝাতেন যদি সিপিএম এসএফআই ডিওয়াইএইআই কুটা কো-অর্ডিনেশন কমিটি না করো, তবে ন্যায়বিচার পাওয়ার আশা সুদূরপরাহত। তাঁরা সাধারণ মানুষের ওপর গুলি চালাতে অর্ডার দিয়েছিলেন ও পুলিশের সঙ্গে ক্যাডারদের ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন গ্রামের মানুষদের শায়েস্তা করতে। সবাই এসব এখনও ভোলেনি নিশ্চয়ই, ভুললে তো একটিও আসন না পেয়ে সিপিএম-কে ফেসবুক-সর্বস্ব হয়ে বাতেলা জড়িয়ে সেই তক্তপোশে শুয়ে থাকতে হত না। হতেই পারে, এই রাজ্যের মানুষ তৃণমূলকে ছুড়ে ফেলে দিলেন (এবং তার লাখো সঙ্গত কারণ আছে), হতেই পারে সিপিএম-কেই ফের ডেকে বসালেন মসনদে, হোক, কিন্তু তা যেন স্মৃতিভ্রংশ বা অতীতবিলাসের কারণে না হয়, তা যেন সকল জেনেশুনে তাবৎ বুঝেসুঝে ঘটে, এটুকু কামনা। নইলে, অনেকে সিপিএমের অত্যাচার দ্যাখেনি বলে, সেই অত্যাচারটা আসলে ঘটেনি, সবটা তখনকার মিডিয়ার শয়তানি ও অপপ্রচার, ওটাই আসলে বাঙালির স্বর্ণযুগ ছিল— এমন মার্কোস-জুনিয়রীয় আষাড়ে-আখ্যানের ফাঁদে আমরা না পড়ি। নস্টালজিয়া আমরা বাঙালির গুণ বলে মনে করি, কারণ বাঙালি এমনিতে জবজবে টাইপ গবেট। কিন্তু গুণের জন্য যদি গুণাগার দিতে হয়, ব্যাপারটাকে যদি সম্পদ থেকে বিপদে রূপান্তরিত করি, তখন ‘নষ্ট’ দিয়ে বানানটা শুরু হবে, আর উত্তর-প্রজন্মের কাছে উত্তর দেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। 

    ছবি এঁকেছেন সায়ন চক্রবর্তী

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook