এক ল্যাপটপের মৃত্যু
সারা ঘর অন্ধকার করে দিয়ে সে দিয়ে যাচ্ছে হাততালি
দিয়েই যাচ্ছে সে…
হাততালি দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে গেলে শুরু করেছে এক হাসির আওয়াজ
হাসির আওয়াজটা সে করেই যাচ্ছে…
আওয়াজে আওয়াজে ক্লান্তি নেমে এলে ’পর
একটা পুরনো পিস্তল হাতড়ে হাতড়ে খুঁজে বার
করে এনে ধরেছে সে ঠেসে হাতের মুঠোয়
আন্দাজে দেওয়ালের দিকে তাক করে অন্ধকার ফুঁড়ে দিতে ট্রিগার টিপেছে
স্তনবৃন্ত টেপার আরামেই, আহ…
তার বুক ফুঁড়ে গুলিটা বেরিয়ে গিয়ে ল্যাপটপের পশ্চাৎ ফুটো করে দিয়েছে, সে দেখল আলোটা জ্বালিয়ে
তার নতুন কেনা ল্যাপটপের অপঘাতে মৃত্যু… হয়েছিল এভাবেই,
সেই সন্ধেবেলা
মিনতি-সঙ্গীত
পোশাক খুলে ফেলো সখী আজ খুব গরম পড়েছে
এসো অ-পোশাকে মুখোমুখি ভাবি রাজনীতি এ দেশের
টুকটুকি থুড়ি বগটুই ভাবি
রেপের রশি ধরে ধরে বুকে হেঁটে
এক পা এগোই, কিংবা দুই পা ব্যাক গিয়ারে
তোমার স্তন দুটি নাচাতে নাচাতে ভাবছি, আমার বান্টুও নাচাতে নাচাতে ভাবছ…
ভাবতে ভাবতে
আমরা গদগদ থুড়ি তদ্গত হচ্ছি তাপ নিয়ে চলেছি আভেনের
শুয়ে পাশাপাশি, খেলায় খেলায়…
কিন্তু আমারটা যে ঢোকাতে পারছি না, ওগো পারছি না গো কিছুতেই…
কী হল বলো না…
মনে হচ্ছে পাথরে ঠোক্কর আর ঠোক্কর খাচ্ছে… সঙ্গে গানও, নির্মম কাকুতি-সঙ্গীত, মিনতির গান…
যদিও সব কিছু ঢেকে যাচ্ছে তোমার হাসিতে হাসিতে প্রিয়া,
আর বলছিলে, মৃত্যু নিয়ে মাজাকি করছিলিস তো,
দ্যাখ এইবার ক্যায়সান লাগে
গুঁড়ো
চাঁদের আলো আকাশে আজ ছড়িয়ে পড়েছে,
হিম পড়ে আছে ধানখেতে
ধানগুলি ঝুঁকে পড়েছে,তার ভারে, সে হাঁটছিল আলপথে,
হাতের মুঠোর আড়ালে তার রয়েছে মোড়ক সেই,
তাতে গুঁড়ো-গুঁড়ো
যা তাকে দিয়েছিল গেঁয়ো এক যোগী, ভিক্ষা না পেতে পেতে যে আজ
লজ্জাবনত
হাঁটতে হাঁটতে গিয়ে পৌঁছাল দিঘিটার পাশে, তাল বন তারই চারিভিতে আছে
হাতের গুঁড়ো-গুঁড়ো সে উড়িয়ে দিচ্ছিল দিঘির উপরের হাওয়ায়
ঝকমক করছিল সেই গুঁড়ো হাওয়ার ভিতরে
ছড়িয়ে পড়ছিল ধীরে ধীরে
আর দিঘিটা হয়ে উঠছিল দিঘার সৈকত চোখের সামনে তার
সমুদ্রের আওয়াজ, প্রবল হাওয়ার ধাক্কা এসে লাগছিল গায়ে—
তার মাথার নকল চুলের দঙ্গল তখনই উড়ে গিয়ে তালগাছে
আটকে গিয়েছিল
এ কী… সব কিছু পালটে গিয়েছে তো, শুধু ওই তালগাছগুলি ছাড়া
ঝাউগাছের দলবদ্ধতা তোমরা কোথায়, এসো… এইখানে—
এসো…
হোটেলের ঘরে
হোটেলের জানালার ভারী সেই পর্দা সরাতেই শোনা গেল দৈত্যদানবের আওয়াজ
কাচ ভেদ করে দেখলাম পাহাড়পর্বত ছড়ানো— ওই যে, কাছেই
ওই পর্বতের নাম কাঞ্চনজঙ্ঘা— জানো তো? গা-ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি বলল আমায় তার পাতলা গোলাপি রঙের ঠোঁট থেকে জলের আভাস মুছে
সকালবেলায় কতগুলি পাহাড়ি ফুল সে চয়ন করে এনেছে—
কোথা থেকে আনলে এসব ফুল, এ কি আমার জন্য?
সে টেবিলের উপর শোয়ানো ফ্লাওয়ারভাসটা দাঁড় করিয়ে তাতে ফুলগুলো রেখে দিল
তার পর ভাসের বাকি থাকা হাঁয়ের ভিতর দিয়ে কাচের জার থেকে ঢালতে থাকল জল সুড়সুড় করে…
সারা ঘরে জলের শব্দ নৃত্যরত, ঘুরতে থাকল গোল গোল… গোল গোল… পিঠের উপর একটা ফুঁ আঙুলে ভর করে ঘুরে বেড়াচ্ছে কি…
আমি আরামে চোখ বুজে ফেললাম, চোখের পাতায় এ কেমন বিদেশি আঠা লাগানো রয়েছে?
পর দিন হোটেলের দরজা ভেঙে আমার দেহ বার করা হয়েছিল মনে আছে
আমার শিশ্নে বাঁধা ছিল জল-রঙের সুতো দিয়ে একটি পাহাড়ি ফুল— অ্যাঞ্জেলিয়া
কমলিনীর ওভারকোট
পাহাড়ি এ রাস্তায় যেখানে কমলিনী হোটেল ঠিক তার পাশে
কাল তার অপেক্ষা করার কথা
সেখানে একটা লাইটপোস্ট রয়েছে, চেয়ারও রয়েছে, তবে ছোট—
চেয়ারে বসেছে সে বহুদিনই আগে, তার পর লাইটপোস্টের আলো থেকে তৈরি অনেক নরম পোকা তার নাক দিয়ে মুখ দিয়ে ঢুকে গিয়েছে
পেটে, কমলিনীর কফিশপ থেকে অর্ডারিত কফি তার পেটে গিয়ে উষ্ণতা হারিয়ে ফেলেছে পোকাগুলিকে মারতে মারতে
পটিতে পোকার দেহগুচ্ছ দেখে সে বেশ মজাই পেয়েছে পর দিন প্রাতে
কাল চেয়ারে বসে ওই যে অপেক্ষা
তার শেষে হোটেল থেকে বেরিয়ে বিশাল ওভারকোটের কমলিনী কাছে আসবে বেঁকে বেঁকে হেঁটে
ঘাড়ের পাশে দাঁত বসিয়ে দেবে পুট করে বোঝাই যাবে না
কানের ভিতর তার সরু সরু আঙুল ঢুকিয়ে দেবে
আর
তুলে নিয়ে যাবে হোটেলের ঘরে,
বিরাট বিছানায় শুইয়ে দিয়ে শুরু করে দেবে মাথাটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মন্ত্রের জোয়ার
সকালে সেই ঘরে যে কোনও মানুষ ওভারকোট হয়ে পড়ে রয়,
ছড়ানো ছিটানো থাকে আশপাশে কমিক স্ট্রিপ রোভার্সের রয়, রেডবুক, দুটো বড় বড় মৃত পোকা, ওডিকোলনের বোতল আর একবাটি ছাতু
কমলিনী পুরনো ওভারকোট ছেড়ে ন্যাংটো হয়ে দুদুতে ভাল করে ক্রিম মেখে নিয়ে নতুনটা পরে, জানতে পারে না কেউই
ছবি: নারায়ণ সিংহ