পরিচালনা — সুহেল তাতারি
অভিনয় — গুল পানাগ, সত্যদীপ মিশ্র, মাহেক ঠাকুর
কাহিনি, চিত্রনাট্য ও প্রযোজনা— মানধীর সাহনি
দৃশ্যগ্রহণ — প্রকাশ কুট্টি
আবহসঙ্গীত — গৌরাঙ্গ সোনি
সম্পাদনা — কূলদীপ মেহান
পরিচালক সুহেল তাতারি’র স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি ‘ডিসকানেকটেড’ বছর-শেষের ডাকবাংলায়। সমসাময়িক সময়ের চিরকালীন গল্প; মানুষের মাঝে, সম্পর্কের মাঝে বিচ্ছিন্নতার কাহিনি। পৃথিবীতে সংযোগ যত বাড়ছে, ততই কি আমরা নিজেদের হারিয়ে ফেলছি, অস্তিত্ব খুঁজে বেড়াতে তৈরি করে চলেছি একের পর মেকি অস্তিত্ব? কথোপকথনে সুহেল।
এই স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি বানানোর চিন্তা…
কখনও চিত্রনাট্যই ছবি-নির্মাতাকে বেছে নেয়। এই সিনেমাটার ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। আমার বন্ধু গুল পানাগ-এর সূত্রে, এই ছবির প্রযোজক এবং লেখক মানধীর সাহনি এই চিত্রনাট্য আমাকে অফার করেছিলেন। আমরা অন্য একটা ছোট ছবি বানানোর বিষয়ে আলোচনা করেছিলাম, কিন্তু সেটা হয়ে উঠল না। এরই মাঝে মানধীর এই চিত্রনাট্যটা লেখেন এবং আমার সঙ্গে এই সিনেমাটার বিষয়ে কথা বলেন। এই সিনেমার গল্পটা আমার বেশ ভাল লাগে এবং তাই এটাকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহী ছিলাম।
‘ডিসকানেকটেড’-এর মূল বক্তব্য অত্যন্ত সময়োপযোগী। বিষয়টা যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে, তা নতুন, টাটকা, ইন্টারেস্টিং। কাহিনির শেষের মোচড়টা যে কোনও ভালো স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবির চাবিকাঠি।
‘ডিসকানেকশন’, অর্থাৎ সংযোগ-বিচ্ছিন্নতা। ছবিতে বিচ্ছিন্নতার সারমর্ম…
‘ডিসকানেকটেড’ আমাদের আধুনিক যুগের, বর্তমান সমাজের একটা প্রতিফলন মাত্র। আমরা আজকে প্রযুক্তির ক্রীতদাস, চার-বাই-দুই ইঞ্চি বাক্সগুলোর দিকে তাকিয়ে ২৪ ঘন্টা আমাদের জীবনের প্রাসঙ্গিকতা খুঁজি। কী করুণ অবস্থা আমাদের, মানুষের জীবনের কী কঠিন আয়রনি!
নামহীনতা, স্নেহের অভাব এবং বিচ্ছিন্নতার থিম ঘুরে-ঘুরে আসে এই ছবিতে; দাম্প্যত্য সম্পর্কে আনুগত্যহীনতার গল্পের মোড়কে এই বিষয়গুলো উপস্থাপনার গুরুত্ব…
ছবির বিষয়বস্তুর সিংহভাগ লেখকের কৃতিত্ব। পরিচালক হিসাবে আমার দায়িত্ব ছিল লেখা গল্পকে পর্দায় ফুটিয়ে তোলার। আমি কিছু-কিছু জায়গায় বদল এনেছিলাম, যেমন বাবা-মায়ে’র সঙ্গে তাঁদের টিন-এজ কন্যার বাকবিতণ্ডার দৃশ্যে, যেখানে মেয়েটি বলে ওঠে ‘যাঁরা আমার কাছে গুরুত্বহীন, তাঁদের থেকে বৈধতার প্রমাণ আমি চাই না’, যা গোটা ছবিটার সমস্যাবিশেষ হয়ে দাঁড়ায়।
এই পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের আধুনিক সমাজে অবৈধ সম্পর্কের কথা ওঠে, যা আমি মনে করি যথেষ্ট প্রচলিত হয়ে উঠেছে, বিশেষত এই ডিজিটাল যুগে। মিডিয়ামটার কারণে, নামহীনতার আড়ালে আমরা একটু অসতর্ক, অহংকারী হয়ে পড়ছি এবং নৈতিক সীমানাগুলো খুব সহজেই লঙ্ঘন করছি। মানুষ যে সুযোগ পেলে এক ধরনের ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়তে পারে, তা-ও এই ছবিতে ধরা রয়েছে।
ছবির শেষের মোচড়…
‘ডিসকানেকটেড’-এর শেষটা দু-ভাবে দেখা যেতে পারে। এক, যেখানে স্ত্রী (চরিত্রে গুল পানাগ) স্বামীকে হাতেনাতে ধরার চেষ্টা করেন, যা হয়তো বেশির ভাগ দর্শকই ভেবে থাকবেন। দুই, এবং আরো একটু জটিল শেষ সেটা, যেখানে কল্পনায় তাঁর পরিবারের ভয়ঙ্কর সত্য সামনে দেখা বা কল্পনা করা সত্ত্বেও, মহিলা তাঁর অচেনা, অদেখা প্রেমিককে চোখের দেখা দেখতে এগিয়ে যান। সোশ্যাল মিডিয়ার অদ্ভুত পলাতকবাদী নেশা থেকে ফিরে দাঁড়ানো খুব কঠিন হয়ে উঠতে পারে; একবার পা বাড়ালে পিছলানোর সম্ভাবনা প্রবল!
নিজের কারণেই তাঁর পরিবার ছারখার হয়ে যাওয়ার ভয় এতটাই প্রবল ছিল যে কোনটা কল্পনা, আর কোনটা বাস্তব জীবন, শেষ অবধি তা এই চরিত্র নিজেই বুঝে উঠতে পারেন না।