ওয়েব সিরিজ দর্শকদের পক্ষে যতখানি নতুন মাধ্যম, নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত লোকজনের কাছে ততখানি বোধহয় নয়। পর্ব-ভাগের ব্যাপারটা টেলিভিশনে বরাবরই ছিল, কিন্তু ওয়েব সিরিজ যান্ত্রিক, বৌদ্ধিক ও নির্মাণের মাপকাঠিতে চলচ্চিত্রের কাছাকাছিই অবস্থান করে। তাই মন্দারের নির্মাণ অভিজ্ঞতা আমার কাছে চলচ্চিত্র-নির্মাণ-অভিজ্ঞতাই বলা যায়। এবং অবশ্যই এই মাধ্যমে, এই ভূমিকায় প্রথম অভিজ্ঞতা।
যে কোনো শিল্পীরই একধরনের মৌলিকতার খিদে থাকে। প্রথমবার কিছু সৃষ্টি করার, যা এর আগে কখনো হয়নি, কখনো ঘটেনি শিল্পের চরাচরে, এমন কিছু। নিজের নির্মাণকে প্রায় এক আবিষ্কারের সমতুল করে তোলার বাসনা ও চিত্রনাট্য থেকে শট নেওয়ার সময়কালে এই চিন্তাটাকে বয়ে নিয়ে চলা, এটা অনেকের ক্ষেত্রেই বিদ্যমান। স্বাভাবিকও বটে। বন্ধু প্রতীকের সঙ্গে চিত্রনাট্য লেখাকালীন আমার নিজের সাথে প্রথম বোঝাপড়া ছিল এটাই। একটা নতুন কিছু করতে হবে ধরণের স্লোগান মাথার ভেতর ধ্বনিত হচ্ছে, আবার পাশাপাশি এটাও ভাবছি, চলচ্চিত্র-শিল্পের ১২৫ বছরেরও বেশি বয়সে এসে আমি যখন নির্মাণের কাজে হাত দিচ্ছি, সত্যিই কি আর কিছু ‘নতুন’ করা সম্ভব! একটা দৃশ্যকে বা মানুষকে বা সংলাপকে আদৌ কি অভূতপূর্ব, একেবারে নতুন রকম করে উপস্থাপিত করা সম্ভব!
অচিরেই কিছু গুরুজন এবং সর্বোপরি নিজের সাথে কথোপকথন চালিয়ে, এই ভুল চিন্তা থেকে আমি মুক্ত হই এবং সৌভাগ্যক্রমে শ্যুটিং শুরু হওয়ার আগেই মুক্ত হই।
আমার এক বন্ধু এক আড্ডায় গল্পচ্ছলে বলেছিলেন, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেউ একজন প্রশ্ন করেছিলেন: আপনি সাহিত্য রচনা করেন কেন? তাতে তাঁর উত্তর ছিল… আমি যা জানি, তা তো আর কেউ জানে না, আমি আমার এই একান্ত, ব্যক্তিগত জানাটা অন্যদের জানাতে চাই…। তথ্যই যখন জ্ঞান, সেইরকম এক পৃথিবীতে বসে এই কথাটা প্রথমবার শুনে একটু থতমত খেয়ে যেতে হয়, কিন্তু একটু ভাবলেই এর ভেতরের চমৎকার অর্থ বেরিয়ে আসে, যা সামাজিক ভাবে, এমনকী বৈজ্ঞানিক ভাবেও সত্য বইকি!
আমি সামাজিক ও প্রাকৃতিক ভাবে অন্য সব মানুষের মতো হলেও, অনুভব ও দৃষ্টিভঙ্গির বিচারে পৃথিবীর ৭৭৫ কোটি মানুষের মধ্যে আমি তো এক-পিসই, অনেক মানুষের সাথে মিল অমিল গোঁজামিল পেরিয়ে একদম ঠিক আমার মতো আরেকটি মানুষ তো এই গ্রহে নেই, এটাই এক বিরাট বড় মৌলিকতা, ফলত আমার কাজ ততখানিই মৌলিক যতখানি আমি একজন মানুষ হিসেবে মৌলিক, অবশ্যই যদি আমি আমার অনুভব ও দৃষ্টিভঙ্গিগুলোর প্রতি চলচ্চিত্র বা নাটক নির্মাণের সময় সৎ থাকি। যদি আমি গোড়া থেকেই ভেবে রাখি যে পৃথিবীর সিনেমার রত্নভাণ্ডার থেকে কিছু জিনিস তুলে তুলে আমি ঠিক খাপে-খাপে বসিয়ে দেব, তাতেই দাঁড়িয়ে যাবে, তবে অবশ্য আলাদা কথা।
আমি যে সবসময় মৌলিক, আসল, আগমার্কা, অরিজিনাল— এইগুলো নিয়ে খুব চিন্তায় থাকি তা নয়, তবু প্রথমবার চলচ্চিত্র নির্দেশনার আগে এই তর্কটা আমার মাথায় এসেছিল, এবং তার সঙ্গে জুড়ে থাকা যে উপলব্ধিটা আমি পেয়েছিলাম, সেটা আমায় মন্দার লেখা, ভাবা থেকে শুটিং করার সময়, এমনকী পোস্ট প্রোডাকশনের সময়ও খোলা ঝরঝরে মনে চিন্তা করতে বিরাট সাহায্য করেছে।
চলচ্চিত্রের প্রথাগত, ব্যাকরণগত ও যান্ত্রিক শিক্ষা আমার নেই। একমাত্র অভিনয় নিয়ে কিছু প্রশিক্ষণ আমার আছে, তাও সেসবই থিয়েটারের সূত্রে পাওয়া।
আমার সিনেমায় অভিনয়ের জীবন সাত বছরের, এই সময়কালে আমার পরিচালকদের কাজের পদ্ধতি সামনে থেকে দেখা, বোঝার চেষ্টা করা, আলাপ-আলোচনা, প্রশ্ন-উত্তরের মধ্যে দিয়ে অভিনেতা হিসেবেই মাধ্যমটাকে আরো ভালভাবে বুঝতে চাওয়া, এছাড়া থিয়েটার ও সিনেমা মিলিয়ে আমার এযাবৎ অভিজ্ঞতা, অনুভব, গল্প উপন্যাস কবিতা ও অন্যান্য বিষয়ে যতটুকু পড়াশোনা আমি করেছি এবং বিশ্ব-চলচ্চিত্রের যেটুকু আমি দেখেছি— এই সব মিলিয়ে আমার যে মন ও মনন তৈরি হয়েছে, সেটুকু সম্বল করেই আমি সিনেমা নির্মাণে নেমে পড়েছি। ফলত চতুর্দিকে খাদ, কিন্তু এগুলির মধ্যে সবচেয়ে গভীর ও অতল খাদটি হল: যে দৃশ্য বা ছবিটি আমি মানসপটে দেখতে পাচ্ছি, সেটি চিত্রগ্রাহকের হৃদয়ে মস্তিষ্কে সবটুকু আবেগ ও বোধ সমেত পৌঁছে দিতে পারার ক্ষমতা। মন্দার-এ এই কাজটিতেই আমি সবচাইতে বেশি ভয় ও আনন্দ পেয়েছি। বলাই বাহুল্য সৌমিক হালদারের মতন স্বনামধন্য, দুর্দান্ত প্রতিভাবান চিত্রগ্রাহক থাকাটা হচ্ছে আনন্দটার কারণ, এবং ভয়ের কারণ আমার অনভিজ্ঞতা ও অশিক্ষা। তবে একটা শিল্পিত সেতু-বন্ধন অবশ্যই করা গেছিল, সে-বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
বাংলা ছবির কাজে সময়ের অপ্রতুলতা তো প্রবাদের চেহারা নিয়েছে। এখন তা প্রায় অভ্যেসে পরিণত হয়েছে। এমনও হতে পারে, হঠাৎ যদি এখন কোনো প্রযোজক একটি আড়াই ঘন্টার ছবির জন্য ঢালাও ৪০ দিন শুটিং-এর অনুমোদন দেন, পরিচালক ও তার সহকারীদের ক্রিয়েটিভ ব্যালেন্স ঘেঁটে যেতে পারে, দেখা গেল তারা আর ছবিটা করেই উঠতে পারলেন না!
অভিনেতা হিসেবে, এই কম সময়ে অনেকটা কাজ করা, সকালের দিকে চরিত্রে নিমগ্ন হয়ে সংলাপের অন্তর্নিহিত অর্থ খুঁজে তা প্রকাশ করা এবং বিকেল গড়িয়ে সন্ধে নাগাদ একটি মেশিন বা মাংসের তালের মত লাইন আউড়ে যাওয়া রাত্তির পর্যন্ত— শারীরবিজ্ঞানের উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে থাকা এই পদ্ধতিতে শুধু আমি কেন, এখনকার বেশিরভাগ অভিনেতাই অভ্যস্ত। কিন্তু মন্দারে সময়ের অভাবটা আমায় সবচেয়ে বেশি যে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছিল, সেটা এই চিত্রগ্রহণ। ব্যাপারটা এরকম… আমরা কলকাতায়, আমার সহকারী, সৌমিকদা— সকলে মিলে বসে শট-ডিভিশন করে নিয়ে গেছিলাম, যে অঞ্চলে শুটিং করব, সেখানে দু’বার গিয়ে খুব ডিটেলে রেইকি করে আসা হয়েছিল বলে এমনকী ক্যামেরা পজিশন নিয়েও বেশ খানিকটা স্বচ্ছতা ছিল, কিন্তু আমরা লেন্স লিখে নিয়ে যাইনি, যদিও সৌমিকদার নির্দেশে ‘আর্টেমিস’ নামের একটি অ্যাপ আমার মোবাইল ফোনে নামিয়ে, একমাস ধরে নাড়াচাড়া করে, আমি বোঝার চেষ্টা করেছি গল্পের সঙ্গে ম্যাগনিফিকেশনের সম্পর্ক। তবু শুটিং-এ গিয়ে সৌমিকদা যখন লেন্স লাগিয়ে ক্যামেরা কাঁধে নিয়ে বলছেন— ‘দ্যাখো অনির্বাণ’, তখন সাংঘাতিক দ্রুততায় আমায় মাথার মধ্যে অনেকগুলো রেলগাড়ি একসাথে চালাতে হচ্ছে, গল্পের, মানুষের, চরিত্রের, অভিঘাতের, আরো কত কিছুর— আবার এমনও হয়েছে অনেকবার শুধুমাত্র চোখের আরামের ওপর নির্ভর করে ‘ওকে সৌমিকদা’ বলে উঠেছি। প্রথমবার সিনেমা-নির্মাণে এসে সময়ের সঙ্গে সবচেয়ে বড় ও জটিল লড়াই ছিল এটাই।
সিনেমা এমনই এক অদ্ভুত শিল্পমাধ্যম, যেখানে একাধিক মন, মনন, মস্তিষ্ক একটাই জিনিসকে গড়ে তুলতে চায়, এবং তা যখন জোড়া লেগে, সাজগোজ করে দর্শকের সামনে যায়, তখন কার কতটুকু মন, মননের কতটুকু অংশ যে সেখানে থাকে, তা আর পরিমাপ করা যায় না। অভিনেতা হিসেবে আমি যেমন বুঝতে পারি, কোন জায়গায় সত্য স্পর্শ করা গেল, কোথায় গেল না, এবং সত্য স্পর্শ করার দায় একান্তভাবে অভিনেতারই থাকে। নির্দেশকের তা নয়, সে ব্যর্থ হলেও, আরো অনেকগুলি মানুষ সেখানে থাকে যারা সত্যের দাবি মিটিয়ে দিতে পারে। ‘A film by’-এর পর একটামাত্র লোকের নাম বসানোর অভ্যাসটা তাই, চলচ্চিত্র-নির্মাণের বিজ্ঞান অনুযায়ী, ঠিক নয় বলেই মনে হয় আমার।
আমি ‘মন্দারে’ চমৎকার সমস্ত অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি, সকলেই আমার পরিচিত, কেউ কেউ আমার দীর্ঘদিনের সহকর্মী, কেউ দীর্ঘ পরিচিত। এই পরিচয়ের প্রিভিলেজ আমিই বেছে নিয়েছিলাম আমার প্রথম কাজের অছিলায়।
আমি নির্দেশক হিসেবে আমার অভিনেতাদের কাছে একইসঙ্গে তাদের বৌদ্ধিক লগ্নি এবং প্রশ্নহীন আনুগত্য দাবি করেছিলাম। কখনোই তা খুব চিৎকৃত ভঙ্গিতে করিনি, চাইওনি তা করতে, কিন্তু নির্দেশক হিসেবে আমার কাছে এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ও ইন্টারেস্টিং ব্যাপার ছিল।
ধরা যাক, দেবেশ রায়চৌধুরীর মতো পাহাড়প্রমাণ অভিনেতার কাছে গিয়ে আমি বলছি, দেবেশদা আপনি এখানে অনেকটা মদ খেয়ে ফেলেছেন এবং এই কথাগুলো বলছেন। এখানে আমি অভিনেতার পায়ের কাছে নিজেকে প্রায় সঁপে দিয়ে বলছি যে, এখানে আপনি যা করবেন, সেটাই দৃশ্য, আমার ও চিত্রগ্রাহকের কাজ ঠিক করে সেটা ক্যামেরায় তুলে নেওয়া শুধু। আবার, একই অভিনেতাকে কোনো দৃশ্যে তাঁর ইচ্ছেমতো একটা আঙুলও নাড়াতে দিচ্ছি না, এ এক ধরনের ভায়োলেন্স বা নিষ্ঠুরতা বলা যায়। এইটা বারবার হতে-হতে আমার অভিনেতারা হয়তো খুবই দ্বিধার মধ্যে পড়ে যেতে পারেন: আসলে তাঁরা কী ধরনের পরিবেশের মধ্যে আছেন। একবার নির্দেশক তাঁকে দৃশ্যের ব্যাটন তুলে দিচ্ছেন, আবার পরমুহূর্তেই তা কেড়েও নিচ্ছেন। আমার অভিনেতারা যদিও কোনো অভিযোগ করেননি, কিন্তু আমি একজন অভিনেতা হিসেবে বলতে পারি, এরকম ব্যবহার যথেষ্টই বিড়ম্বনার। আমি এই জায়গায় থাকলে হয়তো একটা গোল বেধে যেতে পারত। কিন্তু আমার কোনো পরিচালকই আমায় এরকম অদ্ভুত দ্বিমুখী পদ্ধতির মধ্যে ফেলেননি।
আরো একটা মুহূর্তের কথা মনে পড়ছে, সোহিনী যখন শেষ দৃশ্যে মন্দারের কল্পনায় দুই সন্তানকে কোলে নিয়ে নৌকোয় বসে আছে, তার সংলাপগুলি আমি ওকে বলতে বলেছিলাম, মাতৃত্বের কোমলতা থেকে নয়, আত্মবিশ্বাস থেকে। এবার বলেই মনে হল, এই মাতৃত্বের আত্মবিশ্বাসের কোনো রেফারেন্স আমি অভিনেত্রীকে দেব কী করে! আমার অভিনেত্রী এখনো মা হননি, আমি আমার মা বা অন্য মায়েদের মধ্যে ওই অদ্ভুত আত্মবিশ্বাস দেখেছি, কিন্তু ওই ‘আত্মবিশ্বাস’ শব্দটুকু ছাড়া আমি সোহিনীকে কিছুই বলে উঠতে পারিনি। এটা অভিনয় দেখিয়ে দেওয়ার ব্যাপার নয়, আমি কী মুখ, কী প্রক্ষেপণ শুনতে বা দেখতে চাই, সেটা আমার মাথায় পরিষ্কার, কারণ আমি সেটা দেখেছি, শুনেছি। কিন্তু কোনোভাবে আমি সেটা আমার অভিনেত্রীকে কমিউনিকেট করতে পারছি না, ওটা একমাত্র একজন নারীই পারে, তার শরীর ও মনের উপলব্ধি থেকেই ওই অভিব্যক্তি উঠে আসতে পারে। সোহিনী অসম্ভব সংবেদনশীল অভিনেত্রী, করেওছিল দারুণ। কিন্তু আমার মনে আছে, ওই সময়টায় আমি কেমন যেন অসহায় ও ভেতর থেকে আটকা পড়ে গেছিলাম। মুহূর্তটা, মন্দার নির্মাণের অজস্র মুহূর্তের মধ্যে খুবই গভীর অভিঘাত নিয়ে আমার মনে গেঁথে আছে।
আমরা মন্দারমণি সংলগ্ন দক্ষিণ পুরুষোত্তমপুর বলে একটি গ্রামে অনেকদিন শুটিং করেছিলাম। মন্দার, মদন হালদার, বঙ্কার বাড়িগুলি এই গ্রামেই ছিল। এই বাড়িগুলিতে যাঁরা থাকতেন, তাঁরা প্রত্যেকেই নিজেদের থাকা, খাওয়া, শোয়ার জায়গা আমাদের দাপাদাপির জন্য হাসিমুখে ছেড়ে দিয়েছিলেন।
আমরা জানুয়ারি মাসে শুটিং করে ফিরে আসি কলকাতায়। এরপর মে মাসে সাইক্লোন ইয়াস ধ্বংসলীলা চালায় সমুদ্র-উপকূলবর্তী গ্রামগুলোয়, দক্ষিণ পুরুষোত্তমপুরও রক্ষা পায় না। আমরা, মন্দারের পরিচালনা-টিমের কয়েকজন, সামান্য ত্রাণসামগ্রী নিয়ে সেখানে পৌঁছই। চোখে ও মাথায় সাংঘাতিক ধাক্কা লাগে, জলস্রোতের আঘাতে ছত্রখান হয়ে যাওয়া সেই গ্রাম দেখে। এর মধ্যে সবচেয়ে মর্মান্তিক আলফাজদার বাড়ির অবস্থা, যেটা বঙ্কার বাড়ি হয়েছিল। সম্পূর্ণ বাড়িটাই মাটির সাথে মিশে গেছে। ছন্নছাড়া ইটগুলো শুধু ধ্বংসের প্রমাণ হিসেবে পড়ে আছে। আলফাজদার পরিবার নিশ্চয়ই আবার সেখানে বাড়ি গড়ে তুলেছেন, কিন্তু ইয়াস-পূর্ববর্তী বাড়িটা মন্দারে ক্যামেরায় তোলা ছবি হয়েই শুধু রয়ে গেছে। আসল বলার কথা সেটা নয়… এই ধ্বংস দেখে যখন আমরা আলফাজদাকে ত্রাণের সাথে সমবেদনাও জানাচ্ছি, তখন গ্রামীণ মৎস্যজীবী মানুষ আলফাজদা এক অদ্ভুত ঐশ্বরিক সারল্য ও বেদনা নিয়ে বলেছিলেন, ‘বাড়ি ভেঙেছে,সে ঠিক আছে, সারিয়ে নেব, কিন্তু রোজ সন্ধেবেলা দুটো শালিক এসে ঘরের চালে বসত, ঝড়ের পর আর ওরা আসেনি।’ এই বলে ব্যথাতুর চোখ তুলে আমাদের দেখে অল্প হেসেছিল, না কি কেঁদেছিল, সেটা বুঝতে পারিনি।
‘মন্দার’ সফল হয়েছে, অনেক মানুষ দেখেছেন, আলোচনা করেছেন। অভিনেতা হিসেবে সকলের, নির্দেশক হিসেবে আমার খুব নাম হয়েছে। কিন্তু শিল্পের ও জীবনের ছাত্র হিসেবে বুঝতে পারি না, কোনটাকে এগিয়ে রাখব! মন্দারের সাফল্যকে, না কি আলফাজদার দুই শালিকের শোকে ব্যথাভরা ওই মুখটাকে?