ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • লুকিয়ে থাকা টাকা


    প্রতীতি গণত্র (Pratiti Ganatra) (October 9, 2021)
     

    রিপ্‌ল। ব্লকচেন। হোডলিং। কার্ডানো। ওয়াজিরেক্স। জেবপেস। আই সি ও’স।

    কাঁচা টাকা ব্যাপারটা সেকেলে, সেই নোটবন্দির আগের যুগের ব্যপার। আর ব্যাংক ব্যালেন্স/ফিক্সড ডিপোজিট এসব হচ্ছে কোভিশিল্ড-পূর্ব যুগের বস্তু। ওপরের এই শব্দগুলোর অর্থ এখনও যাঁরা জানেন না এবং আপনি যদি তাঁদের একজন হন, তবে অচিরেই হুগলির পলিমাটিতে আপনার সপরিবারে বিসর্জন অনিবার্য। ‘ভবিষ্যতের মুদ্রা’ অর্থাৎ ক্রিপটোকারেন্সি কিন্তু লম্বা রেসের ঘোড়া, সে থাকতেই এসেছে। প্রাচীন, প্রথাগত বিনিয়োগকারীরা এবং কেন্দ্রীয় সরকার অধীনস্থ ব্যাংকগুলো তাকে যতই তাড়ানোর চেষ্টা করুন, এ জিনিসের মাহেন্দ্রক্ষণ এখন উপস্থিত। এটাই ভবিষ্যৎ। 

    এই লেখাটা যখন লিখছি, তখন বিশ্বজুড়ে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এবং ইন্সটাগ্রাম বন্ধ হয়ে গেছে। কেবল কয়েক ঘণ্টার জন্য এই অ্যাপ্লিকেশনগুলো চলছে না, এবং ইতিমধ্যেই ‘টেক-স্যাভি’ জনতার মধ্যে রীতিমতো হুলুস্থুলু পড়ে গিয়েছে। ‘এটা কি আমার ফোনের কোনও সমস্যা?’ ‘এটা কতক্ষণ চলবে?’ এই তো আমারই ফোনে (মনে হল যেন শত জনমের পরে) একটা টেক্সট মেসেজ পেলাম, ‘তোমার হোয়াটসঅ্যাপও কি চলছে না?’ আমাদের আজকালকার জীবনে এই হচ্ছে প্রযুক্তির জোর, প্রযুক্তির প্রতিপত্তি। আমাদের সামাজিক জীবন সে সম্পূর্ণ ভাবে গ্রাস করে নিয়েছে, খুব শিগগিরি আমাদের আর্থিক/বৈষয়িক জীবনকেও অনিবার্য ভাবে তার কবলে পড়তে হবে।

    যাঁরা এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল নন, তাঁদের জ্ঞাতার্থে বলি— ক্রিপটোকারেন্সি হচ্ছে এক ধরনের অস্থাবর বা ভার্চুয়াল মুদ্রা। বেচাকেনার হিসেব রাখার জন্য একটি ভাগাভাগি করে নিয়ন্ত্রিত লেজার- এ হেন অকেন্দ্রীভূত ব্যবস্থার মাধ্যমেই তার কাজ-কারবার। হিসেব-নিকেশ রাখার এবং তদারকি করার প্রথাগত ব্যবস্থার থেকে ব্লকচেনের পার্থক্য হচ্ছে এই অকেন্দ্রীকরণ। এর আর একটা দিকও রয়েছে— বস্তুত, কেন্দ্রীকরণ নেই বলেই কোনও সরকারি কর্তৃত্বের পক্ষে এ জিনিসের উপর হস্তক্ষেপ করা সম্ভব নয়। কারণ, ক্রিপটোকারেন্সি কোনও দেশের আইনব্যবস্থার আওতায় পড়ে না, বেসরকারি ব্যক্তি বা সংস্থার দ্বারাই এ জিনিস পরিচালিত হয়।

    আজকাল যদিও ব্যবসায়ীরা ব্যক্তিগত ভাবে নানা এক্সচেঞ্জে এই মুদ্রার কেনাবেচা বা ব্যবসা করে থাকেন, গোড়াতে এর মূল প্রবর্তকেরা নিজেদের কম্পিউটারেই এই মুদ্রা ‘ফলাতেন বা উৎপন্ন করতেন।’ এর অর্থ, কম্পিউটারের সাহায্যে গুপ্ত-সাংকেতিক (বা ক্রিপটোগ্রাফিক) গণিতের সমাধান করে ক্রিপটোকারেন্সির মুদ্রা অর্জন করা। ডাটা ব্লক বা তথ্যসমূহ যাচাই করতে হত, এবং ব্লকচেনে যোগ হত নতুন কেনাবেচা।

    প্রথম ক্রিপটোকারেন্সি হিসেবে বিটকয়েন বাজারে আসে ২০০৯ সালে। বাণিজ্যিক এবং বৈষয়িক জগতের জন্য তখন সময়টা খুব একটা সুবিধের নয়— বিশ্বজুড়ে তখন আর্থিক দুর্যোগ, সরকারি প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংক সংস্থার উপর সাধারণ মানুষের আশা-ভরসা তখন দ্রুত উধাও হয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় ‘কর্তৃপক্ষ’-এর নাক গলানোকে পাশ কাটিয়ে সরাসরি ব্যবসা করার প্রস্তাবটা খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠল। বিটকয়েনের প্রবর্তক সাতোশি নাকামোতো কড়া করে বেঁধে দিলেন, মোট মুদ্রার কতদূর পর্যন্ত ‘ফলানো’ যাবে। সর্বোচ্চ সংখ্যা ধার্য হল, ২.১ কোটি।

    এই বাজারের সবচেয়ে বড় সমালোচনাগুলোর মধ্যে একটা হচ্ছে এর পরিবর্তনশীল স্বভাব বা স্থায়িত্বের অভাব নিয়ে। যেহেতু ২৪ ঘণ্টা ধরেই এ বাজার চলতে থাকে, প্রথাগত শেয়ার-বাজারের মতো এর উপর খোলা-বন্ধের সময়ের প্রভাব পড়ে না। আপনি হয়তো দশ ঘণ্টা কম্পিউটার বন্ধ করে রাখলেন, ফিরে এসে দেখলেন ইতিমধ্যেই রাজার ঐশ্বর্য আপনার হাত থেকে বেরিয়ে গিয়েছে! এই পরিবর্তন আরও চোখে পড়ে, যখন দেখা যায় একজন বড় বিনিয়োগকারী (ইলন মাস্কের কথা বলছি) মাত্র একটি টুইট করে ডোজকয়েনের মূল্যে ঝড় উঠিয়ে দিচ্ছেন। ঝুঁকি নিয়ে খেলতে যাঁরা ভালবাসেন, তাঁদের জন্য এ জিনিস মানানসই— হারতেও পারেন, জিততেও পারেন, কয়েক মিনিটের ব্যাপার।

    এই সর্বোচ্চ সংখ্যা বজ্র আঁটুনিতে বাঁধা আছে বিটকয়েনের মূল কোডে। বিটকয়েনের মূল্যায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ এই সর্বোচ্চ সংখ্যার লক্ষ্মণরেখা— একটি জিনিস যতটা বিরল, তত বেশি তার দাম। অর্থনীতিতে চাহিদা ও সরবরাহের গোড়ার অঙ্ক মেনেই এই মূল্যায়ন। ক্রমশ বাড়তে থাকা চাহিদা এবং বাঁধাধরা, নিয়ন্ত্রিত সরবরাহের ফলে দাম হয়ে যায় আকাশ-ছোঁয়া। আজ পর্যন্ত প্রায় ১.৮৫ কোটি বিটকয়েন ফলানো হয়েছে, অতএব মোট যতটা বিটকয়েনের অস্তিত্ব কোনওদিন সম্ভব, তার ৮০ শতাংশ ইতিমধ্যেই এসে গিয়েছে বাজারে। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এর মোট বাজারদর এক ট্রিলিয়ন বা এক লাখ কোটি ডলার ছাড়াল।

    গোটা পৃথিবীতে খোলাখুলি কেনাবেচা হয়, এ রকম ছ’হাজারেরও বেশি ভিন্ন ভিন্ন রকমের ক্রিপটোকারেন্সি রয়েছে। ক্রিপটো ‘ফলানো’র উপায়টি যেহেতু সর্বলভ্য, সেহেতু এ জিনিস তৈরি করা তুলনামূলক ভাবে সহজ। কিন্তু গোটা ক্রিপটো-বাজারের প্রায় নব্বই শতাংশ জুড়ে রাজত্ব করছে সবথেকে বড় কুড়ি রকমের ক্রিপটোকারেন্সি। 

    এই বাজারের সবচেয়ে বড় সমালোচনাগুলোর মধ্যে একটা হচ্ছে এর পরিবর্তনশীল স্বভাব বা স্থায়িত্বের অভাব নিয়ে। যেহেতু ২৪ ঘণ্টা ধরেই এ বাজার চলতে থাকে, প্রথাগত শেয়ার-বাজারের মতো এর উপর খোলা-বন্ধের সময়ের প্রভাব পড়ে না। আপনি হয়তো দশ ঘণ্টা কম্পিউটার বন্ধ করে রাখলেন, ফিরে এসে দেখলেন ইতিমধ্যেই রাজার ঐশ্বর্য আপনার হাত থেকে বেরিয়ে গিয়েছে! এই পরিবর্তন আরও চোখে পড়ে, যখন দেখা যায় একজন বড় বিনিয়োগকারী (ইলন মাস্কের কথা বলছি) মাত্র একটি টুইট করে ডোজকয়েনের মূল্যে ঝড় উঠিয়ে দিচ্ছেন। ঝুঁকি নিয়ে খেলতে যাঁরা ভালবাসেন, তাঁদের জন্য এ জিনিস মানানসই— হারতেও পারেন, জিততেও পারেন, কয়েক মিনিটের ব্যাপার। এর স্থায়িত্বের ক্রমশ বাড়তে থাকা অভাবকে আরও ইন্ধন জোগাচ্ছে সম্ভাব্য সরকারি নিয়ন্ত্রণের জুজু। এ ধরনের খবরে বাজার মোটেও খুশি নয়, ক্রিপটোকারেন্সি আদৌ আইনানুগ জিনিস কি না সে নিয়ে আজকাল তর্ক-বিতর্কও চলছে।

    চিন যেভাবে ক্রিপটোকারেন্সিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করল, অথবা বিভিন্ন রাষ্ট্র এবং সরকার যেভাবে ক্রমেই বুঝতে পারছে যে এই অস্থাবর মূলধনটির উপর তাঁদের নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো দরকার, রূপায়ণ দরকার, তার থেকে বোঝা যাচ্ছে এরা এই জিনিসের ধূমকেতুর মতো উঠে আসাকে প্রথাগত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সামনে চ্যালেঞ্জ এবং বিপদ হিসেবেই দেখছেন। আর একটা ভয়ও রয়েছে, এ মুদ্রা নব্য এবং অপক্ক বিনিয়োগকারীদের আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে— তাঁরা হয়তো যুগের হাওয়ায় গা ভাসানোর চেষ্টা করছেন, কিন্তু এই বাজারের জটিল ব্যাপারস্যাপারগুলো নিয়ে তাঁদের সম্যক ধারণা নেই। তবে এর থেকেই ডিজিটাল মুদ্রার গুরুত্বের ব্যাপারটা বেশ বোঝা যায়, প্রথম বিশ্বের কিছু দেশ ইতিমধ্যেই নিজেদের মতো করে ‘নব্যযুগ’-এর মুদ্রা নিয়ে কাজ করার কথা বলা আরম্ভ করে দিয়েছেন। 

    কথায় যেমন বলে, আপনি একে পছন্দ করতে পারেন, অপছন্দও করতে পারেন, কিন্তু অবজ্ঞা করতে পারবেন না। মুদ্রা বলতে আমরা যা বুঝি, আগামী আট থেকে দশ বছরের মধ্যে ক্রিপটোকারেন্সি তাকে সরিয়ে নিজের জায়গা হয়তো করে নিতে পারবে না, তবে এ জিনিস টিকে যাবে, এবং আস্তে আস্তে, অনিবার্য ভাবেই সব্বার জন্য বিনিয়োগের একটি সিরিয়াস মাধ্যম হয়ে উঠবে।

    Read in English

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook