ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • সম্পাদকীয়


    সঞ্চারী মুখোপাধ্যায় (October 9, 2021)
     

    চার আনা, আট আনার কয়েন আছে আপনার কাছে? এক টাকার কয়েন? মানে পুরনো, পেতল-তামার মতো দেখতে? হয়তো আছে, কিন্তু খুঁজে পাবেন না আর। আসলে মানিব্যাগ, শার্টের বুকপকেট, লেডিজ ব্যাগের কয়েন-পার্স থেকে সে সব রথী-মহারথীরা কবেই বেপাত্তা হয়ে গিয়েছেন। এখন জুতোর দোকানে এক টাকা খুচরো দিতে গিয়ে নজর করলেন এক টাকাটা স্টিলের মতো দেখতে আর অবিকল আগের ২৫ পয়সার সাইজের। ধাক্কা লাগল আপনার। আরে! কবে থেকে এক টাকা এত ছোট হয়ে গেল? হয়েছে অনেক দিন, আপনি খেয়াল করেননি। নিঃসাড়ে আপনার জীবন থেকে তা বিদেয় হয়েছে। 

    আবার তেমনই পোস্টোকার্ড পাওয়া মধ্যবিত্ত কবে থেকে মোবাইলে ট্রেনের অ্যারাইভাল টাইম দেখে নিচ্ছে, সে তারিখও কারও মনে নেই। যেমন মনে নেই কবে থেকে হরিপদ কেরানি দার্জিলিং মেলের টিকিট না পেলে বাগডোগরার ফ্লাইটের খোঁজ করেন। মানে ফ্লাইট এখন মধ্যবিত্তের জীবনে একটা জুতসই অপশন, যা কিনা আগে বিলাসের সর্বোচ্চ মাপকাঠি ছিল। এসব কোন গলি-গলতা দিয়ে তেলচিটে বাঙালির জীবনে প্রবেশ করল, আর কোন কানাগলি দিয়ে ‘কোনওমতে কাটিয়ে দেওয়া’ বাঙালির জীবন থেকে ‘সিম্পল লিভিং’ জিনিসটা ফুসমন্তর হল, ঠিক ঠাহর হয় না। 

    আসলে, আবাহন আর বিসর্জন কি কেবল ঠাকুরের হয়, চলতি জীবনেরও হয়। আগে নাইলনের বাজারের ব্যাগ কম করে অর্ধেক জীবন চলত, এখন মোবাইল ফোন বাঙালি কেনে এক বছরের মাথায়। কারণ, টু-জি থেকে ফাইভ-জিতে নেটওয়ার্ক লাফ দিয়েছে মাত্র কয়েক বছরে। এমন অনেক কিছুই জীবনে আবাহন করতে হয়, যা আপনি সানন্দে হয়তো চান না। যেমন, ছেলের ইংরেজ বান্ধবী বা বিদেশি বউ, বয়স্কদের কাছে টাচস্ক্রিন ফোন, যাতে বারবার ভুল বোতামে আঙুল লেগে ইনসিয়োরেন্স এজেন্টকে ফোন হয়ে যায়। এই আবাহনের উল্টোদিকে বিসর্জনও দিয়েছি কম কিছু নয়। ল্যান্ডলাইন, সিডি-প্লেয়ার, বড়দের প্রণাম, বই-পড়া, আরও অনেক কিছু। তালিকা বিরাট। ছেঁটেকেটে দাঁড় করিয়ে নিতে হয় একটা চলনসই জীবন।   

    ডাকবাংলা এবার পুজোয় সে রকমই কিছু বিষয় নিয়ে ভাবাভাবি করেছে, যা আমাদের জীবনে অদূর ভবিষ্যতে সানন্দে বা নিরানন্দে প্রবেশ করবেই, আবার সজ্ঞানে বা অজান্তে আমাদের ছেড়ে চলে যাবে। যেমন, পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে আস্তে আস্তে চাহিদা বাড়ছে হোম-রোবটের। আমি পেলে তো আহ্লাদে আটখানা হবই। অর্ডার-মাফিক কাজকম্ম করে দেবে। অন্তত খাট থেকে ভেজা তোয়ালে আর বিকেলবেলায় জামাকাপড় তুলে ভাঁজ করে দেবে বিনা নালিশে, এ ভাবলেই দিলখুশ হয়ে যাচ্ছে। তবে কিনা মালতীর মায়েদের কী হবে ঠিক জানা নেই।  তেমনই, বই পড়ার রেওয়াজ উঠে গিয়ে মর্নিংওয়াক আর গাড়ি চালানোর সঙ্গী হয়ে উঠছে অডিও বুক বা পডকাস্ট। বিনোদন তো কবে থেকেই টেলর-মেড হয়ে উঠেছে। সেটার পরিধি বাড়বে বই কমবে না। অডিও বুক বা পডকাস্ট তারই দোসর। 

    শোনা যাচ্ছে টাকা মানে নোটের কোনও অস্তিত্ব থাকবে না। চলবে আসবে বিটকয়েন। যা নাকি ভার্চুয়াল মানি। এ ব্যাপারটা এখনও আমার ঠিক বোধগম্য হয়নি। ইন্টারনেটে কিংবা স্যাটেলাইটের তরঙ্গে গচ্ছিত থাকবে আপনার কষ্টার্জিত টাকাপয়সা। আপনি ছুঁয়ে দেখতেও পারবেন না। আলিবাবার বউয়ের অবস্থাটা একবার ভাবুন। কোথায় কুনকে, কোথায় বা মোহর! আমি অবশ্য ভাবছি  ইনকাম ট্যাক্স বিভাগ বাড়িতে রেড করে কী পাবে? তবে কিনা অসুবিধে নেই। আপনার ওপর নজরদারি করার জন্য বিগ ব্রাদাররা আছেন। রাষ্ট্র, গুগল, ফেসবুক বা সিসিটিভি, সবাই আপনার গেঞ্জির সাইজ অবধি জানে। আপনি নাক ডাকেন কি না, গলা খাঁকারি দেন কি না, বুধবার কোন পরকীয়া, শুক্রবার কোন জ্যোতিষী— সঅঅঅব জানে, টাকা বা চোরাগোপ্তা ইনকাম তো কোন ছার।  

    ওদিকে কেরানি-জীবনে আস্তে আস্তে ইতি পড়ছে দেখে একদল খুশি। হাফপ্যান্টের ওপর শার্ট পরে সারাদিন বিছানায় হেলান দিয়ে আপিসকাছারি চলছে। অফিসটাইমের তাড়াহুড়ো নেই, মেট্রোর ভিড় ঠেলতে হচ্ছে না, ভাত-ডাল-ফুলকপির তরকারি দিয়ে রসিয়ে লাঞ্চ করা যাচ্ছে। কিন্তু ওদিকে আবার, অফিস শেষই হচ্ছে না। বসকে বলা যাচ্ছে না যে রাস্তায় আছি, বন্ধুর মা’কে হাসপাতালে দেখতে এসেছি। সব বড়কর্তা জানে, এ ব্যাটাবেটিগুলো বাড়িতে রয়েছে। অতএব ডবল খাটিয়ে নাও। অন্য মেয়েদের কথা জানি না, তবে আমার ক্ষেত্রে বাড়ি বসে অফিস করাটা দুঃস্বপ্নের মতো হয়ে গেছে। কেউ তোয়াক্কাই করে না কোনটা অফিসের সময়, কোনটা বাড়ির সময়। কী রান্না হবে, ইলেকট্রিশিয়ান এসেছে, বৃষ্টি এসেছে জামা-কাপড় তুলতে হবে, মিটিং-এর মাঝখানে পা তুলে বসতে হবে না হলে ঘর মোছা যাবে না। ফলে অফিসের সময়টা যে বাড়িটাকে বাড়িতে রেখে আসা যেত, সেটি আর হচ্ছে না।

    শুনছি বিদায় নেবেন ড্রাইভারও। কেউ কেউ নালিশ করে, তার গাড়ির চালকের খুব নাকি রোয়াব, কেউ বলে ড্রাইভারকাকুই তার মুশকিল-আসান, বডিগার্ড, সেক্রেটারি। কিন্তু বাজারে সেল্ফ-ড্রিভেন গাড়ি চলে এলে, সামনের সিট বলেই কিছু থাকবে না, সবাই নাকি শুধু ব্যাকসিটে পায়ের ওপর পা তুলে বসে থাকবে, আর গন্তব্যের ঠিকানাটা কম্পিউটার স্ক্রিনে টাইপ করে দেবে। তারপরেই রাস্তার নেড়ি কুকুর এড়িয়ে, রাজনৈতিক দলের মিছিল পেরিয়ে, লরি-দাঁড় করানো গলির মুখ থেকে ম্যাজিক করে বেরিয়ে, গাড়ি চলবে শনশন। বিশ্বাস হয় না। তবে আজ থেকে কুড়ি বছর আগেও কি বিশ্বাস হত, সিনেমা হল চলে আসবে আমাদের পকেটে? আমি রাত তিনটেয় ঘুম আসছে না বলে জর্জ ক্লুনি বা উত্তমকুমারকে ডেকে পাঠাতে পারব? তবে দৈবাৎ যদি প্রযুক্তি বিগড়োয় তবে কী হাল হবে, গাড়ির কম্পিউটার তখন কোন গাছের গোড়ায় নিয়ে ভিড়িয়ে দেবে, বা একখানি ‘আউটেজ’ হয়ে ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপ বসে গেলে পাশের লোকটার সঙ্গে কথা বলব কীভাবে, নেটফ্লিক্স বা অ্যামাজন প্রাইম মাসখানেকের জন্য গুটিয়ে গেলে মানুষ সময় কাটাবে কী করে, সেসব উত্তর আমরা কল্পনাও করতে পারব না, শুধু পারতেন চ্যাপলিন, ‘মর্ডান টাইমস’-এর সিকোয়েল হত নিশ্চয়ই অ্যাদ্দিনে।

    ডামাডোলের এখানেই শেষ নয়। সমাজ বেশ তরতরিয়ে এগোচ্ছিল। আধুনিক প্রজন্ম থান-ইঁটের মতো ভারী সামাজিক নিয়ম ঝেড়েঝুড়ে হালকাফুলকা হয়ে উঠছিল। সেক্স আর অতটা নিষিদ্ধ ছিল না। ওয়ান-নাইট স্ট্যান্ড ইন-ফ্যাশন হয়ে উঠেছিল। কিন্তু বাদ সাধল কোভিড। সপ্তমীতে বিসর্জন দিতে হল আধুনিক হয়ে ওঠার কেত আর কম্বলের মতো জড়িয়ে নিতে হল অবিশ্বাস। 

    একেই তো আমাদের চেঁছেপুঁছে পাওয়া চার আনা-ছ’আনার জীবন। তাতে যদি এত হুড়মুড়িয়ে অদল-বদল ঘটতে থাকে, তাহলে ভাল করে তা হজম করব কখন? এসব কথা লেখার সময়ও পেছনদিকে যে কী সিন চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে, বোঝার চান্স পাচ্ছি না। কিন্তু এই তো জীবন কালীদা! বরং, আমাদের যে সর্বোৎকৃষ্ট ক্ষমতা–মেনে নেওয়ার, আর অনেকখানি কৌতুক ও প্রাণশক্তি নিয়ে সেই চেষ্টা চালাবার— তাতেই তা দিই।

    ছবি এঁকেছেন পার্থ দাশগুপ্ত

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook