ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • সন্ত্রাস ঠিক এরকম দেখতে

    সঞ্চারী মুখোপাধ্যায় (September 11, 2021)
     

    সন্ত্রাস কেমন দেখতে, ২০০১-এর আগে আমাদের তেমন ধারণা ছিল না। তার আগে যুদ্ধের কথা শুনেছি বড়দের মুখে, সিনেমা শুরুর আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে দু-একটা তথ্যচিত্র দেখেছি বটে। আর যখন ইস্কুলে, তখন শিখ-দাঙ্গা, ভিন্দ্রানওয়ালা, ব্লু-স্টার অপারেশন এবং তার পরের কয়েক বছর খালিস্তান আন্দোলনের কথা খবরের কাগজে আর টিভির খবরে শুনেছি, এর বেশি কিছু নয়। কাশ্মীরের সমস্যাও খবরের কাগজের পাতাতেই চিনেছি। ১৯৯২ বাবরি মসজিদ ধ্বংস এবং ১৯৯৩-এ বম্বে বম্ব ব্লাস্ট, আমরা সরাসরি সম্প্রচার দেখিনি। 

    এই প্রথম, ৯/১১-এর সময়, দেখলাম সন্ত্রাস কেমন দেখতে হয়। যে কোনও দুরন্ত হলিউড ওয়ার মুভির মতোই ঝকঝকে, চকচকে এবং বিশ্বাসযোগ্য। টিভিতে দেখে সকলের প্রথমে তাক লেগে গেল। মনে হচ্ছিল, স্পিলবার্গ বা কোনও বিরাট পরিচালকের ছবিতে আশ্চর্য স্পেশাল এফেক্টের ঘনঘটা দেখছি।  বাস্তবে এটা ঘটছে, সেটা ভেতর থেকে বুঝে উঠতেই পারছিলাম না, তো মেনে নেওয়া। পরে যখন সময় গেল আস্তে আস্তে, তখন যেটা মেনে নিলাম, সেটা ভয়। অনিশ্চয়তার ভয়, অজানার ভয়, নিত্যতার প্রতি বিশ্বাস হারানোর ভয়। বুঝলাম, যে কোনও সময়, যা কিছু হতে পারে, এটা এবার বিশ্বাস করে নেওয়া ভাল। টুইন টাওয়ার ধ্বংস সেটারই জ্বলজ্বলে প্রমাণ। এবার থেকে আর এক্স ইকুয়ালটু অমুক বলে উদ্ভট কিছু ধরতে হবে না। 

    এর সঙ্গে একটা স্বীকারোক্তি সেরে নেওয়া ভাল। টুইন টাওয়ারে প্লেন এসে লাগছে আর তারপর ওই ভয়াবহ বিস্ফোরণ হচ্ছে, এটা দেখার একটা রোমাঞ্চও ছিল, যাকে একরকমের ভাললাগা বললেও ভুল হবে না। যেহেতু ঘটনাটা থেকে অনেকটা দূরে আছি, যেহেতু ঘটনাটা সরাসরি আমাকে স্পর্শ করেনি, তাই এটাকে দুর্গাপুজোর অবিশ্বাস্য একটা আলোকসজ্জার মতোই বারবার দেখতে ইচ্ছেও করছিল, শিউরে উঠছিলাম, যেমন লোকে টিকিট কেটে ভূতের ছবি দেখতে গিয়ে শিউরে ওঠে। আমার ধারণা, অনেকেরই এরকম হয়েছিল। ভয়াবহ ব্যাপার, বিশাল দুর্ঘটনা, প্রকাণ্ড বিপদ– এগুলোকে নিরাপদ দূরত্ব থেকে দাঁড়িয়ে দেখতে অনেক সময়ই ভাল লাগে, ভয়াবহ ধ্বংসের মধ্যে অনেক সময়েই একটা প্রবল জাঁকজমক থাকে, সেটার আকর্ষণ খুব। ভেবে লজ্জা করত, তবু দৃশ্যটা থেকে চোখ ফেরাতে পারতাম না।  এবাবাগো, ছিছিছি, ইশশ বলতাম, আর ওই দৃশ্যটা দেখালেই ছুটে এসে টিভির সামনে দাঁড়াতাম। যতই বলি, লোকের দুঃখকষ্ট দেখতে ভালবাসি না, আমরা কিন্তু ডিজাস্টার দেখতে খুবই পছন্দ করি।

    ৯/১১-র পর গোটা পৃথিবী দু-ভাগে ভাগ হয়ে গেল। সন্ত্রাসবাদী আর সাধারণ মানুষ, মুসলমান আর অ-মুসলমান, দাড়িওয়ালা মানুষ আর দাড়িছাড়া মানুষ, সহিষ্ণু মানুষ ও অসহিষ্ণু মানুষ। আসলে আমরা দল ভালবাসি, দলাদলি ভালবাসি। প্রতিপক্ষ থাকলে আমাদের বাঁচতে সুবিধে হয়, আমাদের অনেক রাগঝাল তার ওপর ঝেড়ে দেওয়া যায়, আমাদের ক্ষতির দায় অযৌক্তিক ভাবে অন্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার সুবিধে হয়। এমনকী আইপিএল-এ নিজের টিম না খেললে সেই দিনের জন্য আমরা একটা দলকে বেছে নিয়ে, সমর্থন করি, অন্য দলের বংশ উদ্ধার করি। টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পরও সেরকম অনেক দল তৈরি হল। কোঁদল তৈরি হল। তর্ক তৈরি হল। যুদ্ধবাদী বনাম শান্তিকামী। ‘মুসলিম মাত্রেই মৌলবাদী’ বনাম  ‘মৌলবাদীর কোনও ধর্ম হয় না’। ‘এবার সকলের ওপর নজরদারির জন্য আরও আরও প্রযুক্তি দরকার’ বনাম ‘নজরদারি-বিরোধী ব্যক্তিস্বাধীনতাবাদী’। জিতল অবশ্য ভয় এবং পাহারা। চিরকালের মতো এয়ারপোর্ট হয়ে উঠল সন্দিগ্ধ, অভদ্র, এমনকী হিংস্র জায়গা। যে কোনও লাগেজ এমনি পড়ে আছে দেখলেই লোকে ভয়ে শুকিয়ে যেতে লাগল। বেল্ট আর জুতো খুলতে খুলতে লোকে ভাবতে লাগল, অন্য কী ধরনের পোশাক পরে এয়ারপোর্টে আসা উচিত।

    সন্ত্রাসবাদেরও হয়তো কিছুটা সুবিধে হয়ে গেল। কারণ লোকে চোখে দেখে উগ্রপন্থীদের ক্ষমতা সম্পর্কে বেশ ওয়াকিবহাল হল। এর আগে যে সন্ত্রাসের কথা আমরা শুনেছি, তা এভাবে দেখতে পাইনি। তাই, ভয়টা রাষ্ট্রও পেল, সাধারণ মানুষও পেল, এবং উগ্রপন্থা বেশ একটা ধরাছোঁয়ার বিষয় হয়ে উঠল। যারা ভাবত, ওসব অন্য জায়গায় ঘটে, আমাদের পাড়া তো শান্ত, শুধু তাসের আড্ডা নিয়ে মেতে আছে, তারাও মনে করতে লাগল, তবে তো অফিস যেতে, সিনেমা হল যেতে, দোকান যেতে, আমি যে কোনও সময় শিকার হতে পারি। যে-ভয়টার কথা গোড়ায় বলছিলাম, সেই অনিত্যতার ভয় এসে যেই সাধারণ গেরস্থকেও ধরে ফেলল, অমনি উগ্রপন্থার একটা খুব বড় জয় হয়ে গেল। মানুষ মানুষকে দেখলেই সন্দেহ করবে, কেউ অন্যরকম হলেই তাকে ভুরু কুঁচকে নজর করবে, পুলিশ টানাহেঁচড়া করে কাউকে ট্রেন থেকে বা প্লেন থেকে নামিয়ে নিয়ে যাচ্ছে দেখলে অন্যরা এতটুকু আপত্তি করবে না, বা ব্যাপারটা জানতে চাইবে না, শুধু হাঁপ ছেড়ে বাঁচবে– এইটা নিয়ম হয়ে গেলে, কোথাও একটা ভয়-দেখানো লোকেরই জিত হল না?

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook