ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • মুখঋত: পর্ব ১২

    ঋতব্রত মুখোপাধ্যায় (August 27, 2021)
     


    সেফ স্পেস

    আমার প্রিয় দেশবাসীদের নানান মজার কথাস্বাধীনতা দিবসের আশেপাশের দিনগুলোতে শুনতে পাই। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ করে অনেকের বিভিন্ন মন্তব্য ধাক্কা দিয়ে যায়— তাদের নিজেদের বিশ্বাসের বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে তারা কথাগুলো বলে, তাই আশ্চর্য লাগে। যেন মনে হয়, স্বাধীনতা শুধুই এক দিনের একটা ঘটনা, কোনও ধারাবাহিক প্রক্রিয়া নয়। একজন ব্যক্তিমানুষের যে স্বাধীনতা থাকার কথা, এদেশে বহুক্ষেত্রে তার বিন্দুমাত্রও দেখা যায় না, কিন্তু ওই শব্দটার ওপর নানা প্রলেপ দিয়ে একটা আনুষ্ঠানিক কর্তব্য পালন করা হয়। আজকের কিছু কথা আমাদের সেই মানসিক পরাধীনতা নিয়ে। 

    ছেলে এবং মেয়েদের স্বাধীনতা কী বস্তু, সেটা শেখাতে এতটা লাজুক কেন আমরা, তা ঠিক বুঝি না। আমি নিজে ছাত্র হয়েও কোনওদিন মূলধারার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ‘জেন্ডার’ বা ‘সেক্সুয়ালিটি’ এবং তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা স্বাধীনতা নিয়ে কোনও পাঠ পাইনি। এটা শুধুমাত্র ‘সেক্স এডুকেশন’ বা ‘জেন্ডার ইকুয়ালিটির’ পাঠ নয়, বিভিন্ন লিঙ্গের, বিশ্বাসের ও অভিযোজনের মানুষের স্বাধীনতাকে সম্মান করতে শেখার পাঠ। সেই শিক্ষা আমাদের স্কুল-পড়ুয়াদের পাঠ্যক্রমে নেই, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির রোজের আলোচনার মধ্যেও নেই। আরও আশ্চর্যের, এই বিষয়ক কোনও গঠনমূলক আদানপ্রদান সমাজের কোনও স্তরেই প্রায় নেই। 

    বরং আছে হাজার বছর ধরে চলে আসা নিয়ম-নীতিকে অন্ধভাবে মেনে চলা ও যুক্তিহীন স্তব্ধতাকে এই সময়ে দাঁড়িয়েও প্রশ্ন না করা। ফলে যা হওয়ার তা-ই হয়েছে, আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষই তাই একে অপরকে ভিন্নমত পোষণ করার জন্য আক্রমণ করে থাকে— কথা শোনা বা ভিন্ন চিন্তাকে সম্মান করা তো দূরের কথা। বিশেষ করে যৌনতা সংক্রান্ত কোনওরকম মন্তব্য যদি মূলধারার বিশ্বাসের বাইরে হয়, তাহলে বক্তাকে কালিমালিপ্ত করতে কেউ বাদ রাখবে না। আরও মজার ব্যাপার, এই প্রসঙ্গগুলি নিয়ে কথা বলা একরকম পাপ বলেই ঠাওর করা হয়। একজন ছাত্র হিসেবে এই অদ্ভুত পরিস্থিতির একটা যাত্রাপথ বুঝতে শিখেছি। 

    আমাদের স্কুলের বায়োলজি বা জীবনবিজ্ঞানের পাঠ্যক্রমে শুধুমাত্র একটি পর্ব জুড়ে থাকে ‘রিপ্রোডাকশন’, যা পড়াতে গেলেই ক্লাস জুড়ে শুরু হয় হাসাহাসি, চোখ চাওয়া-চাওয়ি, ইঙ্গিত ইত্যাদি। প্রথমেই অদ্ভুত লাগে যে, এই স্বাভাবিক জৈবিক প্রক্রিয়া নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে উঠে আসা স্বাভাবিক প্রশ্নগুলোকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে যতটা সংবেদনশীলতার সঙ্গে উত্তর দেওয়া উচিত, এবং যতটা বেশি সংখ্যায় সেই প্রশ্নোত্তরের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া উচিত, তা কখনওই হয় না। তাই তরুণ মনের কাছে ‘ট্যাবু’ রূপে যৌনতার স্থান হয় প্রথমেই। বাবা, মা, বা পরিবারের অনেকেই এই বিষয়ক কোনও আলোচনা ক্লাসরুমের বাইরে আনেন কি না সন্দেহ। যৌনতা নিয়ে যে আগ্রহ, তার প্রশ্নের উত্তর তাই ইন্টারনেট দেবে ধরে নিয়েই চলতে হয়। এইবার শুরু এক লড়াই। 

    যৌনতা বুঝতে গিয়ে আরও অনেক অনেক বিষয় সম্পর্কে আমাদের সচেতনতা বাড়তে থাকে। অন্য লিঙ্গের স্বাধীনতা, চাহিদা, পছন্দ-অপছন্দের কথা তাই আমাদের পড়তে, শিখতে ও বুঝতে হয়েছে মূলধারার শিক্ষার গন্ডির বাইরে গিয়ে, সাহিত্য, সিনেমা, সেমিনার, আলোচনা, বক্তব্য থেকে। নিজেই নিজের শিক্ষক হয়ে তাই আমাদের প্রজন্মের অনেককে শেখাতে হয়েছে কীভাবে আরেকজন মানুষকে তার যথাযোগ্য সম্মান দেওয়া প্রয়োজন, তার যৌনতাকে স্বাধীনতা দেওয়া উচিত, আর ‘চয়েস’কে মর্যাদা দেওয়া উচিত। 

    কিন্তু এই শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়াও আমাদের দেশে এক ‘পাপ’ হিসেবে গণ্য করা হয়। ভারতীয় পবিত্রতার বিরুদ্ধে যৌন অভিযান চালানোর অভিযোগে অভিযুক্ত আমাদের এই প্রজন্ম। তাহলে কি কোনওদিন আমরা একটা ‘সেফ স্পেস’ তৈরি করতে পারব না? একই সঙ্গে পুরুষ ও নারী একটা কর্মস্থানে বা শিক্ষাস্থানে থেকে কাজ করবে, আর বেড়ে উঠবে একে অপরকে সম্মান করে, এই শিক্ষা কোনও ক্লাস করে করানো তো সম্ভব নয়। মানসিক একটি ট্রেনিংয়ের মধ্যে দিয়ে নিজেকে নিয়ে যেতে হবে। একজন অফিসের এইচ-আর অফিসারকে ‘সেক্সুয়াল ট্রেনিং’ দিতে বলেই আমাদের কর্তব্য শেষ? 

    তরুণ বয়স থেকেই এমন একটা পরিবেশ আমাদের দেশবাসীকে দিতে হবে, যেখানে আমাদের সমস্ত লিঙ্গের মানুষের সঙ্গে মিশতে হবে, তাদের বুঝতে হবে, তাদের স্বাধীনতা ও নির্বাচনকে সম্মান করতে হবে। এই পরিবেশটাকেই ‘সেফ স্পেস’ বলে জানি। এবং এই আদানপ্রদান শুধু জীবনবিজ্ঞানের একটি চ্যাপ্টার নিয়ে আলোচনা নয়— মানুষের যৌনতা, ভাবনা, শিক্ষা, মনন ও স্বাধীনতার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এক বৃহত্তর জীবনের কথা। তাই স্বাধীনতা দিবসে পতাকা উত্তোলনের সাথে এটাও আমাদের বুঝতে হবে যে, স্বাধীন ভূমি সেটাই, যেখানে আমার ভিন্নমত পোষণ করাকে সম্মান করা হবে। সেই মাতৃভূমিতে দাঁড়িয়ে আমি নিরাপদ বোধ করতে চাই আমার বন্ধুদের সাথে— উইথ মাই গার্ল-ফ্রেন্ডস, বয়-ফ্রেন্ডস, হোমোসেক্সুয়াল ফ্রেন্ডস, প্যানসেক্সুয়াল ফ্রেন্ডস, এ-সেক্সুয়াল ফ্রেন্ডস, অ্যান্ড মেনি মোর।

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook