ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • বিন্দাসিনী: পর্ব ৯


    অনুষা বিশ্বনাথন (Anusha Vishwanathan) (August 27, 2021)
     
    যৌনতার জরুরি শিক্ষা

    নেটফ্লিক্স-এ তুমুল জনপ্রিয় সিরিজ ‘সেক্স এডুকেশন’ কিছু হাইস্কুল-পড়ুয়াদের বেড়ে ওঠার বয়সে যৌনতা এবং আত্মপরিচয় নিয়ে যে দ্বন্দ্ব এবং ধন্দ, সেই অভিজ্ঞতার কথা খুব সুন্দরভাবে, এবং কখনও কমিক গৎ-এ, তুলে ধরে। আপাতভাবে হাস্যরসাত্মক মনে হলেও, নিগ্রহ থেকে শুরু করে যৌন সম্পর্কে ম্যাচিওরিটি এবং লিঙ্গনির্বিশেষে ব্যক্তিগত সম্মান, এমন বেশ কিছু সিরিয়াস বিষয়কে নিয়ে কথা বলে এই সিরিজ। আমাদের সংস্কৃতি হয়তো অনেকটাই আলাদা, কিন্তু এই সিরিজটা যেভাবে নানা বিষয়ে আলোচনা শুরু করে, তা দেখার মতো। 

    সিরিজটা দেখেই আমার মনে হয়েছে যে এই বিষয়ে আমাদের স্কুলগুলো কিছু কাজ করতে পারে। আমি এই শো’টার কথা বলছি এই কারণে যে, আমার মনে হয় যৌনশিক্ষা কিন্তু শুধু যৌনতার শারীরিক বা জীববিজ্ঞানসংক্রান্ত গন্ডিতে আটকে থাকলে চলবে না। এর অনেকটাই মনস্তাত্ত্বিক, এবং সেক্ষেত্রে যৌনশিক্ষার উচিত বেড়ে ওঠা কিশোর-কিশোরীদের মানসিক পথেও সঠিকভাবে পরিচালিত করা। শো’টা দেখে আমার মনে হয়েছিল, হয়তো আমাদের শহরের স্কুলগুলোতে এই বিষয়ে আরও একটু মনোযোগ দেওয়া উচিত। এবং কিছু নামী স্কুলের শিক্ষক এবং ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে বুঝলাম, আমাদের শহরে যৌনশিক্ষার বিষয়টা ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে। 

    পাঁচ বছর আগে যখন আমি স্কুল ছাড়ি, যৌনশিক্ষার ধারণাটাকেই আমল দেওয়া হত না। বেড়ে ওঠার সঙ্গে-সঙ্গে নানা ধরনের সেক্সুয়ালিটি বা সেক্সুয়াল প্রেফারেন্সের মতো বিষয় কখনওই খোলাখুলি আলোচনা করা হত না। আমাদের স্কুল প্রধানশিক্ষিকা দময়ন্তী মুখার্জির সঙ্গে কথা বলে জানলাম (এবং জেনে খুবই আনন্দিত হলাম), এই ধরনের কথোপকথন এখন যথেষ্ট গুরুত্ব পায়। উনি আমাকে জানালেন, কীভাবে ক্লাস থ্রি এবং ফোরের ছাত্রীদের এখন ‘ভাল স্পর্শ এবং খারাপ স্পর্শ’ বোঝানো হয়। ক্লাস সিক্স থেকে, বর্তমান পরিস্থিতি সম্বন্ধে একটা নির্দিষ্ট পাঠ্য়ক্রম অনুসরণ করা হয়। এর মাধ্যমে যৌন অত্যাচার, নিগ্রহ, কীভাবে নিজেকে রক্ষা করা উচিত— এই ধরনের বিভিন্ন বিষয় ছাত্রীদের শেখানো হয়। এছাড়াও, লিঙ্গ-সংবেদনশীলতা এবং নানা ধরনের সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন সম্বন্ধে ছাত্রীদের ওয়াকিবহাল করে তোলার একটা সচেতন প্রচেষ্টা দেখা যায়। কিন্তু  এই ক্ষেত্রে আরও কিছু বড় পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, মনে করেন দময়ন্তী। ‘শক্‌ ওয়েভের বদলে ছোট্ট-ছোট্ট ঢেউ দিয়ে শুরু করেছি আমরা’, বললেন তিনি, ‘আশা করা যায় আমরা এই কথোপকথন এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব; যেখানে-যেখানে পৌঁছনো উচিত, সেখানে পৌঁছতে পারব।’   

    পাঁচ বছর আগে যখন আমি স্কুল ছাড়ি, যৌনশিক্ষার ধারণাটাকেই আমল দেওয়া হত না। বেড়ে ওঠার সঙ্গে-সঙ্গে নানা ধরনের সেক্সুয়ালিটি বা সেক্সুয়াল প্রেফারেন্সের মতো বিষয় কখনওই খোলাখুলি আলোচনা করা হত না। আমাদের স্কুল প্রধানশিক্ষিকা দময়ন্তী মুখার্জির সঙ্গে কথা বলে জানলাম (এবং জেনে খুবই আনন্দিত হলাম), এই ধরনের কথোপকথন এখন যথেষ্ট গুরুত্ব পায়। উনি আমাকে জানালেন, কীভাবে ক্লাস থ্রি এবং ফোরের ছাত্রীদের এখন ‘ভাল স্পর্শ এবং খারাপ স্পর্শ’ বোঝানো হয়। ক্লাস সিক্স থেকে, বর্তমান পরিস্থিতি সম্বন্ধে একটা নির্দিষ্ট পাঠ্য়ক্রম অনুসরণ করা হয়। এর মাধ্যমে যৌন অত্যাচার, নিগ্রহ, কীভাবে নিজেকে রক্ষা করা উচিত— এই ধরনের বিভিন্ন বিষয় ছাত্রীদের শেখানো হয়।

    শহরের তিনটে নামী মিশনারি স্কুলের কিছু ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, যৌনশিক্ষা নিয়ে এখনও একটা অস্বস্তি রয়েই গিয়েছে।  ‘আমাদের কনভেন্ট স্কুলে যৌনতা বিষয়ক কোনও কিছুই একেবারে না-ছোঁয়ার গন্ডিতে পড়ত। যৌনস্বাস্থ্যের মতো বিষয়, এমনকী ঋতুস্রাব এবং তার স্বাস্থ্য-বিষয়ক আলোচনাও একেবারেই নিষিদ্ধ ছিল। আমি সত্যিই চাই যে মেয়েদের স্কার্টের দৈর্ঘ্য নিয়ে চোখ রাঙানোর বদলে এই স্কুলগুলো যৌনশিক্ষায় একটু সময় দিক’, বলেন নামকরা এক মেয়েদের কনভেন্ট স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রী রোশনি ঘোষ।   

    উৎস রায়-এর ছেলেদের স্কুলে যৌনশিক্ষা পাওয়া যেত একমাত্র যে শিক্ষকদের সঙ্গে ছাত্রেরা স্বচ্ছন্দ, তাঁদের ক্লাসরুমে। বিধিগত পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত ছিল না এই পড়া। এবং তখনও, সংবেদনশীলতার একটা অভাব রয়েই গিয়েছিল, যা থেকে হয় মূর্খতা নয়তো অবসেশনের উদ্রেক হয়।  ‘জন্মনিরোধক নিয়ে গুজগুজ-ফুসফুসগুলো  আমার এখনও মনে আছে; বয়েজ স্কুলের একটা ক্লাসিক লক্ষণ! যৌনসম্পর্কের চেয়েও বোধহয় কন্ডোম শব্দটা উচ্চারণ বেশি পাপ মনে হত!’ উৎস বলে ওঠেন।     

    ‘আমার ১৫ বছর বয়স। আমার এবং আমার সহপাঠীদের যৌনশিক্ষা সম্বন্ধে প্রচুর প্রশ্ন আছে। আমাদের স্কুলশিক্ষায় যদিও এটার জন্য কোনও আলাদা পিরিয়ড ঠিক করে দেওয়া নেই, কিন্তু স্কুল থেকে এই বিষয়ে বিশারদদের সঙ্গে বহু আলোচনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসবই খুবই সহায়ক, কিন্তু শিক্ষাব্যবস্থায় এই বিষয়ে কিছু স্থায়ী বন্দোবস্ত করলে খুব ভাল হয়’, জানান শহরের আর এক কনভেন্ট স্কুলের ছাত্রী ঋষিতা রাজ। 

    ‘নিউ এজ’ স্কুলগুলোয় যৌনশিক্ষাকে বিষয় হিসাবে প্রাধান্য দেওয়া হয়ে থাকে। ইন্ডাস ভ্যালি ওয়ার্ল্ড স্কুলের শিক্ষিকা অমিতা প্রসাদ জানান, তাঁদের স্কুলে যৌনতার শারীরিক বা জীববিজ্ঞানসংক্রান্ত দিকগুলো রীতিমতো নির্ধারিত পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত। ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে যৌনতার মানসিক  দিকগুলো, বা দৃষ্টিভঙ্গি– বিশেষত যৌন সম্পর্ক, যৌনতা এবং লিঙ্গ সংবেদনশীলতার মতো বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গিকে– আরও উন্নত করে তোলার সুযোগ রয়েছে’, তিনি বলেন। রজঃস্রাবসংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি আরও ছোট বয়স থেকে ছাত্রছাত্রীদের শেখানোর কথা বলেন তিনি। বয়স-অনুসারে পুরো স্কুলের জন্যই একটা সম্পূর্ণ যৌনশিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার তিনি পক্ষপাতী।     

    দেখা যাচ্ছে, যৌনশিক্ষায় এখনও এই শহরের স্কুলগুলোতে বেশ কিছুটা খামতি রয়েই যাচ্ছে। হ্যাঁ, কিছুটা উন্নতি ঘটে গেছে এই কয়েক বছরে— প্রধানত যৌনশিক্ষার প্রতি মনোভাবে। জীবনে পথ চলার জন্য যে মূল্যবোধের প্রয়োজন, তার ভিতটা তৈরি হয়ে যায় যখন আমরা স্কুলে পড়ি তখন থেকেই। সুতরাং অস্বস্তিকর বিষয়গুলো উপেক্ষা না করে, সেগুলোকে বরং সঠিক পদ্ধতিতে মোকাবিলা করার পথটাও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের শিখে ফেলা উচিত। আশা করা যায়, আমাদের শহরের স্কুলগুলো এই উন্নত মনোভাবের পথেই এগিয়ে চলবে। 

    শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নাম অপরিবর্তিত; ছাত্রছাত্রীদের নাম পরিবর্তিত

    ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র

    Read in English

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook