পিঠ জুড়ে আলপনা, হাত পেঁচিয়ে সরা বা কাঠখোদাইয়ের নকশা, কালীঘাটের পটচিত্র অনুসারে দুর্গা-গণেশ-সরস্বতী এবং আরও নানান দেব-দেবীর ছবি, এমনকী যামিনী রায় বা নন্দলাল বসুর বিখ্যাত কাজ — অভিনন্দন বসুর হাতে ফুটে ওঠা ট্যাটু চাক্ষুষ না দেখলে, শুধুমাত্র উল্কি হিসেবে বিশ্বাস করা কঠিন। কলকাতার ছেলে অভিনন্দন আজ জার্মানির মানহেইম শহরের অধিবাসী, এবং ‘স্টার ওয়ারস’ সিরিজের যোদ্ধার নামে যাঁর পোশাকি নাম ‘ওবি’। বাংলার লোকশিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা তাঁর অতুলনীয় ‘বঙ্গ স্টাইল’ কাজ ট্যাটুর জগতে রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে।
ওবির স্বীকারোক্তি, ছবি আঁকার ক্ষেত্রে তিনি কোনও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভ করেননি। যেটুকু পেয়েছেন তা সম্পূর্ণ জন্মগত, অনেকটাই মায়ের কাছ থেকে পাওয়া। ‘ছোটবেলায় পাড়ায়-পাড়ায় বহু ‘বসে আঁকো’ প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছি, কিন্তু ছবি আঁকার শিক্ষক রাখা বা পরবর্তী জীবনে আর্ট কলেজে শিল্পকলা নিয়ে পড়াশোনা করার মতো পারিবারিক অবস্থা ছিল না আমাদের’, মানহেইম থেকে ভিডিও কলে জানান ওবি, ‘ইস্কুলে পড়ার খাতায় আঁকিবুকিও পাশে বসা মেয়েটিকে ইম্প্রেস করার অভিসন্ধিতেই করা!’
কিছুটা আঁকার হাতের কারণে, ২০০০-এর গোড়ার দিকে স্নাতক স্তরে বায়োটেকনোলজি পড়তে ওবি পাড়ি দিয়েছিলেন বেঙ্গালুরু। বছরখানেকেই বোঝেন, তাঁর মন পড়ে আছে অন্য কোথাও। বেঙ্গালুরুতেই প্রথম নিজের শরীরে ট্যাটু করান ওবি, এবং সেই প্রথম অভিজ্ঞতা থেকেই বুঝতে পারেন যে, একজন ট্যাটু আর্টিস্ট হয়ে ওঠাই হবে তাঁর জীবনের লক্ষ্য। কিন্তু সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে হয়ে এমন এক অ-সাধারণ জীবিকা বেছে নেওয়া সহজ ছিল না। কলেজ ডিগ্রি শেষ করে এমবিএ পড়ার অবকাশে কলকাতা ফিরে আসেন ওবি। কিন্তু পড়ার বদলে শুরু হয়ে যায় ট্যাটু সাধনা — যার সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় এই শহরের নানান অ্যাডভেঞ্চার।
ওবির ট্যাটুতে হাতেখড়ি হয় ‘কে’ (‘K’) নামের এক অদ্ভুত চরিত্রের কাছে, যিনি নাকি আমেরিকা থেকে বিতাড়িত হন একটি মেক্সিকান কার্টেল-এর সঙ্গে কাজ করার জন্য। বেহালাবাসী উত্তর-পূর্ব ভারতীয় এই নাগরিকের মেক্সিকান কার্টেল-কাহিনি ও পরবর্তী জীবনে জেল-হাজতবাস ভয়ঙ্কর গোলেমেলে শোনালেও, তাঁর কাছেই ওবি শেখেন ‘প্রিজন-স্টাইল’ ট্যাটু — সাধারণত সারা হাত ও গা জুড়ে উল্কি, ট্যাটুকেন্দ্রিক স্টাইলাইজ্ড অক্ষরবিন্যাস ও ট্যাটু মেশিনের অ-আ-ক-খ। ‘একটা সোনি ওয়াকম্যানের মোটরে, গিটারের ‘ই’ স্ট্রিং-এর মাথাটা শানিয়ে নিয়ে লাগিয়ে বানানো হয়েছিল সেই প্রথম ট্যাটু মেশিন। কালি ছিল চারকোল আর অ্যালকোহলের মিশ্রণ!’ হাসতে হাসতে বলেন ওবি, ‘আশা করি অ্যালকোহলটুকু ছিল!’
২০০৬-’০৭ থেকে টানা দু’তিন বছর বাইকে চড়ে কলকাতার অলিতে-গলিতে সেলুন ও মাসাজ পার্লারের চারপাশে প্রায় রাস্তার ধারেই ট্যাটু করে যান ওবি এবং কে। প্রথমে শুধু ড্রইং করতেন। এক সহৃদয় বন্ধু বিদেশি ট্যাটু মেশিন উপহার দেওয়ার পর, ওবি নিজেও ধীরে-ধীরে ট্যাটুতে পারদর্শী হয়ে ওঠেন। নিজের ট্যাটু পার্লার খোলার কথা ভাবেননি কখনও? ‘সুযোগ ছিল, কিন্তু ইচ্ছা করেই খুলিনি। ট্যাটু করে যেটুকু পয়সা বাঁচাতে পেরেছিলাম, আমার উদ্দেশ্য ছিল সেই সম্বলে ঘুরে-ঘুরে আরও দেখব, আরও শিখব।’ ওবি বলেন। বছর পঁচিশের যুবকের তুলনায় খুবই ম্যাচিওর সিদ্ধান্ত, কিন্তু এর ফল হয় সুদূরপ্রসারী। দিল্লি, মুম্বই, পুণে এবং দেশের আরও কিছু শহর ঘুরে, সমসাময়িক কিছু ট্যাটু আর্টিস্টদের কাজ দেখা সেরে ২০১১-তে ওবি পাড়ি দেন নেপাল, তাঁর প্রথম আন্তর্জাতিক ট্যাটু সম্মেলনে, আর একটি জীবন বদলে দেওয়া অভিজ্ঞতার জন্য।
‘২০১১ নেপাল আন্তর্জাতিক ট্যাটু সম্মেলন আমাকে দেখায় দুনিয়া জুড়ে ট্যাটুশিল্প কোথায় পৌঁছে গেছে, এবং আমরা ভারতীয়রা ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে আছি’, ওবি বলতে থাকেন। এই সম্মেলনেই ওবির দেখা হয় গ্রিক ট্যাটুশিল্পী কোস্তাসের সঙ্গে, যাঁর অসামান্য ডটওয়ার্ক ট্যাটুরীতি এই সময়ের পর থেকে ওবির নিজের কাজের উপরে গভীর প্রভাব ফ্যালে। ‘কোস্তাস আমার মেন্টর হয়ে ওঠেন, এবং আমি ট্যাটুর উপর নানা ধরনের পড়াশোনায়, বিশেষত ডটওয়ার্ক ও নানা লোকপ্রথার প্রচলিত ট্যাটুধারার কাজে আরও গভীরভাবে আগ্রহী হয়ে উঠি’, ওবি জানান।
দেশে ফিরে ওবির এই চর্চা ও অধ্যবসায় অটুট থাকে। কলকাতা ছাড়াও ভারতের নানা শহরে তাঁর কাজের কথা ও প্রশংসা ছড়ায়, এবং বহু দেশি ও বিদেশি পত্রপত্রিকায় তাঁর সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হতে থাকে — যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল আনা ফ্রিডমান-এর তালিকা। ২০১৫ সালে ‘দ্য ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাস অফ ট্যাটু’ পত্রিকায় — যাকে বলা যায় ট্যাটু জগতের ফোর্বস ম্যাগাজিন — ফ্রিডমানের তালিকায় ভারতের প্রথম তিন ট্যাটুশিল্পীর একজন হিসেবে ওবি-র নাম প্রকাশিত হয়। বাকি দুজন ছিলেন তৎকালীন ভারতের ট্যাটু-মহারথী। ওবিকে আর কখনও ফিরে তাকাতে হয়নি।
‘২০১৩ থেকেই আমি ইউরোপের নানা দেশে ভ্রমণ করতে থাকি, নানা কনভেনশনে উপস্থিত থাকি। আমার কাজ তখন দেশের চেয়ে বিদেশে বেশি কদর পেতে শুরু করেছে। ২০১৫ সালে আমাকে জার্মানির একটা ট্যাটু স্টুডিও রেসিডেন্সির প্রস্তাব দেয়। এই সময়েই আমার সঙ্গে আমার পার্টনার জঅ্যায়ানিনের আলাপ হয়। দেশের পাট চুকিয়ে মানহেইমে ঘর বসাতে বেশি ভাবতে হয়নি’, হেসে ওঠেন ওবি, ‘তিন বছর পর আমি আর জঅ্যায়ানিন সিদ্ধান্ত নিই, আমাদের নিজেদের একটি ছোট স্টুডিও করার সময় এসেছে, এবং সেখান থেকেই জন্ম নেয় মান্ত্রা ট্যাটু আতেলিইয়র।’
ওবির জীবন যেমন বিচিত্র ধারায় বয়েছে, তাঁর ‘বঙ্গ স্টাইল’ কাজের উদ্ভবও প্রায় তেমনই অদ্ভুত। ‘কম্পিউটারে ডিজাইন বানানোর চল অনেক পরে আসে, প্রথম দিন থেকে আমি হাতে এঁকেই ট্যাটুর নকশা ঠিক করে আসছি। এই নকশার তাড়া আমার কাছে সযত্নে রাখা থাকে’, ওবি বলেন। ২০১৫-তেই থাইল্যান্ডের ফুকেতে একটি ট্যাটু সম্মেলনের শেষদিনে, যখন ওবি তাঁর কাজ প্রায় গুছিয়ে স্টল বন্ধ করতে উদ্যোগী, এক শ্বেতাঙ্গী মহিলা ওবি-র আঁকা একটি মাছ দেখিয়ে বলেন ওই নকশার ট্যাটু তাঁর চাই। ‘আমি খুবই অবাক হই, কেননা প্রথমত নকশাটি ছিল অসম্পূর্ণ, এবং ওই মহিলার শরীরে বাকি যে ট্যাটুগুলি ছিল তা খুবই উচ্চমানের’, ওবি ব্যাখ্যা করেন। মাছের নকশাটি ছিল বাঙালির চিরাচরিত আলপনার আধারে করা, ‘নেহাতই একটি স্কেচ’। কিন্তু ওবি বোঝেন, আমাদের কাছে যা নেহাতই দৈনন্দিন, ঘরে-ঘরে উপস্থিত, অন্য কোনও সংস্কৃতিতে তা হয়ে উঠতে পারে চমকপ্রদ ও ভীষণভাবে আকর্ষণীয়! ‘বঙ্গ স্টাইল’-এর সেই শুরু। ‘নামটা দেশের কথা ভেবেই রাখা’, ওবি বলেন।
নামে বঙ্গদেশজ প্রভাব স্পষ্ট হলেও, কাজটা শুধুমাত্র বাংলার নানাবিধ লোকশিল্প আঙ্গিকের হুবহু নকল হোক, তা ভেবে এই ট্যাটুরীতির প্রচলন করেননি ওবি। ‘বাংলাপ্রধান গ্রাফিক ইমেজারি, বিশেষত উনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে যে কাজ হয়ে এসেছে— ডিজাইনের ক্ষেত্রে তা অমূল্য সম্পদ। বাংলার আলপনা, লিথোগ্রাফ, কালীঘাটের পটচিত্র, সরাচিত্র — এই সবেরই অত্যন্ত সযত্ন শিল্পবিন্যাস হয়েছিল এই সময় জুড়ে। ট্যাটুতে এই অসামান্য ইমেজারি কখনও কাজে লাগানো হয়নি। কিন্তু আমি শুধু এই কাজকে মানুষের শরীরে বসিয়ে দিতে চাইনি, চেয়েছিলাম নিজস্বতা দিয়ে এই ভাষাকে আমার ট্যাটুর মধ্যে তুলে ধরতে। তার জন্য আমি নানা উপাদানের কিছু মিশ্রণ তৈরি করতে শুরু করি এবং এই পদ্ধতির মাধ্যমেই আমার নিজস্ব একটি ‘ভিসুয়াল ল্যাঙ্গোয়েজ’ ফুটে ওঠে। সেই কাজ এখনও চলছে।’ বাংলাকেন্দ্রিক এই ট্যাটুর সঙ্গে ছন্দ মিলিয়ে ওবির নিজস্ব সিলমোহর তাই বাংলার প্রতিটি গৃহস্থবাড়িতে দেখা একটি গ্রাফিক — মা লক্ষ্মীর পা। ‘বাঙালি যে বিশ্বের ট্যাটু-জগতে আজ উপস্থিত, তা জানানোর প্রয়োজনেই আমার সিল’, বলেন ওবি।
শ্বেতাঙ্গে কালো কালির কাজ একরকম, কিন্তু ওবির রঙিন ট্যাটুর আকর্ষণই আলাদা। পিঠ জুড়ে ফুটে ওঠা নন্দলাল বসুর ‘মাতা ও সন্তান’ বা বর্ণাঢ্য উপজাতীয় পশু ও পাখির ট্যাটু দেখে যেন তাক লেগে যায়। কাঁধ থেকে শুরু হয়ে কব্জি অবধি আস্তিন উল্কি — ইংরেজিতে যাকে বলে ‘স্লিভ ট্যাটু’ — তুলে ধরে বহুবিধ লোকপ্রথার প্রচলিত বাহুবন্ধনী, যার পুঙ্খানুপুঙ্খ ডটওয়ার্ক-এর জুড়ি উপমহাদেশে মেলা ভার। এর সঙ্গে আছে ওবির ‘মণ্ডলা’ ধারার কাজ, যেখানে ধর্মীয় জ্যামিতির প্রভাব সুস্পষ্ট। এই কাজগুলির সব ক’টিই যে প্রথমে শিল্পীর হাতে, এবং পরে ট্যাটু মেশিনে প্রচুর যত্নে এবং অধ্যবসায়ে তৈরি, দেখলেই বোঝা যায়।
শুধু বাংলার শিল্পসম্পদ নয়, ওবির এই সযত্ন কারুশিল্পের এক বড় অঙ্গ জুড়ে আছে তাঁর সুদূর প্রাচ্যের উল্কি ইতিহাসের গবেষণা, বিশেষত জাপানি ট্যাটু বিষয়ে তাঁর অদম্য কৌতূহল। ‘নিজেকে ক্রমাগত বিবর্তনশীল রাখতে ইচ্ছুক যে কোনও ট্যাটুশিল্পীর কর্তব্য, জাপানি ট্যাটু এবং ওই ধারার কিংবদন্তি শিক্ষকদের কাজ সম্বন্ধে জানা। তাঁদের ‘ইরেজুমি’ (আক্ষরিক মানে: ‘কালি প্রবেশ করানো’) থেকে বোঝা যায়, ট্যাটু করতে গেলে দরকার মানুষের শরীর সম্পর্কে জ্ঞান, কাজটার প্রতি অধ্যবসায়, কঠোর নিয়মাবলি মেনে চলা, ধারাটি সম্পর্কে বোধশক্তি থাকা, ছবি দিয়ে গল্প বলার ক্ষমতা। এই সবই আধুনিক ট্যাটুশিল্পের অঙ্গ। ট্যাটু বিষয়ে সত্যিই সিরিয়াস শিল্পীরা পশ্চিমি কিছু মাস্টারদের কাজ নিয়ে পড়াশোনা করতে পারেন। যেমন হোরিওশি ৩, হোরিগোরো, হোরিকিন, ফিলিপ লিউ, শিগে, ক্রিস ত্রেভিনো এবং আলেক্স রেইঙ্কে’, বলেন ওবি।
আর কলকাতার ট্যাটুশিল্পীরা? কিছুক্ষণ চুপ করে থাকেন ওবি। ‘আমি যখন ট্যাটু করতে শুরু করি, আমার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল এই শিল্পকলার সাধনা। আমি তরুণ ও আবেগপ্রবণ ছিলাম, এবং এই সাধনা আমাকে প্রায় ধ্বংস করে দেয়। আমার সমসাময়িক অনেক শিল্পী তাঁদের নিজস্ব পার্লার খুলে বসেন, কিন্তু আমি আরও শিখতে চেয়েছিলাম, এখনও চাই। কলকাতা থেকে যে কাজ আমি এখন দেখি, তা টেকনিক্যাল দিক থেকে খুবই পারদর্শিতার পরিচয় দেয়। কলকাতা শহরে ট্যাটু-সংস্কৃতিও এখন বেড়ে উঠেছে। শুনতে পাই এখন ১০০-রও বেশি ট্যাটু স্টুডিও গড়ে উঠেছে, আমাদের সময় যা ভাবাই যেত না— আর সেটা মাত্র ১৪ বছর আগের কথা! কিন্তু বহুসংখ্যক স্টুডিও থাকা মানেই যে কাজের মান উঠবে, তা নয়। অনেক স্টুডিওই ব্যবসায়ীরা চালিয়ে থাকেন, যাঁরা ট্যাটুকেও অন্য যে কোনও ব্যবসার মতোই দেখতে চান। কিন্তু আন্তর্জাতিক মানের কাজ শুধু লাভের নিরিখে ব্যবসা খুলে বসলে পাওয়া যায় না। এটা আর্ট, বার্গার নয়।’ এর সঙ্গে ওবি যোগ করেন বাঙালির কুখ্যাত কুঁড়েমি ও ‘প্রতিভার’ উপর ভিত্তিহীন নির্ভরশীলতার কথা।
আপাতত ‘মান্ত্রা ট্যাটু আতেলিয়র’ চালানোই ওবির প্রধান লক্ষ্য, জ্যানিন ও পোষা কুকুর মিস পাম্পকিনের সাথে ওবির মানহেইমের সুখী সংসার। ‘আমি যে পারিপার্শ্বিকে বড় হয়েছি, ট্যাটু আর্ট আমাকে যে স্বপ্নগুলি বাস্তব করার উপকরণ দিয়েছে, তা আমি কল্পনাও করতে পারতাম না। বেহালার গলি থেকে ইউরোপের কিছু নামীদামি স্টুডিওতে কাজ করা, সারা বিশ্ব ভ্রমণ, সর্বোপরি কোনও ইউনিফর্ম না পরে রোজগার করা— এ আমার স্বপ্নাতীত ছিল। ট্যাটুশিল্প আমাকে যে স্বাধীনতা এবং আত্মবিশ্বাস দেয়, তা আমি এক জায়গায় বসে থেকে নষ্ট করতে চাইনি। আজ ১২ বছর পর আমার নিজের স্টুডিও থাকা সত্ত্বেও, কোভিডের জন্য সবচেয়ে যন্ত্রণা হয়েছে ভ্রমণ বন্ধ হয়ে গিয়ে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণ শুরু হলেই কলকাতা যাব!’ হেসে বলেন ওবি।
২০২১-এ ট্যাটু প্রসাধনের মতোই সাজসজ্জার অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে, কিন্তু ওবির মতো ট্যাটু করেন যাঁরা, বা পেশাদারি ট্যাটুশিল্পী হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখছেন যে তরুণ-তরুণীরা, তাঁদের ভবিষ্যৎ কী? কলকাতার মধ্যবিত্ত বাঙালি বোধহয় এখনও এই পেশাকে সম্পূর্ণরূপে স্বীকৃতি দিয়ে উঠতে পারেনি। কিন্তু আজও এই খোদ কলকাতার বুক থেকেই অভিনন্দন বসুর মতো শিল্পীরা উঠে আসেন, যাঁরা সমাজ বা পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিকে ছাপিয়ে শুধুমাত্র নিজের শিল্পীসত্তাটুকু সম্বল করে দুনিয়ার আঙিনায়ে নিজের এবং কলকাতার নাম লিখে যাচ্ছেন।
ছবি সৌজন্য সারা হিন্টারহাউস